যা যা আছে মুহিতের বাজেট প্রস্তাবে

বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘মহাসড়কে’ এগিয়ে নিতে সরকার নতুন অর্থবছরে কত টাকা খরচ করতে চায়, সেই অর্থ কোথা থেকে আসবে, জনগণকে কোন কোন খাতে কর বা শুল্ক গুনতে হবে, সেই খতিয়ান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। তার পূর্ণাঙ্গ বাজেট বক্তৃতা অবিকৃতভাবে পাঠকের জন্য প্রকাশ করা হল।

>>বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 10:09 AM
Updated : 1 June 2017, 10:18 AM

পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার নামে

উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের

মাননীয় স্পীকার

১।    আমি আপনার সানুগ্রহ অনুমতিক্রমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট এ মহান সংসদে পেশ করতে দাঁড়িয়েছি।

প্রথম অধ্যায়: সূচনা ও প্রেক্ষাপট

২।    প্রথমেই পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি এজন্য যে, তিনি আমাকে আমার একাদশ বাজেট এই মহান সংসদে পেশ করার সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতের কোন সীমা নেই বলেই আমার এই বয়সেও আমি একটি বাজেট প্রণয়নের মত কাজ করতে পারছি। আমি তারপরেই শ্রদ্ধা-নিবেদন করছি আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আজকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের বাজেট পেশ করার সুযোগ হত না যদি না তিনি এই স্বাধীন-সার্বভৌম দেশটাকে প্রতিষ্ঠা না করে যেতেন। শ্রদ্ধা-নিবেদন করছি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য সহকর্মী জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং শহীদ এএইচএম কামরুজ্জামানকে। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের নির্যাতিত অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা ও মা-বোনদের। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে স্মরণ করছি পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে শাহাদত বরণকারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবসহ বঙ্গবন্ধুর স্বজন ও অন্যান্য শহীদদের। স্মরণ করছি ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬-তে শুরু হওয়া ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ জনগণের অধিকার আদায়ের বিভিন্ন আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী শত সহস্র শহীদদের।

৩।   অর্থনৈতিক সাফল্যের এক ঐতিহাসিক মূহুর্তে আমি এবারের বাজেট উপস্থাপন করছি। আমাদের দ্বিতীয় মেয়াদে এটাই সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। আগামী অর্থবছরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে সেই বাজেটে নতুন কোন দিক-নির্দেশনা বা দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ কম থাকবে। তাই প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে আমাদের এ যাবৎ অর্জিত সাফল্যের মর্ম অনুধাবনের জন্য একটু পিছন ফিরে দেখা দরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণমুক্ত ও বৈষম্যহীন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর জীবন দর্শন ও রাষ্ট্র দর্শনের মৌল নীতি ছিলো মানুষের প্রতি ভালবাসা আর বাঙালির প্রতি চিরন্তন মমত্ববোধ, অন্তর্ভূক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থার স্বপ্ন। তাঁর লেখা থেকে উদ্ধৃত করছি:

“একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি।
একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।
এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা,
যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।”

১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করি এবং প্রায় সাথে সাথেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেন বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারিতে। দীর্ঘকালের অবহেলিত একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ দেশ পুনর্গঠনে তিনি তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা ও দুরদর্শিতার যে নজির রেখেছেন তা সমসাময়িক ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু উপহার দেন আধুনিক ও অগ্রসর একটি সংবিধান। এতে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি নির্ধারণ করেন, যাতে বঞ্চিত গণমানুষের নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যহীন ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হয়।

৪।   পঙ্গু ও ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে তিনি যুগোপযোগী ও বাস্তবানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শূন্যপ্রায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ হাতে নিয়ে তিনি খাদ্য ও বস্ত্রের সংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গণমুখীকরণ ও বিস্তৃতিকরণ, দরিদ্রবান্ধব আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করেন। কূটনীতি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে তিনি তাঁর প্রজ্ঞা ও দুরদর্শিতার ছাপ রাখেননি। জাতি এর ফল লাভও শুরু করেছিল। অনেকের হয়তো মনে আছে, ১৯৭৪ সালে আমাদের মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭.৭ শতাংশ মতান্তরে ৯.৬ শতাংশ। আজ বলতে দ্বিধা নেই, প্রবৃদ্ধির এ ধারা যদি অব্যাহত থাকতো তাহলে আমরা ১৯৯৬-৯৭ সালেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতাম। আর এখন আমাদের অবস্থান থাকতো অনেকটা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। দেশি-বিদেশি হাজারো ষড়যন্ত্রের মুখেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যখন অপ্রতিরোধ্য তখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর সূচিত গণমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অপ্রতিরোধ্য ধারা অকস্মাৎ রুদ্ধ হয়ে যায়।

মাননীয় স্পীকার

৫।   দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোয়ালিশন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে। বাংলাদেশে সূচিত হয় গৌরবময় সাফল্যের আর এক নতুন অধ্যায়। পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায়। আর্থিক ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসে শৃঙ্খলা। প্রতিষ্ঠিত হয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য। স্বয়ম্ভরতা আসে খাদ্য উৎপাদনে। পূর্ব এশিয়ার আর্থিক সঙ্কটের অভিঘাত সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি থাকে সংহত ও সুরক্ষিত। দুই দুইটি প্রলয়ংকরী বন্যার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা বিপন্ন হলেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। এ সময় প্রবৃদ্ধির গড় হার বৃদ্ধি পায়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সুদৃঢ়করণের মাধ্যমে এর সুফল পৌঁছে দেওয়া হয় সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে।

৬।    দেশের অগ্রযাত্রা আবারো হোঁচট খায় ২০০১ সালে। এ সময় বিএনপি জোট সরকারের আমলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। দেশের মেরুদন্ড কৃষক প্রাণ হারায় সারের দাবিতে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। বাধাগ্রস্ত হয় দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ। বেড়ে যায় দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমশই নিচে নামতে থাকে। এ ধরনের নিদারুণ সংকটের মুখে আমরা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণ করি। নানাবিধ অভ্যন্তরীণ ও বহিঃ অভিঘাতে দেশের অর্থনীতি এ সময় ছিল মহাসংকটে। একদিকে ছিল উপর্যুপরি বন্যা ও সাইক্লোনের তান্ডব, অন্যদিকে বির্পযস্ত হয়ে পড়েছিল বিদ্যুৎ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে, দেশের শিল্প ও কৃষিখাত ছিল অনেকটা নিস্তেজ। থেমে গিয়েছিল গ্রামীণ অর্থনীতির কর্মচাঞ্চল্য। অন্যদিকে ২০০৮ সাল হতে শুরু হয় বিশ্ব মন্দা। এ সময়ের আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমে যায়। রপ্তানি ও প্রবাস আয় চ্যানেলে এর ঢেউ আছড়ে পড়ে। বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের প্রকৃত উৎপাদন সম্ভাব্য উৎপাদনের চেয়ে বেশ নিচে নেমে যায়। আবার, অভ্যন্তরীণ সরবরাহ সংকটের সাথে যোগ হয় আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, সার ও খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধি। এতে করে দেশের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতির যুগপৎ বৃদ্ধি জনজীবনে দুর্দশা বয়ে আনে।

মাননীয় স্পীকার

৭।   আপনি জানেন, অর্থনীতির এই ঘোর-অন্ধকার সময়ে বঙ্গবন্ধুর অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র দর্শন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সামনে তুলে ধরেন ‘দিন বদলের সনদ’, যাতে তিনি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প উপস্থাপন করেন। ২০০৯ সালের শুরুতে জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে আমরা সরকার গঠন করি। দিন বদলের সনদ -এর আলোকে প্রণীত হয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। বিপুল সফলতার মধ্য দিয়ে ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) সমাপ্ত করি। এর পর পদার্পণ করি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি)। আমরা ইতোমধ্যেই টেকসই উন্নয়নের প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের সাথে সম্পৃক্ত লীড ও সহায়ক মন্ত্রণালয়গুলোকে চিহ্নিত করেছি। এ ক্ষেত্রে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদে মন্ত্রণালয়গুলো সংশ্লিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তাও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও মন্ত্রণালয়/বিভাগের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর অন্তর্গত কর্মকৃতি নির্দেশকসমূহের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া, মন্ত্রণালয়/বিভাগের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতেও এর প্রতিফলন ঘটানো হচ্ছে।

মাননীয় স্পীকার

৮।   বিগত ৮ বছর আমাদের অর্থনীতির অগ্রযাত্রার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। পদে পদে আঘাত এসেছে। রাজনৈতিক প্রতিবাদের নামে সহিংস সন্ত্রাসের দ্বারা ব্যাপকভাবে সম্পদ ধ্বংস এবং জীবনহানি ঘটানো হয়েছে। অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমার সাহায্যে মানুষ পোড়ানোর মতো জঘন্য ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চালানো হয়েছে। অশুভ তৎপরতার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। মৌলবাদি শক্তিকে উসকে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববাসীর নিকট বাংলাদেশকে একটি সন্ত্রাসী ও মৌলবাদি রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার সব ধরনের অপচেষ্টাই চালানো হয়েছে। কিন্তু, কুচক্রী মহলের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়রূপে অটল হিমালয়ের মতো চির উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে আছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, কর্মসৃজন, খাদ্য উৎপাদন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আমদানি ও রপ্তানি - এরূপ কোন সূচকেই আমরা আর পিছিয়ে নেই। অগ্রগতি হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন খাতে। দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসসহ আর্থ-সামাজিক খাতের প্রায় প্রতিটি সূচকেই রয়েছে আমাদের অভূতপূর্ব সাফল্য।

৯।    আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে অনেক। দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার, ইউনেস্কো কালচারাল ডাইভার্সিটি পদক, এফএও ডিপ্লোমা এওয়ার্ড, সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এওয়ার্ড, চ্যাম্পিয়নস অব দ্যা আর্থ পদকসহ আরো অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানের রেটিং এজেন্সির মূল্যায়নে আমাদের সন্তোষজনক ঋণমান বজায় রয়েছে। নারীর সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম প্রথম সারির দেশ। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সীমিত সম্পদের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য বিমোচন করে বাংলাদেশ বিশ্ব সমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিশ্বব্যাপী সুধিসমাজে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছে।

মাননীয় স্পীকার

১০।   আমি সবসময় বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। এ লক্ষ্যে প্রতিবারের মত এবারও বাজেট প্রণয়নের প্রাক্কালে আমরা কথা বলেছি সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, পেশাজীবী এবং ব্যবসায়ী সংগঠন, এনজিও নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবদের সঙ্গে। বাজেট বিষয়ে কৃষকের ভাবনা ও মতামত গ্রহণের জন্য আমি ঝালকাঠিতে একটি মত বিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করি। ‘মাটি ও মানুষ’ প্রোগ্রামের ব্যানারে ‘চ্যানেল আই’ এ সভাটি আয়োজন করে। ‘চ্যানেল আই’ কৃষকের বাজেট ভাবনা নিয়ে এই ধরনের ছয়টি অনুষ্ঠান শেষে একটি সুপারিশমালাও আমাকে প্রদান করে। অন্যান্য এগারটি আলোচনায়ও বিভিন্ন মহল থেকে সকলেই আমাকে বিভিন্ন আঙ্গিকে বাজেট প্রণয়নে নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করেন। আমরা প্রথমবারের মত শিশুদেরও মতামত গ্রহণ করেছি। তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের বাজেট ভাবনাকে করেছে সমৃদ্ধ। চেষ্টা করেছি প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটাতে। অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সকল প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/বিভাগের বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণের নিরলস প্রচেষ্টায় বাজেট প্রণয়নের সুবিশাল ও শ্রমসাধ্য কর্মযজ্ঞটি সুচারূভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তাদের সকলের জন্য রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন। সর্বোপরি, প্রতিবারের মত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিষয়ে দিক-নির্দেশনা এবং প্রাজ্ঞ মতামত ও পরামর্শ দিয়ে বাজেট প্রণয়নে সহায়তা করেছেন। আমার উপরে অব্যাহত ও অবিচল আস্থা রাখায় আমি তার প্রতি জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

১১।   ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আমরা এগিয়ে এসেছি অনেকদূর। দেশের অর্থনীতির প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামোকে একটি উন্নত দেশের উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজও চলছে জোরকদমে। সকল স্তরের দেশপ্রেমিক জনগণও এখন অশুভ শক্তির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। কর্মব্যস্ত মানুষ ভাগ্য উন্নয়নে নিয়োজিত থাকার ফলে হরতাল বা ধর্মঘট এখন চলে না, শান্তি বিঘ্নিত হয় না। ২০১৫ সাল থেকে জাতি নিরবচ্ছিন্নভাবে ভাগ্যোন্নয়নের মহাযজ্ঞে লিপ্ত রয়েছে। প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা উদ্যমী ও মননশীল তরুণ জনগোষ্ঠী এখন নতুন উদ্যমে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে রয়েছে। তাই সমৃদ্ধির মহাসড়কে এই নিরন্তর অভিযাত্রা আমাদের চলবেই এবং চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতেই থাকবে। সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের।

দ্বিতীয় অধ্যায়

সাফল্যগাঁথার একটি বছর: বাস্তবায়ন অগ্রগতি

মাননীয় স্পীকার

১২।   গত অর্থবছরের বাজেটে যে সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি ছিল তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র আমি এখন এ মহান সংসদে উপস্থাপন করছি।

আর্থ-সামাজিক অবস্থা

১৩।   অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০২ মার্কিন ডলার, যা ২০০৫-০৬ অর্থবছর শেষে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। একই সময়ে দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের হার ৩৮.৪ ও ২৪.২ শতাংশ হতে নেমে এসেছে যথাক্রমে ২৩.২ ও ১২.৯ শতাংশে। অন্যদিকে আমাদের প্রত্যাশিত জীবনকাল ২০০৬ সালের ৬৫.৪ বছর হতে বর্তমানে ৭১.৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নেরই নির্দেশক। পাশাপাশি অসমতা, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, সামাজিক গতিশীলতা ইত্যাদি আর্থ-সামাজিক সূচকে আমাদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় হয়েছে।

কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা

১৪।   কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য স্বাভাবিক ভর্তুকির অতিরিক্ত হিসেবে কৃষিজাত সামগ্রী রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা ৩০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছি। ২০ শতাংশ হারে ছাড় (Rebate) প্রদান করছি সেচযন্ত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিলের ওপর। বর্তমানে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে উন্নয়ন সহায়তার হার হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য এলাকার জন্য ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। বিগত এপ্রিল মাসের আকস্মিক বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা এবং কিশোরগঞ্জ এলাকায় খাদ্যশস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সারা দেশের খাদ্য উৎপাদন মোটামুটিভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে বলে আমরা মনে করি। ইতোমধ্যে কৃষি খাতে নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় মৎস্য এবং শাক-সবজি উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট কৃতিত্ব অর্জন করেছি। পাটের উন্মোচিত জেনোম তথ্য কাজে লাগিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্য ও নিম্নতাপমাত্রা সহিষ্ণু তোষা পাটের ২টি এবং দেশি পাটের ১টি অগ্রবর্তী লাইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে কৃষি খাতে বিশেষ অবদান রাখা এবং গবেষণায় উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে প্রতিবছর “বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার” প্রদান করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

১৫।   ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। ইতোমধ্যে তা ১৫ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে বিদ্যুতের বিতরণ লস ১৫.৬ শতাংশ থেকে ৯.৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

১৬।   দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এলএনজি আমদানির কার্যক্রম চলমান আছে। মহেশখালীতে Build-Own-Operate-Transfer (BOOT) পদ্ধতিতে একটি Floating Storage and Re-gasification Unit (FSRU) ভিত্তিক LNG Terminal স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে Terminal Use Agreement (TUA) ও Implementation Agreement (IA) স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করছি, ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহে আমরা সক্ষম হব।

পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো

১৭।   পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু, মেঘনা নদীর উপর দ্বিতীয় মেঘনা সেতু ও গোমতী নদীর উপর দ্বিতীয় গোমতী সেতু, পটুয়াখালী জেলায় পায়রা নদীর উপর পায়রা সেতু এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মহাসড়কসমূহের ৬০টি সরু এবং ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও কালভার্ট পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১০টি জোনভিত্তিক জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র দেশের ১ হাজার ৫৯৫ কি.মি. জেলা মহাসড়ক সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়ন করা হয়েছে। বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ কাজে মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত ৪১ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে সেতু বিভাগ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী।

১৮।   আমরা সড়ক পরিবহন খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে Revised Strategic Transport Plan (RSTP) ২০১৫-২০৩৫ প্রণয়ন করেছি। উত্তরা হতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত প্রায় ২০ কি.মি. দীর্ঘ এলিভেটেড Mass Rapid Transit (MRT) Line-6 বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। পাশাপাশি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে শুরু হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ও আশুলিয়া হয়ে ঢাকা ইপিজেড পর্যন্ত দু’টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের কাজও চলছে।

১৯।   বর্তমান সরকার গণপরিবহনের ক্ষেত্রে এতকাল অবহেলিত রেলওয়ে সেক্টরকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ইতোপূর্বে গৃহীত প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরে এখাতেও উল্লেখযোগ্য অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০.৬০ কি.মি. রেলপথ মিটারগেজ থেকে ডুয়েল গেজে রূপান্তর, ২১ কি.মি. রেলপথ পুনর্বাসন/ পুনঃনির্মাণ, ৪১টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ, ১৫১টি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, ৫৯টি যাত্রীবাহী কোচ পুনর্বাসন ও ৬টি নতুন ট্রেন চালুকরণ।

তথ্য-প্রযুক্তি

২০।  আইসিটি শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারাদেশের ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক এবং ১৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম’ স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ, ৬৪টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ৭টি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে ই-ফাইলিং পদ্ধতি। এছাড়া, সারাদেশের প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিস একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যমান সাবমেরিন ক্যাবলের ক্যাপাসিটি ৪৪ জিবিপিএস হতে বাড়িয়ে ২০০ জিবিপিএস -এ উন্নীত করা হয়েছে। এপ্রিল ২০১৭ পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি ৩১ লক্ষ এবং ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষা

মাননীয় স্পীকার

২১।   আপনি অবগত আছেন যে, আমরা এ পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছি। এর ফলে, দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, সরকারি বিদ্যালয় নেই এমন ৩১৫টি উপজেলার ২৯৫টি বেসরকারি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে রূপান্তর, ৩ হাজার ৫৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব এবং ২৩ হাজার ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১ হাজার ৫০০টি বেসরকারি কলেজ, ৩ হাজারটি বেসরকারি স্কুল ও ১ হাজারটি বেসরকারি মাদ্রাসায় নতুন ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বিগত বছরসমূহের ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ে প্রায় ৩৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে ৬৭৫ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা উপবৃত্তি ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য

২২।   গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে ১৩ হাজার ৩৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে গরীব, দুস্থ ও জটিল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার কর্মসূচি ৫৩টি উপজেলায় চালু হয়েছে। এছাড়া, জরুরী প্রসূতি সেবা কার্যক্রম ১৩২টি উপজেলায় জোরদার করা হয়েছে। সকল জেলা ও ৪১৮টি উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোন স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম এবং ৪৩টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। স্বাস্থ্য বাতায়ন নামে একটি সার্বক্ষণিক কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। এসব কলসেন্টারে কল করে দেশের মানুষ ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারছেন।

নারী উন্নয়ন

২৩।  সমগ্র উন্নয়ন কার্যক্রমে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত দু:স্থ নারীদের উন্নয়নেও নেয়া হয়েছে বিশেষ কার্যক্রম। ‘ভিজিডি’ (Vulnerable Group Development) কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশের ১০ লক্ষ দুস্থ মহিলাকে মাসে ৩০ কেজি করে ২৪ মাস ব্যাপী চাল সরবরাহ করা হয়েছে। দেশব্যাপী নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৪০টি জেলা সদর হাসপাতাল ও ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৬০টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। স্বল্পমূল্যে কর্মজীবী মহিলাদের নিরাপত্তা ও আবাসন সুবিধা প্রদানের অংশ হিসেবে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় একটি নতুন কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল-কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

শিশু বাজেট

২৪।  দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু। আগামী দিনের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করছি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় শিশু নীতি, শিশুর প্রারম্ভিক যত্ন ও বিকাশে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। শিশুদের উন্নয়নকে জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট কার্যক্রমের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য আমরা বিগত দুইটি অর্থবছর ধরে শিশু বাজেট প্রণয়ন করছি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমরা সাতটি মন্ত্রণালয়ের শিশু সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমসমূহ বিবেচনায় নিয়ে ‘বিকশিত শিশু: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৩টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের শিশু সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের বিষয়ে এবারও একই শিরোনামে একটি পুস্তিকা উপস্থাপন করছি।

সামাজিক সুরক্ষা

২৫।  সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী করার নিরন্তর প্রয়াসের অংশ হিসেবে পথশিশুদের জন্য ঢাকা এবং বরিশাল বিভাগীয় শহরে মোট চারটি Drop In Center (DIC), দু’টি Emergency Night Shelter (ENS), ১৬টি Child Friendly Space (CFS) এবং ৩টি Open Air School (OAS) পরিচালনা করা হচ্ছে। Child Helpline ‘1098’ এর কার্যক্রম পরিচালনার নিমিত্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরে একটি Centralized Call Center স্থাপন করা হয়েছে। ফোনের মাধ্যমে সারাদেশের বিপদাপন্ন, দুস্থ ও অসহায় শিশুকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

২৬।   ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় সর্বমোট ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে অটিজমের শিকার শিশু/ব্যক্তি এবং অন্যান্য ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে নিয়মিত বিভিন্ন সেবা ও উপকরণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। অটিজম চিকিৎসা ও সেবায় আমাদের সমাজকর্মী প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদ WHO এর Excellence Award পেয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অটিজমসহ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে ৩২টি ভ্রাম্যমাণ থেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে বিনামূল্যে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তথ্যভান্ডারে ৩২ লক্ষ ৩৫ হাজার ভাতাভোগীর তথ্য এন্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও G2P -এর আওতায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাতা বিতরণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৪৫টি ইউনিয়নে পাইলট কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রবীণ ব্যক্তিদের মর্যাদাপূর্ণ, দারিদ্র্যমুক্ত, কর্মময়, সুস্থ্য ও নিরাপদ সামাজিক জীবন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৬ বিভাগে ছয়টি প্রবীণ নিবাস স্থাপন করা হয়েছে।

পরিবেশ ও জলবায়ু

২৭।  সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪৪টি নতুন এবং ২টি সংশোধিত প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা দীর্ঘ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণকল্পে National Adaptation Plan (NAP) প্রণয়নের Road Map প্রস্তুত করেছি। জীববৈচিত্র্য আইন, ২০১৭ জারি করা হয়েছে। ফলে জীববৈচিত্র্য সনদের বা কনভেনশন অন বায়োলোজিক্যাল ডাইভারসিটি (সিবিডি)-এর অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হয়েছে। ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি স্ট্রাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান অব বাংলাদেশ ২০১৬-২০২১ প্রণয়ন করা হয়েছে। সমগ্র উপকূল জুড়ে সবুজ বেষ্টনী স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সবুজ বেষ্টনী স্থাপনযোগ্য উপকূলীয় এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে ১ হাজার ৭৩৮ বর্গ কি.মি. এলাকা জুড়ে দেশের একমাত্র ‘মেরিন প্রটেকটেড এরিয়া’ ঘোষণা করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ষাট এবং সত্তরের দশকে নির্মিত বেড়ীবাঁধের সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে।

২৮।  প্রকৃত খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ পরিস্থিতি, মাথাপিছু আয়, বহিঃখাতে আমদানি ও রপ্তানি এবং আর্থিক খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবাহ পরিস্থিতিসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচকগুলোর পরিবর্তন অনুকূল ধারায় রয়েছে। প্রকৃত ও অন্যান্য খাতের অগ্রগতির চিত্র পরিশিষ্ট-'ক' এ সন্নিবেশ করা হয়েছে।

তৃতীয় অধ্যায়

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট

মাননীয় স্পীকার

২৯।   আপনি জানেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম যেমন, অটোমেশন, কর অব্যাহতির পরিমাণ হ্রাস, কর প্রশাসনের বিস্তৃতি, করের আওতা ও ভিত্তি সম্প্রসারণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা এনবিআর-এর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এনবিআর রাজস্ব সংগ্রহের অগ্রগতি গত কয়েক বছরের তুলনায় বেশ ভাল। তবে এ পর্যন্ত রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সংশোধিত বাজেটে এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম হবে বলে ধারণা করছি। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কম লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং 2G ও 3G-এর অব্যবহৃত Spectrum-এর নিলাম সম্পন্ন না হওয়ায় চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কর ব্যতীত রাজস্ব আদায় মূল প্রাক্কলন হতে কম হবে। এ প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান অর্থবছরে ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করছি। অন্যদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার এবং অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নের কারণে উন্নয়ন ব্যয় অপরিবর্তিত থাকবে। সারণি-১ -এ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত সংশোধিত বাজেট উপস্থাপন করছি।

সারণি ১: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল ও সম্পূরক বাজেট

(কোটি টাকায়)

খাত

সংশোধিত ২০১৬-১৭

২০১৬-১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রকৃত

বাজেট ২০১৬-১৭

মোট রাজস্ব আয়

২,১৮,৫০০

১,৪২,৪৫৯

২,৪২,৭৫২

(১১.২)

(৭.৩)

(১২.৪)

এনবিআর রাজস্ব

১,৮৫,০০০

১,২১,৭৯৭

২,০৩,১৫২

এনবিআর বহির্ভূত কর-রাজস্ব

৭,২৬১

৪,৩১৬

৭,২৫০

কর ব্যতীত প্রাপ্তি

২৬,২৩৯

১৬,৩৪৬

৩২,৩৫০

মোট ব্যয়

৩,১৭,১৭৪

১,৪৯,৩৩৩

৩,৪০,৬০৫

(১৬.২)

(৭.৬)

(১৭.৪)

অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয়

১,৭৮,১৫৪

১,০৪,৫১৪

১,৮৮,৯৬৬

(৯.১)

(৫.৩)

(৯.৬)

উন্নয়ন ব্যয়

১,১৫,৯৯০

৩৩,৭৮০

১,১৭,০২৭

(৫.৯)

(১.৭)

(৬.০)

তন্মধ্যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি

১,১০,৭০০

৩৩,৪৩৬

১,১০,৭০০

(৫.৭)

(১.৭)

(৫.৬)

অন্যান্য ব্যয়

২৩,০৩০

১১,০৩৯

৩৪,৬১২

(১.২)

(০.৬)

(১.৮)

বাজেট ঘাটতি

-৯৮,৬৭৪

-৬,৮৭৪

-৯৭,৮৫৩

(-৫.০)

(-০.৪)

(-৫.০)

অর্থায়ন

 

 

 

বৈদেশিক উৎস

২৮,৭৭১

২,৫১১

৩৬,৩০৫

(১.৫)

(০.১)

(১.৯)

অভ্যন্তরীণ উৎস

৬৯,৯০৩

৪,২৮৩

৬১,৫৪৮

(৩.৬)

(০.২)

(৩.১)

 তন্মধ‍্যে, ব্যাংক উৎস

২৩,৯০৩

-১৬,৪০২

৩৮,৯৩৮

(১.২)

(-০.৮)

(২.০)

জিডিপি

১৯,৫৬,০৫৫

১৯,৫৬,০৫৫

১৯,৬১,০১৭

বন্ধনিতে জিডিপি’র শতাংশ; বাজেট প্রণয়নকালীন নামিক জিডিপি; নামিক জিডিপির সাময়িক হিসাব; উৎস: অর্থ বিভাগ।

৩০।  সংশোধিত রাজস্ব আয়: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয় ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১২.৪ শতাংশ)। অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ লক্ষ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১.২ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে। এনবিআর ও কর-বহির্ভূত উভয় রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না হওয়ায় রাজস্ব আয় কম প্রাক্কলন করা হয়েছে। এনবিআর রাজস্বের ক্ষেত্রে আয় ও মুনাফা কর এবং স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর আদায় আশানুরূপ হয়নি।

