ভ্যাট আর শুল্ক নিয়ে দুশ্চিন্তায় তরুণ উদ্যোক্তারা

তথ্য প্রযুক্তি ও ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন খাতে নতুন শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন তরুণ উদ্যোক্তারা; তাদের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে একমত হয়ে ইন্টারনেটের উপর শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2017, 06:21 PM
Updated : 8 June 2017, 06:21 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে তারুণ্যের বাজেট শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এই দুশ্চিন্তার কথা জানান বিভিন্ন খাতের এসব উদ্যোক্তা।

বৈঠকে বেসিসের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল বলেন, “আমরা একদিকে ই-কমার্সকে বিস্তৃত করার কথা বলছি, কিন্তু এর উপরে বসিয়ে দিয়েছি ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট কর। আবার এর সঙ্গে যুক্ত হবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। যার ফলে তরুণদের উদ্যোগই বাধাগ্রস্ত হবে।”

একইসঙ্গে বিদেশ থেকে আমদানি করার সফটওয়্যার পণ্যের উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার বিরোধিতা করে তিনি বলেন, দেশীয় খাত বিকশিত করার স্বার্থে সফটওয়্যারে আমদানির উপর সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা অর্থমন্ত্রী বলেছেন। কিন্তু ঢালাওভাবে শুল্ক আরোপ করলে সেটা ডাটাবেইস ও অপারেটিং সিস্টেমকেও প্রভাবিত করবে।

“সেজন্য সফটওয়্যার আমদানির দেশীয় খাতকে বিকশিত করার স্বার্থেই সুনির্দিষ্টভাবে শুল্ক আরোপ এবং কিছু ডাটাবেস ও অপারেটিং সিস্টেমকে প্রভাবিত করে এমন পণ্য শুল্কের বাইরে রাখা দরকার।”

আলোচনায় স্টেপ সুজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম কবির বলেন, “আমরাও ভ্যাট দিতে চাই। কিন্তু সেটার জন্য যথাযোগ্য পদ্ধতি কি সরকার ব্যবস্থা করতে পেরেছে? সেটা কবে নাগাদ করতে পারবে সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

“ইলেট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার(ইসিআর) প্রদান করার কথা থাকলেও সরকার সেটা প্রদান করতে পারেনি। যার ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা।”

তিনি বলেন, “যারা নিবন্ধনকৃত ভ্যাটদাতা তারাই কেবল নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে অনেকে থেকে গেছে তাদেরকে অন্তর্ভূক্তির কোনো উদ্যোগ নেই।”

এক লাখ টাকার ভ্যাট দিতে গিয়ে অনেকে সময় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন এই তরুণ ব্যবসায়ী।

একজন বক্তার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে নবায়ন যোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিরোধিতা করেন সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকও।

তিনি বলেন, “২০২১ সালের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সৌরশক্তি থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যেখানে এই খাত বিকশিত করার কথা, সেখানে এর উপর নতুন করে কর আরোপ সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়ায়।”

নাহিম রাজ্জাক বলেন, “যারা নিয়মিত ভ্যাট দেন তাদেরকে বারবার চাপ না দিয়ে প্রণোদনা দেওয়া উচিত। তা নাহলে ভ্যাট দান পদ্ধতি ভালোভাবে এগোবে না।”

মোবাইল ফোন আমদানীতে শুল্ক দ্বিগুণ করার বিরোধিতায় দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক তারিন হোসেন বলেন, “আমরা বলছি, এটা প্রযুক্তি নির্ভর বাজেট। তাহলে বাংলাদেশে বিকশিত খাত হিসাবে মোবাইল ফোনের উপর আরোপিত শুল্ক দ্বিগুণ করার হলো কেন?”

ইন্টারনেট ব্র্যান্ডউইডথ ফ্রি করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালক নাভিদ হক বলেন, “ইন্টারনেট ব্র্যান্ডউইডথের উপর ১৫ শতাংশ করারোপ করা হলে আর কত টাকা-ই-বা আসে। ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা দাম কিন্তু কমাচ্ছি না, তার উপরে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শুল্ক বাড়িয়ে দিচ্ছি।

“আবার আমাদের যে ব্র্যান্ডউইডথ সেটা কিন্তু ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে যাচ্ছে না, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম ঢাকায় এক রকম, ঢাকার বাইরে এক রকম। এটা কিন্তু বিশাল সমস্যা।

“বিটিসিএলের অনেক ক্যাপাসিটি আছে। এটা ব্যবহার হচ্ছে না। বিটিসিএল হয়তো কিছু টাকা ক্ষতি করবে, কিন্তু ইন্টারনেটতো সহজ করার উচিত।”

মোবাইল ইন্টারনেটে জোর দেওয়ার পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের প্রসারেও উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান নাভিদ হক।

অন্যদিকে, ভ্যাট ১৫শতাংশ করাকে ইতিবাচক হিসাবে মত দিয়েছেন লোটাস কামাল গ্রুপের পরিচালক নাফিসা কামাল; তবে কর আদায় ব্যবস্থা সহজ করার দাবি তোলেন তিনি।

“আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করি, আমাদের ভ্যাট দিতে হবে। সেসঙ্গে কর আদায় ব্যবস্থা কীভাবে সহজ করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।”

অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, “ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমরা তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ থেকে বারবার সেটা চেষ্টা করেছি, এমনকি এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকও করেছি। সেখান আমরা বারবার বলেছি, আপনারা ভয়েসের উপর একটু বাড়ান, এরপর ব্যালেন্স করেন।”

সফটওয়্যার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হলেও ৯৪টি পণ্যকে সম্পূর্ণরূপে শুল্কের আওতার বাইরে আনার সমালোচনা করেন তিনি।

স্যামসাংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকার দেশে অ্যাসেম্বলিং কারখানা করার সুযোগ করে দিচ্ছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল(জেসিআই) ঢাকা উত্তরের সহযোগিতায় দৈনিক সমকাল ওই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী, জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ, জেসিআই বাংলাদেশের উপদেষ্টা দাতা মাগফুর বক্তব্য দেন।