পিপিপি প্রকল্প, সম্মানী-পুরস্কারের আয়কর নেই

আগামী বছরের বাজেটে আয়কর কাঠামো মোট দাগে অপরিবর্তিত থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে আয়কর থেকে অব্যাহতি প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 03:39 PM
Updated : 1 June 2017, 03:48 PM

বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় সংসদে যে বাজেট পেশ করেছেন, তাতে বিদ্যমান ব্যক্তিশ্রেণির আয়কর ও কোম্পানি কর কাঠামো বহাল রাখা হয়েছে।

উপরন্তু সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাত ও মুক্তিযোদ্ধার ভাতা, দুঃস্থ ভাতার মতো কল্যাণ ভাতা ও বৃদ্ধাশ্রমের আয়ে কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেছেন তিনি।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, “অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় নির্মিত ন্যাশনাল হাইওয়ে, এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, এলিভেটেড অ্যান্ড অ্যাট-গ্রেড এক্সপ্রেসওয়ে, সাবওয়ে ইত্যাদি অবকাঠামো খাতকে শর্তসাপেক্ষে কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি।

তথ্য-প্রযুক্তির ৮টি নতুন খাতকে এবং বিকল্প বিনিয়োগ তহবিলকে কর অব্যাহতির আওতায় এনেছেন অর্থমন্ত্রী।

মুহিত বলেন, “সামাজিক দায়িত্ব আমাদের করনীতির অন্যতম ভিত্তি। গত বাজেটে আমরা সামাজিক দায়িত্ব পালনের অনেক ক্ষেত্রে কর সুবিধার প্রস্তাব করেছিলাম।”

আগামী বছরের বাজটে জন্য আরও কিছু কর অব্যাহতির প্রস্তাব করেন তিনি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-

#  বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রাপ্ত সম্মানী বা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, দুঃস্থভাতা বা অনুরূপ কল্যাণভাতার উপর কর অব্যাহতি;

#  সকল জাতীয় পদক/পুরস্কারের অর্থ ও সুবিধাকে কর অব্যাহতি;

#  ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে উন্নত মানের বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২৫ লাখ  টাকার যে সর্বোচ্চ ক্রয় সীমা প্রত্যাহার;

#  বৃদ্ধাশ্রমের আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান; এবং

#  পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখার স্বার্থে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান।

তৈরি পোশাক খাতের যে সব কোম্পানি-করদাতার কারখানা পরিবেশসম্মত (গ্রিন বিল্ডিং সার্টিফিকেট) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, সে সব কোম্পানির করহার কমিয়ে ১৪ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

মুহিত বলেন, “টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য রাখার লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ দূষণরোধ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমরা এবারের করনীতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পৃক্ত করছি।”

এবারের বাজেটেও করমুক্ত আয়সীমা একই রাখার প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করায় যাদের বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম, আগের মতোই তাদের কোনো কর দিতে হবে না।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “ব্যক্তি-করদাতার নীট পরিসম্পদের প্রদর্শিত মূল্যের ভিত্তিতে আরোপিত সারচার্জের বিদ্যমান হার বহাল রাখার প্রস্তাব রাখছি।”

সারচার্জের হার না বাড়ায় নীট পরিসম্পদের মূল্যমান ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জের বিদ্যমানা হার ৩ হাজার টাকা বহাল রয়েছে।

অর্থমন্ত্রী কোম্পানি করের হার না বাড়ালেও সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী করদাতার ব্যবসায় থেকে অর্জিত আয়ের উপর ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছেন।

এর পেছনে যুক্তি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সিগারেট, বিড়িসহ সকল তামাকজাত পণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব পণ্য ভোগের কারণে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়।”