৩১।   সংশোধিত ব্যয়: চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট সরকারি ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয় ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা (১৭.৪ শতাংশ)। সংশোধিত বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ ২৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা কমিয়ে মোট ৩ লক্ষ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে (জিডিপি’র ১৬.২ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বহির্ভূত প্রকল্প ব্যয়, অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় এবং ভর্তুকি ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় অনুন্নয়নসহ অন্যান্য রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ ২২ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা হ্রাস করে ২ লক্ষ ১ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। সাধারণত: সংশোধিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার কিছুটা কাটছাট করা হয়। আমি আনন্দের সাথে উল্লেখ করছি যে, এবারই প্রথম আমরা সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার অপরিবর্তিত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়নে সক্ষম হব। স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পের বরাদ্দসহ সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লক্ষ ১৯ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬.১ শতাংশ)।

৩২।  বাজেট ঘাটতি: চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয় ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৫.০ শতাংশ)। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৫.০ শতাংশ)। মূল প্রাক্কলনে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১.৯ শতাংশ) নির্ধারণ করা হয়। সংশোধিত বাজেটে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়ন কিছুটা কমিয়ে ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১.৩ শতাংশ) এবং অভ্যন্তরীণ উৎস হতে অর্থায়ন ৬৯ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস, বিশেষ করে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে অর্থায়নের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। এতে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে ঋণ গ্রহণ কিছুটা হ্রাস পাবে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এপ্রিল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

চতুর্থ অধ্যায়

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

মাননীয় স্পীকার

৩৩।  এ পর্যায়ে আমি সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরব।

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

৩৪।  বিশ্ব ও এশীয় অর্থনীতির গতিধারা: বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে স্থবিরতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির হার হ্রাস ইত্যাদির প্রভাবে ২০১৬ সালে বিশ্ব উৎপাদন প্রবৃদ্ধি বিগত অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে, আশার বিষয় হলো ২০১৭ ও ২০১৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস রয়েছে। বিশেষ করে, বিকাশমান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি গতিশীল হওয়ার ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের পুনরুদ্ধার বিলম্বিত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের প্রবৃদ্ধি পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। বিকাশমান ও উন্নয়নশীল এশীয় অর্থনীতির দেশগুলোর সার্বিক প্রবৃদ্ধির দৃশ্যকল্পও ইতিবাচক। এদের মধ্যে চীনের প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমলেও ভারত ও পণ্য-রপ্তানি নির্ভর বেশ কিছু দেশে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হলেও আমাদের প্রধান প্রধান শ্রমবাজারগুলোর প্রবৃদ্ধির হার ত্বরান্বিত হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে, সৌদি-আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও কুয়েতের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সার্বিকভাবে বিশ্ব উৎপাদন প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য শুভ বার্তারই ইঙ্গিত বহন করছে।

৩৫।  ২০১৭ সালে উন্নত অর্থনীতির দেশসমূহের প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালের ১.৭ শতাংশ হতে ২.০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালের ১.৬ শতাংশ হতে ২০১৭ সালে ২.৩ শতাংশে উন্নীত হবে। অন্যদিকে ইউরো এলাকার প্রবৃদ্ধি একই সময়ে ১.৭ শতাংশে অপরিবর্তিত থাকবে। তবে, কাঠামোগত পরিবর্তনের কারণে চীনে প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, পণ্য-রপ্তানি নির্ভর কতিপয় দেশের অর্থনৈতিক সংকট, উন্নত দেশসমূহে সংরক্ষণবাদী ধ্যান-ধারণার উন্মেষ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিকাশমান এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালের ৪.১ শতাংশ হতে ২০১৭ সালে ৪.৫ শতাংশে উন্নীত হবে। অন্যদিকে, গণ-অবকাঠামো নির্মাণে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রভাবে ২০১৭ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৭.২ শতাংশে। সামগ্রিকভাবে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২০১৬ সালের ৩.১ শতাংশ হতে ২০১৭ সালে ৩.৫ শতাংশে এবং ২০১৮ সালে আরো জোরদার হয়ে ৩.৬ শতাংশে উন্নীত হবে।

৩৬।  বিশ্ব মূল্যস্ফীতি: গ্যাসোলিন ও অন্যান্য জ্বালানি সংশ্লিষ্ট পণ্যের খুচরা মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৭ সালে উন্নত দেশসমূহ এবং অধিকাংশ বিকাশমান ও উন্নয়শীল দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। উন্নত দেশসমূহে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ২০১৬ সালের ০.৮ শতাংশ হতে বেড়ে ২০১৭ সালে ২.০ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। একই সময়ে বিকাশমান ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশ হতে বেড়ে ৪.৭ শতাংশ হওয়ার প্রক্ষেপণ রয়েছে।

৩৭।  আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সুদের হার: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের দীর্ঘকালীন দুর্বলতা যেখানে মন্দা পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগতি উৎপাদন প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে নীচে নেমে যায়, তা সম্প্রতি দূরীভূত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই তেজিভাব ক্রমশ সুস্পষ্ট হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, বিশ্ব পণ্য ও সেবা বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ২০১৬ সালের ২.২ শতাংশ হতে বেড়ে ২০১৭ সালে ৩.৮ শতাংশে উন্নীত হবে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী চাপ, বিভিন্ন দেশে সামগ্রিক চাহিদার বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের কিছুটা সংকোচনমূলক মুদ্রা নীতির কারণে বিশ্বব্যাপী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি

৩৮।  জিডিপি প্রবৃদ্ধি: গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.০৫ শতাংশ। বিবিএস-এর চূড়ান্ত হিসাবে উক্ত অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.১১ শতাংশ। বিশ্বের সমতুল্য দেশগুলোর তুলনায় এই হার যথেষ্ট ভাল। এ জন্য শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার সাথে পুনরুজ্জীবিত বহিঃচাহিদারও ভূমিকা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.২ শতাংশ। খুশির বিষয় হলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭.২৪ শতাংশ। যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশী।

৩৯।  বিনিয়োগ: বিগত অর্থবছর শেষে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৩ শতাংশ যা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা, বিনিয়োগের বাধাসমূহ অপসারণে সরকারি উদ্যোগ, সুদের হারের নিম্নগতি ইত্যাদি কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিগত অর্থবছরে সরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি কিছুটা শ্লথগতির হলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হওয়ায় এই স্থবিরতা অচিরেই কেটে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

৪০।  মূল্যস্ফীতি: আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য সম্প্রতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথাপি, মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে। চলতি অর্থবছরের মার্চ নাগাদ ১২ মাসের গড়ভিত্তিক সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫.৩৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬.১০ শতাংশ। সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা, সহায়ক রাজস্ব ও মুদ্রা নীতি, হাওরের ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সারাদেশে সন্তোষজনক কৃষি উৎপাদন এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে চলতি অর্থবছর শেষে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে বলে আমি মনে করি।

৪১।   মুদ্রা ও ঋণ: চলতি অর্থবছরের মার্চ শেষে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩.০৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা কম। অন্যদিকে রিজার্ভ মুদ্রার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৯৮ শতাংশ যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় খানিকটা বেশী। সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। তবে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ লক্ষ্যমাত্রার অনেকটা কাছাকাছি রয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি ও শিল্প খাতে ঋণ প্রবাহও নির্বিঘ্ন রয়েছে।

৪২।  সুদের হার: বিভিন্ন ধরনের সরকারি উদ্যোগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অব্যাহত প্রচেষ্টায় আর্থিক মধ্যস্থতার (Financial Intermediation) দক্ষতা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে আমানত ও ঋণের সুদও অব্যাহতভাবে কমে যাচ্ছে। একই সাথে সুদের হার ব্যবধানও (spread) হ্রাস পাচ্ছে। আমানত ও ঋণের সুদের হার চলতি অর্থবছরের মার্চ শেষে যথাক্রমে ৫.০১ ও ৯.৭০ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সুদের হারের ব্যবধান একই সময়ে ৪.৬৯ শতাংশে কমেছে। আমার বিশ্বাস, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে এ হার ভবিষ্যতে আরও কমবে।

৪৩।  বিনিময় হার: ডলারের বিপরীতে টাকার নমিনাল বিনিময় হার অনেক দিন যাবৎ স্হিতিশীল রয়েছে। সম্প্রতি আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ অন্যান্য কারণে ডলারের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। ফলে, ডলারের বিপরীতে টাকার সামান্য অবচিতি হয়েছে। তবে, ইউয়ান, ইউরো, কুয়েতি দিনার, রিংগিট ও পাউন্ডের বিপরীতে টাকার অবস্থান কিছুটা শক্তিশালী।

৪৪।  আমদানি ও রপ্তানি: চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৯২ শতাংশ। এ সময়ে মোট রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ বিলিয়নের প্রায় ৭৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির বহুমুখী প্রতিকূলতার কারণে প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতে কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে, আমাদের প্রধান দু’টি রপ্তানি বাজারের মধ্যে ইউরোপিয় ইউনিয়ন অঞ্চলে রপ্তানি ইতোমধ্যেই অনেকখানি বেড়েছে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হওয়ায় এ বাজারেও আমাদের রপ্তানি পরিমাণ অনেকখানি বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.০৭ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৭.০২ শতাংশ। মূলত, অভ্যন্তরীণ চাহিদার গতি সচল থাকায় আমদানি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। এসময়ে আমদানি এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হারও হয়েছে বেশ ভাল। বিশেষ করে, মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে, যা আগামী দিনগুলোতে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করছে।

৪৫।  প্রবাস আয়: চলতি অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে প্রবাস আয় বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.০৩ শতাংশ কমেছে। বস্তুত, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ ব্যতীত সারা বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে গত দু’বছর যাবৎ প্রবাস আয় প্রবাহ কমেছে। তেলের মূল্য হ্রাস ও বিভিন্ন সরকারের সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতির প্রভাবে জিসিসিভুক্ত দেশসমূহ হতে দক্ষিণ এশিয়ামুখী প্রবাস আয় প্রবাহ কমেছে অনেকখানি। ইউরোপ ও রাশিয়া ফেডারেশনভুক্ত দেশসমূহের অর্থনৈতিক দুর্বলতা, ইউরোর মূল্যপতন, অনেকগুলো দেশে অভিবাসন বিরোধী নীতি-কৌশল অনুসরণ, প্রবাস আয় প্রেরণে নানাবিধ প্রতিকূলতা, অনানুষ্ঠানিক পথে প্রবাস আয় প্রেরণে অধিকতর সুযোগ সুবিধায় ও বিভিন্ন দেশে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ প্রবাস আয় প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

৪৬।  লেনদেন ভারসাম্য ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ: চলতি হিসাবের ঋণাত্মক ভারসাম্য সত্ত্বেও আর্থিক ও মূলধন হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকায় চলতি অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্য অনুকূলে ছিল। ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ মে ২০১৭ তারিখে আমাদের রির্জাভ ছিল ৩২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দিয়ে প্রায় ৮ মাসের অধিক আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

পঞ্চম অধ্যা‌য়

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো

মাননীয় স্পীকার

৪৭।  আমাদের লক্ষ্য হলো অর্থনীতির সকল খাতের সুষম ও সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়ন। আমরা সাধারণত একটি মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর আওতায় বাজেট কাঠামো প্রস্তুত করে এ লক্ষ্য অর্জন করতে চাই। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতি বছরই হালনাগাদ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য খাত যথা প্রকৃত, মুদ্রা ও বহিঃখাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আয় ও ব্যয় সীমা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বাজেটের আয় ও ব্যয়ের পরিমাণকে একটি নিরাপদ সীমার মধ্যে নির্ধারণ করি। পাশাপাশি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ও ঘাটতি অর্থায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকি।

৪৮।  বাজেট কাঠামো প্রস্ত্তুতের ক্ষেত্রে আমরা সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোও বিবেচনায় নিয়েছি। আমার বিশ্বাস প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চালনে সক্ষম হবে। এখন আমি প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো যেসব অনুমানের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে তা উল্লেখ করতে চাই—

  1. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার হবে ৭.৪ শতাংশ এবং বছর শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৫.৫ শতাংশে নেমে আসবে;
  2. সুদের হার ক্রমহ্রাসমান ধারায় ও নমিনাল বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকবে;
  3. ভোগ ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাবে অভ্যন্তরীণ absorption পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে। ফলে, চলতি হিসাবের ভারসাম্যে সামান্য ঘাটতি সৃষ্টি হবে। তবে, মূলধন ও আর্থিক হিসাবে পর্যাপ্ত উদ্বৃত্ত থাকায় সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত থাকবে ;
  4. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রা ও ঋণ নীতি অব্যাহত থাকবে;
  5. কর-রাজস্ব আয় জিডিপি’র ১.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। করের পরিধি সম্প্রসারণ এবং নতুন মূল্য সংযোজন কর আইনের বাস্তবায়ন হবে। কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হবে;
  6. প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সাহায্যের অবমুক্তি বৃদ্ধি পাবে;
  7. বিশ্ব উৎপাদন প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি ও প্রবাস আয় অর্জিত হবে;
  8. সর্বোপরি জনগণের কর্মোদ্যম এবং কৃষক ও শ্রমিকের কাজের প্রতি আগ্রহ দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্ন হতে দেবে না।

৪৯।  এবার আমি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত আয় ও ব্যয়ের একটি চিত্র নিম্নে তুলে ধরছি (সারণি-২):

সারণি ২: ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো

(কোটি টাকায়)

খাত

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

প্রকৃত
২০১৫-১৬

মোট রাজস্ব আয়

২,৮৭,৯৯১

২,১৮,৫০০

২,৪২,৭৫২

১,৭২,৯৫৩

(১৩.০)

(১১.২)

(১২.৪)

(১০.০)

এনবিআর কর

২,৪৮,১৯০

১,৮৫,০০০

২,০৩,১৫২

১,৪৬,২৪২

এনবিআর বহির্ভূত কর-রাজস্ব

৮,৬২২

৭,২৬১

৭,২৫০

৫,৬৪৫

কর ব্যতীত প্রাপ্তি

৩১,১৭৯

২৬,২৩৯

৩২,৩৫০

২১,০৬৬

মোট ব্যয়

৪,০০,২৬৬

৩,১৭,১৭৪

৩,৪০,৬০৫

২,৩৮,৪৩৩

(১৮.০)

(১৬.২)

(১৭.৪)

(১৩.৮)

অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয়

২,০৭,১৩৮

১,৭৮,১৫৪

১,৮৮,৯৬৬

১,৪৪,৪৩১

(৯.৩)

(৯.১)

(৯.৬)

(৮.৪)

উন্নয়ন ব্যয়

১,৫৯,০১৩

১,১৫,৯৯০

১,১৭,০২৭

৮১,৪০৭

(৭.২)

(৫.৯)

(৬.০)

(৪.৭)

তন্মধ্যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি

১,৫৩,৩৩১

১,১০,৭০০

১,১০,৭০০

৭৯,৩৫১

(৬.৯)

(৫.৭)

(৫.৬)

(৪.৬)

অন্যান্য ব্যয়

৩৪,১১৫

২৩,০৩০

৩৪,৬১২

১২,৫৯৫

(১.৫)

(১.২)

(১.৮)

(০.৭)

বাজেট ঘাটতি

-১,১২,২৭৫

-৯৮,৬৭৪

-৯৭,৮৫৩

-৬৫,৪৮০

-(৫.০)

-(৫.০)

-(৫.০)

-(৩.৮)

অর্থায়ন

 

 

 

 

বৈদেশিক উৎস

৫১,৯২৪

২৮,৭৭১

৩৬,৩০৫

১৪,৭৫৫

(২.৩)

(১.৫)

(১.৯)

(০.৯)

অভ্যন্তরীণ উৎস

৬০,৩৫২

৬৯,৯০৩

৬১,৫৪৮

৫০,৭৩০

(২.৭)

(৩.৬)

(৩.১)

(২.৯)

তন্মধ্যে, ব্যাংক উৎস

২৮,২০৩

২৩,৯০৩

৩৮,৯৩৮

১০,৬১৪

(১.৩)

(১.২)

(২.০)

(০.৬)

জিডিপি

২২,২৩,৬০০

১৯,৫৬,০৫৫

১৯,৬১,০১৭

১৭,২৯,৫৬৭

বন্ধনিতে জিডিপি’র শতাংশ দেখানো হয়েছে; বাজেট প্রণয়নকালীন নামিক জিডিপি; নামিক জিডিপির সাময়িক হিসাব; উৎস: অর্থ বিভাগ।

৫০।  রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন: সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের স্বার্থে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির ওপর আমরা বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছি। এনবিআর রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত সংস্কারমূলক কার্যক্রমের সুফল আমরা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছি। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত এনবিআর রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব প্রশাসনের অটোমেশন, কর অব্যাহতি হ্রাস, কর প্রশাসনের বিস্তৃতি, করের আওতা ও ভিত্তি সম্প্রসারণ ইত্যাদি চলমান সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করা হবে। তদুপরি, আগামী ১ জুলাই ২০১৭ থেকে আমাদের ভ্যাট আইন, ২০১২ পুরোপুরি কার্যকর হবে। ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন রাজস্ব সংগ্রহে উল্লেখযোগ্য গতিশীলতা আনবে। এ প্রেক্ষিতে আমরা আগামী অর্থবছরে মোট ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩ শতাংশ) রাজস্ব সংগ্রহের প্রাক্কলন করেছি। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে আসবে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা (জিডিপির ১১.২ শতাংশ)। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআর বহিভূর্ত কর-রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৮ হাজার ৬২২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৪ শতাংশ)। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ফি/রেটসমূহ বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পুনঃনির্ধারণের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তার সুবাদে এবং পরিবীক্ষণ কার্যক্রম জোরদারের প্রেক্ষাপটে প্রাক্কলিত এ রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

৫১।   ব্যয় প্রাক্কলন: ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকা (জিডিপির ১৮ শতাংশ)। অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লক্ষ ৪১ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা (জিডিপির ১০.৮ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধার্য করা হয়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা (জিডিপির ৬.৯ শতাংশ)। স্বায়ত্তশাসিত সংস্হার অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের বরাদ্দ ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মোট আকার দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা (জিডিপির ৭.৪ শতাংশ)।

৫২।  বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি: আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে আমরা প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী মেগা প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন জোরদার করার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করছি। এছাড়াও আঞ্চলিক সমতা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের ওপর গুরত্ব পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে। আগামী অর্থবছরে আমরা কতিপয় বৃহৎ প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রকল্প সাহায্যের ব্যবহার করতে পারব বলে আশা করছি। এ প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরে ৩৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রাক্কলন করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খাতওয়ারি বরাদ্দ সারণি ৩ এ তুলে ধরা হয়েছে। প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মানব সম্পদ (শিক্ষা, স্বাস্হ্য ও সংশ্লিষ্ট খাত) খাতে ২৮.৭ শতাংশ, সার্বিক কৃষি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন খাতে (কৃষি, পানি সম্পদ, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) ২১.২ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৩.৭ শতাংশ, যোগাযোগ (সড়ক, রেল, সেতু ও যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য) খাতে ২৬.৮ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ৯.৬ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।

সারণি ৩: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খাতওয়ারি বিভাজন

(কোটি টাকায়)

মন্ত্রণালয়/বিভাগ

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

প্রকৃত
২০১৫-১৬

প্রকৃত
২০১৪-১৫

প্রকৃত
২০১৩-১৪

প্রকৃত
২০১২-১৩

ক) মানব সম্পদ

১. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

৮,৭৫২

৬,২৬৩

৭,৭১০

৪,৯০৯

৩,৯৯৪

৪,৩৭৪

৩,৬৮৩

(৫.৭)

(৫.৭)

(৭.০)

(৬.২)

(৬.২)

(৭.৯)

(৭.৪)

২. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

৭,৮৪২

৪,৯১৮

৬,২৩৫

৩,৫৯৯

৩,৬৭১

৩,৪১৭

৩,৩১৬

(৫.১)

(৪.৪)

(৫.৬)

(৪.৫)

(৫.৭)

(৬.২)

(৬.৭)

৩. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

৬,১৬৫

৫,৩৭৩

৬,১৬৭

৩,৯০৮

৪,০৮৮

৩,০৩৩

২,২০৬

(৪.০)

(৪.৯)

(৫.৬)

(৪.৯)

(৬.৩)

(৫.৫)

(৪.৫)

৪. অন্যান্য

২১,২৭০

৯,৬১৯

৭,০৯১

৪,৫৫২

৪,৪৬৬

৩,৩৫৫

২,২০৫

(১৩.৯)

(৮.৭)

(৬.৪)

(৫.৭)

(৬.৯)

(৬.১)

(৪.৫)

উপ-মোট

৪৪,০২৯

২৬,১৭৩

২৭,২০৩

১৬,৯৬৮

১৬,২১৯

১৪,১৭৯

১১,৪১০

(২৮.৭)

(২৩.৬)

(২৪.৬)

(২১.৪)

(২৫.০)

(২৫.৭)

(২৩.১)

খ) কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন

৫. স্থানীয় সরকার বিভাগ 

২১,৪৬৫

১৯,২৮৮

১৮,৫৪৮

১৩,৯৪৪

১৩,৯৮৩

১০,৫৪৪

১০,৪২৫

(১৪.০)

(১৭.৪)

(১৬.৮)

(১৭.৬)

(২১.৫)

(১৯.১)

(২১.১)

৬. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় 

৪,৬৭৫

৩,৭৮৯

৩,৭৫৯

২,৭০৭

২,০৬১

১,৯৯৮

১,৭৫৬

(৩.০)

(৩.৪)

(৩.৪)

(৩.৪)

(৩.২)

(৩.৬)

(৩.৫)

৭. কৃষি মন্ত্রণালয় 

১,৮০০

১,৭৭২

১,৮৪১

১,৭২৬

১,৪০৬

১,২৭৩

১,১১১

(১.২)

(১.৬)

(১.৭)

(২.২)

(২.২)

(২.৩)

(২.২)

৮. অন্যান্য 

৪,৫২৫

৩,২৮৮

২,৯৪৬

২,৬৭১

২,৬২৬

২,২৭৭

১,৯৬৮

(৩.০)

(৩.০)

(২.৭)

(৩.৪)

(৪.০)

(৪.১)

(৪.০)

উপ-মোট

৩২,৪৬৫

২৮,১৩৭

২৭,০৯৪

২১,০৪৮

২০,০৭৬

১৬,০৯২

১৫,২৬০

(২১.২)

(২৫.৪)

(২৪.৫)

(২৬.৫)

(৩০.৯)

(২৯.২)

(৩০.৮)

গ) জ্বালানি অবকাঠামো

৯. বিদ্যুৎ বিভাগ

১৮,৮৪৫

১৩,৪২১

১৩,০৪০

১৫,২৫৭

৮,৩০৫

৮,৩১১

৮,৮৪০

(১২.৩)

(১২.১)

(১১.৮)

(১৯.২)

(১২.৮)

(১৫.১)

(১৭.৯)

১০. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ

২,১১১

১,০৬৮

১,৯১১

১,০৫৪

১,০১৪

১,৮৮১

১,২৯৫

(১.৪)

(১.০)

(১.৭)

(১.৩)

(১.৬)

(৩.৪)

(২.৬)

উপ-মোট

২০,৯৫৬

১৪,৪৮৯

১৪,৯৫১

১৬,৩১১

৯,৩১৯

১০,১৯২

১০,১৩৫

(১৩.৭)

(১৩.১)

(১৩.৫)

(২০.৬)

(১৪.৪)

(১৮.৫)

(২০.৫)

ঘ) যোগাযোগ অবকাঠামো

১১. রেলপথ মন্ত্রণালয়

১৩,০০১

৯,২৭৮

৯,১১৫

৩,৯৫০

৩,২৮১

২,৮৫৮

২,৯৯৩

(৮.৫)

(৮.৪)

(৮.২)

(৫.০)

(৫.১)

(৫.২)

(৬.০)

১২. সড়ক পরি. ও মহাসড়ক বিভাগ

১৬,৮২০

৯,৪০৩

৮,১৬১

৬,৫০৭

৪,২৯৮

৩,৬২৫

৩,৬০৫

(১১.০)

(৮.৫)

(৭.৪)

(৮.২)

(৬.৬)

(৬.৬)

(৭.৩)

১৩. সেতু বিভাগ

৮,৪০৪

৬,৫২৭

৯,২৫৮

৫,২৬৬

৫,২৯৯

২,০৬৭

৭৮৫

(৫.৫)

(৫.৯)

(৮.৪)

(৬.৬)

(৮.২)

(৩.৭)

(১.৬)

১৪. অন্যান্য

২,৮২৯

২,১৮১

২,০২০

১,৩৫১

৭৫৭

৮০৫

৫৩২

(১.৮)

(২.০)

(১.৮)

(১.৭)

(১.২)

(১.৫)

(১.১)

উপ-মোট

৪১,০৫৪

২৭,৩৮৯

২৮,৫৫৪

১৭,০৭৪

১৩,৬৩৫

৯,৩৫৫

৭,৯১৫

(২৬.৮)

(২৪.৭)

(২৫.৮)

(২১.৫)

(২১.০)

(১৭.০)

(১৬.০)

মোট

১,৩৮,৫০৪

৯৬,১৮৮

৯৭,৮০২

৭১,৪০১

৫৯,২৪৯

৪৯,৮১৮

৪৪,৭২০

(৯০.৩)

(৮৬.৯)

(৮৮.৩)

(৯০.০)

(৯১.৩)

(৯০.৪)

(৯০.৪)

১৫. অন্যান্য

১৪,৮২৭

১৪,৫১২

১২,৮৯৮

৭,৯৪৫

৫,৬৬৮

৫,৩১৩

৪,৭৫৩

(৯.৬)

(১৩.১)

(১১.৭)

(১০.০)

(৮.৭)

(৯.৬)

(৯.৬)

মোট এডিপি

১,৫৩,৩৩১

১,১০,৭০০

১,১০,৭০০

৭৯,৩৪৬

৬৪,৯১৭

৫৫,১৩১

৪৯,৪৭৩

বন্ধনিতে মোট এডিপি বরাদ্দের শতকরা হার দেখানো হয়েছে; উৎস: অর্থ বিভাগ।

৫৩।  বাজেট ঘাটতি: আগামী অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লক্ষ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ শতাংশ। উন্নয়ন কর্মকান্ড এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কারণে ঘাটতি গত বছরের তুলনায় সামান্য বাড়বে, তবে শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধির ফলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কোন প্রকার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক উৎস হতে আসবে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা (জিডিপির ২.৩ শতাংশ)। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ উৎস হতে আসবে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (জিডিপির ২.৭ শতাংশ)। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্হা হতে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৩ শতাংশ) এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত উৎস হতে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা (জিডিপির ১.৪ শতাংশ) সংগ্রহের আশা করছি।

৫৪।  সামগ্রিক ব্যয় কাঠামো: এ পর্যায়ে আমি প্রস্তাবিত বাজেটের সামগ্রিক ব্যয় কাঠামো (উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন) সম্বন্ধে কিছু বলতে চাই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সম্পাদিত কাজের শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী কাজগুলোকে আমরা অন্যান্য বছরের মত ৩টি প্রধান ভাগে ভাগ করেছি। এগুলো হলো সামাজিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো ও সাধারণ সেবা খাত।

৫৫।  প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করছি মোট বরাদ্দের ২৯.৩১ শতাংশ, যার মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দ ২৬.১২ শতাংশ। অন্যদিকে, ভৌত অবকাঠামো খাতে প্রস্তাব করছি মোট বরাদ্দের ৩১.৭৪ শতাংশ, যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৩.০২ শতাংশ; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ১১.৮৮ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৫.২৮ শতাংশ। সাধারণ সেবা খাতের জন্য প্রস্তাব করছি মোট বরাদ্দের ২৪.০৩ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব করছি ১.৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া, সুদ পরিশোধ বাবদ প্রস্তাব করা হয়েছে ১০.৩৬ শতাংশ। নিট ঋণদান (Net lending) ও অন্যান্য ব্যয় খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে অবশিষ্ট ২.৬৮ শতাংশ। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সারণি ৪ -এ উপস্থাপন করা হয়েছে।

সারণি ৪: সমগ্র বাজেটের খাতওয়ারি বিভাজন

(কোটি টাকায়)

