টানা তিন বছর ‘লক্ষ্যপূরণ’ এনবিআরের

আগের দুই অর্থবছরের মত এবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের সুখবর দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড; ভ্যাট আইন কার্যকরে ব্যর্থতার পর তাদের সামনে এখন আরও বড় লক্ষ্য পূরণের চ্যালেঞ্জ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2017, 10:35 AM
Updated : 26 July 2017, 04:25 PM

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় করেছে এনবিআর, যা তাদের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য বেশি।

গত অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

এবারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিল এনবিআর।

বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে লক্ষ্যমাত্রার বেশি রাজস্ব আদায়ের তথ্য তুলে ধরে একে ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সফলতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, “টানা তিন অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণের রেকর্ড সৃষ্টি করলাম। নতুন অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ আরও বাড়াতে রাজস্ব কাঠামো শক্তিশালী করা হচ্ছে।”

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা, আদায় সন্তোষজনক না হওয়ায় তা সংশোধন করে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি থেকে নামিয়ে আনা হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকায়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা।

আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এক লাখ ৩৬ হাজার ২৬৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকার রাজস্ব আদায়ের দাবি করে এনবিআর। ওই অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে এক লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ের যে বাজেট অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, সেখানে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটিই এনবিআরের মাধ্যমে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন তিনি। 

অর্থমন্ত্রী তার এই বাজেট সাজিয়েছিলেন নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের মাধ্যমে এই খাত থেকে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরে। কিন্তু ঘরে বাইরে সব পক্ষের বিরোধিতায় সব ক্ষেত্রে অভিন্ন ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা থেকে সরকারকে সরে আসতে হয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায় পরিকল্পনাও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।  

ভ্যাট আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত হওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি কত হতে পারে- জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান তা এড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, “ভ্যাট নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এটাকে আমরা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছি। এছাড়া যারা কর দেন বা যারা দেন না, সবাই মিলে ভ্যাট নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমার ধারণা যারা ভ্যাট দেন না, তারা উদ্বুদ্ধ হবেন।”

ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে ভ্যাট আইন স্থগিত করায় তারা পুরনো আইনের আওতায় যথাযথভাবে ভোট দেবেন বলে আশা করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

এবার রাজস্ব আহরণকে বড় চ্যালেঞ্জ মেনে তিনি বলেন, “আমাদের বড় চ্যালেঞ্জের বিপরীতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। আমরা তা খোঁজার চেষ্টা করব।”

করদাতাদের উৎসাহ দিতে সরকারের সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সচিবদের এনবিআরের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান নজিবুর।

আয়কর আদায় বাড়াতে এবার বেসরকারি খাতে যারা নির্বাহী পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য এবার আয়কর দেওয়া ও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার কথাও বলেন তিনি।

“এছাড়াও বহু বিদেশি নাগরিক দেশে কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কর দিচ্ছেন, আবার কেউ দিচ্ছেন না। তাদের ব্যাপারে আমরা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নিবিড় কিছু কার্যক্রম নিচ্ছি।”

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান পরিচালক বেলাল চৌধুরী নতুন অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব অর্জনের জন্য সংস্থার বেশ কিছু পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ও বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত, ই-মেইল ও হেল্প লাইন কার্যক্রম জোরদার, ভ্যাট মেলা ও ভ্যাট সম্পর্কে সচেতনতার কার্যক্রম, কল সেন্টার স্থাপন ইত্যাদি।