পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে ফল চাষে নজর দেওয়ার পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে বলেছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী বলেন, “খাদ্যাভাব চলে যাওয়ার পরে স্বাভাবিকভাবে আমাদের দৃষ্টি স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিকে গিয়েছে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কার্যক্রমের উদ্যোগের ব্যবস্থা করছি।
“আমাদের দেশে এখনও পুষ্টির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পুষ্টির অভাবে আমাদের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের বেশ অসুবিধা হয়। পুষ্টির অভাবটাই দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পুষ্টির দিকে আমাদের বিশেষ করে নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
দেশের মানুষের পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা বলেন মুহিত।
“খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি, পুষ্টির ব্যাপারটাতে আমরা সেভাবে ট্যাকেল করতে পারিনি, সেটাতে নজর দেওয়া দরকার। আমাদের দেশের জনগণ উদ্ভাবনশীল এবং নতুন প্রযুক্তিকে সহজভাবে মেনে নেন।”
সেমিনারে যোগ দেওয়ার আগে ফার্মগেইটের আ কা মু গিয়াস উদ্দীন মিল্কী অডিটরিয়াম চত্বরে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও তিন দিনের জাতীয় ফল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন মুহিত।
প্রদর্শনীতে ১৩০ প্রজাতির ফলের একাধিক জাত প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য ফল মেলা উন্মুক্ত থাকবে। মেলা থেকে বিভিন্ন জাতের ফল কেনারও সুযোগ রয়েছে।
সেমিনারে দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের অবদানের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আগে দেশে খাদ্যের অভাব ছিল, কিন্তু সেটা বর্তমানে নেই। এজন্য আমি জনগণকে অভিনন্দন জানাই, তাদের প্রচেষ্টায় এই সুযোগটা আমাদের হয়েছে। অবশ্য আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণা এক্ষেত্রে অবদান রেখেছে।
বছরব্যাপী যাতে ফল চাষ করা সম্ভব হয় সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান মুহিত।
“আগে মাত্র চার মাস আমরা ফল পেতাম, ইতোমধ্যেই চার মাসকে আট মাস করে দিয়েছি, এখন আট মাস ফল হয়। এই উন্নতিটাকে আমাদের ধরে রাখা দরকার।
“দেশে উৎপাদন হওয়া ফলের ৪০ ভাগই আট মাস পাওয়া যাচ্ছে। কি করে আমরা ৮০ ভাগে নিয়ে যেতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে আমরা বছরের আট মাসই এসব ফল পেতে পারি।”
ফলের উপযুক্ত মূল্য পেতে তা দীর্ঘসময় যাতে সংরক্ষণ করা যায় সেদিকটা ভেবে দেখার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
“এখন ফল সংরক্ষণের বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিভিন্ন উপায়ে ফল সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও সেগুলোর প্রসার হচ্ছে।”
‘খাদ্য, পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় দেশি ফলের ভূমিকা’বিষয়ক এই সেমিনারে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে চাল ছাড়াও বিভিন্ন ফসল চাষে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
“শুধু রাইস, রাইস আর রাইস কালচার থেকে আমরা অন্য কালচারে নজর দেওয়া শুরু করেছি। আগে শুধু পেট ভরায় আমাদের জোর ছিল। কৃষি কর্মকর্তাদের আহ্বান করব বিভিন্ন জ্ঞান আহরণ করে তা প্রয়োগ করবেন।
“আজকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পা দিচ্ছি বলেই আমরা রপ্তানির কথা চিন্তা করতে পারছি। আমাদের দরকার ১১৫ গ্রাম (ফল), পাই ৭৬ গ্রাম। সাত গ্রামই পেতাম না, মরিচ দিয়ে ভাত ডইল্যা বাড়িতে একপেট খেয়ে কৃষক ভাই মাঠে যেত।”
দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে অর্থমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন কৃষিমন্ত্রী।
পরে মুহিত বলেন, “আজকের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী, কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টিকারী বেগম মতিয়া চৌধরী। তার সঙ্গে একমঞ্চে উপস্থিত হতে পেরে আমি যারপরনাই খুশি আছি। এটা প্রথমবার নয়, আমি প্রায়ই এই অনুষ্ঠানে আসি।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম মোফাজ্জল হোসেন।
তিনি জানান, বছরে বাংলাদেশে মোট ৬৭ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন ফলের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। মোট চাহিদার ৬৫ ভাগ ফলই আমদানি করতে হয়।
“একজন ব্যক্তির দিনে ১১৫ গ্রাম করে ফল খাওয়ার দরকার হলেও বাংলাদেশের মানুষ গড়ে ৭৫ দশমিক ৪২ গ্রাম করে ফল খেতে পারছেন।”
বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ফলের মধ্যে মে থেকে অগাস্ট মাসে ৬০ শতাংশ, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে ১৯ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে ২১ শতাংশ উৎপাদিত হয় বলে জানান এই অধ্যাপক।
পুষ্টির ঘাটতি মোকাবেলায় বিভিন্ন ধরনের ফলের সরবারহ সারা বছর নিশ্চিত করতে ‘বারমাসী’ ও ‘অনামৌসুমী’ ফলের আবাদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এছাড়া মৌসুমী ফলের প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলে সেসব ফল রপ্তানির সুযোগ বাড়ানোর সুপারিশ করেন অধ্যাপক মোফাজ্জল।
কৃষিসচিব মাঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গোলাম মারুফ এবং কৃষিবিদ কুদরত-ই-খোদা সেমিনারে বক্তব্য দেন।