বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Sept 2017, 02:50 PM
Updated : 17 Sept 2017, 02:50 PM
৬২৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে এই অর্থ পাবে ব্যাংকটি।

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব আরেক ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির কাছে পাবে তিন হাজার ২২৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব কমিটির বৈঠকে এসব তথ্য দেওয়া হয়।

সোনালী ব্যংকের শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা পেলেও প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নাম পায়নি সংসদীয় কমিটি। পরের বৈঠকে প্রতিষ্ঠান মালিকদের নাম দিতে বলেছে তারা।

কমিটির সভাপতি নূর-ই-আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিটি যেভাবে সোনালি ব্যাংকের তথ্য চেয়েছিল সেভাবে তারা দেয়নি। আমরা পরের বৈঠকে আবারও সেগুলো দিতে বলেছি।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে আসা কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের শীর্ষ খেলাপি ২০টি প্রতিষ্ঠান হল- টিএন ব্রাদার্স অ্যান্ড গ্রুপ (৪৮১ কোটি ৩৭ লাখ), হল-মার্ক গ্রুপ (৪৭৯ কোটি ৯ লাখ),  ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স (৩১৬ কোটি ৪০ লাখ),  মুন্নু ফেব্রিক্স (২২৮ কোটি ৭৩ লাখ), অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ (২১১ কোটি ৮৮ লাখ), জিএমজি এয়ারলাইন্স (১৪৮ কোটি ৩৪ লাখ), লীনা পেপার মিলস (১৩৭ কোটি ৫৪ লাখ), মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক (১৩০ কোটি ৭০ লাখ), এপেক্স উইভিং অ্যান্ড ফিনিশিং (১২৭ কোটি ৯৩ লাখ), সোনালী জুট মিলস (১২৬ কোটি ৮৫ লাখ), একে জুট ট্রেডিং (১১৬ কোটি ২২ লাখ), বিশ্বাস গার্মেন্টস (১০৪ কোটি ৪৫ লাখ), রেজা জুটস লিমিটেড (৯৮ কোটি ৫৮ লাখ, ইস্টার্ন ট্রেডার্স (৯২ কোটি ৫৪ লাখ), সাইয়ান কর্পোরেশন (৭৬ কোটি), পদ্মা পলি কটন (৭৫ কোটি ৯৩ লাখ), এজাক্স জুট মিলস (৭২ কোটি), ক্লাসিক স্পালাইজ লিমিটেড (৬৮ কোটি ৭৯ লাখ), নিউজ স্টাইল (৬৬ কোটি ৫৫ লাখ) ও কোস্টাল সি ফুড (৬৮ কোটি ৮৬ লাখ)।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হল-মার্ক গ্রুপই ১৬টি প্রতিষ্ঠানের নামে সোনালী ব্যাংকের ঋণ নেয়।

সোনালী ব্যাংকের যেসব শাখা ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছর লোকসান গুণছে সে সব শাখা বন্ধ করার সুপারিশ করেছে কমিটি।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে ওই ঋণ আদায়ের জন্য যে ২০ জন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়েছে তাদের নাম এবং বেসিক ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকার উপরে যে সব প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি আছে তাদের নামের তালিকাসহ পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের ২০১৫-২০১৬ সালের অডিট সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিটির পরবতী বৈঠকে উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।

বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকটির চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬২৮টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা আছে ছয় হাজার ৫৩৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি পাওনা আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১১ জন। তাদের কাছে পাওনা এক হাজার ২৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি পর্যন্ত পাওনা এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০টি। এদের কাছে মোট পাওনা দুই হাজার ১০৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।

বেসিক ব্যাংকের শীর্ষ ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠান হল, দি ওয়েল টেক্স লিমিটেড। তাদের কাছে পাওনা ১২৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। শীর্ষ ১১টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আরও আছে ডেটা সিস্টেম লিমিটেড (১২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা), আইজি নেভিগেশন লিমিটেড (১১৯ কোটি ৯৫ লাখ), বে নেভিগেশন লিমিটেড (১১৬ কোটি ৩৮ লাখ), ক্রিস্টাল স্টিল অ্যান্ড শিপ ব্রেকিং লিমিটেড (১১৩ কোটি ৮৩ লাখ), ম্যাপ পেপার বোর্ড মিলস লিমিটেড (১১৩ কোটি ৪২ লাখ), প্রফিউশন টেক্সটাইল লিমিটেড (১১১ কোটি ৫৫ লাখ), মা টেক্স (১১১ কোটি ২২ লাখ), কনফিডেন্স সুজ লিমিটেড ( ১০৮ কোটি ২৯ লাখ), এ আর এস এস এন্টারপ্রাইজ ১০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং নিউ অটো ডিফাইন (১০১ কোটি ৮৭ লাখ)।     

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বেসিক ব্যাংক থেকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে তাদের ঋণ আদায়ে, ব্যাংকের ঋণের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক থেকে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, পরিচালনা পর্ষদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং বিনা ডকুমেন্টে ৫৭টি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং ঠিকানাহীন সাতটি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখসহ  একটি প্রতিবেদন আগামী জানুয়ারির মধ্যে কমিটিতে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

নূর-ই-আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, এ বি তাজুল ইসলাম, শেখ ফজলে নূর তাপস, শাহানারা বেগম, এ টি এম আব্দুল ওয়াহহাব ও ওয়াসিকা আয়শা খান অংশ নেন।