এখন বেশি সুদের ঋণ নিতে বলছে চীন

শি জিনপিংয়ের সফরে বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেওয়ার যে চুক্তি চীন করেছিল, তার কিছু অংশ এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নিতে বলছে বেইজিং।

জাফর আহমেদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 02:16 PM
Updated : 13 June 2017, 02:16 PM

যার অর্থ নমনীয় সুদে যে ঋণ পাওয়ার কথা ছিল, তা এখন বাংলাদেশকে বেশি সুদে নিতে হবে।

যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে চীনের এই প্রস্তাব পাওয়ার পর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) তাতে আপত্তি জানালেও কর্মকর্তাদের কথায় সুর নরম হওয়ার ইঙ্গিতও মিলেছে।

গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরে এসেছিলেন। তখন আড়াই ডজন উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল চীন।

সম্প্রতি যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের ইকোনমিক ও কমার্শিয়াল কাউন্সেলর লি গুয়াংজুন ওই অর্থের কিছু অংশ বাণিজ্যিকভাবে নেওয়ার প্রস্তাব দেন।

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, লি গুয়াংজুন ইআরডি প্রতিনিধি দলকে বলেন, “আমাদের প্রেসিডেন্টের সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি হয় তাতে সব প্রকল্পই জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা হবে, এরকম কোনো প্রতিশ্রুতি আমরা দিইনি। তাই আমরা বিশাল চুক্তির কিছু অংশ বাণিজ্যিক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব করছি।”

সাধারণত দুই দেশের সরকারি পর্য়ায়ে বিশেষ করে দুই সরকার প্রধানের তত্বাবধানে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ওই ঋণ নমনীয় ঋণ হিসেবে ধরা হয়। বাণিজ্যিক ঋণে সুদের হার হয় বেশি।

শি জিনপিংয়ের সফরের সময় দুই দেশের শীর্ষ বৈঠক (ফাইল ছবি)

যেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি হয়েছে সেসব প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকেও অর্থ জোগান দিতে পারে বলে চীনের কূটনীতিক বলেন।

চুক্তিকৃত ৩৪ প্রকল্পের প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের কত ভাগ নমনীয় আর কতভাগ বেশি সুদের হবে আর কতভাগ বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করবে, তার একটি তালিকা ইআরডিকে পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন চীনের কর্মকর্তারা।

বৈঠকে ইআরডির প্রতিনিধি দলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব শাহ মোহা. আমিনুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জিটুজি ভিত্তিতে ঋণচুক্তি নমনীয় ঋণ হিসেবে ধরা হয়। তাই দুই সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে যেসব চুক্তি হয়েছে, তার সবগুলোই নমনীয় ঋণের আওতায় ধরা হবে।

“চীনা দূতাবাসের ওই বৈঠকে আমি পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা বাণিজ্যিক ঋণের জন্য প্রস্তুত নই। যেহেতু দুদেশের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে চুক্তি হয়েছে, সেহেতু সব প্রকল্পই নমনীয় ঋণের আওতায় বাস্তবায়ন হতে হবে।”

এই অবস্থান বৈঠকে প্রকাশ করলেও সুর নরম হওয়ার ইঙ্গিত মেলে তার পরের কথায়।

“অল্প কিছু প্রিফারেন্সিয়াল বাইয়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) বা বেশি সুদের ঋণ হতে পারে। আমরা কোন ঋণ কত নেব, তার একটা তালিকা শিগগির চীনা দূতাবাসে পাঠাব।”

এক প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত সচিব জানান, পিবিসি ঋণের জন্য ৪ শতাংশের বেশি সুদ দিতে হয়। আর গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল) ঋণের জন্য ২ শতাংশ সুদ দিতে হয়।

শীর্ষ বৈঠকের পর একটি চুক্তিতে সই করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী (ফাইল ছবি)

চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময়ে যে ৩৪ প্রকল্পের জন্য ঋণচুক্তি হয়েছিল, তার আটটি অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানিয়েছে ইআরডি। এই আট প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যয় ৮৯৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার।

অতিরিক্ত সচিব শাহ আমিনুল বলেন, “আমরা আটটি প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কথা বলেছি। এরমধ্যে জরুরি হিসেবে পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পটিতে সবার আগে অর্থায়নের অনুরোধ জানিয়ে আসছি।”

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।

অগ্রাধিকারের অন্য প্রকল্পগুলো হল- ৫৫০ কোটি ডলারের ‘ইনস্টেলশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প’, ১৬০ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘ঢাকা-সিলেট ফোর লেইন হাইওয়ে প্রকল্প’, ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘ইনফো সরকার-৩ প্রকল্প’, ১৬৫ কোটি ডলার ব্যয়ের ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্প’, ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেংদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি প্রকল্প’, ২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয়ের ‘মডার্নাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন্স নেটওয়ার্ক অব ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্প’ এবং ২৮ কোটি ডলার ব্যয়ের ‘চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ইন চিটাগাং প্রকল্প’।