মন্ত্রণালয়/বিভাগ

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

প্রকৃত
২০১৫-১৬

প্রকৃত
২০১৪-১৫

প্রকৃত
২০১৩-১৪

প্রকৃত
২০১২-১৩

ক) সামাজিক অবকাঠামো

১,১৭,৩০২

৯২,৭৪১

৯৬,৩৬৫

৭২,৮৩০

৫৫,৮৫৬

৫০,৭২৫

৪২,৯৭২

(২৯.৩১)

(২৯.২৪)

(২৮.২৯)

(৩০.৫৫)

(২৬.৭৪)

(২৬.৮২)

(২৪.৪৭)

মানব সম্পদ

১. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

২৩,১৪১

২১,৭০৬

২৬,৮৪৭

২১,৫৮৯

১৬,১২২

১৪,১৩১

১১,৩৩৪

(৫.৭৮)

(৬.৮৪)

(৭.৮৮)

(৯.০৫)

(৭.৭২)

(৭.৪৭)

(৬.৪৫)

২. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

২২,০২২

১৭,৭৯৭

২২,১৬২

১৬,২২৪

১১,৮৯৮

১১,০৩১

৯,৪১৩

(৫.৫০)

(৫.৬১)

(৬.৫১)

(৬.৮০)

(৫.৭০)

(৫.৮৩)

(৫.৩৬)

৩. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

১৬,১৮২

১৪,৮২৯

১৭,৪৮৭

১২,৬০৬

১০,৪১৯

৯,৩৮৫

৮,৫৪৯

(৪.০৪)

(৪.৬৮)

(৫.১৩)

(৫.২৯)

(৪.৯৯)

(৪.৯৬)

(৪.৮৭)

৪. অন্যান্য

৪৩,২২৪

২৬,৫২০

১৯,৪২২

১৪,৩৫৭

১১,৯২৫

৯,৫১৫

৭,৬২৫

(১০.৮০)

(৮.৩৬)

(৫.৭০)

(৬.০২)

(৫.৭১)

(৫.০৩)

(৪.৩৪)

উপ-মোট

১,০৪,৫৬৯

৮০,৮৫২

৮৫,৯১৮

৬৪,৭৭৬

৫০,৩৬৪

৪৪,০৬২

৩৬,৯২১

(২৬.১২)

(২৫.৪৯)

(২৫.২৩)

(২৭.১৭)

(২৪.১১)

(২৩.৩০)

(২১.০২)

খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা

৫. খাদ্য মন্ত্রণালয়

৩,৮৮০

২,৯৪২

২,৪৪২

১,২৬৯

৭৩৫

৯১৯

৮১৪

(০.৯৭)

(০.৯৩)

(০.৭২)

(০.৫৩)

(০.৩৫)

(০.৪৯)

(০.৪৬)

৬. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

৮,৮৫৩

৮,৯৪৭

৮,০০৫

৬,৭৮৫

৪,৭৫৭

৫,৭৪৪

৫,২৩৭

(২.২১)

(২.৮২)

(২.৩৫)

(২.৮৫)

(২.২৮)

(৩.০৪)

(২.৯৮)

উপ-মোট

১২,৭৩৩

১১,৮৮৯

১০,৪৪৭

৮,০৫৪

৫,৪৯২

৬,৬৬৩

৬,০৫১

(৩.১৮)

(৩.৭৫)

(৩.০৭)

(৩.৩৮)

(২.৬৩)

(৩.৫২)

(৩.৪৫)

খ) ভৌত অবকাঠামো

১,২৭,০৫৯

৯৯,৪৯৮

১,০১,২৯২

৭৯,৬৯৭

৬৫,১৬৮

৫৮,৫১২

৫৮,৯৭৭

(৩১.৭৪)

(৩১.৩৭)

(২৯.৭৪)

(৩৩.৪৩)

(৩১.২০)

(৩০.৯৪)

(৩৩.৫৮)

কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন

৭. কৃষি মন্ত্রণালয়

১৩,৬০০

১০,৩৭৬

১৩,৬৭৫

১০,৭৩৯

১০,৩৪৫

১২,০৭৫

১৪,৮২২

(৩.৪০)

(৩.২৭)

(৪.০১)

(৪.৫০)

(৪.৯৫)

(৬.৩৯)

(৮.৪৪)

৮. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়

৫,৯২৬

৪,৭৫৫

৪,৭১৩

৩,৬৩৪

২,৮৪৩

২,৭৪৩

২,৪৮১

(১.৪৮)

(১.৫০)

(১.৩৮)

(১.৫২)

(১.৩৬)

(১.৪৫)

(১.৪১)

৯. স্থানীয় সরকার বিভাগ

২৪,৬৬৫

২২,২৪৯

২১,৩২২

১৬,৩৮৮

১৬,০৬০

১২,৪০৬

১২,৩১৪

(৬.১৬)

(৭.০১)

(৬.২৬)

(৬.৮৭)

(৭.৬৯)

(৬.৫৬)

(৭.০১)

১০. অন্যান্য

৭,৯৩৭

৭,৪৯৬

৬,৫৩৬

৫,৭০৭

৫,০৫৪

৪,৫২৬

৪,২১৮

(১.৯৮)

(২.৩৬)

(১.৯২)

(২.৩৯)

(২.৪২)

(২.৩৯)

(২.৪০)

উপ-মোট

৫২,১২৮

৪৪,৮৭৬

৪৬,২৪৬

৩৬,৪৬৮

৩৪,৩০২

৩১,৭৫০

৩৩,৮৩৫

(১৩.০২)

(১৪.১৫)

(১৩.৫৮)

(১৫.২৯)

(১৬.৪২)

(১৬.৭৯)

(১৯.২৬)

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

২১,১১৮

১৪,৫৬১

১৫,০৩৬

১৬,৩৭৪

৯,৩৫৯

১০,২৬৬

১০,২৮১

(৫.২৮)

(৪.৫৯)

(৪.৪১)

(৬.৮৭)

(৪.৪৮)

(৫.৪৩)

(৫.৮৫)

যোগাযোগ অবকাঠামো

১১. সড়ক পরি. ও মহাসড়ক বিভাগ

১৯,৬৯৬

১২,০৭৭

১০,৯১০

৮,৯০০

৬,৪৬০

৫,৫৬০

৫,৩৬৮

(৪.৯২)

(৩.৮১)

(৩.২০)

(৩.৭৩)

(৩.০৯)

(২.৯৪)

(৩.০৬)

১২. রেলপথ মন্ত্রণালয়

১৬,০১৩

১১,৯৮২

১১,৯৫০

৬,০১৬

৫,০৯৩

৪,৪৬২

৪,৫৫৭

(৪.০০)

(৩.৭৮)

(৩.৫১)

(২.৫২)

(২.৪৪)

(২.৩৬)

(২.৫৯)

১৩. সেতু বিভাগ

৮,৪৩০

৬,৫৫৮

৯,২৮৯

৫,২৯৭

৫,২৯৯

২,০৬৭

৭৮৫

(২.১১)

(২.০৭)

(২.৭৩)

(২.২২)

(২.৫৪)

(১.০৯)

(০.৪৫)

১৪. অন্যান্য

৩,৪১৯

২,৭৪৬

২,৬০৩

১,৮১৫

১,০৩৬

১,০৬৯

৭৯৭

(০.৮৫)

(০.৮৭)

(০.৭৬)

(০.৭৬)

(০.৫০)

(০.৫৭)

(০.৪৫)

উপ-মোট

৪৭,৫৫৮

৩৩,৩৬৩

৩৪,৭৫২

২২,০২৮

১৭,৮৮৮

১৩,১৫৮

১১,৫০৭

(১১.৮৮)

(১০.৫২)

(১০.২০)

(৯.২৪)

(৮.৫৬)

(৬.৯৬)

(৬.৫৫)

১৫. অন্যান্য সেক্টর

৬,২৫৫

৬,৬৯৮

৫,২৫৮

৪,৮২৭

৩,৬১৯

৩,৩৩৮

৩,৩৫৪

(১.৫৬)

(২.১১)

(১.৫৪)

(২.০২)

(১.৭৩)

(১.৭৭)

(১.৯১)

গ) সাধারণ সেবা

৯৬,১৮৯

৭২,৪৭৮

৮৩,৫০৮

৪৮,৮২৬

৩৯,২৭০

৩৮,৩১৩

২৮,৭৭৮

(২৪.০৩)

(২২.৮৫)

(২৪.৫২)

(২০.৪৮)

(১৮.৮০)

(২০.২৬)

(১৬.৩৮)

জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা

২২,৮৫১

২০,৭২৬

২১,০৬২

১৬,৪৫৩

১৩,১৬১

১১,৭৬১

৯,৬৫৫

(৫.৭১)

(৬.৫৩)

(৬.১৮)

(৬.৯০)

(৬.৩০)

(৬.২২)

(৫.৫০)

১৬. অন্যান্য

৭৩,৩৩৮

৫১,৭৫২

৬২,৪৪৬

৩২,৩৭৩

২৬,১০৯

২৬,৫৫২

১৯,১২৩

(১৮.৩২)

(১৬.৩২)

(১৮.৩৩)

(১৩.৫৮)

(১২.৫০)

(১৪.০৪)

(১০.৮৯)

মোট

৩,৪০,৫৫০

২,৬৪,৭১৭

২,৮১,১৬৫

২,০১,৩৫৩

১,৬০,২৯৪

১,৪৭,৫৫০

১,৩০,৭২৭

(৮৫.১০)

(৮৩.৫০)

(৮২.৫০)

(৮৪.৪০)

(৭৬.৭০)

(৭৮.০০)

(৭৪.৪০)

ঘ) সুদ পরিশোধ

৪১,৪৫৭

৩৫,৩৫৮

৩৯,৯৫১

৩৩,১১৪

৩০,৯৭৩

২৮,০০০

২৪,১৬৪

(১০.৩৬)

(১১.১৫)

(১১.৭৩)

(১৩.৮৯)

(১৪.৮৩)

(১৪.৮১)

(১৩.৭৬)

ঙ) পিপিপি, ভর্তুকি ও দায়

৭,৫০৯

৫,৮৫৯

৭,৫০৯

৩,৬১৪

৪,১৩২

৩,৩৬৭

২,৪২৭

(১.৮৮)

(১.৮৫)

(২.২০)

(১.৫২)

(১.৯৮)

(১.৭৮)

(১.৩৮)

চ) নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয়

১০,৭৫২

১১,২৩৯

১১,৯৮০

৩৫৫

১৩,৪৬৭

১০,১৯৪

১৮,৩২৯

(২.৬৮)

(৩.৫৪)

(৩.৫২)

(০.১৫)

(৬.৪৫)

(৫.৩৯)

(১০.৪৪)

মোট বাজেট

৪,০০,২৬৬

৩,১৭,১৭৪

৩,৪০,৬০৫

২,৩৮,৪৩৩

২,০৮,৮৬৮

১,৮৯,০৯৮

১,৭৫,৬৪২

বন্ধনিতে মোট বাজেটের শতকরা হার দেখানো হয়েছে; উৎস: অর্থ বিভাগ।

৫৬।  এ ছাড়া, মন্ত্রণালয়/বিভাগভিত্তিক বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব পরিশিষ্ট ‘ক’-এ সংযুক্ত করা হল।

ষষ্ঠ অধ্যায়

অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন: আমাদের নীতি-কৌশল

মাননীয় স্পীকার

৫৭।  বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি এর সুবিধা সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিস্তারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার যোগ্য উত্তরসূরী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে ‘দিন বদলের সনদ’ রচনা করেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথনকশা সে সনদে গ্রথিত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধশীল দেশ গঠনে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি ধারণ করে সরকার সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। একই সাথে তা বাস্তবায়নে নিয়েছে দৃঢ় পদক্ষেপ। আমি আশা করি, মাথাপিছু জাতীয় আয়ের উচ্চতর প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে এবং নিশ্চিত হবে আয়ের সুষম বণ্টন। এমডিজি’র ন্যায় এসডিজি অর্জনেও আমরা সক্ষম হবো। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

মাননীয় স্পীকার

৫৮।  বাংলাদেশ একটি দ্রুত বর্ধনশীল উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে এর অর্থনৈতিক কাঠামোতেও পরিবর্তন আসছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও মূলধন প্রবাহ পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃভারসাম্যে সবসময় গতিশীলতা থাকে। ফলে, অর্থনীতির সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষায় পূর্ব নির্ধারিত মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি-কৌশলগুলোকে যুগোপযোগী করতে হয়। এ লক্ষ্যে বছরে একাধিকবার সমন্বয় সভার মাধ্যমে আমরা রাজস্ব, মুদ্রা, বিনিময় হার ও বাণিজ্য নীতিসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মপন্থাগুলোকে বাস্তবতার সাথে সমঞ্জস করি।

৫৯।  এ পর্যায়ে আমি আমাদের অনুসৃত অর্থনৈতিক ভাবনা-কৌশলগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আপনার মাধ্যমে এ মহান সংসদ এবং দেশবাসিকে অবহিত করতে চাই।

প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কৌশল

৬০।  আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৭.৪ শতাংশ, যা বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের কৌশলগুলো আমি এখানে উপস্থাপন করছি।

৬১।   অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি: আমাদের প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা। উল্লেখ করা প্রয়োজন ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ৭.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মধ্যে ৫.২ শতাংশ এসেছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা থেকে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার মধ্যে ব্যক্তিখাতের ভোগ ব্যয়ের অবদান সবচেয়ে বেশী। এবার প্রবাস আয় প্রবাহের হিসাবে কিছুটা দুর্বলতা পরিলক্ষিত হলেও আসলে তা হচ্ছে না, আয় প্রবাহ হিসাব বহির্ভূত খাতে যেমন তেমনই থাকছে। হিসাবে এই আয় প্রবাহের বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। আশা করি এসব পদক্ষেপের কারণে অচিরেই প্রবাস আয় প্রবাহে গতিশীলতা আসবে। পাশাপাশি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আমরা লক্ষ্যভিত্তিক ‘আয় হস্তান্তর কার্যক্রম’ জোরদার করছি। এগুলোর ভোগ-গুণক (consumption multiplier) সাধারণত  শক্তিশালী হয়ে থাকে। অন্যদিকে, দেশের শিল্প ও কৃষিখাতে প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা ব্যক্তি খাতের ভোগব্যয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া, সার্বিকভাবে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারি খাতের ভোগ ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে।

৬২।   অভ্যন্তরীণ চাহিদার মধ্যে বিনিয়োগ ব্যয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে আমরা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বৃদ্ধি করছি। এর বাস্তবায়ন সময়ানুগ করার জন্য চলমান কার্যক্রমগুলোকে আরো জোরদার করা হবে। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি এবং এগুলো অপসারণে আমরা তৎপর। এসব বিষয়ে আমি একটু পরেই বিস্তারিত বলব।

৬৩।  বহিঃচাহিদা বৃদ্ধি: আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির ওপর বহিঃচাহিদার প্রভাবও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রপ্তানি প্রণোদনা চালু রাখার পাশাপাশি বাণিজ্যনীতির অন্যান্য কৌশলগুলো বহিঃচাহিদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। প্রবৃদ্ধির গতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আমদানি চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা, মুদ্রা বিনিময় হারে অবচিতির চাপ সৃষ্টি করছে। একই সাথে, অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতিও ক্রমহ্রাসমান রয়েছে। ফলে, প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার (Real Effective Exchange Rate) অতিমূল্যায়িত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। এটি আমাদের রপ্তানি খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াবে বলে আমি আশা করি।

৬৪।  সামগ্রিক যোগান বৃদ্ধি: উৎপাদনের উপকরণগু‌লোর মূল্য বৃদ্ধি সংযতকরণ এবং সার্বিক সরবরাহ পরিস্থিতি নির্বিঘ্নকরণের জন্য আমাদের পদক্ষেপগুলো অব্যাহত থাকবে। এতে সরবরাহের দিক হতেও প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে। আমরা কৃষি খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে চাই। ভৌত অবকাঠামো যেমন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের উন্নয়নকে সরকারি ব্যয়ে অগ্রাধিকার প্রদান অব্যাহত রাখবো। আমরা বস্তুগত মূলধন মজুদ বৃদ্ধির পাশাপাশি মানব মূলধন মজুদের (Human Capital Accumulation) জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ প্রদান করবো। এছাড়া, শ্রম শক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপতো থাকছেই। এ বিষয়ে আমি খাতভিত্তিক সম্পদ সঞ্চালন ও কর্মপরিকল্পনা অংশে বিস্তারিত বলব।

৬৫।  রাজস্ব নীতির কৌশল: জিডিপি’র তুলনায় আমাদের সরকারি ব্যয়ের আকার বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন। ২০১৬ সালে বিশ্বের বিকাশমান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলো সরকারি খাতে তাদের জিডিপি’র গড়ে প্রায় ৩০.৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। সেখানে আমরা ব্যয় করতে পেরেছি মাত্র সাড়ে তের শতাংশ। মধ্যমেয়াদে এই হার ১৯.০ শতাংশে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। মহান সংসদে দাখিলকৃত এ বছরের ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতি’ শীর্ষক পুস্তিকায় রাজস্ব নীতির বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আপনার জ্ঞাতার্থে আমাদের রাজস্ব নীতির মূল পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করতে চাই, যা হলো:

  1. আমাদের রাজস্ব নীতির হাতিয়ারগুলোকে একটি মধ্যম আয়ের দেশের উপযোগী করতে চাই। এগুলো স্বল্পকালীন সামগ্রিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের দীর্ঘকালীন উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গণ-মূলধন মজুদ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে;
  2. মধ্যমেয়াদে সরকারের রাজস্ব নীতি থাকবে ক্রমসম্প্রসারণশীল। এজন্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির চলমান কার্যক্রমগুলোকে জোরদার করা হবে;
  3. সরকারের চলতি ব্যয় নির্বাহের জন্য কোন ঋণ গ্রহণ করা হবে না। সরকারি ঋণের সমুদয় অর্থ দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় করা হবে;
  4. সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে বাজেট ঘাটতি সহনীয় ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা হবে। একইসাথে মূল্যস্ফীতি-প্ররোচক ও ব্যক্তিখাতের জন্য ঋণ সংকোচনমূলক ঘাটতি অর্থায়ন পদ্ধতি যথাসাধ্য পরিহার করা হবে;
  5. প্রবৃদ্ধির সুফল সর্বস্তরের জনগণের কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে লক্ষ্যভিত্তিক পুনঃবন্টনমূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে;
  6. টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ-বান্ধব প্রবৃদ্ধি উৎসাহিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী উৎপাদন ও ভোগ প্রক্রিয়াকে নিরুৎসাহিত করা হবে এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের শিকার বিপন্ন জনগোষ্ঠীর দুর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।

৬৬।   রাজস্ব নীতির সাথে মুদ্রানীতির সমন্বয়: আমাদের রাজস্ব এবং মুদ্রানীতি হবে একে অপরের পরিপূরক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে থাকে। কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য মুদ্রানীতিতে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখবো।

বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ও কৌশল

৬৭।  উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের মোট বিনিয়োগ ছিল জিডিপি’র ৩০.৩ শতাংশ। যেখানে সরকারি খাতের বিনিয়োগ ছিল ৭.৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমরা মোট বিনিয়োগকে জিডিপি’র ৩১.৯ শতাংশে উন্নীত করতে চাই। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও সরকারি খাতের বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২৩.৩ ও ৮.৬ শতাংশ। এখন আমি সরকারি ও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির কৌশলসমূহ একটু বিস্তারিত বলতে চাই।

৬৮।  ব্যক্তি বিনিয়োগ সঞ্চালন: কর্মসৃজনের মাধ্যমে ভোগ চাহিদার ধারাকে সমুন্নত রেখে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এ উপলদ্ধি থেকে সরকার সব সময় ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছে। ব্যক্তি বিনিয়োগ বিকাশে যেসব যোগান ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান ছিল সরকার সেসব প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সর্বাত্মক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে চলছে।

৬৯।   বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রয়োজন। এজন্য সরকার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৬ জারি করেছে। এ আইনের বিধান মতে বিনিয়োগ বোর্ড ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের কার্যক্রম একীভূত করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) গঠন করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে সরাসরি বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতাসমূহ অপসারণে কাজ করে যাচ্ছে। অত্যন্ত যত্নসহকারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন প্রণয়ন করেছে এই কর্তৃপক্ষ। এ আইন অনুযায়ী একজন বিনিয়োগকারীর প্রয়োজনীয় আন্ত:মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সকল সেবা কর্তৃপক্ষ নিজেই সম্পাদন করবে। এভাবে একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব নয় মাসের মধ্যে কার্যকর করা সম্ভব হবে। ফলে, Rank of doing business -এ আমাদের অবস্থান উন্নত হবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। বর্তমানে Doing Business-এ বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে ১৭৬। BIDA আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই অবস্থান ১০০ -এর মধ্যে রাখার কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।

৭০।  দেশি-বিদেশি শিল্প স্থাপনের জন্য জমি প্রাপ্তি বাংলাদেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ উপলব্ধি থেকে আমরা ২০১১ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করি। এ পর্যন্ত ২২টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া, ৫৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান নির্বাচন এবং ৭৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গভর্নিং বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আরো ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে। মধ্যমেয়াদে ১২টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উৎপাদন শুরু হবে যেখানে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হবে এবং প্রায় ২ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করছি।

৭১।   গণ-অবকাঠামো বিনির্মাণে ব্যক্তিখাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমরা ইতোমধ্যেই পিপিপি’র (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ) আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। পিপিপি কার্যক্রমে আরো দক্ষ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আমরা প্রণয়ন করেছি Procurement Guideline for PPP Projects, 2016 এবং Guidelines for Unsolicited Proposal, 2016। পিপিপি উদ্যোগে বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে ৪৫টি প্রকল্প পিপিপি কর্তৃপক্ষের পাইপ লাইনে রয়েছে, যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ হবে প্রায় ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে, ৯টি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং ১৩টি প্রকল্প প্রকিউরমেন্ট (Procurement) পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া, ভৌত অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের জন্য আমরা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল)। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ২৬টি পিপিপি প্রকল্পে ২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। ২০১৭ ও ২০১৮ পঞ্জিকা বছরে এ ফান্ড -এর মাধ্যমে আরো ২০টি প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

৭২।  সরকারি বিনিয়োগ: আমরা সব সময় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছি। পাশাপাশি এর সময়ানুগ বাস্তবায়ন ও ব্যয়ের গুণগতমান নিশ্চিত করতে নিয়েছি নানারূপ পদক্ষেপ। বৃহৎ বরাদ্দপ্রাপ্ত ১০টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নে নিয়মিত সভার মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া, ধীর বাস্তবায়ন অগ্রগতিসম্পন্ন প্রকল্পসমূহকে চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন সমস্যাদি উত্তরণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ করে বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ প্রকল্প সাহায্যপ্রাপ্ত ২০টি প্রকল্পের অর্থ ছাড় নির্বিঘ্ন করার জন্য অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগ ও উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি প্রকল্প পরিচালক পুল তৈরি এবং পুলভুক্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

৭৩।  প্রবৃদ্ধি সঞ্চারি বড় বিনিয়োগের ১০টি প্রকল্পকে Fast Track ঘোষণা করে এ প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পসমূহে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থায়ন নিশ্চিতসহ এগুলোর বাস্তবায়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবো।

৭৪।  আপনি জানেন সুসংহত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সরবরাহ সংকট উত্তরণের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অর্থবহ উন্নয়ন। আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য রূপকল্প-২০২১ এর ঘোষণা অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অক্টোবর, ২০১৬ এ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরকালে গ্রামাঞ্চলে সৌর বিদ্যুতের অভূতপূর্ব প্রসার অবলোকন করে বাংলাদেশকে ‘সোলার পাওয়ার’ এর রোল মডেল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, আমরা বেশ কয়েকটি বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু করেছি এবং পরমাণু ক্লাবেও যুক্ত হতে যাচ্ছি। রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে ২০১৮ সালের পর থেকে রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবসায়ন শুরু হবে। দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে দ্রুত LNG টার্মিনাল স্থাপনসহ অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সম্পন্ন করছি।

কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ও কৌশল

মাননীয় স্পীকার

৭৫।  আমাদের শ্রম বাজারে প্রতি বছর ২০ লক্ষ শ্রমশক্তি যুক্ত হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ৪ লক্ষ শ্রমিকের বিদেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে। এবারে সে সংখ্যা ৬ লক্ষ অতিক্রম করবে বলে মনে হয়। ফলে, আমাদের দেশের অভ্যন্তরে প্রতি বছর গড়ে ১৬ লক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আপনি জানেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়লে কর্মসংস্থানও বাড়ে। আমরা যদি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি কর্মসংস্থান হবে। তবে, বর্তমানে অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন জোরদার হচ্ছে। জিডিপি’তে শিল্প ও সেবা খাতের হিস্যা দিন দিন বাড়ছে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণসহ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মূলধনঘন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হওয়া নতুন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ভিন্নতর কর্মসূচি গ্রহণে আমাদের বিশেষ মনোযোগ রয়েছে।

৭৬।  বর্তমানে দেশব্যাপী মজুরি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কৃষি শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসে ভূমিকা পালন করছে। আমরা এ ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ ও উপকরণ সহায়তা অব্যাহত রেখে এ খাতে যাতে বেকারত্বের সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমাদের বর্ধিত শ্রমশক্তির প্রধান কর্মক্ষেত্র হবে ক্রমবিকাশমান শিল্প ও সেবা খাত। এ জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। নগরায়ন প্রক্রিয়ায় নির্মাণ ও পরিবহণ খাতে শ্রমঘন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা কর্মী কর্মরত রয়েছেন। কর্ম-পরিবেশ উন্নয়নসহ তৈরি পোশাক খাত বিকাশে আমাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এর ফলে, এখাতে মহিলা কর্মী নিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে আমি আশা করি।

৭৭।  পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ও উৎপাদন কৌশলের সাথে অভিযোজনের বিলম্ব প্রায়শই কিছুটা বেকারত্ব সৃষ্টি করে। আমরা এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করবো। এ বিষয়ে আমি দক্ষতা উন্নয়ন অংশে আলোকপাত করবো।

৭৮।  বেকারত্ব দূরীকরণে আত্ম-কর্মসংস্থানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারিত করতে চাই। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি, কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) ও টিআর (টেস্ট রিলিফ) -এর মত কার্যক্রমগুলোও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। পাশাপাশি, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসৃজন হবে বলে আমি আশা করি।

৭৯।  বহিঃবিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের জন্য আমরা ইতোমধ্যেই অনেকগুলো কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। আমরা সরকারি পর্যায়ে শ্রম কূটনীতির প্রয়োগ নিশ্চিতসহ শ্রমবাজার অন্বেষণে বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধ করছি। মধ্যপ্রাচ্যে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণ প্রক্রিয়া সহজ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে স্বল্পব্যয়ে বিদেশে কর্মী প্রেরণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা বৈদেশিক কর্মসংস্থান সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সহজীকরণ করতে অনলাইন সেবা সম্প্রসারণ করতে চাই। তাছাড়া, সকল উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও বিদ্যমান কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি, প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে বিশেষায়িত বীমা কোম্পানি ও বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। আমার বিশ্বাস, এ সব কর্মকান্ডের প্রভাবে প্রবাসেও কাঙ্ক্ষিত হারে কর্মসংস্থান হবে।

মাননীয় স্পীকার

৮০।  দক্ষতা উন্নয়ন: আপনি অবগত আছেন যে, একটি উন্নয়নশীল দেশে প্রাথমিক স্তরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় মূলত উৎপাদী উপকরণের (factors of production) অবদান থেকে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিক নিয়মে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে থাকে। তখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম হয় উৎপাদী সক্ষমতা (productivity) এবং উদ্ভাবনের তাড়নায় (innovation)। মানব সম্পদকে দক্ষ করে তোলা এক্ষেত্রে অপরিহার্য কার্যক্রম। তাই, আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। নিরবচ্ছিন্ন, টেকসই ও দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন একটা পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যেখানে শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে টিকে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বগামিতা ধরে রাখাও প্রায় অসম্ভব। এছাড়াও ৮ শতাংশ বা তদুর্ধ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন কৌশল গ্রহণ করা অপরিহার্য।

