চাল আমদানির শুল্ক কমে ১০ শতাংশ হচ্ছে

চাল বাজারের অস্থিরতায় লাগাম দিতে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2017, 08:38 AM
Updated : 20 June 2017, 01:44 PM

এতদিন বিদেশ থেকে চাল আনতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হত। সরকার আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে কম্পিটিশন আইন নিয়ে এক কর্মশালার শুরুতেই মন্ত্রী শুল্ক কমানোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে আদেশ জারি হবে। 

“এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায় বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”

তোফায়েল বলেন, কৃষকের নায্য মূল্য নিশ্চিতের জন্যেই শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু হাওর অঞ্চলে বন্যায় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

“তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজকালের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।”

সব মিলে ১৮ শতাংশ শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি কেজি চালের দাম কমপক্ষে ৬ টাকা কমবে বলে তার ধারণা।

সরকারের চালের মজুদ তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির মুখে সংকট মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের চাল আমদানিতে বিনা মার্জিনে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দিচ্ছে সরকার।

সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে জানায়, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংকগুলো কোনো  ‘মার্জিন’ ধার্য করতে পারবে না।

অর্থাৎ, চাল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার সময় ব্যবসায়ীদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা থাকতে হবে না। তারা বাকিতে চাল আমদানি করতে পারবেন এবং চাল দেশে আসার পর ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারবেন।

হাওরাঞ্চলে বন্যা, দেশের বিভিন্ন এলাকায় অতিবৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চালের স্বাভাবিক সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা নিরসনে এই উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।

দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চালের দাম গত তিন মাস ধরে বাড়তে থাকায় কষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সরকারি হিসাবে গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে আট শতাংশের বেশি; চিকন চালের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে চালের কোনো সংকট নেই। কিন্তু মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করা যায়, বাজার দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

“রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী আমাদের সহযোগিতা করেনি।”

সন্তোষজনক বাড়তি মজুদ থাকায় আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালের শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করে সরকার। এর সঙ্গে রেগুলেটরি ডিউটি তিন শতাংশ যোগ হওয়ায় ব্যবসায়ীদের ২৮ শতাংশ শুল্ক গুণতে হয়।

ফলে গত দেড় বছর ধরে বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানি প্রায় বন্ধ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) চাল আমদানিতে এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৫৪ দশমিক ১০ শতাংশ। আর এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। 

কিন্তু এবার বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় সরকারি হিসাবেই হাওরে ছয় লাখ টনের মতো ধান নষ্ট হওয়ায় এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে (১০ টাকা কেজি দরের চাল) সাড়ে সাত লাখ টন চাল বিতরণ করায় সরকারি মজুদ তলানিতে নেমে আসে।

গতবছর এপ্রিলে যেখানে সরকারি গুদামগুলোতে সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল ছিল, সেখানে এ বছর ১৫ জুনে তা ১ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টনে ঠেকেছে।

এই পরিস্থিতিতে বাজারে চালের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় সরকারিভাবে মোট ছয় লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করা হয়। পরে সরকারিভাবে ভিয়েতনাম থেকে আরও আড়াই লাখ টন আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন পায়।

এর মধ্যে প্রথম দেড় লাখ টনের দরপত্র দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার আরো ৫০ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র চাওয়া হয়েছে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ইকবাল খান চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শুভাশীষ বসু।

প্রধান আলোচক ছিলেন ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ এ কে এনামুল হক।

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য এটিএম মুর্তজা রেজা চৌধুরী,  আবুল হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক,  প্রধান আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রক আফরোজা খান, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিষ্টার মোশাররফ হোসেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুল ইসলাম লস্কর।