আবগারি শুল্ক নিয়ে সংসদে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস

ব্যাংক হিসাবে বাজেটে প্রস্তাবিত বাড়তি আবগারি শুল্ক তুলে নেওয়ার বিষয়ে নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে ‘চিন্তা-ভাবনা’ চলছে বলে আশ্বস্ত করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2017, 08:52 AM
Updated : 13 June 2017, 10:03 AM

এবিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে অর্থমন্ত্রী জানানোর কয়েক দিন পর মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাজেট নিয়ে সাধারণ আলোচনায় তিনি এ আশ্বাস দেন।

মান্নান বলেন, ব্যাংক হিসাবের উপর আবগারি শুল্ক ১৯৪৭ সাল থেকে আরোপিত আছে। বাজেটে শুধু পরিমাণ পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

এই প্রস্তাবের ন্যায্যতা নিয়ে যেসব প্রশ্ন ও সমালোচনা উঠেছে তার দিকে ইংগিত দিয়ে তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস এবিষয়ে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে পারব। আমরা আশ্বস্ত করছি, এ সম্বন্ধে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তা-ভাবনা চলছে।”

বিগত কয়েক দিনে সংসদের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা আমলে নিয়ে মান্নান বলেন, “আমাদের নেতৃত্ব, যিনি সরকার পরিচালনা করেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী বোবা কালা নন। এরা জনগণের ম​ধ্যে বসবাস করেন। জনসমাজে বসবাস করেন, এরা সংসদের নেতা।”

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ১ জুন ঘোষিত বাজেটে ব্যাংক গ্রাহকদের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে।

 পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরাও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে।

জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন সাংসদও অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

 তবে অর্থমন্ত্রী নানামুখী আলোচনার মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জানান, এই  শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমানোর সুযোগ নেই। 

মান্নান বলেন, বাজেট নিয়ে ভীতি নেই। আলোচনা আছে, সমালোচনাও আছে। সংসদ সদস্যরা নানাভাবে বাজেটের চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন, নানা প্রস্তাব দিচ্ছেন।

“আমি মন্ত্রণালয়ের কর্মী হিসেবে কথা দিচ্ছি সব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে। আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাজেট যখন পাস হবে তখন প্রত্যেকটি বিষয় পুনরায় পর্যালোচনা করা হবে।”

ভ্যাটের হার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও এর ‘ন্যায্যতা ও সাম্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে এ মুহূর্তে ১৬৯টি ​দেশে ভ্যাট প্রচলিত আছে; গড় হার ১৪ দশমিক ০৮।

“আমরা সেখানে ১৫ শতাংশে আছি। এটা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে।”

‘আগুনে ঘি ঢেলেছেন অর্থমন্ত্রী’

বাজেট নিয়ে সাধারণ আলোচনায় ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, “আবগারি শুল্ক নিয়ে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে তিনি আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। ভোটের আগে বর্ধিত আবগারি শুল্ককে মানুষ অন্যায় আচরণ হিসেবে দেখে। ফলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।”

“… অর্থমন্ত্রীকেও তো নির্বাচন করতে হয়, জনগণের কাছে যেতে হয়।”

করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির হিসাব করলে দেখা যাবে করমুক্ত আয়সীমা আসলে কমে গেছে।

“এই বাজেট মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়াবে। ভোট সামনে রেখে এই বাজেটের কৌশল মোটেও সুখকর নয়। শুল্ক হঠাৎ করে বাড়ানো কমানো হয়। এটা বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য করা হয়।”

ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্কের আগের হার বহাল রাখার দাবি জানিয়ে বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ব্যাংক হিসাবে আবগারি বাড়ানো হয়েছে। মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টি হয়েছে। টাকা কেটে নেবে এই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।...

“এর ফলে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে। মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে চাইবে না।”

সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো ‘ভুল সিদ্ধান্ত হবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি

এই বাজেটে কেউ খুশি হতে পারেনি মন্তব্য করে তাজুল বলেন, “বাজেট মধ্যবিত্তের ওপর নির্ভর করে প্রণয়ন করা হয়েছে। .. সব করদাতার ওপর করের প্রস্তাব বাড়বে। ব্যাংকের টাকা রাখা এবং বিমানের টিকেটর ওপর কর বাড়ানো হয়েছে।

বাজেট আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শামসুল হক টুকু, সামশুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবু ও ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ প্রমুখ।