ভ্যাটের ঘাটতি যেভাবে হোক পুষিয়ে নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

ভ্যাট আইন স্থগিত হওয়ায় যে ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় কম হবে বলে ধারণা করা হচেছ, তা যে কোনোভাবে পুষিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2017, 05:42 PM
Updated : 13 July 2017, 05:42 PM

বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলেন।

নতুন আইন কার্যকর করে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় ধরে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ কোটি টাকার বাজেট সংসদে প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিশাল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর থেকে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আসবে বলে ধরেছিলেন মুহিত।

কিন্তু ব্যাপক সমালোচনার মুখে ভ্যাট আইন কার্যকর দুই বছর পিছিয়ে দিতে বলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

এতে বাজেট বাস্তবায়ন বড় ধাক্কার মধ্যে পড়তে যাচ্ছে এবং সেই আশঙ্কার কথা রওশনের বক্তব্যেও আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, “মাননীয় বিরোধীদলীয় নেতা বলেছেন, এতে রাজস্ব আদায়ের ক্ষতি হবে। ক্ষতি কিন্তু হয়েছে। এই ভ্যাট আইন ধরে এবং মোবাইল ফোন থেকে কী আয় হবে, সেটা ধরে নিয়েই কিন্তু বাজেটটা করা হয়েছিল। 

“আজকে ভ্যাট আইন স্থগিত করায় ২০ হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় কম হবে এবং সেটা যেভাবেই হোক আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকারের সামনে করজাল সম্প্রসারণের বিকল্প থাকবে না। আর সেই চাপ সামাল দিতে হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ঘাটতি পোষাতে হয় ব্যাংক লোন নিতে হবে, না হয় উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করতে হবে। আমরা দেখব কোথায় কীভাবে এটা অ্যাডজাস্ট করা যায়।”

একইসঙ্গে দেশবাসীকে কর দেওয়ারও আহ্বান জানান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

“আমি দেশবাসীকে বলব, সকলে যদি আয়কর দেন, যেটা কিন্তু তারই উন্নয়নের কাজে লাগবে, রাস্তাঘাট তৈরি হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারব, ফসল উৎপাদন বাড়াতে পারব। সবদিক থেকেই কিন্তু মানুষ উপকৃত হবে।”

এবার বাজেটের বিশালত্বের দিকটি দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এত বড় বাজেট এর আগে কখনও কিন্তু দেওয়া হযনি। ২০০৫-২০০৬ সালে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা।”

নতুন বাজেটে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিও সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী।

“আমরা একটা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট ছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকাই কিন্তু আমরা ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছি।

“এক লাখ কোটি টাকার উপর উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করতে কে পেরেছে? এর আগে কোনোদিন কোনো সরকার পারেনি। আমরা পেরেছি, আওয়ামী লীগ সরকার পেরেছে।”

বাজেট নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রমাণ হিসেবে দেখান শেখ হাসিনা। 

“মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা রয়েছে, তা প্রমাণিত সত্য। সরকারি দলের সদস্যরাই সব থেকে বেশি সমালোচনা করেছে। অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন। সরকারের সমালোচনা করেছেন। তাদের সমালোচনায় অর্থমন্ত্রী বাজেটে সংশোধনী এনেছেন।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার উন্নয়নের লক্ষ্য গ্রাম। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমিয়ে আনা।

“উন্নয়নটা যেন দরিদ্র মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছতে পারে, সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করেছি বলে আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল।”

হাওরে আগাম বন্যা এবং এবার বড় বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সরকার আগে থেকেই চাল আমদানি করে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, বলেন তিনি।

বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার আবাসিক ও শিল্প এলাকায় জলাধার রাখার বিধান করেছে। কিন্তু আইয়ুব খান থেকে জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, খালেদা জিয়া সব সরকারের সময়ই জলাধার বন্ধ করা হয়েছে।

“জলাধার সংরক্ষণ আইন আমি করে দিয়েছিলাম এবং জলাধার সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি। তার জন্য বিশেষ ভূমিখেকো যারা, যারা পত্রিকার মালিক, যারা টেলিভিশনের মালিক, তারা তো এর বিরুদ্ধে বহু কিছু লিখে-টিখে… আমার প্রতিমন্ত্রী মান্নান খান… তাকে তো একেবারে যেহেতু আমরা ড্যাপ করলাম, তার জন্য কত রকম কথা। নিজেরা চুরি করে যে এত বড়লোক সে নিউজ নেই। তাকে চোর বানাত, তার বিরুদ্ধে লেখা।”

খাদ্যে ভেজাল নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল কোর্ট সক্রিয় রয়েছে। কোথাও ভেজাল প্রমাণ হলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।