আবগারি শুল্ক নিয়ে খামোখা কথা: মুহিত

ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে ব্যাংক হিসাবের ওপর আরোপিত বর্ধিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি এলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ওই শুল্ক ‘নতুন কিছু নয়’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2017, 01:36 PM
Updated : 6 June 2017, 02:51 PM

মঙ্গলবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটাতো খামোখা কথা। এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। আমরা বরং সীমা পরিবর্তন করেছি। এবার সীমা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে কিছুটা রেটও বাড়ানো হয়েছে।”

অর্থমন্ত্রী গত ১ জুন ঘোষিত বাজেটে ব্যাংক গ্রাহকদের ওপর বাড়তি হারে আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

তার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকলে আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হবে।

পাশাপাশি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেনে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরাও আবগারি শুল্ক বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করেছেন না। তারা বলছেন, শুল্ক বাড়লে লেনদেনের অবৈধ মাধ্যম উৎসাহিত হবে। জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় কয়েকজন সাংসদও অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী ২ জুন বাজেটপরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ব্যাংকে যাদের এক লাখ টাকা রাখার সামর্থ্য আছে তারা সম্পদশালী। তারা বাড়তি ভারটা বহন করতে পারবেন, সমস্যা হবে না।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বলেছেন, বাজেটে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করা হবে।

মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘ফরেইন এইড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (এফএএমএস) সফটওয়্যারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাজেট নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।

বাজেটে পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি থাকার যে অভিযোগ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় করেছে সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অর্থমন্ত্রী ‘রাবিশ’ বলে তা উড়িয়ে দেন।

সরকার চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রাক্কলন করলেও বিশ্ব ব্যাংক বলছে, তা ৬ দশমিক ৮ শতাংশের বেশি হবে না। এ বিষয়ে মুহিতের উত্তর, “বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি প্রবৃদ্ধি নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। কিন্তু আমাদের পারফরম্যান্স তাদের চেয়ে বেটার।”

তিনি বলেন, “আগামী সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে চূড়ান্ত ফিগার দেওয়া হবে। আমি আশা করছি চূড়ান্ত হিসাবেও প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ ভাগ হবে।”

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ সময় বলেন, “প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে বিতর্কের কোনো বিষয় দেখি না। বিশ্ব ব্যাংক ক্লিয়ারলি বলে দিয়েছে, তাদের যে ফিগার, সেটা একটা এস্টিমেশন, একটা প্রোজেকশন থেকে। কতগুলো অনুমান থেকে তারা এ ফিগারগুলো দিয়েছে।”

আর সরকার যেসব তথ্য দিয়েছে, তা জরিপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান। 

এর আগে এফএএমএস সফটওয়্যারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিদেশি সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অনলাইন যোগাযোগ ও তথ্যভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে এই সফটওয়্যার। 

অর্থমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তার অর্থে নেওয়া প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য ইআরডি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পারবে।

“এতে আমি খুব খুশি। এখন থেকে ইআরডি ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আপডেট জানতে পারবে। এর ফলে জবাবদিহিতা বাড়বে।”

বিদেশি সহায়তার ব্যবহার, চলমান প্রকল্পের অগ্রগতি, প্রকৃত অর্থছাড়, পরীবিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য এ সফটওয়্যারে সন্নিবেশিত থাকবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।