বাড়ছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি

সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। আর এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2017, 04:49 PM
Updated : 17 July 2017, 04:49 PM

হিসাব করে দেখা গেছে, এই ১১ মাসে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ২২ দশমিক ২২ শতাংশ। নিস্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ৪৪ দশমিক ২১ শতাংশ।

তার আগের বছরে (১২ মাস, জুলাই-জুন) এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছিল মাত্র ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছিল ১৩ শতাংশেল মতো।

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির এই বৃদ্ধি আগামী দিনগুলোতে শিল্পখাতে উৎপাদন বাড়াবে বলে মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত সার্বিক আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ শতাংশের বেশি। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৭ শতাংশ।

“মূলত, অভ্যন্তরীণ চাহিদার গতি সচল থাকায় আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এসময়ে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হারও হয়েছে বেশ ভালো। বিশেষ করে, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, যা আগামী দিনগুলোতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করছে।”

অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখতের বিশ্লেষণ বলছে, পদ্মা সেতুসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকে ঘিরে দেশে বিনিয়োগের নতুন আবহ তৈরি হয়েছে। উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন বলেই শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতির (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) আমদানি বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই ১১ মাসে মোট ৪৮১ কোটি (৪.৮ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ হচ্ছে ৪৫০ কোটি ডলার।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। নিস্পত্তি হয়েছিল ৩১২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেলের কাজ এগিয়ে চলছে। কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। এ সব ‘মেগা প্রকল্পের’ কাজ শেষ হলে দেশে শিল্প খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এছাড়া একটার পর একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে।

“এ সব বিবেচনায় নিয়েই আমাদের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বিদ্যমান শিল্প প্রতিষ্ঠানের পাশপাশি নতুন নতুন শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি করছেন।ভবিষ্যৎ ব্যবসা মাথায় রেখেই তারা এটা করছেন।”

আর দেশে ‘স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে’ বিরাজ করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সেই আস্থা ফিরতে শুরু করেছে বলে মনে করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত।

“বিশ্ব পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আগামী বেশ কিছুদিন এই পরিবেশ থাকবে বলে সবাই ধারণা করছেন। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের একটা সুষ্ঠু পরিবেশ দেখা দিয়েছে।”

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে ৮০ কোটি ডলারের। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি। ওষুধ শিল্পে বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

এছাড়া প্যাকেজিং, কৃষি এবং সিরামিক শিল্পে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। তবে টেক্সটাইল ও পাট শিল্পে এবং ট্যানারি শিল্পে কমেছে।