ওএমএসের চালের দাম কমানোর পরামর্শ

খোলা বাজারে বিক্রির (ওএমএস) চালের দাম কেজিতে ২০ টাকায় নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2017, 12:37 PM
Updated : 20 Sept 2017, 02:44 PM

এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলছেন, প্রান্তিক মানুষের মধ্যে কম দামে পণ্য বিক্রির জন্যই ওএমএস কর্মসূচি। সেখানে চালের দাম ১৫ টাকা কেজি থেকে বাড়িয়ে একলাফে ৩০ টাকা করার কোনো যুক্তি তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।

বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘সানেমের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্য়ালোচনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সেলিম রায়হান।

অর্থবছরের ত্রৈমাসিক পর্যালোচনার মূল প্রবন্ধে সেলিম রায়হান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মজুদ ও বাজারমূল্য বিবেচনায় সরকার ওএমএস এর চালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২০ টাকা নির্ধারণ করতে পারে।

বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে সরকার এ সপ্তাহের শুরুতে খোলা বাজারে বিক্রির চালের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান গত রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাজার দর ও ওএমএস এর চালের দামে পার্থক্য বেশি থাকলে ‘লিকেজের সম্ভাবনা’ বাড়ে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এক বছর আগের তুলনায় সম্প্রতি মোটা চালের দাম ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। তার ওপর ওএমএস এ চালের দাম দ্বিগুণ করা হলে প্রান্তিক মানুষের জন্য চাল কেনা কঠিন হয়ে যাবে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফএও) এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কৃষি সংস্থার (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হ্রাস পাবে। এদিকে বাজারে চালের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তাই স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে সানেম।

দেশের বাজারে চালের যোগান ঠিক রাখতে ভারত, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির পাশাপাশি মজুতদারদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার কথা বলেছে গবেষণা সংস্থাটি। 

মূল প্রবন্ধে সেলিম রায়হান বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে এক ধরনের ‘কর্মসংস্থান বিমুখ প্রবৃদ্ধির ঝুঁকি’ তৈরি হয়েছে।

শ্রম জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে দেশে প্রথমবারের মত শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমে গেছে। আবার কৃষি খাতেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি, উল্টো কমেছে। এমনকি দেশের প্রধান শিল্প তৈরি পোশাক খাতেও নারীর কর্মসংস্থান কমেছে।

“অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির সাথে কর্মসংস্থান যে হারে বাড়ার কথা, সাম্প্রতিক সময়ে সে হারে বাড়ছে না। তবে এ সময়ে সেবা খাতে কর্মসংস্থান কিছুটা বেড়েছে।”

এই পরিস্থিতিতে ‘কর্মসংস্থানবান্ধব প্রবৃদ্ধির’ জন্য বৈচিত্রময় অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিতে সরকারকে পরামর্শ দেন সেলিম রায়হান।

সানেমের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়েও সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ রাখা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, রোহিঙ্গা শরনার্থীরা দেশের অর্থনীতি ও সার্বিক নিরাপত্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলতে পারে।

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এ অবস্থায় দক্ষ কূটনৈতিক কৌশল এবং শরণার্থীদের ত্রাণের যথাযথ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ‘কৌশলের সঙ্গে’ মোকাবেলা করার কথা বলেন সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উন্নত রাষ্ট্রের দিকে যেতে চাইলে বাংলাদেশকে অবশ্যই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল সম্পদের স্বল্পতা।

সানেমের সাম্প্রতিক এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সালে এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যে অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন, তার পরিমাণ জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ জিডিপির ২৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

বিদেশি বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো ও সুশাসনের মত বিষয়গুলোর দিকে নজর না দিলে ওই অর্থের যোগান ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান।

অন্যদের মধ্যে অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার, সায়েদা হক বিদিশা ও ফরাজি বিনতে ফেরদৌস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।