ঋণ প্রবাহ কমিয়ে নতুন মুদ্রানীতি

মূল্যস্ফীতি বাড়ার প্রবণতার মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণের চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে সরকারি-বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমিয়ে অর্থবছরের প্রথম ভাগের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 July 2017, 09:17 AM
Updated : 26 July 2017, 01:22 PM

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের এই মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

গত জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও মে পর্যন্ত সময়ে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ, যা আগের মুদ্রানীতিতে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ ছিল।

আর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতিতে এই লক্ষ্য ছিল ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

গভর্নর ফজলে কবির বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন।

ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে এনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সংকোচনমূলক’ মুদ্রানীতি দিল কি না- এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে গভর্নর বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে আটকে রাখার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে নতুন মুদ্রানীতির মাধ্যমে সেটা সম্ভব।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “দেশের উত্তর-পূর্ব হাওর অঞ্চলে বিগত অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে আকষ্মিক বন্যায় ফসলহানীর কারণে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখনও বিদ্যমান। তবে প্রতিবেশী ভারতে ভোক্তমূল্যস্ফীতি দুই শতাংশের নিচে নেমে আসায় এবং ২০১৭ সালের শুরু থেকে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য মুখ্য পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য নিম্নমুখী বা স্থিতিশীল থাকায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি পরিমিত রাখা যাবে বলে আশা করা যায়।” 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার  ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ায় সরকারের ঋণের বোঝা বাড়তে থাকায় এর সুদহার কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। এবারের মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একই সুপারিশ করেছে। 

নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, “অচিরেই সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফার হার বিদ্যমান বাজার সুদ হারের সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্কিত করতে হবে।”

গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এই অংক গত অর্থবছরের মূল বাজেটের লক্ষ্যের চেয়ে আড়াই গুণ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়েও ২ হাজার কোটি টাকা বেশি।

গত ২৮ জুন বাজেটের সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির সরাসরি সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরে এই হার কমিয়ে আনার ইংগিত দিয়েছিলেন। তবে বাজেট আলোচনায় সংসদ সদস্যরা মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ের এই মাধ্যমে সুদ হার না কমানোর পরামর্শ দেন।

বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের ঘোষিত আর্থিক নীতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে প্রতি অর্থবছরে দুটি মুদ্রানীতি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জানুয়ারি-জুন মেয়াদের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল গত বছরের ২৯ জানুয়ারি।

বরাবরের মতো এবারও নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।