এডিপিতে বিদেশি অর্থ এসেছে কম

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দাতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ অর্থ সহায়তার লক্ষ্য ঠিক করেছিল সরকার, তা থেকে ৭৭ কোটি ডলার কম এসেছে।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2017, 03:36 PM
Updated : 17 July 2017, 05:46 PM

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমের পাশাপাশি আগের অর্থবছরের চেয়েও ১৭ কোটি ডলার কম এসেছে প্রকল্পের বিদেশি অর্থ।

বিদেশ অর্থ ছাড়ে এই নিম্নমুখিতার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গুলশান হামলাকে দায়ী করলেও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সরকারের সক্ষমতার অভাবকে দায়ী করেছেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ৩৩৯ কোটি ৬১ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৮১ শতাংশ এসেছে।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৩৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার ছাড় হয়েছিল। এই অঙ্ক গত বছরের চেয়ে ১৭ কোটি ডলার বেশি।

ইআরডির একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই হিসাব প্রাথমিক, চূড়ান্ত হিসাবে অর্থছাড় আরও কিছু বাড়তে পারে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, এডিপি বাস্তবায়নের উপর অর্থছাড় নির্ভর করে। প্রকল্পের বেশি কাজ করতে পারলে অর্থ ছাড়ও বেশি হয়।

গত আট বছরে এডিপি বাস্তবায়ন সবচেয়ে কম হয়েছে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে।

গত বছরই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা হয়, যাতে ১৭ বিদেশি নিহত হন।

পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল গুলশান হামলার কারণে মেট্রোরেলসহ নানা প্রকল্পে কাজ করতে আসা অনেক বিদেশির দেশে ফিরে যাওয়ার কথা বলে আসছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার কারণে মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এমনকি পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকেও বিদেশিরা চলে গিয়েছিল। এ কারণে এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বড় প্রকেল্পও সময় অনুযায়ি অর্থ ব্যয় করা যায়নি।”

গুলশান হামলার প্রভাবের কথা স্বীকার করেই বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলি আর্টিজানে হামলা ও জাপানি নাগরিকদের হত্যার কারণে জাপানের অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়েছে ঠিক, তবে বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য দাতাদের অর্থায়নের প্রকল্প বাস্তবায়নে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। গত অর্থবছর বিশ্ব ব্যাংকের অর্থছাড় এর আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে।”

“এডিপির আকার বেড়েছে, কিন্তু সরকারের সক্ষমতা বাড়েনি। তাই শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না,” বলেন তিনি।

অর্থছাড়ে ব্যর্থ হলেও দাতাদের কাছ থেকে ঋণ ও আনুদানের প্রতিশ্রুতি আদায়ে সফল হয়েছে বলে ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়।

গত অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্য ছিল ৬০০ কোটি ডলার। আদায় হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলার। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রতিশ্রুতি আদায় হয়েছিল ৭০৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

গত অর্থবছরে ছাড় হওয়া মোট বৈদেশিক সহায়তার মধ্যে ঋণ হিসাবে ছাড় হয়েছে ৩০৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলার এবং অনুদান ছাড় হয়েছে ৩৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার।

অন্যদিকে ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৬১৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার পাওয়া গেছে অনুদানের প্রতিশ্রুতি।

গত অর্থবছরে সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে সুদ ও আসল বাবদ মোট ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে আসল ৯১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার এবং সুদ হিসাবে পরিশোধ করা হয়েছে ২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।