৮১।   দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কতিপয় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ২২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সকল দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন, যথাযথ ও সমন্বিত দক্ষতা উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রবর্তনসহ দেশের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে National Skills Development Authority (NSDA) স্থাপনের প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। বর্তমানে NSDA গঠনের লক্ষ্যে আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চলছে। NSDA গঠন করার মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা পৃথক করা হবে।

৮২।  জাতীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন তহবিল (NHRDF) প্রতিষ্ঠার কাজেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর কোম্পানি হিসেবে NHRDF –এর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী অর্থবছরে এ তহবিল তার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। এর ফলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে অতিরিক্ত অর্থায়ন সম্ভব হবে।

৮৩।  দেশে শিল্প খাতে মধ্যম ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ঘাটতি দূর করার জন্য Executive Development Program (EDP) শীর্ষক একটি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বনামধন্য দু’টি সরকারি ও দু’টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থাপক তৈরির লক্ষ্যে পাঠক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে। এ পাঠক্রম অনুযায়ী ৯ মাসব্যাপী ডিপ্লোমা কোর্স প্রবর্তন করা হবে। এর ফলে একদিকে যেমন বিদেশি ব্যবস্থাপকদের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে, অন্যদিকে তেমনি ভবিষ্যত শিল্প প্রবৃদ্ধির চাহিদা মেটানোর জন্য উচ্চ মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপকদের ‘পুল’ গঠন করা সম্ভব হবে।

প্রবাস আয় বৃদ্ধির কৌশল

৮৪।  বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রবাস আয় গ্রহীতা। বিবিএস-এর এক জরিপে দেখা যায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশের অভিবাসন সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো গড়ে ৩ লক্ষ ২ হাজার টাকার প্রবাস আয় গ্রহণ করেছেন। এ জরিপের ফলাফলে আরো দেখা যায় প্রবাস আয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ হয়। প্রবাসীদের বিনিয়োগের দ্বারা বিশেষভাবে উপকৃত হয় দেশের নির্মাণ খাত। তাছাড়া, প্রবাস আয় ভোগ ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমেও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে প্রবাস আয়ের এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় বিবেচনায় রেখে আমরা এর বৃদ্ধির জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রবাস আয় প্রেরণ ব্যয় হ্রাস, বিদেশে কর্মরত ব্যাংকের শাখা ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোকে রেমিটেন্স প্রেরণে দক্ষ করে তোলা, প্রবাসীরা যেসব দেশে কর্মরত সেসব দেশের স্থানীয় ব্যাংকগুলোর সাথে এ দেশের ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রয়িং ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধকরণ। আশার কথা হলো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ২০১৭ সালে প্রবাস আয়ের নিম্নমুখী ধারা থেকে বিশ্ব ঘুরে দাঁড়াবে এবং ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এ সকল উদ্যোগ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা আমাদের প্রবাস আয় প্রবাহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

ডিজিটাল ডিভিডেন্ড

৮৫।  আপনি জানেন, তথ্য-প্রযুক্তি শুধু আমাদের জীবনযাত্রাকে সহজতর করে না, বরং এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে। এ উপলব্ধি থেকে নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এ রূপান্তরের প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। ব্যক্তিখাতে তথ্য-প্রযুক্তি বিস্তারের সাথে সাথে সরকারি খাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অটোমেশন ও ই-জিপি পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেছি। সরকারি অফিসে বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উদ্ভাবনী কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখানে বলা প্রয়োজন, ডিজিটাল ডিভিডেন্ড অর্জনের জন্য প্রয়োজন এনালগ পরিপূরক। এজন্য সরকার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনের ও নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে তথ্য-প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে যা এ খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করবে। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে ডিজিটাল এ্যাডাপটেশন সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তথ্য-প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ যেভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে তার প্রতিফলন শীঘ্রই ঘটবে।

টেকসই উন্নয়নের নীতি কৌশল

মাননীয় স্পীকার

৮৬।  পরিবেশ বিপর্যয় পরিহার করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের লক্ষ্য। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে আমাদের বাজেট ও পরিকল্পনা দলিলে পরিবেশবান্ধব নীতি কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছি। আমাদের পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন ইতোমধ্যেই শক্ত আসন দখল করেছে। আমরাই উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম নিজস্ব অর্থায়নে Bangladesh Climate Change Trust Fund প্রতিষ্ঠা করেছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দলিলেও এ বিষয়ে রয়েছে আমাদের নানামুখী পদক্ষেপ। আমরা ইতোমধ্যেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর সাথে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নীতিকৌশলগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছি। মন্ত্রণালয়গুলোতেও তাদের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর কর্মকৃতি ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

সপ্তম অধ্যায়

আগামীর পথে অগ্রযাত্রা: খাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা

মাননীয় স্পীকার

৮৭।  এখন আমি ২০১৭-১৮ অর্থবছরসহ আগামী দিনগুলোতে বিভিন্ন খাতে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র আপনার মাধ্যমে এ মহান সংসদে উপস্থাপন করতে চাই।

(১) মানব সম্পদ উন্নয়ন

শিক্ষা

৮৮।  টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য মানব সম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। তাই শিক্ষাখাতের বিনিয়োগকে আমরা সবসময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। “শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ”–এ শ্লোগানকে সামনে রেখে আমরা সার্বিক শিক্ষাখাতের উন্নয়নে আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করছি।

৮৯।  প্রাথমিক শিক্ষা: শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গুণগত উৎকর্ষতা সাধনে ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক ইন্টারঅ্যাকটিভ শ্রেণিকক্ষ তৈরির পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি, উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান ও জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়নে ১৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২টি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এছাড়া, প্রতি জেলায় মৌলিক সাক্ষরতা ও সাক্ষরতা উত্তর জীবিকায়ন দক্ষতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পর্যায়ক্রমে ডিপ্লোমা-ইন-এডুকেশন প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আইসিটি রিসোর্স সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। ভর্তির হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়া রোধের লক্ষ্যে স্কুল ফিডিং, উপবৃত্তি, নতুন অবকাঠামো ও অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণসহ চলমান অন্যান্য কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও আছে জরাজীর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বা পুনঃনির্মাণ কার্যক্রম।

৯০।  শিক্ষার মানোন্নয়ন: শিক্ষাকে দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে বিবেচনা করে এ খাতকে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে। দিন বদলের সনদ ও রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি আমরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছি। আমরা প্রথমেই চেষ্টা করেছি শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে। পরবর্তী অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রশিক্ষিত শিক্ষক গড়ে তোলা। এতদুদ্দেশ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অনবরত উন্নীত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১২০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৮৫টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। সার্বিক শিক্ষা খাতের মানোন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ চলমান কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাসহ উচ্চ শিক্ষার প্রসার এবং উৎকর্ষতা সাধনে চলমান কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। এ লক্ষ্যে ‘Secondary Education Development Program’ শীর্ষক একটি পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ হবে প্রায় ১৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে, এ কথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষার মানোন্নয়ন সময় সাপেক্ষ বিষয়।

৯১।   শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, উপবৃত্তি প্রদানসহ চলমান অন্যান্য কার্যক্রম আমরা শুধু অব্যাহত রাখছি না, বরং প্রসারিতও করছি। এছাড়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৫টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে আমাদের কার্যক্রমকে আরো জোরদার করবো। উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণীত হয়েছে এবং ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো স্থাপনে প্রকল্প অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ

মাননীয় স্পীকার

৯২।   স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচি: দেশের সকল মানুষের জন্য মানসম্মত ও সহজলভ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পূর্বের ধারাবাহিকতায় ৪৩ হাজার ৪ শত ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে মা ও শিশুর জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নত প্রজনন স্বাস্থ্য, বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নতুন আবির্ভূত রোগ নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিমানসম্পন্ন নিরাপদ খাদ্য এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

৯৩।  এছাড়া, দরিদ্র গ্রামীণ ও প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্হ্যসেবা পৌঁছে দিতে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক চালু এবং মাতৃ-স্বাস্থ্য ভাউচার কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি যে, এরই মধ্যে আমরা ১৩ হাজার ৩৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছি। বর্তমানে আরো ৩৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। টেলিমেডিসিন সেবা কেন্দ্রের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪৩টিতে পৌঁছেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের টেলিমেডিসিন সেবা কেন্দ্র, সামাজিক স্বাস্হ্য সুরক্ষা কর্মসূচি এবং ভিডিও কনফারেন্সিং -এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের কার্যক্রমও আমরা অব্যাহত রাখবো। প্রতিবন্ধীদের জন্য এসব ক্লিনিকে বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

মাননীয় স্পীকার

৯৪।  বিজ্ঞানভিত্তিক উচ্চশিক্ষার প্রসার: বিজ্ঞানভিত্তিক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে আমরা অব্যাহতভাবে উৎসাহ দিতে চাই। এ জন্য বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষকদের বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ট্রাস্ট–এর মাধ্যমে ফেলোশিপ প্রদান অব্যাহত রাখবো। এর মাধ্যমে বিশেষায়িত যোগ্যতাসম্পন্ন বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, গবেষক ও একাডেমিশিয়ান তৈরি হবে যারা বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ও উৎকর্ষ সাধনে অবদান রাখবে।

৯৫।  বাজেট প্রণয়নকালে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনকালে প্রায়োগিক গবেষণার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। তাই, গবেষণাকে জোরদার করতে এই বাজেটে শুধু গবেষণার সুযোগ ও ক্ষেত্র বর্ধনে দুইশত কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।

(২) ভৌত অবকাঠামো

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

মাননীয় স্পীকার

৯৬।   বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন আমাদের সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ খাতে গৃহীত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, লোডশেডিং কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ইতোমধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ আগামী ২০২১ সালের আগেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশা করছি।

৯৭।  বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি: নির্মাণাধীন ১১ হাজার ২১৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত ১১ হাজার ১২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। দীর্ঘমেয়াদি মহা-পরিকল্পনার আওতায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে রামপাল, মাতারবাড়ি, পটুয়াখালীর পায়রায় এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আর্থিক সহায়তায় মহেশখালীতে ৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে গ্যাসভিত্তিক পুরাতন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ ও মেরামতের চলমান কার্যক্রমও আমরা অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আগেই বলেছি, রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীলতা আগামী ২০১৮ সালে যখন বিদ্যুৎ সরবরাহে একটি স্বস্তির অবস্থান সৃষ্টি হবে তখন থেকেই হ্রাসকরণের কার্যক্রম শুরু হবে।

৯৮।  পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন: দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এ বর্ধিত চাহিদা পূরণে প্রচলিত উৎসের পাশাপাশি পারমাণবিক উৎস হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর অংশ হিসেবে রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি।

৯৯।   বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন: বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সাথে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন সঞ্চালন ও বিতরণ সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে, সার্বিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রায় ১০ হাজার কি.মি. নতুন সঞ্চালন লাইন এবং প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কি.মি. নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি, সিস্টেম লস হ্রাস, লোড ম্যানেজমেন্ট এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে আরো ২ কোটি প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি।

১০০। বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়: শিল্প, বাণিজ্য ও আবাসিক খাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহারে অপচয় রোধ করে এর সাশ্রয়ী ব্যবহার ও সংরক্ষণ জরুরী। এ বিবেচনায়, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছি। এলক্ষ্য অর্জনে আমরা ইতোমধ্যে “Energy Efficiency & Conservation Master Plan” প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছি।

১০১।  এলএনজি আমদানি ও টার্মিনাল স্থাপন: গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে Liquefied Natural Gas (LNG) সরবরাহের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির পদক্ষেপ আমরা অব্যাহত রাখবো। এ জন্য LNG টার্মিনাল স্থাপন ও LNG আমদানির কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে। আশা করছি, এসব কাজ সম্পন্ন করে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ এলএনজি আমদানি ও গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

১০২।  গ্যাস উৎপাদন: চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলমান অনুসন্ধান কার্যক্রম আরো জোরদার করার পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সামুদ্রিক সীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে গভীর এবং অগভীর সমুদ্রে আমাদের গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়াতে আমাদের সরকার কাজ করছে। বাপেক্স কর্তৃক ২০২১ সালের মধ্যে মোট ১০৮টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা আমাদের রয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক কূপ খনন ও এসব কূপ হতে গ্যাস উৎপাদন শুরু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।

১০৩। গ্যাসের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ: উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি গ্যাসের উত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাও জরুরী। এ বিবেচনায় সিএনজি ও শিল্প খাতে Electronic Volume Corrector (EVC) মিটার স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি। এরই মধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ২ লক্ষ এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ৬০ হাজার আবাসিক প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাখরাবাদ, তিতাস ও নরসিংদী গ্যাস ফিল্ডে বুস্টার এবং ওয়েলহেড কমপ্রেসর স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে।

১০৪। গ্যাসের দাম নিয়ে নানা কথা উঠছে। ২০১৮ সালে গ্যাস আমদানি শুরু হলে গ্যাসের আন্তর্জাতিক দামে আমাদের তা খরিদ করতে হবে। এজন্য গ্যাসের উপর ধার্য বর্তমান করাদি যৌক্তিকীকরণ করা হবে। এর ফলে, ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম যে বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভর্তুকি প্রদানের অনুরূপ নীতি অনুসরণ করে গ্যাসের দামও সমন্বয় করা হবে।

যোগাযোগ অবকাঠামো

মাননীয় স্পীকার

১০৫। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর বিনিয়োগ আকর্ষণের অন্যতম নিয়ামক হলো উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো। এ বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখে আমরা সবসময় সার্বিক যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়েছি। আমাদের এ প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

১০৬।  সড়ক পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মানসম্মত যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১ হাজার ১৭৯ কি.মি. আঞ্চলিক মহাসড়কের মান উন্নীতকরণে জোনভিত্তিক গুচ্ছ প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। এছাড়া, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১ হাজার ৮৫৫ কি.মি. মহাসড়ক নির্মাণের নিমিত্ত গুচ্ছ প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। সারাদেশের ৩ হাজার ৮১৩ কি.মি. জাতীয় মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণের কাজও এগিয়ে চলেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আরো প্রায় ৩৭৩ কি.মি. জাতীয় মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এতে থাকবে ধীরগতির যানবাহনের জন্য আলাদা সার্ভিস লেন। মহাসড়কে অতিরিক্ত ওজন বহনকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থল ও নৌ-বন্দর এবং পাথর কোয়ারি ও বড় বড় টোল প্লাজায় Axle Load Control Station স্থাপনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। এছাড়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীতকরণের কার্যক্রমও অচিরেই নেয়া হবে।

১০৭। ই-টিকেটিং সিস্টেম চালুকরণ: বাস, রেলওয়ে, নৌ-যান ও চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি বাসে জনগণের যাতায়াত সহজ ও স্বচ্ছন্দ করতে ই-টিকেটিং সিস্টেম প্রচলনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১০৮। সেতু নির্মাণ: দেশের মহাসড়ক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পটুয়াখালী জেলার বগা নদীর উপর ৯ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, বাগেরহাট জেলার মংলা চ্যানেলের উপর ১০ম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু এবং খুলনা জেলায় ঝপঝপিয়া নদীর উপর ১১তম বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চীন সরকারের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

১০৯।  রেলপথ উন্নয়ন: যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলপথের গুরুত্ব বিবেচনায় রেলপথের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে আমরা কাজ করছি। এর অংশ হিসেবে দোহাজারী--কক্সবাজার--গুনদুম, কালুখালী--ভাটিয়াপাড়া--গোপালগঞ্জ--টুঙ্গিপাড়া, পাঁচুরিয়া--ফরিদপুর--ভাঙ্গা, ঈশ্বরদী--পাবনা-ঢালারচর এবং খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ/পুনঃনির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। উদ্বোধনের দিন হতে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে রেল সার্ভিস চালু করার লক্ষ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা-নড়াইল-যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কি.মি. রেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি।

১১০।  পায়রা বন্দরের সাথে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন হতে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি। এছাড়া, রোলিং স্টক ব্যবস্থার উন্নয়নে ১০০টি এমজি লোকোমোটিভ, ৫৫০টি এমজি এবং ১৫০টি বিজি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহের কার্যক্রমও আমরা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি।

১১১।  ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে করিডোরকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। জাইকা অর্থায়নে যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ১টি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ ইতোমধ্যে আমরা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও, ভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঋণের আওতায় খুলনা-দর্শনা সেকশন ডাবল লাইনে উন্নীত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, আখাউড়া-সিলেট সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

১১২।  নৌপথ ও বন্দর উন্নয়ন: অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের উন্নয়নে ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় ভৈরব-সিলেট-ছাতক, বিলালপুর-ঘোড়াডিঙ্গা-নেত্রকোণা, মোহনগঞ্জ-ঘাগড়াজোড়া নৌ-পথসহ মোট আটটি নৌ-পথের নাব্যতা পুনরুদ্ধারের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে। চীনের আর্থিক সহায়তায় প্রতিটি প্রায় ৩৯,০০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা (ডিডব্লিউটি) সম্পন্ন তিনটি নতুন অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এছাড়া, ঢাকাস্থ সদরঘাট টার্মিনাল ভবনের সম্প্রসারণ, তামাবিল স্থল বন্দরে ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, লঞ্চঘাট এবং ওয়েসাইড ঘাট উন্নয়নে জেটি ও পন্টুন স্থাপনসহ চলমান কার্যক্রম আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে।

১১৩।  আকাশ পরিবহন: আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আকাশ পরিবহন এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, পর্যটন শিল্প এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে আকাশ পরিবহনের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশের সকল বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন, অবকাঠামোসহ নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জোরদারকরণে আমাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও টেক্সিওয়ে, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এপ্রোন ও কানেকটিং টেক্সিওয়ে উন্নয়ন এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

পানি সম্পদ

১১৪।  পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা: জীবন ধারণে সবার জন্য পর্যাপ্ত ও নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং কৃষি উন্নয়নে পানি সম্পদের টেকসই উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা ‘জাতীয় পানি সম্পদ পরিকল্পনা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি, নদী ভাঙ্গন রোধ, সেচ খাল খনন ও পুনঃখনন, সেচ অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত, ব্যারেজ ও রাবারড্যাম নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকবে। এছাড়া, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ রোধ, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সমুদ্র হতে ভূমি পুনরুদ্ধারসহ চলমান অন্যান্য কার্যক্রমও আমরা এগিয়ে নেব। একই সাথে, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতাও আমরা বজায় রাখবো।

১১৫।  দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে প্রায় ৮২৫ কোটি এবং হাওর এলাকার আগাম বন্যা প্রতিরোধ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় ৬৮৫ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। পাশাপাশি, এগিয়ে চলেছে নদী ড্রেজিং ও নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত প্রায় ১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকার আরো একটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ। এছাড়া, প্রায় ১ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই -এ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ সড়ক-কাম-বেড়ি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আগামী অর্থবছরের বাজেটে চর, হাওর ও পশ্চাৎপদ এলাকার স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সার্বিক উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা রেখেছি।

(৩) জনকল্যাণ

মাননীয় স্পীকার

১১৬।  খাদ্য ব্যবস্থাপনা: নিরাপদ ও পুষ্টিমান সম্পন্ন পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য ধারণক্ষমতা ২০২০ সালের মধ্যে ২৭ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্পমূল্যে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় খাদ্যশস্য বরাদ্দের কর্মসূচি আমরা অব্যাহত রাখবো। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৮ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও ২৭ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিতরণ এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে বছরের ৫ মাস স্বল্প আয়ের ৫০ লক্ষ পরিবারকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে খাদ্য সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি, খাদ্যশস্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণে পরিবীক্ষণ সক্ষমতা বাড়াতে ডিজিটাল প্রযুক্তি প্রয়োগের পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করবো।

১১৭।  দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ: প্রাকৃতিক ও অবস্থানগত কারণে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ বলে পরিচিত। তবে, যে কোন ধরনের অভিঘাত মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা (resilience) ও সাংগঠনিক দক্ষতা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সমাদৃত। এর পিছনে রয়েছে জনগণের অদম্য মনোবল এবং সরকারের বাস্তবানুগ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতি-কৌশল। এরই অংশ হিসেবে সমন্বিতভাবে দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা গ্রহণ করেছি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, ২০১৬-২০২০। ভূমিকম্প ও অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনতা ও রেজিলিয়্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এছাড়া, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, দুর্যোগপ্রবণ জেলায় ত্রাণ গুদাম নির্মাণ এবং মুজিব কিল্লা সংস্কার ও নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

মাননীয় স্পীকার

১১৮।  সামাজিক সুরক্ষা: দেশের দুস্থ, অবহেলিত, সমস্যাগ্রস্ত, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আমরা নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে জোরদার করছি। এ ধারা আমরা আগামীতেও অব্যাহত রাখবো। আমরা ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি হওয়া তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পরিচয়পত্র প্রদান করবো। পাশাপাশি, বিদ্যমান উন্নয়ন কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস এবং নতুন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করবো। এছাড়া, সাভারে ১২ একর খাস জমির উপর আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা প্রদানের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১১৯।  সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানো এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য নিম্নরূপ প্রস্তাব করছি:

  1. বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার হতে বাড়িয়ে ৩৫ লক্ষে উন্নীতকরণ;
  2. বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ লক্ষ ৬৫ হাজারে উন্নীতকরণ;
  3. অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ লক্ষ ২৫ হাজারে এবং মাসিক ভাতার পরিমাণ ১০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকায় উন্নীতকরণ;
  4. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ৫ হাজার করে মোট ১০ হাজার বৃদ্ধিকরণ;
  5. হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতা খাতে বরাদ্দ ২ কোটি ৩৫ লক্ষ বাড়িয়ে ১১ কোটি ৩৫ লক্ষে উন্নীতকরণ;
  6. বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বিশেষ/বয়স্ক ভাতার খাতে বরাদ্দ ৬ কোটি ৩২ লক্ষ বাড়িয়ে ২৭ কোটি টাকায় উন্নীতকরণ;
  7. ক্যান্সার, কিডনী, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির বরাদ্দ ২০ কোটি বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকায় উন্নীতকরণ;
  8. চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি খাতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং খাদ্য-দ্রব্যাদির পরিবর্তে জনপ্রতি এককালীন নগদ ৫ হাজার টাকা করে প্রদান;
  9. বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিদ্যমান মাথাপিছু সম্মানী ভাতার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা হারে বছরে দু’টি উৎসব ভাতা প্রদান;
  10. দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকাল ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ বাড়িয়ে ৬ লক্ষে উন্নীতকরণ;
  11. কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মায়েদের মাতৃত্বকাল ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা ২০ হাজার বাড়িয়ে ২ লক্ষে উন্নীতকরণ।

এছাড়া, ভিজিডিসহ অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো।

১২০।  প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে আমাদের নানামুখী কার্যক্রম রয়েছে। এসব কার্যক্রমের বিপরীতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি যা, চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩১ শতাংশ বেশী। নতুন করে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য একটি করে ‘রিসোর্স কেন্দ্র’প্রতিষ্ঠা এবং সম্ভব সকল ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।

মাননীয় স্পীকার

১২১।  হাওর এলাকার জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি: আমি সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে এতক্ষণ যে কার্যক্রমের বিবরণ দিয়েছি তা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এগুলোর পাশাপাশি বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকি। আপনি জানেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও দুর্যোগে হাওর এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এ এলাকার প্রকৃত দুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত ৩ লক্ষ ৩০ হাজার পরিবারকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল প্রদানের বিশেষ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। পাশাপাশি, মাসিকভিত্তিতে নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য মোট ৫৭ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও ইতোমধ্যে প্রদান করেছি। ইজিপিপি’র (Employment Generation Program for the Poorest) আওতায় ৯১ হাজার ৪৪৭ জন উপকারভোগীকে ৮২ কোটি ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঋণ আদায় স্থগিতকরণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের রেয়াতি হারে নতুন ঋণ প্রদান এবং ঋণ পুনঃতফশীলীকরণের সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে।

মাননীয় স্পীকার

১২২।  উন্নয়নে নারী:

“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”।

আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম -এর এ অমর বাণী আজ আর শুধু কবিতা নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, রাজনীতি, ব্যবসাসহ সকল শ্রেণি-পেশা নারীর সক্রিয় পদচারণায় মুখরিত। তাদের উন্নয়ন কেবল তাদের পরিবারের নয়; একই সাথে, সমাজ ও দেশেরও উন্নয়ন। এ উপলব্ধি থেকেই নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নের উপর আমরা শুরু থেকেই জোর দিয়ে আসছি। আমরা নারীর অগ্রগামিতার এ ধারাকে আরো উৎসাহিত করতে চাই, এগিয়ে নিতে চাই।

১২৩।  নারী ও শিশু উন্নয়ন: সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রান্তিক ও অসহায় কিশোর-কিশোরীদের জেন্ডার বেইজড্ ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সচেতন ও সক্ষম করতে ৬৪টি জেলার ৪৮৯টি উপজেলায় ৫ হাজার ২৯২টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এছাড়া, কর্মজীবী মহিলাদের বিদ্যমান হোস্টেলসমূহের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ২টি বিভাগীয় শহরে নতুন হোষ্টেল নির্মাণ এবং নীলক্ষেতে নতুন ১০তলা হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে, যেখানে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি, কোমলমতি শিশুদের জন্য ৬০টি দিবাযত্ন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি। এছাড়া, নারী আইসিটি ফ্রি-ল্যান্সার এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে আমাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

মাননীয় স্পীকার

১২৪।  মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণ: বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সরকার, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণ, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও পরবর্তী প্রজন্মের কল্যাণে আমাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নত আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি।

১২৫।  আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি, গণকবর চিহ্নিতকরণ, এ সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার তৈরি, প্রদর্শনী এবং প্রকাশনার লক্ষ্যে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি।

মাননীয় স্পীকার

১২৬।  জনশক্তি রপ্তানি ও প্রবাসী কল্যাণ: প্রবাস আয় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম প্রধান উৎস। ব্যক্তি পর্যায়ে আয় বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ভোগব্যয় বৃদ্ধি, পুঁজি গঠনসহ নানাভাবে প্রবাস আয় আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। তাই, প্রবাস আয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে আমাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো। প্রবাসীগণ যাতে তাদের ওয়ার্ক পারমিট/ভিসা সংক্রান্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় পেতে পারে সে জন্য অন-লাইন যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধানে বেসরকারি খাতকে উদ্বুদ্ধকরণ, সরকারিভাবে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে বিদেশে কর্মী প্রেরণ, অনলাইন সেবা সম্প্রসারণ, প্রশিক্ষণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১২৭।  প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবাদান কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশস্থ সকল বাংলাদেশ মিশনে এমআরপি কার্যক্রম এবং ৪৭টি মিশনে এমআরভি কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি।

(৪) ডিজিটাল বাংলাদেশ

মাননীয় স্পীকার

১২৮।  তথ্য-প্রযুক্তি সেবার উন্নয়ন: রূপকল্প ২০২১ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সার্বিক তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে আইটি/আইটিইএস সেবার দ্রুত প্রসার এবং আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর আমরা গুরুত্ব প্রদান করছি। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে আমরা গোপালগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, চট্টগ্রাম বন্দর, কক্সবাজারের রামু, রংপুর সদর, নাটোরের সিংড়া, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ, বরিশাল সদর এবং খুলনার কুয়েট ক্যাম্পাসে ১২টি আইটি পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এছাড়া, দেশের সাতটি স্থানে আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চ গতির ফাইবার অপটিক ক্যাবল সম্প্রসারণের কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি।

১২৯।  ই-জিপি (e-Government Procurement) কার্যক্রমের সম্প্রসারণ: ই-জিপি’র সম্প্রসারণ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “Digitizing Implementation Monitoring and Public Procurement” শীর্ষক প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় গৃহীত এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩টি বৃহৎ সরকারি সংস্থায় ই-জিপি সিস্টেম সম্প্রসারণ করা হবে। আশা করা যায়, এর ফলে সরকারি ক্রয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ দরপত্র ই-জিপি’র আওতায় আসবে।

