গ্রামে স্বল্প সুদের গৃহঋণ বিতরণ বৃদ্ধিতে জোর

ঘরবাড়ি নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য গ্রাম এলাকায় বিশেষ নজর দিয়ে স্বল্প সুদে গৃহঋণ বাড়ানোর উপর জোর এসেছে এক আলোচনা সভায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 July 2017, 01:03 PM
Updated : 20 July 2017, 01:05 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ মত আসে।

আলোচনায় ‘হোম লোন অব ব্যাংকস: ট্রেন্ড অ্যান্ড ইমপ্যাক্ট’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক মহীউদ্দিন সিদ্দিকী।

গবেষণার বরাত দিয়ে এতে বলা হয়, ২০১৬ সালে বিতরণ করা মোট গৃহঋণের অধিকাংশই পায় শহরের মানুষ। ৮৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ শহরে ও গ্রামে সাড়ে ১৬ শতাংশ গৃহঋণ বিতরণ হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, “মানুষের মাথাগোজার ঠাঁই হচ্ছে ঘর। সুতরাং এ খাতে ঋণ বিতরণ আরও বাড়াতে হবে। তবে এ ঋণ হতে হবে স্বল্পসুদের। এ ঋণ যাতে গ্রামের মানুষ পায় তারও ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি বলেন, গৃহঋণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। এগুলোর সমাধান প্রয়োজন। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো হবে।

গবেষণায় তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গতবছর বিতরণ করা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ্ই খেলাপি, যার মধ্যে গৃহঋণ মাত্র ৩ শতাংশ।

২০০৬ সালে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, গৃহঋণে খেলাপি ছিল ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, “মানুষ গৃহ নির্মাণে যাতে সহজে ঋণ পায় সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।”

“গৃহঋণের নানাদিক বিশ্লেষণ করে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এ নীতিমালা প্রণয়ণ সম্পন্ন হলে গ্রাহকরা সহজে ঋণ পাবে।”

গৃহঋণ বিতরণ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহ দিতে প্রভিশন ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করার সুপারিশ করেন। বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী।

“ফ্ল্যাট বা বাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময় ব্যাংকের কাছে মর্টগেজ আছে কি না তা শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে। অনেক ব্যবসায়ী এবং বাড়ির মালিক ব্যাংকঋণ নিলেও তা সাইনবোর্ডে উল্লেখ করেন না।”

গৃহঋণ বিতরণে উচ্চ সুদহারকে ‘বড় বাধা’ আখ্যা দিয়ে স্টান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংকের বাংলাদেশ প্রধান আবরার আনোয়ার বলেন, আগামীতে গৃহঋণে সুদহার আরও কমিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশিদের গৃহঋণের সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, গৃহঋণের কিছু অর্থ চলে যাচ্ছে সেকেন্ড হোমে। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে কানাডা, সিঙ্গাপুর, ইউএসএ, মালয়েশিয়া এবং সুইজারল্যান্ডে অট্টালিকায় বসবাস করছে।

“ব্যাংকের অর্থ মেরে বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানতের অর্থ নানা কায়দায় তারা বিদেশে পাচার করে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলছে। অথচ এই অর্থ দেশে থাকলে কর্মসংস্থান হতো এবং দেশের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা থাকতো।”