সাংসদদের জন্য বাজেট বিষয়ক প্রশিক্ষণের দাবি

বাজেট সম্পর্কে অনেক সংসদ সদস্যের ‘স্পষ্ট জ্ঞান’ নেই মন্তব্য করে তাদের জন্য এ বিষয়ক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক তৈয়বুর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 June 2017, 03:31 PM
Updated : 9 June 2017, 03:38 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন সিনেট কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক তৈয়বুর বলেন, “যাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয় সেই সংসদ সদস্যদের অনেকেরই বাজেট বিষয়ে স্পষ্ট ও ভালো জ্ঞান নেই।

“বাজেটের বিষয়ে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সারা বছর তারা বাজেটের ওপর আলোচনা করবেন। তা না হলে সুষ্ঠু বাজেট ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।”

সংবাদ সম্মেলনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে গবেষণা কেন্দ্রটির বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও সুপারিশ লিখিত বক্তব্য আকারে তুলে ধরেন এর পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বাজেটের বরাদ্দ ‘পরিপূর্ণ ও সফলভাবে’ ব্যয় করার জন্য অর্থবছর জুলাই-জুনের বদলে এপ্রিল-মার্চ করার পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ।

তিনি বলেন, অর্থবছরের শেষের দিকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পর্যায়ক্রমিক সমাপ্তি করতে গিয়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

“শেষ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় দেখানো হয়। অথচ আমাদের আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রকৃতি অনুসারে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময় অপেক্ষাকৃত বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ থাকে, যা উন্নয়নকাজে বাধাস্বরূপ।

“আর্থিক বাস্তবতার বিবেচনায় এবং বাংলা দিনপঞ্জির ঐতিহ্য অনুসরণ করে অর্থবছরের সময়সীমা এপ্রিল-মার্চ করলে সার্বিকভাবে বাজেট আরও সফল বাস্তবায়ন হবে।”

জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতের সঙ্গে অন্য খাতগুলো না জড়িয়ে ‘স্বতন্ত্র খাত’ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান অধ্যাপক আবু ইউসুফ।

তিনি বলেন, “প্রতি বছরই শিক্ষা খাতের বাজেট দেওয়া হয় ধর্ম কল্যাণ, পরিবার কল্যাণ বা তথ্য প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতকে সংযুক্ত রেখে। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।

“তদুপরি শিক্ষা খাতের বাজেট প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, মাদ্রাসা, কারিগরি, উচ্চশিক্ষা ইত্যাদি বিবিধ খাতে পুনঃবণ্টন করা হয় বলে খাতের বরাদ্দ বাস্তবে অপ্রতুলই থেকে যায়।”

বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গবেষণা খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ‘খুবই কম’ উল্লেখ করে একে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটে নারীদের জন্য ‘উৎসাহমূলক’ কোনো ঘোষণা নেই বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই অধ্যাপক বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে নারীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।

“নারীদের জন্য কোনো কর ছাড় নেই, করমুক্ত আয়সীমার বৃদ্ধিও ঘটেনি।সেই সাথে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো বিশেষ পরিকল্পনাও রাখা হয়নি।”

পৃথক নারী উন্নয়ন ব্যাংক চালু, নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি, ব্যাংক হিসাবে বিশেষ শুল্ক রেয়াত ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭-৮ শতাংশ করার পরামর্শ দিয়েছে সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি।  

ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে থাকা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের হার বৃদ্ধি ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জন্য ‘অনৈতিক’ ও ‘হতাশার’ বলেও মনে করে এই গবেষণা কেন্দ্রটি।

আবু ইউসুফ বলেন, “ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবে লেনদেন, হিসাব স্থিতি ও স্থায়ী আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক হার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ক্ষুদ্র আমানতকারীদের জন্য হতাশার। এটা অনৈতিক। এর পুরোটাই তুলে দেওয়া উচিত।

“এই শুল্ক হার নিম্নবিত্তদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে। এর ফলে বিকল্প লেনদেন ও বিকল্প মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি বাড়বে, ছায়া অর্থনীতি সৃষ্টি হবে এবং অর্থনীতির বৈধ কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সেন্টারের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আমরা এক বছর পর নিজেদের কোথায় দেখতে চাই, সেটাই বাজেটে পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু বাজেটে উচ্চশিক্ষার যথাযথ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কিছু হচ্ছে না।”