(৫) কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন

মাননীয় স্পীকার

১৩০। কৃষি উন্নয়ন: আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর। শিল্পের প্রসার এবং তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও এখনো দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। এখানে স্মরণ রাখতে হবে যে, আমাদের কৃষি জমি অনবরত হ্রাস পাচ্ছে। সেজন্য গ্রামে যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণকে নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়টি এখন থেকেই আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকের উন্নয়নে চলমান কার্যক্রম আমরা আরো জোরদার করবো। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বৈরি পরিবেশে অভিযোজনে সক্ষম ধানের জাত উদ্ভাবন, ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমানো, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্হাপন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহ, সেচ সম্প্রসারণ, নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত আমদানি নিশ্চিতকরণে সংগনিরোধ কেন্দ্র স্থাপন, জেনেটিক্যালি মোডিফাইড প্রযুক্তির প্রচলন, প্রতিকূলতা সহিষ্ণু পাটের জাত উদ্ভাবন এবং বহুমুখী পাটপণ্য উদ্ভাবন সংক্রান্ত গবেষণা, পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, কৃষি খাতে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, Value Chain ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ইত্যাদি। পাশাপাশি, কৃষি গবেষণালব্ধ ফলাফল, কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি এবং কৃষি সেবা কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সারাদেশে ২৩৫টি কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি।

১৩১।  পল্লী অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন: সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই। এর অংশ হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ৫ হাজার ২৫০ কি.মি. নতুন সড়ক নির্মাণ, ১১ হাজার ৫০০ কি.মি. পাকা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, ৩২ হাজার ৩৫০ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ৮২টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ৫৫টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন এবং ৯৫টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এছাড়া, দরিদ্র গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের জন্য দুগ্ধ ‌উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে এমন ৫০টি উপজেলায় সমবায়ের কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দুধের বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি, পল্লী ও চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে চলমান অন্যান্য কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো।

১৩২।  একটি বাড়ী একটি খামার: আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ‘একটি বাড়ী একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় আমরা প্রকৃত দরিদ্র/ছিন্নমূল/ভিক্ষুক পরিবার বাছাই করছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এসব পরিবারকে সমিতিবদ্ধ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুদ্র সঞ্চয় মডেলের আওতায় স্থায়ী তহবিল গঠন করে দেয়া। এর ধারাবাহিকতায় আগামী ৪ বছরে সারাদেশে ১ লক্ষ ভিক্ষুক পুনর্বাসনসহ ৩৬ লক্ষেরও অধিক দরিদ্র পরিবারকে সম্পৃক্ত করে আরো ৬০ হাজার ৫১৫টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদেরকে রেশম চাষে সম্পৃক্তকরণের পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি। এর প্রাথমিক পর্যায়ে ২০টি জেলার ২৫টি উপজেলায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারণের কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি।

(৬) শিল্পায়ন ও বাণিজ্য

মাননীয় স্পীকার

১৩৩। শিল্প উন্নয়ন: কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে শিল্প প্রসারের বিকল্প নেই। এ উপলব্ধিকে সামনে রেখে জাতীয় শিল্প নীতি ২০১৬ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নীতির আলোকে শিল্প সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিল্পায়নের গতিকে বেগবান করার পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করছি। ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধা সৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন ১৩টি বাফার গুদাম নির্মাণ এবং ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (UF-85) প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১৩৪। জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প: জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে আমরা ‘জাহাজভাঙ্গা শিল্প জোন’ তৈরি করেছি। এ জোনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পরিচালনা এবং বিকাশের লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৬ -এর খসড়া প্রণয়ন করেছি। আশা করছি, শিগগিরই এ আইন চূড়ান্ত করা যাবে। এছাড়া, পরিবেশ সুরক্ষা এবং এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ এ শিল্প থেকে নিঃসরিত বিপজ্জনক বর্জ্যের ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একটি ‘Treatment, Storage & Disposal Facility’ নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি।

১৩৫। বস্ত্র ও পাট শিল্প: সোনালী আঁশ পাট, আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। পাটজাত পণ্য আমাদের সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সাথে মানানসই। তাই পাটজাত পণ্যসামগ্রীর ব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘সোনালী আঁশের দেশ, পাটপণ্যের বাংলাদেশ’ শ্লোগান নিয়ে ৬ মার্চ ২০১৭ তারিখে প্রথমবারের মত আমরা জাতীয় পাট দিবস পালন করেছি। এ ধারা আমরা আগামীতেও অব্যাহত রাখবো।

১৩৬।  যৌথ-বিনিয়োগ অথবা পিপিপি উদ্যোগের মাধ্যমে বিটিএমসি’র ১৬টি মিল পরিচালনার পরিকল্পনা আমরা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি। আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক তাঁত শিল্পের সুরক্ষা ও প্রসারে ‘তাঁতপল্লি’ স্থাপন এবং তাঁতিদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করবো। পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ এবং আমাদের সোনালী ঐতিহ্য ‘ঢাকাই মসলিন’ পুনরুদ্ধারে চলমান গবেষণা কার্যক্রমকে আগামীতে আরো জোরদার করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১৩৭। বাণিজ্য সম্প্রসারণ: রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ, নতুন বাজার অন্বেষণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদামাফিক পণ্যের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। দেশি-বিদেশি ক্রেতা আকর্ষণে প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টির নিমিত্ত বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টার আমরা নির্মাণ করছি। আশা করছি, ২০১৮ এর মধ্যে সেন্টারটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করা যাবে এবং ২০১৯ সালের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উক্ত সেন্টারে আয়োজন করতে পারবো। এছাড়া, বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধিতে Enhanced Integrated Framework (EIF)-এর আওতায় প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণে আমাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

১৩৮। ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ এবং অনৈতিক জোটবদ্ধতার মাধ্যমে বাজারকে অস্থিতিশীল করার প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমরা গঠন করেছি প্রতিযোগিতা কমিশন। এ কমিশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আমি আশা করি, এ কমিশন বাজারের স্থিতিশীলতা ও পণ্যের ন্যায্যমূল্য বজায় রাখতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।

(৭) আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা

মাননীয় স্পীকার

১৩৯।  দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে নতুন নতুন দেশে শ্রম ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে আগামীতে বিদেশে বাণিজ্য মেলা আয়োজন, বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার লাভ ও শ্রমবাজার উম্মোচনে আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করবো। রুমানিয়ায় মিশন এবং ভারতের চেন্নাই, আমেরিকার ফ্লোরিডা, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও কানাডা’র টরেন্টোতে বাংলাদেশ উপ-মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের সাথে ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (FOC), দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে বৈঠক, সফর বিনিময় ও চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ়করণের পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করবো। উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে SASEC (South Asia Sub-regional Economic Co-operation) অত্যন্ত মূল্যবান ভূমিকা পালন করছে। এক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছি।

(৮) জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ

মাননীয় স্পীকার

১৪০। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ বিষয়ে আমরা সজাগ রয়েছি। এ পরিবর্তন মোকাবেলায় কৌশল প্রণয়ন ও প্রস্তুতির অংশ হিসেবে Country Investment Plan (CIP) প্রণয়ন করছি। এর আলোকে নিরাপদ ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা কার্যক্রম গ্রহণ করবো। এছাড়া, স্বল্প কার্বন নিঃসরণযোগ্য উন্নয়ন ও Energy Efficient Development–এর জন্য একটি কর্ম-কৌশল প্রণয়নের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

১৪১।  বৃক্ষরোপণ, পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে আগামী তিন অর্থবছরে আমরা ২০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সৃজন, ১৭ হাজার ৫ শত হেক্টর জমিতে অংশীদারিত্বমূলক ব্লক বাগান ও ৩ হাজার ৬ শত কি.মি. জমিতে স্ট্রীপ বাগান সৃজনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। এছাড়াও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে ২৫টি সংরক্ষিত এলাকায় সহ-ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি।

(৯) পরিকল্পিত নগরায়ন ও আবাসন

মাননীয় স্পীকার

১৪২।  পরিকল্পিত নগরায়ন: সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণে আধুনিক ও পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা, মহাপরিকল্পনা ও বিশদ স্থাপনাকৌশল প্রণয়ন, সমন্বয়করণ এবং হালনাগাদকরণের চলামান কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখবো।

১৪৩। আবাসন সুবিধা সম্প্রসারণ: পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতায় পিপিপি পদ্ধতিতে ৬২ হাজার ফ্ল্যাট এবং ঝিলমিল প্রকল্পের আওতায় পিপিপি/জি-টু-জি পদ্ধতিতে ১০ হাজার ৯৪৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। ঢাকার কড়াইল-লালাসরাই ও মহাখালীতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ৪ হাজার ৬৬২টি আবাসিক ফ্ল্যাট এবং মিরপুরে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য পিপিপি পদ্ধতিতে প্রায় ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। পাশাপাশি, মিরপুর ৯নং সেকশনে স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণ, চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে বহুতল বাণিজ্যিক-কাম-আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।

১৪৪। যানজট নিরসন: চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট নিরসনে লালখান বাজার হতে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কি.মি. দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। অপরদিকে, রাজধানী ঢাকার যানজট পরিস্থিতির উন্নয়নে শান্তিনগর হতে ঢাকা-মাওয়া রোডে প্রায় ১২ কি.মি. দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। যানজট নিরসন এবং দুর্ঘটনা রোধে গাড়ীচালকদের উন্নত ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্যে আমরা প্রতিটি বিভাগীয় শহরে নতুন ড্রাইভার টেস্টিং এবং ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছি।

(১০) তথ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম এবং যুব ও ক্রীড়া

মাননীয় স্পীকার

১৪৫। তথ্য অধিকার: তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এছাড়া, জেলা পর্যায়ের প্রেস ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি জেলায় একটি করে মিডিয়া হাব প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার কার্যক্রম দেশের সকল এলাকায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ৫টি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ টিভিকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।

১৪৬।  ধর্ম: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সকল ধর্মের, সকল মানুষের মাঝে এ সদ্ভাব বজায় রেখে জাতি হিসেবে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সকল ধর্মের অনুসারীদের মাঝে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা বিকাশের লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করছে। ইসলামী জ্ঞান ও সংস্কৃতি চর্চা এবং ইসলামী মূল্যবোধের যথাযথ পরিপালনের লক্ষ্যে প্রতি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এছাড়া, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও গণশিক্ষা কার্যক্রমসহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট, বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট এবং খ্রিষ্টান কল্যাণ ট্রাস্ট -এর মাধ্যমে সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার এবং অবকাঠামো উন্নয়নের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

১৪৭। দেশজ সংস্কৃতির বিকাশ: দেশজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের সরকার কাজ করছে। সংস্কৃতি ও শিল্প চর্চাকে তৃণমূল পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের জন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকাসহ সকল বিভাগ, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ ধারা আগামীতেও আমরা অব্যাহত রাখবো।

১৪৮। যুব ও ক্রীড়া: শিক্ষিত ও বেকার যুবদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। দেশ-বিদেশের শ্রম বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও প্রশিক্ষণ পাঠক্রম পরিমার্জনের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে। এছাড়া, ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ এবং আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া অবকাঠামো ও খেলোয়াড় তৈরির চলমান কার্যক্রমও অব্যাহত রাখা হবে।

(১১) জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা

১৪৯। টেকসই উন্নয়নের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনসমূহের তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বাড়াতে আমরা আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভর সরঞ্জামাদি সংযোজন করছি। সম্প্রসারণ করেছি বাহিনীসমূহের প্রশিক্ষণ সুবিধা। অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বাহিনীসমূহের আধুনিকায়নের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

১৫০। সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও প্রযুক্তিনির্ভর সরঞ্জামাদি সংযোজন এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনের নিরিখে নতুন জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো। এছাড়া, নারী পুলিশ সদস্যদের আবাসন সমস্যা নিরসনকল্পে বিভিন্ন জেলায় ৫৬টি মহিলা ব্যারাক নির্মাণের উদ্যোগও আমরা গ্রহণ করেছি।

অষ্টম অধ্যায়

সুশাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন

মাননীয় স্পীকার

১৫১।  এবারে আমি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত সংস্কারমূলক পদক্ষেপের বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। বিগত বছরগুলোতে আমরা বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি এবং নতুন নতুন সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি।

১৫২।  সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা: প্রথমেই আমি অনলাইনে সরকারি কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করছি। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত অষ্টম জাতীয় বেতনস্কেল ঘোষণার পর অনলাইনে বেতন ও পেনশন নির্ধারণের পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে পেনশনার ও সরকারি কর্মচারীদের তথ্যভান্ডার (database)। ২৯ মে ২০১৭ তারিখ পর্যন্ত ১১ লক্ষ ২৩ হাজার ২৪১ জন সরকারি কর্মচারী এবং ৬ লক্ষ ২৭ হাজার ৩৪৮ জন পেনশনারের তথ্য এ তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ তথ্য ভান্ডার ব্যবহার করে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেড ও অফিসভিত্তিক সংখ্যা, বেতন ও পেনশনের হিসাব অতি সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হবে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বিল এবং সরবরাহকারির বিল অনলাইনে দাখিল পদ্ধতি শিগগির চালু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১৫৩। এমটিবিএফ পদ্ধতির আওতায় আমরা বাজেট প্রক্রিয়াকে উত্তরোত্তর সরকারের নীতি-কৌশল ও অর্জিত ফলাফলের সাথে সম্পৃক্ত করছি। বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে কি ফলাফল অর্জিত হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার সাথে অর্জিত ফলাফল কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা খতিয়ে দেখার প্রয়াসকে আমরা আরো জোরদার করবো।

১৫৪। সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা খাতের সংস্কার কার্যক্রম সমন্বিত ও পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়নের জন্য আমরা ‘সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কৌশল ২০১৬-২১’ প্রণয়ন করেছি এবং এর আওতায় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলমান রেখেছি। বাজেট প্রণয়ন, বাজেট বাস্তবায়ন ও হিসাবায়নের জন্য আমরা Integrated Budget and Accounting System (iBAS) নামের যে তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সিস্টেমটি এতদিন ব্যবহার করছিলাম, তার আধুনিয়াকনের মাধ্যমে iBAS নামের কেন্দ্রীভূত ও ইন্টারনেটভিত্তিক অত্যাধুনিক একটি সিস্টেম প্রবর্তন করেছি। বর্তমানে সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ, অধিদপ্তর এবং হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অধিক্ষেত্রে এ সিস্টেমের ব্যবহার শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সিস্টেম উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এছাড়া, সরকারি হিসাবের গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা নতুন বাজেট ও হিসাব শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি (Budget and Accounts Classification System, BACS) চূড়ান্ত করেছি। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় হতে এ নতুন শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতিটি বাস্তবায়ন শুরু করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

পেনশন

১৫৫। আমাদের বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার করে আধুনিক, যুগোপযোগী ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থা প্রবর্তনে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদ্যমান সরকারি পেনশন ব্যবস্থার সংস্কারের প্রথম ধাপে আমরা শতভাগ পেনশন নগদায়নের বিধান রহিত করেছি, পেনশন বাবদ বরাদ্দ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে রাখার পরিবর্তে অর্থ বিভাগের অনুকূলে রাখার ব্যবস্থা করেছি এবং পৃথক একটি পেনশন অফিস প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামী ১ জুলাই ২০১৭ হতে অবসরগ্রহণকারী সরকারি পেনশনার আবশ্যিকভাবে তার প্রাপ্য পেনশনের অর্ধেকের উপর নির্দিষ্ট হারে আনুতোষিক পাবেন এবং বাকী অর্ধেক আজীবন মাসিক পেনশন হিসেবে পাবেন। শুধু তাই নয়, পূর্বে পেনশনারগণের পেনশন নির্ধারণের পর নতুন পে-স্কেল চালুর আগে পেনশনের হার বৃদ্ধি করা হতো না। ফলে পেনশনারগণ অতি নগণ্য হারে পেনশন পেতেন। আমরা প্রথমবারের মত মাসিক পেনশনের উপর বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট প্রথা প্রবর্তন করেছি, যা একদিকে পেনশনারদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য রহিত করবে, অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি হতে সুরক্ষা প্রদান করে তাদের জীবনযাত্রার মান সমুন্নত রাখতে সহায়ক হবে।

১৫৬।  সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকান্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।

জনপ্রশাসন

১৫৭। জনপ্রশাসনে প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ ও সময়াবদ্ধ কর্ম-সম্পাদনের লক্ষ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কর্ম-সম্পাদন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। এর আওতায় সম্পাদিত চুক্তি অনুয়ায়ী কর্ম-পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে একটি ওয়েবভিত্তিক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা-২০১৬ জারি করেছি, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাগরিকগণের সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জনপ্রশাসনে নিয়ম নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এক্ষেত্রে যুগের সাথে তাল রাখতে গেলে উদ্ভাবনী কৌশল বা পদ্ধতিকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান খুবই কার্যকরী বলে মনে হয়। উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিতে চাই এবং এজন্য যেকোন সুপারিশ সানন্দে গৃহীত হবে।

১৫৮। একটি একক আইডি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নাগরিকদের জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-তালাক, মৃত্যুর কারণ ইত্যাদি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ এবং এর ভিত্তিতে সরকারের সকল সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা Civil Registry and Vital Statistics (CRVS) চালু করেছি। CRVS-কে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ অন্যান্য সেবা প্রদান প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

১৫৯।  শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জননিরাপত্তাসহ অন্যান্য নাগরিক সেবা সহজে এবং স্বল্প সময়ে জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়া আমাদের সরকারের একটি অন্যতম অঙ্গীকার। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে চলতি অর্থবছরে আমরা কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কারসহ পুনর্বিন্যাস করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ’, এবং ‘কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ’, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে ‘জননিরাপত্তা বিভাগ’ এবং ‘সুরক্ষা সেবা বিভাগ’ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পুনর্গঠন করে ‘স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ’ এবং ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ’ নামে দুটি বিভাগ গঠন এবং গঠিত বিভাগসমূহের কার্যতালিকা পুনঃনির্ধারণ করেছি। জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলে বর্ণিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা হালনাগাদ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

আইনের শাসন

১৬০।  বিচার প্রার্থীদের কাছে আইনের সেবা সহজগম্য করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণসহ আমরা বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বিভিন্ন জেলায় আদালত ভবন নির্মাণ কাজ চলমান আছে। তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে জনগণকে বিচারিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে অক্টোবর ২০১৬ মাস হতে সকল জেলায় ই-মোবাইল কোর্ট সিস্টেম চালু করেছি।

১৬১।  বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের অংশ হিসেবে দুর্ধর্ষ ও দাগী আসামীদের আদালতে হাজির না করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পন্ন করার বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দেশে-বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আমরা নেব।

দুর্নীতি দমন

১৬২।  দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য একটি সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি করা আমাদের সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এর অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৬ সংশোধন করা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগসমূহ সরাসরি গ্রহণের উদ্যোগ হিসেবে দুদকে হটলাইন চালু করা হয়েছে।

১৬৩।  জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের নিবারণমূলক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন ‘গণশুনানি’ পরিচালনা করছে। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনা, জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণ

১৬৪।  ভূমি ব্যবস্থাপনা, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদকরণে বরাবরের মত আমরা বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। পার্বত্য জেলা ল্যান্ড জোনিং অন্তর্ভুক্তকরণসহ সমতল জেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং ডিজিটাল ভূমি মালিকানা সনদ প্রদান সংক্রান্ত পাইলট কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মার্চ, ২০১৭ পর্যন্ত ২৭৪টি উপজেলার “ভূমি জোনিং প্রতিবেদন ও GIS Based Digital Land Zoning Map” এর মুদ্রণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

১৬৫।  জনগণকে ভূমি সম্পর্কিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০টি উপজেলায় ২০টি ভূমি তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছি। জনগণের ভোগান্তি লাঘবে নামজারী প্রক্রিয়া অটোমেশন করার জন্য আমরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছি। দেশের সকল উপজেলার ভূমি ব্যবস্থাপনা ও ভূমি সেবা সহজীকরণ ও অটোমেশনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। দেশের পুকুর ও জলমহালসমূহের ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরি এবং প্রতিটি জেলায় একটি করে খাস পুকুর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ আমরা নেব।

আর্থিক খাত

১৬৬।  আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রমের বিষয়ে আমি আমার গত বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলাম। ইতোমধ্যে আমরা আর্থিক খাতের আইনি কাঠামোর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনসহ এ খাতের ব্যবস্থাপনায় কম্পিউটারাইজেশন সিস্টেম চালু করেছি। তাছাড়া, রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহকে Core Banking Solution-এর আওতায় আনার কাজ সম্পন্ন করেছি। এ ধারাবাহিকতায় ফিন্যান্স কোম্পানি আইন এবং ব্যাংক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, বিধি, প্রবিধি ইত্যাদি প্রণয়ন/সংশোধন করার কার্যক্রম চলমান আছে।

১৬৭।  আর্থিক খাতের রিপোর্টিং স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রণীত ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টং আইনের আওতায় কাউন্সিল গঠনের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে এ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন।

১৬৮।  দেশে নগদ লেনদেনের আধিক্যের কারণে প্রায়শই বিভিন্ন অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং অর্থ চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব বিবেচনায় নগদ লেনদেন হ্রাস বা নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। Asia Pacific Group on Money Laundering (APG) -এর মূল্যায়ন অনুযায়ী বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম ‘আন্তর্জাতিক মানের’ বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাছাড়া, বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন পরিপালনের ক্ষেত্রে একটি “কমপ্লায়েন্ট কান্ট্রি” হিসেবেও বিবেচিত। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এশিয়া অঞ্চলের জন্য অন্যতম অগ্রগামী দেশ হিসেবেও ইতোমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে।

পুঁজিবাজার

১৬৯।  পুঁজিবাজারে স্টার্ট-আপ ও নতুন কোম্পানির মূলধনের চাহিদা মেটাতে Bangladesh Securities and Exchange Commission (Alternative Investment) Rules, 2015 প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া, পুঁজিবাজারের লেনদেনে স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে আধুনিক সার্ভেইল্যান্স সিস্টেমও ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পুঁজি গঠনে সহায়তার লক্ষ্যে একটি Small Cap Platform প্রতিষ্ঠার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে Bangladesh Securities and Exchange Commission (Qualified Investor Offer by Small Capital Companies) Rules, 2016। পাশাপাশি, নতুন প্রোডাক্ট Exchange Traded Fund (ETF) চালুর লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে Bangladesh Securities and Exchange Commission (ETF) Rules, 2016। পুঁজিবাজার উন্নয়নে গৃহীত দীর্ঘমেয়াদি কর্ম-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য আলাদা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া, স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি এবং পেশাগত দ্ক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের আওতায় কৌশলগত বিনিয়োগকারী (strategic partner) সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

বীমা

১৭০। বাংলাদেশের বীমা খাতের আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বীমা কর্পোরেশন আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যবীমা চালুকরণ, সামাজিক বীমা ব্যবস্থা প্রবর্তন, কৃষিজাত পণ্যের জন্য ‘Weather Index Based Crop Insurance’ চালুকরণসহ বীমা খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রমও আমরা অব্যাহত রাখবো।

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা

১৭১।  দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে জাতীয়, আঞ্চলিক ও ক্ষুদ্র এলাকাভিত্তিক সঠিক ও মানসম্মত এবং সময়োপযোগী পরিসংখ্যান সরবরাহের গুরুত্ব অপরিসীম। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঠিক চিত্র ফুটিয়ে তুলতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন শুমারি ও জরিপের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রস্তুত ও প্রকাশ করছে। জিডিপি’র হিসাব ত্রৈমাসিকভিত্তিতে প্রণয়নের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করার কথা আমি আমার গত বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলাম। আশার কথা হ’ল জিডিপি’র ত্রৈমাসিকভিত্তিক হিসাব প্রণয়নের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম আমরা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছি। শিল্প উৎপাদন সূচকের সময় ব্যবধান তিন মাসের স্থলে দুই মাসে কমিয়ে আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তাছাড়া, খানা আয়-ব্যয় জরিপের অধীনে প্রথমবারের মত জেলাভিত্তিক দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দেশের উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক কর্মকান্ডের জন্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্ভরযোগ্য ও হালনাগাদ তথ্য সরবরাহের লক্ষ্যে আমরা জাতীয় পরিসংখ্যান তথ্যভান্ডার (Statistical Database) তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

১৭২।  জলবায়ু অর্থায়ন: সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনায় জলবায়ু অর্থায়ন অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আমাদের উন্নয়ন ভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ উপলব্ধি থেকে ২০১৪ সালে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের যৌথ উদ্যোগে একটি ‘Climate Fiscal Framework’ তৈরি করা হয়। সর্বমহলে প্রশংসিত এই Framework-টি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে চলতি অর্থবছর থেকে অর্থ বিভাগ ‘Inclusive Budgeting and Financing for Climate Resilience’-শীর্ষক ৪ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের বাজেট কাঠামোসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক মডেল, সরকারি পরিবীক্ষণ ও নিরীক্ষা ব্যবস্থায় জলবায়ু সংবেদনশীলতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রকল্পের আওতায় আমরা এবার ৬টি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু সংক্রান্ত কার্যক্রম অর্থায়নের তথ্য বিশ্লেষণ করে  ‘জলবায়ু সুরক্ষা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে: বাজেট প্রতিবেদন ২০১৭-১৮’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা উপস্থাপন করছি। প্রথমবারের মত জলবায়ু কার্যক্রমের উপর এ পুস্তিকা এবারের বাজেটের সঙ্গে প্রণয়ন করে বাজেট বিষয়ক দলিল গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রতিবেদন থেকে এসব মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন ব্যয়ের কত অংশ জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বিনিয়োগ করা হচ্ছে তা জানা যাবে। আগামীতে এ কার্যক্রমের আওতা আরো সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

১৭৩। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতিসংক্রমণ: আমি মাঝে মাঝেই স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কথা বলে থাকি। এক ঢাকা মহানগর থেকে সারা দেশের সাড়ে পনেরো কোটি মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে যে মহাযজ্ঞের প্রয়োজন সেটা কেন্দ্রীয়ভাবে সম্পন্ন করা মোটেই সহজ নয়। এজন্য আমাদের জেলা পরিষদ, মহানগর কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ এই সব প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা অপরিহার্য। এতদিনে আমরা জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। আমার মনে হয় এখনই স্থানীয় পর্যায়ে জেলায়, মহানগরে, উপজেলায় ও পৌরসভায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতিসংক্রম প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার। একটি জেলায় গড় জনবসতি মোটামুটিভাবে ২৫ লক্ষ এবং একটি জেলার আয়তন গড়ে প্রায় ২ হাজার ৩০০ বর্গ কিলোমিটার। পৃথিবীতে এই আয়তনের ও এই জনবসতির রাষ্ট্রের সংখ্যা অর্ধশতের বেশী। তাই আমাদের জেলায়, জেলায় বা মহানগরে, মহানগরে ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সম্পন্ন করা সম্ভব। ঐ স্তরে দায়িত্ব বর্তালে জবাবদিহি হবে খুবই কার্যকরী এবং দায়িত্ব পালনে জনগণের অংশগ্রহণ হতে পারে ব্যাপক। সামান্য চিন্তা করলেই যে সব দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে জেলায় বা মহানগরে ভালভাবে পালন করা যাবে তার তালিকা নির্ধারণ মোটেই কঠিন কোন উদ্যোগ হবে না। এই প্রক্রিয়ায় অবদান রাখার জন্য এবারের বাজেটে জেলায় বা মহানগরে উন্নয়ন কার্যকলাপের জন্য মোটাদাগে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ থেকেই সূচনা হবে সয়ম্ভর ও স্বশাসিত জেলা বা মহানগর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার প্রতিসংক্রমের জন্য আরো অনেক কাজ করতে হবে, যেমন দায়িত্বের নির্দিষ্টকরণ, দায়িত্বের প্রতিপালনে আন্ত:জেলা সমন্বয়, জেলার জন্য কর্মী বাহিনী বা আমলাতন্ত্র, জেলার কার্যাবলীর পর্যবেক্ষণ, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন। তবে আমার মনে হয় যে, একবার কাজটি শুরু করতে পারলে এতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা আমাদের হাতের মুঠোয় এসে যাবে।

১৭৪। সর্বশেষে আরো দু’টো বিষয় সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখবো। গত বাজেটে আমি একটি জাতীয় স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও জাতীয় কনভেনশন কেন্দ্রের কথা বলেছিলাম। এবারে বলতে পারি যে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় পূর্বাচলে সব ধরনের খেলাধুলার সুবিধাযুক্ত একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির জন্য সত্ত্বর দরপত্র আহবান করবে।

১৭৫। সেই পূর্বাচল এলাকায়ই ৫ হাজার দর্শক ধারণের উপযুক্ত একটি কনভেনশন কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আমরা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছি। কনভেনশন কেন্দ্রের সঙ্গে ব্যক্তি মালিকানা খাতে নির্মাণ হতে যাচ্ছে ১৪২ তলা বিশিষ্ট একটি আইকনিক টাওয়ার। এই কনভেনশন সেন্টারের জন্যে প্রায় ৬ বছর ধরে আমরা পরিকল্পনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা, উদ্যোগী ঠিকাদার ও আর্থিক যোগানদারদের সঙ্গে মত বিনিময় করে চলছি। অবশেষে মনে হয় আগামী জুলাই মাসের মধ্যে এর জন্য দরপত্র আহবান করা যাবে।

নবম অধ্যায়

রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম

মাননীয় স্পীকার

১৭৬।  এতক্ষণ বাজেট নিয়ে আমি যে বক্তব্য রেখেছি তাতে মোট রাজস্ব আদায়ের হিসাব হলো ২ লক্ষ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। তার সঙ্গে বৈদেশিক সূত্রে প্রাপ্ত সহায়তার হিসাব হলো ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। কিছুটা বাজেট ঘাটতি রেখে মোট ব্যয়ের হিসাব হচ্ছে ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকা। এর সিংহভাগ জোগাড় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। রাজস্ব আহরণের উৎস হলো মাত্র চারটি। যথা- আয় ও কর্পোরেট কর, আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক। চলতি বছরের সংশোধিত এবং আগামী বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী এগুলোর হিসাব হলো:

(কোটি টাকায়)

খাত

২০১৬-১৭

২০১৭-১৮

প্রস্তাবিত

সংশোধিত

প্রস্তাবিত

 

আয় ও কর্পোরেট কর

৭৩,৩৬৮

৬৪,০০০

৮৬,৮৬৭

 

আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক

২২,৫৯৬

২১,৬৯০

৩০,১৫৩

 

মূল্য সংযোজন কর (মূসক)

৭৩,৫৫৩

৬৮,৭৬৮

৯১,৩৪৪

 

সম্পূরক শুল্ক

৩২,২৬১

২৯,৩৩০

৩৮,২১২

 

১৭৭।   ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট। এবছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের প্রাক্কলন হচ্ছে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে আমাদের সরকার গত ৮ বছরে রাজস্ব বোর্ডকে ব্যাপকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা প্রদান করেছে। রাজস্ব বোর্ডের প্রতিটি বিভাগে জনবল বৃদ্ধি হয়েছে এবং তাদের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আয়কর, আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর বিভাগের আধুনিকায়ন বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ বিভাগগুলোতে অটোমেশন প্রক্রিয়াও ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিগত ৮ বছরে আমরা মোটামুটিভাবে এ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি যে, রাজস্ব প্রদান হয়রানির বিষয় নয় বরং রাজস্ব প্রদান জাতীয় দায়িত্ব। গত বাজেটে আমি আয়কর রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১৫ লাখে উন্নীত করার কথা বলেছিলাম এবং করদাতা নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ২৫ লাখের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিলাম। সৌভাগ্যবশত এ দু’টি লক্ষ্যমাত্রা আমরা অতিক্রম করেছি। এবারে এই বছরে রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা ১৬ লাখের মত এবং করদাতা নিবন্ধনের তথা ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ২৯ লক্ষ।

১৭৮।   বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দিন দিন বড় হচ্ছে। আগামী দুই দশকে বাংলাদেশ বিশ্বের ত্রিশটি বৃহত্তম অর্থনীতির একটিতে উন্নীত হবে। অর্থনীতির আন্তর্জাতিকতাও ক্রমশ বাড়ছে। অনেক নতুন বিদেশি বিনিয়োগও দেশে আসছে। আমরা বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক অর্থায়ন পদ্ধতি (Innovative Financing Mechanism) প্রবর্তনকে উৎসাহিত করছি। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীগণ করনীতির ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছেন। সে প্রেক্ষিতে এবারের বাজেটে করনীতি সংস্কারে আরো তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে: (ক) করনীতির ধারাবাহিকতা ও স্থিতিশীলতা, (খ) প্রায়োগিক স্পষ্টতা এবং (গ) ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ।

১৭৯।    এ বছরের বাজেটেও করহার না বাড়িয়ে কর পরিপালন বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আহরণে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নীতিগত সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবও বাজেটে রয়েছে। বাজেটে উপস্থাপিত প্রস্তাবাবলী বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি বাংলাদেশের কর পরিপালন সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে এ প্রত্যাশা করছি।

১৮০।   রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের অংশ হিসেবে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ জারি করা হয়। তবে এতদিন ধরে বাস্তবায়ন হয়েছে আংশিকভাবে। ২০১৬ সালে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা গেজেট করা হয়েছে। এই আইনটি নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে যথেষ্ট আপত্তি আমরা সযত্নে বিবেচনা করেছি। এ বিষয়ে, আমাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, এই আইনটি ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে, এজন্য এ আইনের যথেষ্ট সংস্কার সাধনের প্রস্তাব আমি এখন উপস্থাপন করবো।

১৮১।    আমরা জানি যে, বিশ্বে অবাধ ব্যবসা-বাণিজ্য যেভাবে প্রসারিত হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে আমদানি ও রপ্তানি শুল্কের গুরুত্ব চলে যাবে। বর্তমানে আমরা অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য যেমন- কৃষি, শিল্প, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতের পণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহত বা মওকুফ সুবিধা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার সম্প্রসারণ করার প্রস্তাব দিয়েছি।

১৮২।  বাণিজ্য উদারীকরণের লক্ষ্যে World Trade Organization (WTO) এর আওতায় ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ থেকে Trade Facilitation Agreement (TFA) কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশ এ Agreement অনুমোদন করেছে । এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে আমদানি-রপ্তানি সহজ ও দ্রুত হবে যা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ইতোমধ্যে Advance Ruling ব্যবস্থা চালু হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সকল স্টেকহোল্ডারদের মাঝে অনলাইন ইন্টারফেস স্থাপনের লক্ষ্যে National Single Window প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম গ্রহণ করছে। একই ধারাবাহিকতায় সৎ ব্যবসায়ীদের বাড়তি প্রণোদনা হিসেবে দ্রুততার সাথে পণ্য খালাসের ও অপরাপর সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে Authorised Economic Operator (AEO) কর্মসূচিটি পাইলট হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি। কাস্টমস ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ASYCUDA World সিস্টেমে ইএক্সপি (Exp), ই-পেমেন্ট (E-payment) চালু হয়েছে।

১৮৩। ব্যবহার সুবিধা এবং উন্নত বিশ্বে অনুসৃত উত্তম চর্চা (Best Practices) অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা ভাষায় প্রণীত কাস্টমস আইন, ২০১৭ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। সে লক্ষ্যে, কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত ASYCUDA World সিস্টেম বন্ড মডিউল, ভ্যালুয়েশন মডিউল, অকশন মডিউল, মামলা মডিউল, বন্দর ও কাস্টমস এর মধ্যে কানেকটিভিটি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা মডিউল ইত্যাদি কাজ সমাপ্ত করে উক্ত সিস্টেমকে আরো দক্ষ ও কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিচারাধীন রাজস্ব সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ (ADR) কার্যক্রমকে আরো জোরদার ও গতিশীল করার পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি।

১৮৪। দেশের সম্মানিত আয়করদাতাদের উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে চলতি অর্থবছরে ৩৭০ জন সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী এবং ১৪৭ জন দীর্ঘসময় আয়কর প্রদানকারী মিলে মোট ৫১৭ জন করদাতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। সৎ করদাতাদের উৎসাহিতকরণে এবং নতুন নতুন করদাতাকে করের আওতায় আনার লক্ষ্যে ট্যাক্স কার্ডের ব্যাপ্তি সম্প্রসারণ করে এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১৪১টি সম্মানসূচক ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে কোনো পরিবারের সকল সদস্য কর দিলে সে পরিবারকে আমি “কর বাহাদুর” পরিবার হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করছি।

১৮৫। রাজস্ব আহরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজের গুণগতমান বৃদ্ধির জন্য বিসিএস কর একাডেমি এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট একাডেমির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রথমবারের মতো এদের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে।

১৮৬।  দেশের মুদ্রামোবাইলপাচার রোধকল্পে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR), বাংলাদেশ ব্যাংক (BB), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (BFID) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) একত্রে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (CIC) ও শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করা হয়েছে।

১৮৭। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য Good Governance and Modern Management (GGMM) পদ্ধতির আওতায় কাজ করছে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। করদাতাদের মাঝে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে ‘রাজস্ব হালখাতা’ কর্মসূচি গ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। যুগোপযোগী কর নীতি, দক্ষ কর ব্যবস্থাপনা এবং সম্মানিত ব্যবসায়ীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক্কলিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে বলে আমি দৃঢ় আশাবাদী।

দশম অধ্যায়

আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক

প্রত্যক্ষ কর: আয়কর

মাননীয় স্পীকার

১৮৮। একটি আদর্শ কর ব্যবস্থা বিনির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সরকার বিগত কয়েক বছরে করনীতি ও ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সংস্কার এনেছে। বাংলাদেশে আগে রিটার্ন দাখিলের একটি শেষ তারিখ আইনে ছিল, কিন্তু সেটা কখনোই খুব একটা মানা হতো না। সবাই অপেক্ষা করে থাকতেন সময় কবে বাড়ানো হবে। এ সংস্কৃতির পরিবর্তন আমরা করতে পেরেছি। গত বাজেটে আমরা উন্নত বিশ্বের মতো কর দিবস বা Tax Day এর ধারণা প্রবর্তন করেছি এবং তা সকলে গ্রহণ করেছেন। প্রতিবছর ৩০শে নভেম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের কর দিবস। আয়কর পরিপালনে (Tax compliance) এটি একটি মাইলফলক। আমাদের অন্যান্য সংস্কারগুলোও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছেন। কর নিবন্ধন ও রিটার্ন দাখিল সংখ্যা আমাদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। আগামী দশকের মধ্যে আয়কর খাতে মোট কর রাজস্বের কমপক্ষে ৫০ শতাংশ আহরণের যে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে সে লক্ষ্য অর্জনের পথে আমরা খুব ভালোভাবে অগ্রসর হচ্ছি। আমি এখন প্রত্যক্ষ করের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো মহান সংসদে উপস্থাপন করছি।

করমুক্ত সীমা ও করহার

১৮৯।  এ বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ছিল ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। মহিলা করদাতাসহ বিভিন্ন শ্রেণির করদাতাদের জন্য এ সীমায় ছাড় ছিল। বাংলাদেশ করমুক্ত আয়ের সীমা কত হওয়া উচিত এ বিষয়ে প্রতি বছরই বেশ বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক ও আলোচনা হয়। করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণে একটি নীতিগত দর্শন থাকা উচিত। মাথাপিছু আয়ের অনুপাত ও মূল্যস্ফীতি - এ দুটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারিত হতে পারে। বাংলাদেশে করমুক্ত আয়ের সীমা মাথাপিছু আয়ের ২০০ শতাংশের বেশী। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ অনুপাত ১০০ শতাংশের মধ্যে থাকে। এ ছাড়া, আমাদের মুদ্রাস্ফীতিও এ মূহুর্তে কম, পাঁচ শতাংশের মতো। ফলে আগামী বছরে করমুক্ত আয়ের সাধারণ সীমা ও করহারে কোন পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার স্থলে ৪ লক্ষ টাকা প্রস্তাব করছি। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের আমরা একটি সম্মানজনক হার ইতোপূর্বেই নির্ধারণ করে দিয়েছি। সারণি ৫ -এ কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের জন্য করহার উল্লেখ করা হলো:

সারণি ৫: কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্যান্য করদাতাদের জন্য করহার

ক) করমুক্ত আয়ের সীমা:

করদাতা

করমুক্ত আয়ের সীমা (টাকায়)

সাধারণ করদাতা

২ লক্ষ ৫০ হাজার

মহিলা ও ৬৫ বছর বা তদুর্ধ্ব বয়সের করদাতা

৩ লক্ষ

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতা

৪ লক্ষ

গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তি করদাতা

৪ লক্ষ ২৫ হাজার

খ)  সাধারণ করহার:

মোট আয়

করহার

প্রথম ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর -

শূন্য

পরবর্তী ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর -

১০ শতাংশ

পরবর্তী ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর -

১৫ শতাংশ

পরবর্তী ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর -

২০ শতাংশ

পরবর্তী ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর-

২৫ শতাংশ

অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর -

৩০ শতাংশ

গ)  বিশেষ করহার:

সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী ব্যবসা হতে অর্জিত আয়

৪৫ শতাংশ

বাংলাদেশে অনিবাসী (অনিবাসী বাংলাদেশী ব্যতীত) এরূপ ব্যক্তি শ্রেণিভুক্ত করদাতার অর্জিত আয়

৩০ শতাংশ

নিবন্ধিত সমবায় সমিতির অর্জিত আয়

১৫ শতাংশ

উল্লেখ্য, সকল ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের জন্য এ করমুক্ত সীমা আরো ২৫ হাজার টাকা বেশী হবে।

১৯০।  বিদ্যমান আইনে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এবং ‌সিটি কর্পোরেশনের বাইরের অন্যান্য এলাকার কোম্পানি করদাতা ব্যতীত অন্য করদাতাদেরকে যথাক্রমে ৫ হাজার, ৪ হাজার ও ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হয়। অঞ্চলভিত্তিক ন্যূনতম করের এ হার বহাল রাখার প্রস্তাব করছি।

কোম্পানি করহার

১৯১।  আমরা প্রায়ই বলি যে আমাদের কর্পোরেট করহার খুব বেশী। কিন্তু খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, সে ধারণা ঠিক নয়। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির বিদ্যমান করহার ২৫ শতাংশ। আমাদের এ করহার বৈশ্বিক গড়হার (২৪.২৯ শতাংশ) এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। অনেক আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক গড় করহারের তুলনায় কিন্তু আমাদের করহার কম। নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির জন্য বিদ্যমান এ করহার ৩৫ শতাংশ। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে প্রণোদনা প্রদানের স্বার্থে পাবলিকলি-ট্রেডেড এবং নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহারের এ ব্যবধান বজায় রাখার প্রয়োজন রয়েছে। ব্যাংক, বীমা, মোবাইল ফোন কোম্পানি ইত্যাদির ক্ষেত্রে, যাদের করহার ৪০ শতাংশের বেশী, তা আমরা আগামীতে পর্যায়ক্রমে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করছি। তবে যেহেতু এ বছর অন্য কোন ক্ষেত্রে করের হার বাড়ছে না, তাই রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আমি বিদ্যমান কোম্পানি করহার আগামী অর্থবছরের জন্য বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। সারণি’৬ -এ কোম্পানি করদাতার জন্য প্রস্তাবিত করহার উল্লেখ করা হলো:

সারণি ৬: কোম্পানি করহার

বিবরণ

প্রস্তাবিত হার

পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি

২৫ শতাংশ

নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি

৩৫ শতাংশ

পাবলিকলি ট্রেডেড-ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
(মার্চেন্ট ব্যাংক ব্যতীত)/ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে অনুমোদিত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

৪০ শতাংশ

নন-পাবলিকলি ট্রেডেড-ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান

৪২.৫ শতাংশ

মার্চেন্ট ব্যাংক

 ৩৭.৫ শতাংশ

সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি

৪৫ শতাংশ

মোবাইল ফোন:

পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি

নন-পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি

 

৪০ শতাংশ

৪৫ শতাংশ

লভ্যাংশ আয়

২০ শতাংশ

সমতা ও ন্যায্যতা

১৯২।  সারচার্জ: অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ার একটি সম্পর্ক থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে ৬ শতাংশের বেশী হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এর ফলে সমাজে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বাড়ার যে ঝুঁকি রয়েছে তা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি-করদাতার নীট সম্পদ সারচার্জ একটি কার্যকর ভূমিকা রাখছে। দেশে একটি কার্যকর সম্পদ কর আইনের প্রচলন না হওয়া পর্যন্ত এ সারচার্জ বাহল রাখা প্রয়োজন। আমি ব্যক্তি-করদাতার নীট পরিসম্পদের প্রদর্শিত মূল্যের ভিত্তিতে আরোপিত সারচার্জের বিদ্যমান হার বহাল রাখার প্রস্তাব রাখছি:

সারণি ৭ : ব্যক্তি করদাতার নীট পরিসম্পদের প্রদর্শিত মূল্যের ভিত্তিতে আরোপিত সারচার্জের হার

নীট পরিসম্পদের মূল্যমান

সারচার্জের হার

(আয়করের শতকরা হারে)

ক) দুই কোটি পঁচিশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত-

শূন্য

খ) দুই কোটি পঁচিশ লক্ষ টাকার অধিক কিন্তু পাঁচ কোটি টাকার অধিক নয়-

১০ শতাংশ

গ) পাঁচ কোটি টাকার অধিক কিন্তু দশ কোটি টাকার অধিক নয়-

১৫ শতাংশ

ঘ) দশ কোটি টাকার অধিক কিন্তু পনের কোটি টাকার অধিক নয়-

২০ শতাংশ

ঙ) পনের কোটি টাকার অধিক কিন্তু বিশ কোটি টাকার অধিক নয়-

২৫ শতাংশ

চ) বিশ কোটি টাকার অধিক যে কোন অংকের উপর-

৩০ শতাংশ

১৯৩।  নীট পরিসম্পদের মূল্যমান ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা অতিক্রম করলে ন্যূনতম সারচার্জের পরিমাণ ৩ হাজার টাকা বহাল রাখার প্রস্তাব করছি।

১৯৪।  সিগারেট, বিড়িসহ সকল তামাকজাত পণ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব পণ্য ভোগের কারণে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী করদাতার উক্ত ব্যবসায় হতে অর্জিত আয়ের উপর ২.৫ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করছি।

প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়ে সহায়তা এবং ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ

১৯৫।  তৈরি পোশাক শিল্প: দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরি পোশাক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক প্রতিকূল বাজার পরিস্থিতিতে এ খাত নানা চাপের মুখে আছে এবং উৎসে কর প্রদানের প্রত্যাহারপূর্বক নগদ সহায়তা দাবী করছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতকে আমরা সবসময় নানাবিধ প্রণোদনা ও বিশেষ কর সুবিধা প্রদান করে আসছি। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে নিয়োজিত করদাতাগণ বর্তমানে ০.৭০ শতাংশ হারে উৎসে কর এবং হ্রাসকৃত ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিচ্ছেন। আগামী বছর আয়করের হার আরো হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

১৯৬।  গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো খাত: অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় নির্মিত national highways, expressways, flyovers, elevated and at-grade expressways, subway ইত্যাদি অবকাঠামো খাতকে শর্তসাপেক্ষে কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করছি।

১৯৭।  এ ছাড়াও প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায়ে সহায়তা এবং ব্যবসায় পরিচালনা সহজীকরণের জন্য আরও যেসব প্রস্তাব রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

ক) অনিবাসী মূল কোম্পানির সাথে সমন্বিত হিসাব রাখার সুবিধার্থে মূল কোম্পানির ব্রাঞ্চ অফিস ও লিয়াজোঁ অফিস এবং সাবসিডিয়ারি বা হোল্ডিং কোম্পানির সাবসিডিয়ারিকে অভিন্ন হিসাব বছর অনুসরণের সুযোগ প্রদান;

খ) Alternative Investment Fund -কে কর অব্যাহতি প্রদান; এবং

গ) তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি তালিকা পুনর্বিন্যাস করে নতুন কয়েকটি খাতকে কর অব্যাহতির আওতায় আনা।

পোশাক শিল্পের বিশেষ অবস্থা

১৯৮।  সবুজ কারখানার কর সুবিধা: টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য রাখার লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ দূষণরোধ ও প্রতিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়ে আমাদের সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমরা এবারের করনীতিতে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পৃক্ত করছি। তৈরি পোশাক খাতের যে সকল কোম্পানি-করদাতার কারখানার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত green building certification থাকবে সে সকল কোম্পানির করহার ১৪ শতাংশে হ্রাস করার প্রস্তাব করছি।

সামাজিক দায়িত্ব

১৯৯।  সামাজিক দায়িত্ব আমাদের করনীতির অন্যতম ভিত্তি। গত বাজেটে আমরা সামাজিক দায়িত্ব পালনের অনেক ক্ষেত্রে কর সুবিধার প্রস্তাব করেছিলাম। আগামী বছরের জন্য এক্ষেত্রে আরও যেসব প্রস্তাব রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

ক) বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট হতে প্রাপ্ত সম্মানী বা সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, দু:স্থভাতা বা অনুরূপ কল্যাণভাতার উপর কর অব্যাহতি;

খ) সকল জাতীয় পদক/পুরস্কারের অর্থ ও সুবিধাকে কর অব্যাহতি;

গ) ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে উন্নত মানের বাস ও মিনিবাস প্রচলনে প্রণোদনা প্রদানের স্বার্থে অবচয় পরিগণনায় বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২৫ লক্ষ টাকার যে সর্বোচ্চ ক্রয় সীমা ছিল তা প্রত্যাহার;

ঘ) Elderly Care Home -এর আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান; এবং

ঙ) পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখার স্বার্থে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান।

আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চা

২০০। বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাকে আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী করে পর্যায়ক্রমে আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম চর্চাসমূহ কর আইন ও কর ব্যবস্থাপনায় সংযোজন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো-

ক) অনলাইনে রিটার্ন, আপীল আবেদন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদনসহ বিবিধ আবেদন গ্রহণ;

খ) সিস্টেম জেনারেটেড আদেশ, নোটিশ, সনদ ইত্যাদি ইস্যু;

গ) করদাতার হিসাব, বিবরণী, দলিল, উপাত্ত ইত্যাদি ইলেকট্রনিক বিন্যাসে বা ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কর বিভাগের নিকট দাখিলের বিধান প্রবর্তন।

আইন ও বিধির সহজীকরণ, স্পষ্টীকরণ ও পরিপালন

২০১।  কর পরিপালন সহজ করা, প্রায়োগিক অস্পষ্টতা দূর এবং কর ফাঁকির ক্ষেত্র বন্ধ করার জন্য আইনী সংস্কারের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো:

ক) আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতা সম্প্রসারণ করে ব্যবসা বা পেশার নির্বাহি (executive) বা ব্যবস্থাপনা (management) পদে নিয়োজিত বেতনভোগী কর্মীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা;

খ) কর নিবন্ধনের আওতা সম্প্রসারণ;

গ) তুলনামূলক কম সম্পদ রয়েছে এরূপ করদাতাদের কর পরিপালন আরো সহজ করার জন্য সম্পদ বিবরণী দাখিলের শর্ত আরো শিথিল করা;

ঘ) কর অডিট পদ্ধতি আরো সহজ, স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করা;

ঙ) কয়েকটি ক্ষেত্রে উৎস করের হার পুনর্বিন্যাস ও প্রায়োগিক অস্পষ্টতা দূরকরণ; এবং

চ) কর ফাঁকির ক্ষেত্রে কর মামলা পুনউন্মোচনের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, পুনউন্মোচিত কর মামলা নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া আরো সহজ, স্বচ্ছ ও যুগোপযোগী করা এবং প্রায়োগিক অস্পষ্টতা দূর করা।

কর ব্যবস্থাপনার সংস্কার

২০২। প্রত্যক্ষ করের আইনী সংস্কারসমূহ পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক সংস্কারও প্রয়োজন হবে। বিগত অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় আমি তিনটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ করের প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয় উল্লেখ করেছিলাম:

ক) উৎস কর খাতের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য একটি কেন্দ্রীয় উৎস কর ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে ইলেক্ট্রনিক উৎস কর ব্যবস্থা প্রচলন এবং কেন্দ্রীয় উৎস কর ইউনিটের অধীনে উপযুক্ত সংখ্যক উৎস কর মনিটরিং অঞ্চল গঠন;

খ) আধুনিক ও প্রযুক্তিমুখী কর তথ্য ইউনিট গঠন করা যা দেশের অন্যান্য সিস্টেমের সাথে আন্তঃসংযুক্ত থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কর তথ্য লাভ করবে এবং কর ফাঁকি উদঘাটন ও করদাতা চিহ্নিতকরণে কাজ করবে;

গ) আন্তর্জাতিক কর ফাঁকি রোধ এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ও তার উপর প্রযোজ্য কর পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থাপনার একটি উপযুক্ত প্রশাসনিক কাঠামো সৃজন।

২০৩। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। আগামী বছরের মধ্যে এ ইউনিটগুলো কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি।

২০৪। এ ছাড়া আয়কর ব্যবস্থাপনাকে সম্মানিত করদাতাদের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে নতুন কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। তার ধারাবাহিকতায় যশোর ও কুষ্টিয়ায় দুটি নতুন কর অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় কর অফিস প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানের ৮৭ উপজেলার অতিরিক্ত আরো  ১০৩টি উপজেলায় আয়করের সার্কেল অফিস খোলার প্রস্তাব করছি।

২০৫। প্রত্যক্ষ করে গৃহীত সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনীতির কর-অনারোপিত খাতগুলো করের আওতায় আসবে এবং বাংলাদেশের কর সংস্কৃতি আরো সমৃদ্ধ হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)

মাননীয় স্পীকার

২০৬। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক আহরিত রাজস্বের মধ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সরকারের গৃহীত নানামুখী সংস্কার কর্মসূচি, সম্মানিত করদাতা ও ভোক্তাদের কর প্রদানে ইতিবাচক মনোভাব এবং রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার ফলশ্রুতিতে এ খাতে রাজস্ব আদায়ে আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির এ ধারা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির নিরিখে মূল্য সংযোজন কর খাত থেকে আরো বেশী পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহের সম্ভাবনা রয়েছে।

অত্যুত্তম রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা

২০৭। ভ্যাট আমার কাছে শুরু থেকে একটি অত্যুত্তম কর বলে মনে হয়। তবে, এ করের আওতায় কোন পণ্য উৎপাদনে বা সেবা প্রদানে বিভিন্ন পর্যায়ে যে হিসাব রাখতে হয় তা’ ভ্যাট সংগ্রহকারী কতিপয় ব্যবসায়ীরা রাখতে চান না। তাই এ ভ্যাটকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য আমাকে বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন করতে হয়। আমার মনে হয় টার্নওভার কর এবং ভ্যাটমুক্ত সীমা বাড়িয়ে আমি ব্যবসায়ীদের সন্তুষ্ট করতে পারবো। ১৯৯১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়েছে এবং তাতে ভোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমি ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশেই বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। 

Online VAT Registration এবং Return Submission প্রক্রিয়া

২০৮। ২০০৯ থেকেই মূল্য সংযোজন কর আইন সংস্কারের বিষয়ে আমরা শিল্প ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে নতুন আইন পাস হয় এবং ক্রমান্বয়ে তার বিধান কার্যকরী হতে থাকে। ইতোমধ্যে আইনটি অনেক পরিবর্তিত হয়েছে এবং উক্ত আইনের আওতায় ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬’ জারি করা হয়েছে। আইনটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার VAT Online Project নামে একটি প্রকল্প ২০১৩ সালে গ্রহণ করেছিল এবং এর আওতায় নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কাজ সুষ্ঠুরূপে এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের আওতায় করদাতাদের Online Registration কার্যক্রম গত ২৩ মার্চ, ২০১৭ খ্রিঃ তারিখে শুরু হয়েছে এবং Online Return Submission কার্যক্রম শীঘ্রই চালু হবে। এছাড়া নতুন আইনের সাথে সংগতি রেখে অনলাইন ভিত্তিক Business Process Design এর কার্যক্রম ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

