বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে লাগবে ১৬৫ কোটি টাকা

আগাম বন্যা, অতি বৃষ্টিতে হাওরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ও আউশ ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে ১৬৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা লাগবে বলে প্রাথমিক হিসাব করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2017, 12:53 PM
Updated : 27 July 2017, 12:53 PM

বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন। পানি নেমে যাওয়ার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ নির্ধারণ করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এই বছরের এপ্রিলের শুরুতে আকস্মিক বন্যায় ভেসে যায় হাওরের বোরো ফসল। তার রেশ না কাটতেই বন্যার কবলে পড়েছে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল। মধ্যাঞ্চলেও বন্যার দেখা দিচ্ছে। কৃষি বিভাগ ৩০ জেলায় বন্যার আশঙ্কা করছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের জন্য যে অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে, কমিটি তা আরও ভালোভাবে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সুপারিশ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনে সম্ভাব্য সবকিছুই করার জন্যও মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।”

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব, এপ্রিল থেকে মে মাসে হাওরের ৬ জেলায় প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়।

এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর করে মন্ত্রণালয়।

“কিন্তু পুনরায় অতি বৃষ্টি এবং উজানের পানিতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, বান্দরবান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় ১০ হাজার ৬৪১ হেক্টর আউশ ধানের জমি এবং এক হাজার ১১৮ হেক্টর আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

তিস্তা অববাহিকায় পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া জেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ক্ষতির কথাও বলা হয়।

নেত্রকোণার কয়রা হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত ফসল (ফাইল ছবি)

পুনর্বাসনের পরিকল্পনায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ১০০ একর জমিতে উফশী রোপা আমনের বীজতলা তৈরির কার্যক্রম গ্রহণের কথা জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।

এতে মোট ৩০ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করা হবে। প্রতি কৃষকের এক বিঘা জমি ধরে ৬ হাজার ৬০ জন কৃষককে আমনের চারা বিতরণ করা হবে।

এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় সরাসরি বপনের জন্য একজন কৃষককে বিঘা প্রতি ৫ কেজি উফশী রোপা আমনের বীজ বিনামূল্যে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর আওতায় ২০ হাজার কৃষকের জন্য ১০০ মেট্রিক টন উফশী বীজ সরবরাহ করা হবে।

পাশাপশি ১৪ জেলার ৫৬টি উপজেলায় কলার বেলায় ৭২০টি ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে এবং বিনামূল্যে ২০০ কৃষককে এক বিঘা করে ২০০ বিঘা জমির আমন ধানের চারা সরবরাহে পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কর্মপরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, হাওর অধ্যুষিত জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন পরিকল্পনায় ৭৪ কোটি ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৭০০ টাকার প্রয়োজন হবে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০ জেলায় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা ধরে এসব এলাকার দেড় লাখ কৃষককে গমের বীজ, দুই লাখ ১৫ হাজার কৃষককে ভূট্টার বীজ, তিন লাখ ৩০ হাজার কৃষককে সরিষার বীজ, ৬৪ হাজার কৃষককে গ্রীস্মকালীন মুগের বীজ ও রাসয়নিক সারসহ অন্যান্য বীজ সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রণালয়।

এ কর্মসূচির মাধ্যমে মোট আট লাখ ৪০ হাজার ৫০০ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হবে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে মোট ১৬৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে।