জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার জেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই আহ্বান জানান।
সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলন উদ্বোধনের পর বিকালে সচিবালয়ে তৃতীয় কার্য অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী।
ডিসিরা জেলার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মুহিত বলেন, “আমার মোস্ট ইম্পর্টেন্ট জিনিস হল রাজস্ব আদায় করা। আদায় করলেই সেবা দেওয়া যায়। আদায়টা যদি না বাড়ে, সেবা বাড়ে না কোনোদিন।”
এখন দেশে ‘দর্শনীয়ভাবে সেবা’ দেওয়া হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “সুতরাং আপনাদের বেশ জোর হয়েছে, আপনারা রাজস্ব আদায়ে সহায়তা করবেন। লোকজনকে বলবেন, এটা দিলে আপনারা ফলটা তো দেখছেন পাওয়া যায়, সুতরাং দেন। এটাই তাদের কাছে আমার বলার ছিল।”
জেলা প্রশাসকরা রাজস্ব আদায় নিয়ে কোনো সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন কি না- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “না, না; সীমাবদ্ধতার কথা বিশেষ কিছু বলেনি।”
জেলা প্রশাসকরা কী বলেছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকদের নানা রকমের প্রশ্ন ছিল, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তা দেখছেন।
বিভিন্ন জেলার ট্রেজারি ভবনগুলো সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের সুপারিশ জেলা প্রশাসকরা করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়কে বলেছি, আপনারা সব ট্রেজারিকে দোতলা করার চেষ্টা করেন। পূর্ত বিভাগ বলেছে, তারা এটা নিয়ে কাজ করছে।”
সম্মেলনের দ্বিতীয় কার্য-অধিবেশন শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নির্মূলের প্রচেষ্টার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের জানানো হয়েছে।
“এজন্য একটি সার্ভে আমরা আরম্ভ করেছি। এরপর প্রোগ্রাম নিয়ে তাদের আত্মকর্মসংস্থান বা তাদের পিতামাতার আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে যাতে চাইল্ড লেবার বিশেষ করে হ্যাজার্ডাস চাইল্ড লেবার এলিমিনেশন করা যায়, সেই পরিকল্পনাটা আমরা ডিসিদের সামনে উপস্থাপন করেছি।”
একই অধিবেশনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আলোচনা করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
তিনি বলেন, “আমরা বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন, তা ইনশাল্লাহ আমরা করব, সেই কথা উল্লেখ করেছি।”
জেলা প্রশাসকরা কোনো সমস্যার কথা বলেছেন কি না- জানতে চাইলে ত্রাণমন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের কোনো কথা বলেননি, এই ধরনের কোনো কথা ওঠেওনি। শুধু বন্যার প্রস্তুতি ভালো হওয়া ও সুচারুভাবে বন্যা মোকাবেলা করার জন্য তাদের ধন্যবাদ দেওয়া হয়েছে।”
সম্মেলনের এই অধিবেশনে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে অধিবেশনে প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুতিক গ্রিড বা টাওয়ার স্থাপনে সংশ্লিষ্ট জমির মালিককে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ দেওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিবেচনা করা হবে বলে জানানো হয়।
এছাড়া উৎপাদন ব্যয় হ্রাসকল্পে মৎস্য খামার, হ্যাচারি, নার্সারি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিদ্যুৎ বিলের শ্রেণিভিত্তিক বিন্যাস করার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলেও জানানো হয়।
জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে তাদের আরও তৎপরতা প্রত্যাশা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নরুল ইসলাম নাহিদ।
জেলা প্রশাসকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে আরও সক্রিয় করা, অবকাঠামোকে পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানা পরামর্শ দিয়েছেন।
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “তারা যে পরামর্শ দিয়েছেন, আমরা মনে করি তা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাছে লাগাব।”
পরীক্ষা পরিচালনা, বই বিতরণ এবং স্কুলগুলোতে দুপুরের খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসকদের ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, “তাদের সহযোগিতা আরও বেশি চাই কারণ নিচের দিকে মনিটরিংয়ের সিস্টেমটা মজবুত নাই। জনবল নাই তাই করতে পারি না, আর ম্যানেজিং কমিটিও অত তৎপর থাকে না।”
শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে মানসম্পন্ন শিক্ষকের কথাও বলেন জেলা প্রশাসকরা।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষকতা পেশায় কিছু লোক ঢুকে গেছে, যাদের নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে আমরা খুবই বেকায়দা অবস্থায় আছি। সেইসব লোককে আমরা ছাঁটাই করতে চাই।”
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার কথা জেলা প্রশাসকরা বললে এজন্য অচিরেই আইন প্রণয়ন হচ্ছে বলে তাদের জানান নাহিদ।
“গাইড বই, নোট বই এবং নেগেটিভ সেসব বই রয়েছে, বন্ধ করে দেব।”
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার কথাও শিক্ষামন্ত্রীকে বলেছেন জেলা প্রশাসকরা।
নাহিদ বলেন, “আমরা কঠোর আইন প্রয়োগের চেষ্টা করছি। সেই আইন প্রয়োগ হলে সেগুলো আর তারা করতে পারবেন না। আমাদের আরও একটা চিন্তা আছে। যা যা টাকা জমা হবে, সব সরকারের ফান্ডে চলে যাবে। সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে খরচ করবে। তখন বেশি ইনকাম করে বেশি ব্যক্তিগত স্বার্থ নেওয়ার সুযোগটা থাকবে না।”