VAT Online Service Centre স্থাপন

২০৯। নতুন আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে VAT Online Project এর আওতায় দুই লাখেরও অধিক করদাতাকে আইনের সার্বিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এবং এ কার্যক্রম বর্তমানেও চলমান রয়েছে। একইসাথে, নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারমূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে চলছে। আইনটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এর আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট দপ্তরসমূহ করদাতা উদ্বুদ্ধকরণমূলক অসংখ্য সভা, সেমিনার, ওয়ার্কসপ আয়োজনসহ এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই ও দেশের বিভিন্ন চেম্বারের সাথে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘পার্টনারশীপ ডায়ালগ’ সম্পন্ন করেছে। অংশীজনদের সাথে এ ধরনের উদ্যোগ বর্তমানেও চলমান রয়েছে। করদাতাদের মধ্যে প্রশিক্ষক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন ও চেম্বারের প্রায় ২০০ প্রতিনিধিকে TOT হিসেবে সনদ প্রদান করা হয়েছে, যাঁরা অন্যান্য ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভ্যাট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। দেশের সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের জন্য ভ্যাট বিষয়ে প্রশিক্ষক-প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। নতুন ভ্যাট আইন বিষয়ে সম্মানিত করদাতা এবং সাধারণ জনগণের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে একটি কল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে – যার নম্বর ১৬৫৫৫। যে কেউ এই নম্বরে ফোন করে ভ্যাট সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে তাঁর প্রশ্নের জবাব পেতে পারেন। এছাড়া যে সকল করদাতার নিজস্ব ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১৬ টি VAT Online Service Center (VOSC) থেকে রেজিস্ট্রেশন গ্রহণ, রিটার্ন দাখিল ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারবেন। ভ্যাট বিভাগ ছাড়াও আয়কর বিভাগের কমিশনারদের কার্যালয়ে ও শুল্ক বিভাগের কাস্টম হাউজে ‘হেল্পডেস্ক’ এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে ‘ভ্রাম্যমাণ হেল্পডেস্ক’ স্থাপন করা হয়েছে।

ভ্যাট আইন পুরোপুরি কার্যকরকরণ

২১০।  মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আগামী ১ জুলাই, ২০১৭ খ্রিঃ তারিখ থেকে পুরোপুরি কার্যকর করার লক্ষ্যে রাজস্ব প্রশাসনও প্রস্তুত। হিসাব সংরক্ষণের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের সুবিধার্থে এ আইনের বাস্তবায়ন ইতোপূর্বে দু’বার পেছানো হয়েছিল। তবে, ব্যবসায়ীদের সাথে পুনঃপৌনিক আলোচনা এবং সে আলোকে আইনের কতিপয় কাঠামোগত সংস্কার সাধনের মাধ্যমে আইনটি বাস্তবায়নের পথে প্রভূত অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও এখন নতুন ভ্যাট আইন গ্রহণে প্রস্তুত। এ প্রেক্ষিতে, আমি এ মহান জাতীয় সংসদে আগামী ১ জুলাই, ২০১৭ খ্রিঃ তারিখ হতে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ পুরোপুরিভাবে কার্যকর করার প্রস্তাব করছি।

Business Process-এর সঙ্গে আইনের সমন্বয় এবং ভ্যাট সংগ্রহকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি

২১১।  মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনটি গত ২০১২ সালে মহান জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে। প্রায় ৫ বছর ইতোমধ্যে অতিবাহিত হওয়ায় ব্যবসার স্বাভাবিক গতি-প্রকৃতির অগ্রগতি এবং আধুনিক business process এর সাথে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ এর সুসমন্বয় অত্যাবশ্যক। সে কারণে আইনটির সফল বাস্তবায়ন এবং বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালার সংস্কারের বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে, একটি বিষয়ের দিকে আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেটি হলো, আমাদের দেশে ভ্যাটের আওতায় নিবন্ধিত সাড়ে আট লক্ষ শিল্প ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু মূসক দাতার সংখ্যা মাত্র ৩২ হাজার। তাতেই স্পষ্ট যে, মূল্য সংযোজন কর অত্যন্ত সীমিত ক্ষেত্রে বহাল আছে। রিটার্ন প্রদানকারী নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগামী দু’ অর্থবছরে আমরা ৬০ হাজারে উন্নীত করতে চাই। আমি এখন নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬ -এর পদ্ধতি সহজীকরণ বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব এ মহান সংসদে উপস্থাপন করছি:

মূসক ও Turnover Tax অব্যাহতির সীমা

২১২।  প্রথমেই বলবো যে, মূল্য সংযোজন কর বর্তমানে এক অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে। হারটি হবে ১৫ শতাংশ এবং এইটি আগামী তিন বছর অপরিবর্তিত থাকবে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমাজের সুপারিশ অনুসারে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার স্বার্থে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা তাঁদের অনুরোধ মোতাবেক বিদ্যমান ৩০ লক্ষ টাকা হতে বৃদ্ধিপূর্বক ৩৬ লক্ষ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি অর্থাৎ মাসে গড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারধারী প্রতিষ্ঠানের কোন করই দিতে হবে না। এ ধরনের কোন সুবিধা ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে ছিল না। একইসাথে, ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক টার্নওভার করের সীমা বিদ্যমান ৮০ লক্ষ টাকা হতে বৃদ্ধিপূর্বক ১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি অর্থাৎ যে সকল প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভারের পরিমাণ গড়ে ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার নিচে তাঁরা মাত্র ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের সুযোগ পাবেন। এটি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অনন্য সুযোগ যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে নেই। এছাড়া, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রস্তাব অনুসারে নতুন ভ্যাট আইন ও বিধিমালার পদ্ধতিগত সহজীকরণ সংক্রান্ত কতিপয় অন্যান্য সংশোধন আনা হয়েছে।

ভ্যাট অব্যাহতির তফসিল

২১৩।  নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন আমদানি পর্যায়ে বা সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের সুযোগ রাখা হয়নি। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর মূল কাঠামোর সাথে সংগতি রাখার জন্য এবং ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পূর্বের অর্থাৎ ১৯৯১ সালের আইনের ভ্যাট অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রথম ও দ্বিতীয় তফসিল এবং অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ও আদেশসমূহ একীভূত করে এবং তার সিংহভাগ অব্যাহতি অক্ষুণ্ন রেখে নতুন ভ্যাট আইনের প্রথম তফসিল প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করছি। পর্যায় ভিত্তিক অব্যাহতির প্রেক্ষিতে supply chain এর এক বা একাধিক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি থাকা সত্ত্বেও পরবর্তী কোন পর্যায়ে অব্যাহতি না থাকলে রেয়াত গ্রহণের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ ভ্যাটের ভার বিশেষ একটি পর্যায়ের উপর অর্পিত হয়। এতে করে অব্যাহতির সুবিধাটি সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবার End Value -তে প্রতিফলিত না হওয়ায় সাধারণ জনগণ এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে কর বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই বলে থাকেন যে, কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত পণ্য সবচেয়ে বেশী কর দেয়। তাই সকল স্তরে ভ্যাট আরোপ ও রেয়াত গ্রহণের ব্যবস্থা থাকায় বিশেষ কোন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর ওপর VAT এর burden তৈরি হবে না। পণ্যের সরবরাহ শৃঙ্খলের (Supply Chain) অন্তর্ভুক্ত সকলকে মূল্য সংযোজনের পরিমাণের উপর ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে আমাদের ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসতে হবে। তথাপি নতুন আইনটি বাস্তবায়নের স্বার্থে এবং সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রথম তফসিলে ১৯৯১ সনের আইনের অব্যাহতিপ্রাপ্ত ৫৩৬ টি H.S. Code ভুক্ত আইটেমের পরিবর্তে প্রায় ১০৪৩ টি H.S. Code ভুক্ত আইটেমকে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করছি। পূর্বের ন্যায় নতুন আইনের প্রথম তফসিলে বর্ণিত ভোগের নিমিত্ত নির্ধারিত মৌলিক খাদ্য সংক্রান্ত কতিপয় ক্ষেত্র যেমন: চাল, ডাল, মুড়ি, চিড়া, চিনি ও আঁখের গুড়, মাছ, মাংস, শাক-সবজি, তরল দুধ, প্রাকৃতিক মধু, বার্লি, ভূট্টা, গম ও ভুট্টার তৈরি সুজি, লবন ইত্যাদিসহ প্রায় ৫৪৯টি পণ্যের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। এছাড়াও, ৯৩ ধরনের জীবন রক্ষাকারী ঔষধের উপর এবং গণ-পরিবহণ সেবা, জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপর ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। কৃষি, গবাদি পশু ও মৎস্য চাষ খাত সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০৪ টি ক্ষেত্রে এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অবাণিজ্যিক কার্যক্রম, অলাভজনক সাংস্কৃতিক সেবা প্রভৃতির ক্ষেত্রেও পূর্বের ন্যায় ভ্যাট অব্যাহতির প্রস্তাব করছি। প্রস্তাবিত ব্যবস্থার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বিদ্যমান মূল্য অনেকাংশে কিছুটা হ্রাস পাবে এবং কোন অবস্থাতেই কোন পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে না।

ভ্যাট আরোপের নতুন তফসিল

২১৪।  ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনে আমদানি পর্যায়ে সর্বমোট ১৪৩১ ট্যারিফ লাইনের বিপরীতে বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত ছিল। অন্যদিকে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২-তে উক্ত সংখ্যা হ্রাসপূর্বক ২৫৬ টি ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। ব্যবসায়ী সমাজ দেশিয় শিল্পের যথোপযুক্ত সংরক্ষণের স্বার্থে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। জনস্বার্থ সুরক্ষা এবং দেশিয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ তথা একটি বিনিয়োগ-বান্ধব, করদাতা-বান্ধব ও রাজস্ব-বান্ধব অর্থনীতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর দ্বিতীয় তফসিলের পরিবর্তে নতুন দ্বিতীয় তফসিল প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করছি। বিদ্যমান ১১ স্তরের সম্পূরক শুল্কের পরিবর্তে প্রস্তাবিত সম্পূরক শুল্কের মোট হার হবে ৮ টি, যা যথাক্রমে ২৫, ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩৫০ ও ৫০০ শতাংশ ।

২১৫।  ২০১২ সালের ভ্যাট আইনের দ্বিতীয় তফসিলে দুটি খন্ড বিদ্যমান। এর প্রথম খন্ডটি ছিল ‘সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যসমূহ’ এবং দ্বিতীয় খন্ডটি ছিল ‘সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য সেবাসমূহ’। স্থানীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণের স্বার্থে দ্বিতীয় তফসিলের বিদ্যমান প্রথম খন্ডটি প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ডে যথাক্রমে ‘আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যসমূহ’ এবং ‘স্থানীয় পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যসমূহ’ - এরূপে ভাগ করার প্রস্তাবসহ বিদ্যমান দ্বিতীয় খন্ডকে তৃতীয় খন্ড অর্থাৎ ‘সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য সেবাসমূহ’ নামকরণের প্রস্তাব করছি।

সিগারেট ও বিড়ির জন্য শুল্ক ও কর

২১৬। ক) WHO Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) এ বাংলাদেশ প্রথম স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। বিশ্বব্যাপী ধুমপান বিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান, স্বাস্থ্যঝুঁকিহেতু তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার কারণে এ খাতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দীর্ঘদিন যাবৎ সিগারেটের উপর হতে কর আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক সিগারেটের মূল্যসীমা নির্ধারণ করে দেয়ার একটি রেওয়াজ প্রচলিত ছিল- যা বাজার অর্থনীতিতে মোটেও কাম্য নয়। এ কারণে, গত দু’বছরে সিগারেটের মূল্য নির্ধারণের রীতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। তবে, ভবিষ্যতে ক্রমান্বয়ে মূল্য নির্বিশেষে একটি একক করহারে উপনীত হওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। বিগত কয়েক বছরের নিম্ন মূল্যস্তরের সিগারেটের বিভিন্ন কোম্পানির মার্কেট শেয়ার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, দেশিয় কোম্পানিগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের বাজার হারাচ্ছে এবং বহুজাতিক কোম্পানি সেটি দখল করে নিচ্ছে যা দেশিয় শিল্পের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই নিম্নমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী দু’ বছরের মধ্যে দেশিয় কোম্পানিগুলোর অস্তিত্ব আর থাকবে না। তাছাড়া বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানি কর্তৃক নিম্ন মূল্যস্তরে যে সকল ব্রান্ডের সিগারেট বাজারজাত করা হয় সে সকল ব্রান্ড বিশ্বের অন্যান্য দেশে জনপ্রিয় ব্রান্ড হিসেবে পরিচিত। ফলে এক্ষেত্রে একটি অসম প্রতিযোগিতা বিদ্যমান রয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশিয় শিল্প ‍সুরক্ষা এবং ক্রমান্বয়ে একটি একক হারে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে নিম্ন মূল্যস্তরের দেশিয় ব্রান্ডের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার মূল্য বিদ্যমান ২৩ টাকা হতে বৃদ্ধি করে ২৭ টাকা নির্ধারণ এবং সম্পূরক শুল্ক হার ৫০ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ৫২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। তবে, নিম্ন মূল্যস্তরের আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের সিগারেটের ক্ষেত্রে বর্তমানে পৃথক কোন মূল্যস্তর না থাকায় এ ধরনের আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণসহ সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। এছাড়া, ৪৫ টাকা ও তদূর্ধ্ব মূল্যে বিদ্যমান মধ্যম ও উচ্চ মূল্যস্তরের সিগারেটের ব্রান্ডসমূহের জন্য কোন মূল্য নির্ধারণ না করে মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি উৎপাদকদের ইচ্ছাধীন রাখার প্রস্তাব করছি।

খ) বিড়ির ভয়াবহতা সিগারেটের চেয়েও বেশী। বিড়ি এখন আর বিড়ি নয়। এইটি মোটামুটি একটি সস্তা সিগারেট এবং স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এক সময় দেশের দরিদ্র জনগণের বিনোদনের অন্যতম অবলম্বন ছিল বিড়ি। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিনোদনের অনেক উপাদান পৌঁছে গেছে। এছাড়া, বিড়ি শিল্পে যে শ্রমিক আগে ছিল এখন তার ৯০ ভাগই আর নেই। দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং ধূমপানজনিত চিকিৎসা ব্যয় বিবেচনায় এই খাত টিকিয়ে রাখার যৌক্তিক কোন কারণ নেই। দেশিয় শিল্পের শ্রমিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিড়ি খাতের শুল্ক হারে বিগত বছরগুলোতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সংস্কার বা পরিবর্তন আনা হয়নি। বর্তমান কর কাঠামো অনুযায়ী সহজলভ্যতার কারণে অনেক ভোক্তা এর ব্যবহারের সুযোগ নেয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যে এ দেশ থেকে বিড়ি উৎপাদন বন্ধ করে দেব। এসব বিবেচনায় নিয়ে বিড়ির বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য বিলুপ্তির পাশাপাশি ফিল্টারবিহীন ও ফিল্টারযুক্ত বিড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্কহার যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ৩৫ শতাংশতে কোন পরিবর্তন করা হবে না। তবে করসহ ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার প্যাকেটের মূল্য হবে ১৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার প্যাকেটের মূল্য ১৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি এবং এই মূল্য ১ জুন ২০১৭ থেকে কার্যকর হবে।

গ) স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিড়ি–সিগারেটের মত ভয়াবহ আরেকটি নতুন উদ্ভাবিত পণ্য হল ই-সিগারেট। বর্তমানে ই-সিগারেট অর্থাৎ Electronic Nicotine Delivery System (ENDS) এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ও তরুণ ধুমপায়ীদের মধ্যে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পণ্যটির বর্তমান শুল্কহার মাত্র ১০ শতাংশ। অন্যদিকে ই-সিগারেট সেবনের জন্য রিফিল প্রয়োজন হয় -যার শুল্ক হারও ১০ শতাংশ। এ কারণে উল্লিখিত দুটি পণ্যের পৃথক দুটি এইচ এস কোড নির্ধারণপূর্বক আমদানি শুল্কহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। একই সাথে এ দুটি পণ্যের উপর ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করছি।

ঘ) ইতোপূর্বে আমি এই মহান জাতীয় সংসদে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজের তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে জাঙ্ক ফুডের উপর অতিরিক্ত কর আরোপের আশ্বাস প্রদান করেছিলাম। সে কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ফাস্টফুড প্রকারান্তরে জাঙ্ক ফুড জাতীয় পণ্যের স্থানীয় সরবরাহ পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এর অতিরিক্ত হিসেবে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করছি।

ব্যাংক একাউন্ট ও উড়োজাহাজ ভ্রমণে ভ্যাট

২১৭।  বর্তমান সরকারের ‘financial inclusion at all levels’ নীতি ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতির ফলে ব্যাংকিং খাতে লেনদেনের আকার ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বিবেচনায় রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে The Excise & Salt Act, 1994 -এ নিম্নরূপ সংশোধনীর প্রস্তাব করছি:

  1. বছরের যেকোন সময় একাউন্টে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত debit কিংবা credit হয় এমন একাউন্টের ক্ষেত্রে তা পূর্বের ন্যায় আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয় না। এখন ১ লক্ষ টাকার একাউন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ১ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে হতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা, ১০ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে হতে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষেত্রে ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হতে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ক্ষেত্রে ৭ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।

এছাড়াও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ও সার্কভুক্ত দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এয়ারলাইন্স টিকেটের উপর আবগারি শুল্কের বিদ্যমান পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখে অন্যান্য ক্ষেত্রে নিম্নরূপ আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করছি:

  1. সার্কভুক্ত দেশ ব্যতীত এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকা; এবং
  2. ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা।
  3. বিমানযাত্রীদের যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য এই শুল্ক এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ টিকেটের সঙ্গে যুক্ত করে আদায় করবে।

দেশিয় শিল্পের বিকাশ ও প্রতিরক্ষণে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধি

মাননীয় স্পীকার

২১৮।  ভারী প্রকৌশল শিল্প এবং রপ্তানি খাতের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণ ও দেশিয় শিল্পের বিকাশ ও প্রতিরক্ষণের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত কতিপয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যমান অব্যাহতির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি:

ক) দেশিয় ভারী প্রযুক্তিগত শিল্পের বিকাশ ও প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানি বাণিজ্যের লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদনকে প্রণোদনা প্রদানের স্বার্থে রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার এর উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

খ) স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এয়ারকন্ডিশনার এর উৎপাদনকে প্রদত্ত ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী ৩০ জুন, ২০১৭ খ্রিঃ তারিখে শেষ হবে। এই শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে স্থানীয়ভাবে এয়ার কন্ডিশনার এর উৎপাদনকে প্রদত্ত ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী ৩০ জুন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

গ) পাম অয়েল ও সয়াবিন অয়েলের উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন, ২০১৭ খ্রিঃ তারিখে শেষ হবে। ভোক্তা সাধারণের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পাম অয়েল ও সয়াবিন অয়েলের উৎপাদন পর্যায়ে প্রদত্ত ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী ৩০ জুন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

ঘ) Containers for compressed or liquefied gas, of iron or steel তথা LPG Cylinder এর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আগামী ৩০ জুন, ২০১৭ খ্রিঃ তারিখে শেষ হবে। জ্বালানি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ অব্যাহতির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

Digital Addressable System প্রবর্তন

মাননীয় স্পীকার

২১৯। বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি টিভি সেট আছে – যার অধিকাংশই ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত। ক্যাবল টিভির অপারেটররা সাধারণত প্রতিটি সংযোগের বিপরীতে গড়ে প্রতি মাসে ২ শত ৫০ টাকা থেকে ৩ শত টাকা আদায় করে। এই চার্জের উপর বর্তমানে ভ্যাটসহ সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের অপারেটরগণ আদায় করে তার অত্যন্ত নগণ্য অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণসহ এই খাতে শৃঙ্খলা আনয়ন এবং ক্যাবল টিভির মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক বার্তা অত্যন্ত সহজে জনগণের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের পূর্ণ Digitalization অত্যন্ত আবশ্যক। এ ধরনের নেটওয়ার্ক ডিজিটালাইজ করার জন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ ইতোমধ্যে Mandatory Digitalization of Cable TV Network সম্পন্ন করেছে। এ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারলে একদিকে যেমন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে Digital Addressable System প্রতিষ্ঠা করা যাবে, অন্যদিকে এ খাত হতে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব আহরণ নিশ্চিত করা যাবে। সে কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহর এবং এর পাশ্ববর্তী এলাকাসমূহে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মধ্যে ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ককে এবং ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে সম্পূর্ণ দেশের ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ককে Digital Addressable System এর মধ্যে আনার প্রস্তাব করছি।

ব্যবসার হিসাব নিশ্চিতকরণে EFD বিতরণ

মাননীয় স্পীকার

২২০। ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টারের (ECR) মাধ্যমে যথাযথ ভ্যাট আহরণ নিশ্চিত করার উদ্যোগ আমরা ইতোপূর্বে গ্রহণ করেছি। এলক্ষ্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (EFD) সংগ্রহপূর্বক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ক্রয়মূল্যে সরবরাহের কার্যক্রম বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া, পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সময় সম্মানিত করদাতাদের পরিশোধিত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা হচ্ছে কি না - তা করদাতাগণ যেন তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেন সে জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস্ তৈরির বিষয়েও বর্তমান সরকার কাজ করছে।

প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার

২২১।  নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় অনলাইনে নিবন্ধন গ্রহণ করা থেকে শুরু করে রিটার্ন দাখিল, কর পরিশোধ, আপিল দায়ের ও রিফান্ড আবেদনসহ সব ধরনের কার্যক্রম করদাতাগণ নিজস্ব অফিসে বা বাসগৃহে বসেই সম্পন্ন করতে পারবেন এবং এর ফলে ভ্যাট আহরণ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ভৌগলিক এলাকা ভিত্তির (geographical jurisdiction) পরিবর্তে functional model অনুযায়ী পরিচালিত হবে। পুরো ভ্যাট ব্যবস্থাপনা অনলাইনভিত্তিক হওয়ায় সম্পূর্ণ ভ্যাট আহরণ কার্যক্রমে কেন্দ্রীয়ভাবে রাজস্ব বোর্ডের দায়-দায়িত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং সে অনুযায়ী বোর্ডের ব্যাপক গুণগত ও কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে উন্নত দেশসমূহসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের রাজস্ব প্রশাসনেও এ অভিন্ন ব্যবস্থা সর্বোত্তম চর্চা (best practice) হিসেবে অনুসৃত হচ্ছে। Functional model এর আওতায় কর্মকর্তাগণ রাজস্ব আহরণের বিভিন্ন শাখায় বিশেষায়িত জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে যিনি নিরীক্ষার দায়িত্বে থাকবেন, তিনি সমগ্র দেশের নিরীক্ষার কার্যক্রম নির্বাহ করবেন। বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তা নিরীক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন না। এই Functional model কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ মাঠ পর্যায়ের দপ্তরসমূহের ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে যখন প্রথমবারের মত ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়, তখন মাঠ পর্যায়ের অনেক তদারকীমূলক কার্যক্রম রহিত করে আধুনিক নিরীক্ষা ও হিসাব সংরক্ষণভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এর সাথে সংগতিপূর্ণ একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামোগত সংস্কার না হওয়ায় ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইনটির সুফল যথাযথভাবে পাওয়া যায়নি। বরং কাঠামোগত সংস্কার না করে আইনের বিভিন্ন বিধান সংশোধনীর মাধ্যমে এ সীমাবদ্ধতা হতে উত্তরণের চেষ্টার কারণে বিদ্যমান ভ্যাট আইনটি অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

২২২।  এ প্রেক্ষাপটে, প্রস্তাবিত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান কাঠামোটি আংশিক পরিবর্তন করে নিয়মিত আন্তঃমন্ত্রণালয় বিবেচনার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রশাসনিক কাঠামো ও পদমর্যাদা পুনঃবিন্যাসের ব্যবস্থা নিচ্ছি।

কর্মদক্ষতা প্রণোদনা ও পুরষ্কার নীতিমালা

২২৩। আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার ভিত্তিতে প্রণীত মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কর ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার সাধিত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। নতুন আইনে করদাতাদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও উত্তম চর্চার সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর কর্মকর্তাদের কাজে অধিক স্বচ্ছতা আনয়ন এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ ও কর ফাঁকি উদঘাটনে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুসারে দেশের কর ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনয়ন এবং কর কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক শীঘ্রই একটি কর্মদক্ষতা প্রণোদনা ও পুরষ্কার নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।

ব্যবসা ও কর-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি

২২৪। ১৯৯১ সনের আইনটি বিভিন্ন বিচ্যুতির ফলে এর মৌলিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে প্রায় অকার্যকর একটি আইনে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ১৯৯১ সনের ভ্যাট আইনটি রাজস্ব আহরণে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ ২৫ বছরেও আমাদের ভ্যাট-জিডিপির অনুপাত ৩.৫৮ শতাংশের বেশী উন্নীত করা সম্ভব হয়নি–যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এই ভ্যাট জিডিপি’র অনুপাত আগামী তিন বছরে ৪.৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে এবং তা হবে মূলত করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি করে। সে কারণে নতুন ভ্যাট আইনটির বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ আইনটি বাস্তবায়িত হলে একটি আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর কম্পিউটারাইজড কর ব্যবস্থাপনা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ফলে, শুনানির ক্ষেত্র ব্যতীত কোন কারণেই করদাতাকে ভ্যাট অফিসে যেতে হবে না। ফলে করদাতাদের অহেতুক হয়রানি কমবে এবং কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আসবে। এতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ করাও সম্ভব হবে। তাছাড়া প্রতিপালন ব্যয় (Compliance cost) উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বিধায় কর প্রদানে করদাতাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এবং করদাতা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিসহ রাজস্ব আদায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে cost of doing business হ্রাস পাবে ও ease of paying taxes সূচকে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে এবং নতুন নতুন বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করবে।

২২৫। কর আরোপ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মওকুফ, বিদ্যমান করহার ও করভিত্তির যৌক্তিকীকরণ প্রস্তাবসহ আমার পেশকৃত অন্যান্য সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলো মহান সংসদ কর্তৃক গৃহীত হলে দেশের শিল্পখাত, করদাতা, ভোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য একটি ব্যবসা ও কর-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছি। এসব পদক্ষেপের কারণে বিগত বছরসমূহের ন্যায় আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও মূল্য সংযোজন কর আহরণের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক

মাননীয় স্পীকার

২২৬।  এখন আমি আমদানি শুল্ক বিষয়ে প্রণীত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবনা মহান সংসদে উপস্থাপন করছি। এ প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, আমদানি শুল্ক বিষয়ক প্রস্তাবনা তৈরির সময় আমরা দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, চলমান বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে দেশিয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ, শিল্প বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রাজস্ব আহরণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছি। এছাড়া, বিগত সময়ে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, ব্যবসায়ী সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের নিকট থেকে প্রাপ্ত ১ হাজার ৬০০ -এরও বেশী প্রস্তাব আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমি চেষ্টা করেছি, অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার অপরিবর্তিত রাখতে, দেশিয় শিল্পখাতে ক্ষতিসাধন না করে সংরক্ষণ ও প্রসার করতে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, মূসক ও সম্পূরক শুল্ক নির্ধারণে স্ববিবেচনার প্রয়োগ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে, অবমূল্যায়ন পরিহার করতে এবং আমদানি দ্রব্যের দ্রুত শুল্কায়ন ও খালাস নিশ্চিত করতে। এক্ষেত্রে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ‘উত্তম চর্চা’ অনুসরণ ও আত্মস্থ করবো। শুল্ক কর বিভাগ ও ব্যবসায়ী পার্টনারশিপকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকর করবো। সর্বোপরি, ক্রমবিকাশমান রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা ও সেবার মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখবো।

২২৭। উপর্যুক্ত মৌলিক বিষয়সমূহকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা যেসব প্রস্তাব বিবেচনা করেছি সেগুলোর খাতভিত্তিক বিবরণ মহান জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করছি:

