ভ্যাট আইন আরও ‘বোধগম্য’ করার দাবি ক্যাবের

ভ্যাট আইনে অনেক জটিলতা ও দুর্বোধ্যতা রয়েছে জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব বলছে- ঝামেলা এড়াতে অস্পষ্টতা দূর করে আইনকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও বোধগম্য করা প্রয়োজন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2017, 01:16 PM
Updated : 8 June 2017, 01:16 PM

ভ্যাট আইন নিয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধিদের নিয়ে এনবিআর আয়োজিত এক কর্মশালায় একথা বলেছেন সংগঠনটির জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম।

তিনি বলেন, “নতুন ভ্যাট আইন আসলেই জটিল। সব মানুষের পক্ষে এই আইন বুঝা সম্ভব নয়। এই সুযোগে অনেকেই অনেক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফায়দা লুটতে পারে। ভোক্তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে পারেন।”

ভ্যাট আইনে জ্বালানি খাতের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ভোক্তারা বিদ্যুৎ বিলের ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয়। বাস্তবায়নাধীন ভ্যাট আইনে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। তাতে ভোক্তাদের আপত্তি রয়েছে। আবার ভ্যাটের হিসাবও অস্পষ্ট।

“ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল, কেরোসিন, জেট ফুয়েলের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের কাছ থেকে মূল্যহারের সাথে সমন্বয় করে ব্যবসায়ীরা কিভাবে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করবেন, তার হিসাব স্পষ্ট হওয়া দরকার।”

তিনি বলেন, পণ্য বা সেবার মূল্য যেখানে অনির্ধারিত সেখানে ভ্যাট আদায়ের বিধান কিভাবে কার্যকর হবে তা ভোক্তারা এখনও জানতে পারেনি। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালুর ক্ষেত্রে মুখ দেখে দেখে লাইসেন্স দেওয়া হয়। সেখানে কিভাবে প্রতিযোগিতামূলক বাজার প্রতিষ্ঠা হবে তা বোধগম্য নয়।

এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, “নতুন ভ্যাট আইন জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়াবে না বরং কমাবে। সত্যিকারের ভ্যাট প্রতিষ্ঠিত হলে, ব্যবসায়ীরা সহযোগিতা করলে দুশ্চিন্তা থাকবে না।

“অনেকদিন ধরেই আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছি, ভ্যাট আইন কার্যকর হলে বিদ্যুতের দাম কোনোভাবেই বাড়বে না। আমরা সেটা রাখব। নতুন ভ্যাট আইনে একমাত্র রড ছাড়া আর কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না।”

ক্যাবের সহ-সভাপতি নাজের হোসেন ও মহাসচিব অ্যাড. হুমায়ুন কবিরও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, “ভ্যাটের বিধানগুলো সাধারণ ভোক্তাদের কথা বিবেচনা করে আরও সহজতর করা দরকার। আইন সহজ হবে, ভ্যাট পরিমাণে কম হবে, ভোক্তাদের পক্ষ থেকে এটাই আমাদের দাবি।”

কর্মশালার প্রধান অতিথি ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, “ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে বলেই সবার ধারণা। কিন্তু জনবান্ধব করনীতি উপহার দিতে নতুন ভ্যাট আইনে কোনো পণ্যের দাম বাড়বেনা বলেই এনবিআর কর্মকর্তারা বার বার শোনাচ্ছেন। এটা একটা স্বস্তির কথা।”

অনেক ব্যবসায়ী ভোক্তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে সেটা আর সরকারি কোষাগারে জমা দেন না। এনবিআরকে সেদিকে নজর দিতে হবে বলে জানান তিনি।

“নিত্যপণ্যে ভ্যাট থাকেবে না বলা হলেও এনিয়ে অনেক হাস্যকর ঘটনা আলোচনায় আসছে। একদিকে ঘোড়া-গাধার মাংসকে নিত্যপণ্যে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। চা, টুথপেস্ট, সাবানের মতো পণ্যগুলো কি নিত্যপণ্য নয়? এগুলোর ভ্যাট কেন ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হবে,” প্রশ্ন রাখেন গোলাম রহমান।

ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক না বাড়িয়ে ব্যাংক খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি কমানোর দাবি জানান সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা।

“ব্যাংকগুলোতে জমা টাকার ওপর সুদহার ৪/৫ শতাংশ। আর মুদ্রাস্ফীতির হার ৫ থেকে ৬ শতাংশ। তাহলে ব্যাংক জমায় আদৌ কোনো লাভ হয়? মানুষ তো লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা রাখে। ব্যাংক সেই টাকা দিয়ে ব্যবসা করবে, গ্রাহকদের লাভের ভাগ দেবে। কিন্তু বাস্তবে তার কতটুকু হয়? উল্টো আবগারি শুল্কের হার বাড়িয়ে গ্রাহকের লাভের অংশে এমনকি মূল টাকায় ভাগ বসানো হচ্ছে।

“আমরা ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে বড় বড় দুর্নীতির খবর শুনি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ যারা টাকা জমা রেখে ব্যাংককে সমৃদ্ধ করছে তাদের টাকায় মোট অংকের আবগারি শুল্ক বসানো হচ্ছে।”

এ প্রসঙ্গে এনবিআর সদস্য জাহাঙ্গীর বলেন, “ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্ক ব্রিটিশ আমলেও ছিল। পাকিস্তান আমালেও ছিল। কিন্তু সাধারণ মানুষ তা জানত না। এতদিন ২০ হাজার টাকার জন্যও আবগারি শুল্ক দেওয়া লাগত। কিন্তু এখন এর সীমা ৫ গুণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। এই ইতিবাচক পদক্ষেপটি কারও আলোচনায় আসছে না।”

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, “করদাতাদের মনের কথা শুনতে সারা বছর এই ধরনের মতবিনিময় চালিয়ে যাওয়া হবে। পর্যায়েক্রমে জেলা পর্যায়েও এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।

“ভ্যাট আইনের অস্পষ্টতা দূর করা এই আলোচনার উদ্দেশ্য। নতুন আইনে জনগণকে অনেক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এগুলো তাদের বুঝাতে হবে।”