ক) কৃষিখাত:

কৃষি আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত এবং আমরা বাস্তবেই কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি খাতের বিভিন্ন উপখাতের প্রণোদনা নিম্নে তুলে ধরছি:

i)    কৃষি: কৃষিখাতের অন্যতম প্রধান উপকরণ বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শুন্য শুল্কহার এবং কৃষকের উৎপাদিত ধান চালের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে চাল আমদানিতে সর্বোচ্চ শুল্কহার অব্যাহত রাখা হয়েছে। কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গম, ভূট্টা ও আলু থেকে উৎপাদিত স্টার্চের আমদানির উপর ইতোপূর্বেই উচ্চতর শুল্ক হার আরোপ করা হয়েছিল। তবে কাসাভাসহ অন্যান্য স্টার্চের স্থানীয় উৎপাদন না থাকায় এগুলোর উপর নিম্ন শুল্ক হার প্রযোজ্য ছিল। প্রায় একই ধরনের পণ্যে শুল্ক হারে পার্থক্য থাকায় মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে পণ্য আমদানির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সে কারণে সকল ধরনের স্টার্চের শুল্ক হার যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে। একইভাবে দেশিয় শিল্পের প্রতিরক্ষণে বিভিন্ন ধরণের অয়েল কেকের শুল্ক হারও যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের চারাগাছের পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাল‌্চ (Mulch) এবং গ্রীণ হাউস প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত শেডিং নেটের উপর শুল্ক হার হ্রাস করা হয়েছে।

ii)   মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি: কৃষির অন্যতম উপখাত এবং দেশের মানুষের আমিষের প্রধান উৎস মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে উক্ত খাতের খাদ্য সামগ্রী ও নানাবিধ উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ও কর অব্যাহতি দিয়ে আমরা বিগত কয়েক বছর যাবৎ বিশেষ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। এই খাতের জন্য প্রয়োজনীয় আরো কতিপয় পণ্যে শুল্ক সুবিধা তথা প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব করছি।

iii)  কৃষি যন্ত্রপাতি: বর্তমানে কৃষিকাজে আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তবে কৃষি খাতে ব্যবহার্য অধিকাংশ যন্ত্রপাতি যাতে কম খরচে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা যায় সে লক্ষ্যে এ সকল যন্ত্রপাতি তৈরির উপকরণে শুধু ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করে বিগত অর্থবছরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এ বছর আরো কিছু উপকরণে উক্ত সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ কৃষি যন্ত্রপাতি দেশে তৈরি হবে এবং কৃষক কম মূল্যে সেগুলো কিনতে পারবে।

iv)  তামাক: তামাক একটি কৃষি পণ্য হলেও তামাকের উৎপাদনকে সরকার সবসময় নিরুৎসাহিত করে আসছে কারণ এটি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই তামাক জাতীয় সকল পণ্যে উচ্চ হারে শুল্ক আরোপিত আছে। তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে এ বছর তামাকজাত পণ্য রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপেরও প্রস্তাব করছি।

খ)   শিল্পখাত: আমাদের বর্তমান উন্নয়ন কৌশল হচ্ছে- শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যথাযথ প্রতিরক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার, রপ্তানিমুখী শিল্পের বহুমুখী প্রসারপূর্বক আরো অধিক প্রতিযোগীসক্ষম করা। সে কারণে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ এবং শিল্প শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপদ উৎপাদন পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপনে প্রয়োজনীয় পণ্যে ৫ শতাংশ এর অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করাদি মওকুফ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া শিল্প খাতের বিভিন্ন উপখাতের জন্য প্রস্তাবিত প্রণোদনা নিম্নরূপ:

i)  চামড়া: চামড়া আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি শিল্প এবং এক্ষেত্রে কাঁচামালের সিংহভাগ দেশেই উৎপন্ন হয়। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত সকল রাসায়নিক পণ্যকে অনেক আগে থেকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের সাথে সাথে এই শিল্পের প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিদেশি ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্ত অনুযায়ী নিরাপদ কারখানা স্থাপন করতে হচ্ছে। সে কারণে এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় Busbar trunking system এবং Electrical Panel কে মূলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ii) ঔষধ শিল্প: বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প বর্তমানে বিশ্বমানে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানি হচ্ছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় এই খাতকে আরো বিকাশিত করার জন্য এই শিল্পে ব্যবহৃত বেশ কিছু কাঁচামালে শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি। এখানে উল্লেখ্য, এ সমস্ত কাঁচামালের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধের কাঁচামালও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

iii) সিরামিক: বর্তমানে দেশে সিরামিক শিল্পের ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। তৈরি পণ্যের আমদানিতে উচ্চ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং কাঁচামালে নিম্ন শুল্ক হার নির্ধারণের মাধ্যমে সরকার এই শিল্পকে প্রতিরক্ষণ প্রদান করে আসছে। আগামী বাজেটে এই শিল্পের প্রতিরক্ষণ সুবিধা অধিকতর সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ট্যাল্ক, মাইকা, অ্যালুমিনা লাইনার ইত্যাদি কাঁচামালের শুল্ক আরো হ্রাস করার প্রস্তাব করছি।

iv) ব্যাটারি: ব্যাটারি শিল্প আরেকটি সম্ভাবনাময় খাত। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ব্যাটারি দেশিয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানিও হচ্ছে। এক্ষেত্রেও তৈরি পণ্যের আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক এবং কাঁচামালে নিম্ন শুল্ক হার নির্ধারণ করা আছে। আগামী বাজেটে এই সেক্টরের কাঁচামাল জিংক ক্যালট, আর্সেনিক, এন্টিমনি এর শুল্ক হার হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে।

v) সোলার প্যানেল: সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার বাংলাদেশে বেশী পুরাতন নয়। কিছুদিন পূর্বেও সৌর বিদ্যুতের সকল যন্ত্রপাতি আমদানি করা হতো। সে কারণে এ সকল যন্ত্রপাতির উপর শূন্য শুল্ক হার আরোপিত ছিল। বর্তমানে ফটোভোলটেইক সেল ব্যবহার করে সোলার মডিউল বা প্যানেল দেশেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। সে কারণে দেশিয় উৎপাদনকারীদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে তৈরিকৃত সোলার মডিউল/প্যানেলের শুল্ক হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। তবে সোলার ফটোভোলটেইক সেল এর শুল্ক শূন্য থাকবে।

মাননীয় স্পীকার

গ) পরিবহন খাত: পরিবহন আমাদের অর্থনীতির একটি বড় খাত। এ খাতের উদীয়মান উপখাত হলো মোটরসাইকেল উৎপাদন। দেশে ইতোমধ্যেই ৩-৪টি প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করেছে। একটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে তাদের উৎপাদিত মোটরসাইকেল রপ্তানিও শুরু করেছে। মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ খাতের জন্য শর্তসাপেক্ষে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে বিগত অর্থবছরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট উপখাতের অংশীজন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রস্তাব বিবেচনায় এবং মোটরসাইকেল শিল্পে অগ্রসরমান দেশসমূহে অনুসৃত পদ্ধতি পর্যালোচনা করে উক্ত প্রজ্ঞাপনটিকে আরো যুগোপযোগী ও বিনিয়োগ বান্ধব করে নতুনভাবে জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে অতি দ্রুত মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করি। এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় মহান সংসদকে জানাতে চাই যে, পরিবেশ দূষণ এবং জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য আমরা হাইব্রিড গাড়ীর শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। হাইব্রিড যানবাহনকে অনেক সুযোগ আমি শুরু থেকেই দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, এখনো এ গাড়ি আমাদের দেশে জনপ্রিয় হয়নি। এবার তাই হাইব্রিড গাড়ির উচ্চমূল্য বিবেচনা করে নতুনভাবে তার উপর শুল্ক হার পুনঃনির্ধারণ করেছি।

ঘ) তথ্য-প্রযুক্তি খাত: ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের সরকারের অন্যতম উন্নয়ন কৌশল। এ লক্ষ্যে ১৯৯৬ সন হতে আমরা তথ্য প্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর রেয়াতি সুবিধা দিয়ে আসছি। ফলে এ প্রযুক্তি দেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় আইসিটি খাত রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখবে। এ খাতে প্রয়োজনীয় শুল্ক-কর প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড এর স্থানীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ খাতের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি।

ঙ) জুয়েলারি খাত: জুয়েলারি আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি। তাই জুয়েলারি শিল্পকে ব্যবসা বান্ধব করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য এই সেক্টরের ব্যবসায়ী সমিতি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এ সকল প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আমরা স্থির করেছি সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সাথে আলোচনা করে স্বর্ণ আমদানি এবং জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে যাতে এদেশে জুয়েলারি শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারে এবং একইসাথে এই শিল্প বহিঃবিশ্বেও রপ্তানি বাজার তৈরি করতে পারে। এই নীতিমালা প্রণয়ন এই ক্যালেন্ডার বছরেই সমাপ্ত করবো বলে আশা করছি।

চ) জ্বালানি খাত: দেশের আর্থিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে জ্বালানি খাতের উন্নয়ন। এতদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কলকারখানা, পরিবহন এবং বাসাবাড়ীতে জ্বালানির প্রধান উৎস ছিল দেশে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক গ্যাস কিন্তু বর্তমানে দেশে গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে এলপিজি এর ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই সরকার ৫০টির বেশী প্রতিষ্ঠানকে এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্ল্যান্ট ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছে। এ সমস্ত প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণে ১ শতাংশ এর অতিরিক্ত শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়াও দেশে এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির লক্ষ্যে কাঁচামালে শুল্ক বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানো হয়েছে। এলপিজি ছাড়াও এলএনজি (লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) কে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শুল্ক ও কর প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এলপিজি/এলএনজি চালিত বাস, ট্রাক, থ্রি হুইলার শুল্কায়ন কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করার জন্য কাস্টমস ট্যারিফ সিডিউলে প্রয়োজনীয় বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ছ) ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ: একটি আধুনিক, বিনিয়োগ ও ব্যবসা বান্ধব, ভোক্তাস্বার্থ ও রাজস্ববান্ধব মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আগামী ১ জুলাই, ২০১৭ হতে কার্যকর করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। উক্ত আইনের বিধানের সাথে সঙ্গতি রেখে এবং এই আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হারসমূহ অনেকাংশে অপরিবর্তিত রেখে ক্ষেত্রবিশেষে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। এসব প্রস্তাব বিবেচনাকালে দেশের কৃষি ও শিল্পের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরক্ষণের বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান ট্যারিফ হেডিং, এইচএস কোড, শুল্ক হার ও কাঠামো, বিদ্যমান বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনে স্টেকহোল্ডার কর্তৃক চিহ্নিত ত্রুটি, অসংগতি, অযৌক্তিক শুল্ক কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংশোধন বা যৌক্তিকীকরণের কার্যক্রমও আমরা গ্রহণ করেছি। সে লক্ষ্যে ট্যারিফ হেডিং, এইচ.এস.কোড সৃজন বা বিলোপ ও শুল্ক হারের অসঙ্গতি দূরীকরণ ও ক্ষেত্র বিশেষে যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব করছি।

জ) কাস্টমস আইনের প্রথম তফসিল সংশোধন: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজীকরণের উদ্দেশ্যে পণ্যের নামকরণ এবং শ্রেণিবিন্যাসজনিত জটিলতা দূর করার লক্ষ্যে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে World Customs Organization (WCO) কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতি প্রতিষ্ঠানটির সকল সদস্য দেশ অনুসরণ করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির ফলে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পণ্যের সৃষ্টি হচ্ছে এবং এ সকল পণ্যের শ্রেণিবিন্যাস সংক্রান্ত নতুন ব্যাখ্যা WCO প্রতি ৫ (পাঁচ) বছর পর পর প্রকাশ করে থাকে। ২০১২ সালের পর বর্তমান বছরে (২০১৭) পণ্যের শ্রেণিবিন্যাসজনিত পরিবর্তনসমূহ WCO কর্তৃক প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন সংক্রান্ত দলিলাদি WCO থেকে সংগ্রহ করে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে উক্ত পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে Bangladesh Customs Tariff (BCT) এবং বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনসমূহে H.S. Code এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের প্রস্তাব করছি।

মাননীয় স্পীকার

২২৮। যথাযথ রাজস্ব আহরণ ও স্থানীয় শিল্পের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরক্ষণের লক্ষ্যে শুল্ক-ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আমদানিকৃত পণ্যের অবমূল্যায়ন (under invoicing) জনিত মিথ্যা ঘোষণা। এটি রোধ করার লক্ষ্যে আমরা ট্যারিফ সংস্কার, ডিজিটালাইজেশনসহ নানামুখী আধুনিকায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি শুল্কায়নের ভিত্তি হিসেবে যাচাই ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আমদানিয় বেশ কিছু বাণিজ্যিক পণ্যের উপর ন্যূনতম মূল্য ধার্য করে বিগত অর্থবছরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এতে ব্যাপক সুফল পাওয়া গেছে। সে কারণে ঝুঁকিপূর্ণ আরো কিছু পণ্যের ট্যারিফ/ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।   

একাদশ অধ্যায়

উপসংহার

মাননীয় স্পীকার

২২৯।  আমাদের যেতে হবে অনেক দুর। মার্কিন কবি রবার্ট ফ্রস্ট যথার্থই বলেছেন,

“But I have promises to keep.

And miles to go before I sleep.”

২৩০। সুশাসনের জন্য আমরা অনেক বাধা বিপত্তির মোকাবেলা করেছি। কে ভেবেছিল এ দেশে রাজাকাররা ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলবে? কে বিশ্বাস করেছিল যে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। আমরা কি কখনও ভেবেছি যে, আমরা ভিক্ষার ঝুলিকে এত দ্রুত ছেটে ফেলতে পারবো? নিজস্ব অর্থায়নে কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো? পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবো? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সমৃদ্ধির পথে হাঁটছি। সোনা ছড়ানো সমৃদ্ধি আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সময় এসেছে সাহসী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আলোর পথে অভিযাত্রার। ২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের ৮-১০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এজন্য উৎপাদনের উপকরণ পুঞ্জিভূতকরণের পাশাপাশি এগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে ব্যাপকভাবে। নতুন প্রযুক্তি ও উন্নত ব্যবস্থাপনার আওতায় দেশের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আনতে হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নিশ্চিত করতে হবে উৎপাদন নৈপুণ্যের উৎকর্ষায়ন। এজন্য প্রশাসনিক সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। গড়ে তুলতে হবে কার্যকর মানব-মূলধন মজুদ। কণ্টকমুক্ত রাখতে হবে ব্যক্তিখাত বিকাশের পথকে। তদুপরি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এসব কাজ পরিকল্পিত উপায়ে সম্পাদনের জন্য আমরা রূপকল্প ২০৪১ এর আওতায় প্রণয়ন করতে যাচ্ছি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। এর স্বপ্নমূলে থাকবে একটি শান্তিপ্রিয়, উন্নত এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সুস্থ সবল আলোকময় বাংলাদেশ।

২৩১।  জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের উচ্চাভিলাষ ব্যক্ত করেন সোনার বাংলার স্লোগান দিয়ে। তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেন যে, মুক্তিযুদ্ধে নির্মমভাবে বিধ্বস্ত বাংলাদেশে সম্পদের অভাব নেই, শুধু তার সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা ছিল পশ্চাৎপদ। আমরা এখন জানি যে তার উচ্চাভিলাষ শুধুই স্বপ্ন ছিল না, ছিল আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের অভিব্যক্তি। ধ্বংসের স্তুপ থেকে ফিনিক্স যখন মাত্র জেগে উঠার প্রস্তুতি নেয় তখনই ঘৃণ্য রাজাকার এবং দেশশত্রুরা তাদের চরম আঘাত হানে। জাতির স্থপতিকে হ্ত্যা করা হয়। তাঁর স্বপ্ন তাঁর জীবনে অধরাই থেকে যায়। আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং তার বান্দা বাংলাদেশীদের মাথা নত না করার মনোবলের জোরে আমরা আমাদের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর তিরোধানের একুশ বছর পরে আমরা সুষ্ঠুভাবে দেশ পুনর্গঠন কাজে লিপ্ত হই। পাঁচ বছরের শেষে আমরা আবার প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির নির্যাতনের শিকার হই। অতঃপর ২০০৯ সাল থেকে ভোটের লড়াইয়ে জয়যুক্ত হয়ে আমরা আবার জনসেবার সুযোগ পাই। জনকল্যাণ আবার হয় আমাদের জাতীয় ব্রত। নিরবচ্ছিন্নভাবে পরবর্তী নয় বছরে আমাদের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও উন্নয়ন কৌশল আমাদের নিয়ে এসেছে বর্তমান অবস্থানে। দিন এসেছে দল, মত, হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সকলে মিলে সেপথ ধরে সামনে এগিয়ে চলার। আসুন আমরা এখন প্রস্তুতি নেই ২০৪১ সালের সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশের জন্য।

জয় বাংলা

জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক॥

পরিশিষ্ট-ক

সারণিসমূহের তালিকা

সারণি

শিরোনাম

পৃষ্ঠা

প্রকৃতখাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

১১১

২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল ও সম্পূরক বাজেট

১১২

২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো

১১৩

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খাতওয়ারি বিভাজন

১১৪-১১৫

সমগ্র বাজেটের খাতওয়ারি বিভাজন

১১৬-১১৭

মন্ত্রণালয়/বিভাগওয়ারি বাজেট বরাদ্দ

১১৮-১১৯

আর্থ-সামাজিক খাতে অগ্রগতির চিত্র

১১৯

রাজস্ব খাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

১২০

বহিঃখাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

১২১

১০

আর্থিকখাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

১২১

সারণি ১: প্রকৃতখাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

অর্থবছর

জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বিনিয়োগ (% জিডিপি)

মাথাপিছু জাতীয় আয়

(মা.ড.)

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা

(মে.ওয়াট)

খাদ্যশস্য উৎপাদন

(লক্ষ মে.ট.)

মূল্যস্ফীতি

(বার্ষিক গড়)

সরকারি

ব্যক্তিখাত

মোট

২০০৫-০৬

৬.৬৭

৫.৫৬

২০.৫৮

২৬.১৪

৫৪৩

৫,২৪৫

২৭২.৭

-

২০০৬-০৭

৭.০৬

৫.০৯

২১.০৮

২৬.১৮

৫৯৮

৫,২০২

২৮০.৬

৯.৪

২০০৭-০৮

৬.০১

৪.৫০

২১.৭০

২৬.২০

৬৮৬

৫,৩০৫

৩৫২.৯

১২.৩

২০০৮-০৯

৫.০৫

৪.৩২

২১.৮৯

২৬.২১

৭৫৯

৫,৭১৯

৩৪৭.১

৭.৬

২০০৯-১০

৫.৫৭

৪.৬৭

২১.৫৭

২৬.২৫

৮৪৩

৫,৮২৩

৩৫৮.১

৬.৮

২০১০-১১

৬.৪৬

৫.২৬

২২.১৬

২৭.৪২

৯২৮

৭,২৬৪

৩৬০.৭

১০.৯

২০১১-১২

৬.৫২

৫.৭৬

২২.৫০

২৮.২৬

৯৫৫

৮,৭১৬

৩৬৮.৮

৮.৭

২০১২-১৩

৬.০১

৬.৬৪

২১.৭৫

২৮.৩৯

১,০৫৪

৯,১৫১

৩৭২.৭

৬.৮

২০১৩-১৪

৬.০৬

৬.৫৫

২২.০৩

২৮.৫৮

১,১৮৪

১০,৪১৬

৩৮১.৭

৭.৪

২০১৪-১৫

৬.৫৫

৬.৮২

২২.০৭

২৮.৮৯

১,৩১৭

১১,৫৩৪

৩৮৪.২

৬.৪

২০১৫-১৬

৭.১১

৬.৬৬

২২.৯৯

২৯.৬৫

১,৪৬৫

১৪,৪২৯

৩৯০.০

৫.৯

২০১৬-১৭

৭.২৪

৭.২৬

২৩.০১

৩০.২৭

১,৬০২

১৫,৩৭৯

৩৯৬.৯

৫.৪

উৎস: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বিদ্যুৎ বিভাগ, মার্চ পর্যন্ত এপ্রিল পর্যন্ত, সাময়িক হিসাব

সারণি ২: ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল ও সম্পূরক বাজেট

(কোটি টাকায়)

খাত

সংশোধিত ২০১৬-১৭

২০১৬-১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রকৃত

বাজেট ২০১৬-১৭

মোট রাজস্ব আয়

২,১৮,৫০০

১,৪২,৪৫৯

২,৪২,৭৫২

(১১.২)

(৭.৩)

(১২.৪)

এনবিআর রাজস্ব

১,৮৫,০০০

১,২১,৭৯৭

২,০৩,১৫২

এনবিআর বহির্ভূত কর-রাজস্ব

৭,২৬১

৪,৩১৬

৭,২৫০

কর ব্যতীত প্রাপ্তি

২৬,২৩৯

১৬,৩৪৬

৩২,৩৫০

মোট ব্যয়

৩,১৭,১৭৪

১,৪৯,৩৩৩

৩,৪০,৬০৫

(১৬.২)

(৭.৬)

(১৭.৪)

অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয়

১,৭৮,১৫৪

১,০৪,৫১৪

১,৮৮,৯৬৬

(৯.১)

(৫.৩)

(৯.৬)

উন্নয়ন ব্যয়

১,১৫,৯৯০

৩৩,৭৮০

১,১৭,০২৭

(৫.৯)

(১.৭)

(৬.০)

তন্মধ্যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি

১,১০,৭০০

৩৩,৪৩৬

১,১০,৭০০

(৫.৭)

(১.৭)

(৫.৬)

অন্যান্য ব্যয়

২৩,০৩০

১১,০৩৯

৩৪,৬১২

(১.২)

(০.৬)

(১.৮)

বাজেট ঘাটতি

-৯৮,৬৭৪

-৬,৮৭৪

-৯৭,৮৫৩

(-৫.০)

(-০.৪)

(-৫.০)

অর্থায়ন

 

 

 

বৈদেশিক উৎস

২৮,৭৭১

২,৫১১

৩৬,৩০৫

(১.৫)

(০.১)

(১.৯)

অভ্যন্তরীণ উৎস

৬৯,৯০৩

৪,২৮৩

৬১,৫৪৮

(৩.৬)

(০.২)

(৩.১)

 তন্মধ‍্যে, ব্যাংক উৎস

২৩,৯০৩

-১৬,৪০২

৩৮,৯৩৮

(১.২)

(-০.৮)

(২.০)

জিডিপি

১৯,৫৬,০৫৫

১৯,৫৬,০৫৫

১৯,৬১,০১৭

বন্ধনিতে জিডিপি’র শতাংশ; বাজেট প্রণয়নকালীন নামিক জিডিপি; নামিক জিডিপির সাময়িক হিসাব; উৎস: অর্থ বিভাগ।

সারণি ৩: ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কাঠামো

(কোটি টাকায়)

খাত

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

প্রকৃত
২০১৫-১৬

মোট রাজস্ব আয়

২,৮৭,৯৯১

২,১৮,৫০০

২,৪২,৭৫২

১,৭২,৯৫৩

(১৩.০)

(১১.২)

(১২.৪)

(১০.০)

এনবিআর কর

২,৪৮,১৯০

১,৮৫,০০০

২,০৩,১৫২

১,৪৬,২৪২

এনবিআর বহির্ভূত কর-রাজস্ব

৮,৬২২

৭,২৬১

৭,২৫০

৫,৬৪৫

কর ব্যতীত প্রাপ্তি

৩১,১৭৯

২৬,২৩৯

৩২,৩৫০

২১,০৬৬

মোট ব্যয়

৪,০০,২৬৬

৩,১৭,১৭৪

৩,৪০,৬০৫

২,৩৮,৪৩৩

(১৮.০)

(১৬.২)

(১৭.৪)

(১৩.৮)

অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয়

২,০৭,১৩৮

১,৭৮,১৫৪

১,৮৮,৯৬৬

১,৪৪,৪৩১

(৯.৩)

(৯.১)

(৯.৬)

(৮.৪)

উন্নয়ন ব্যয়

১,৫৯,০১৩

১,১৫,৯৯০

১,১৭,০২৭

৮১,৪০৭

(৭.২)

(৫.৯)

(৬.০)

(৪.৭)

তন্মধ্যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি

১,৫৩,৩৩১

১,১০,৭০০

১,১০,৭০০

৭৯,৩৫১

(৬.৯)

(৫.৭)

(৫.৬)

(৪.৬)

অন্যান্য ব্যয়

৩৪,১১৫

২৩,০৩০

৩৪,৬১২

১২,৫৯৫

(১.৫)

(১.২)

(১.৮)

(০.৭)

বাজেট ঘাটতি

-১,১২,২৭৫

-৯৮,৬৭৪

-৯৭,৮৫৩

-৬৫,৪৮০

-(৫.০)

-(৫.০)

-(৫.০)

-(৩.৮)

অর্থায়ন

 

 

 

 

বৈদেশিক উৎস

৫১,৯২৪

২৮,৭৭১

৩৬,৩০৫

১৪,৭৫৫

(২.৩)

(১.৫)

(১.৯)

(০.৯)

অভ্যন্তরীণ উৎস

৬০,৩৫২

৬৯,৯০৩

৬১,৫৪৮

৫০,৭৩০

(২.৭)

(৩.৬)

(৩.১)

(২.৯)

তন্মধ্যে, ব্যাংক উৎস

২৮,২০৩

২৩,৯০৩

৩৮,৯৩৮

১০,৬১৪

(১.৩)

(১.২)

(২.০)

(০.৬)

জিডিপি

২২,২৩,৬০০

১৯,৫৬,০৫৫

১৯,৬১,০১৭

১৭,২৯,৫৬৭

বন্ধনিতে জিডিপি’র শতাংশ দেখানো হয়েছে; বাজেট প্রণয়নকালীন নামিক জিডিপি; নামিক জিডিপির সাময়িক হিসাব; উৎস: অর্থ বিভাগ।

সারণি ৪: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির খাতওয়ারি বিভাজন

(কোটি টাকায়)

মন্ত্রণালয়/বিভাগ

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

প্রকৃত
২০১৫-১৬

প্রকৃত
২০১৪-১৫

প্রকৃত
২০১৩-১৪

প্রকৃত
২০১২-১৩

ক) মানব সম্পদ

১. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

৮,৭৫২

৬,২৬৩

৭,৭১০

৪,৯০৯

৩,৯৯৪

৪,৩৭৪

৩,৬৮৩

(৫.৭)

(৫.৭)

(৭.০)

(৬.২)

(৬.২)

(৭.৯)

(৭.৪)

২. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

৭,৮৪২

৪,৯১৮

৬,২৩৫

৩,৫৯৯

৩,৬৭১

৩,৪১৭

৩,৩১৬

(৫.১)

(৪.৪)

(৫.৬)

(৪.৫)

(৫.৭)

(৬.২)

(৬.৭)

৩. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

৬,১৬৫

৫,৩৭৩

৬,১৬৭

৩,৯০৮

৪,০৮৮

৩,০৩৩

২,২০৬

(৪.০)

(৪.৯)

(৫.৬)

(৪.৯)

(৬.৩)

(৫.৫)

(৪.৫)

৪. অন্যান্য

২১,২৭০

৯,৬১৯

৭,০৯১

৪,৫৫২

৪,৪৬৬

৩,৩৫৫

২,২০৫

(১৩.৯)

(৮.৭)

(৬.৪)

(৫.৭)

(৬.৯)

(৬.১)

(৪.৫)

উপ-মোট

৪৪,০২৯

২৬,১৭৩

২৭,২০৩

১৬,৯৬৮

১৬,২১৯

১৪,১৭৯

১১,৪১০

(২৮.৭)

(২৩.৬)

(২৪.৬)

(২১.৪)

(২৫.০)

(২৫.৭)

(২৩.১)

খ) কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন

৫. স্থানীয় সরকার বিভাগ 

২১,৪৬৫

১৯,২৮৮

১৮,৫৪৮

১৩,৯৪৪

১৩,৯৮৩

১০,৫৪৪

১০,৪২৫

(১৪.০)

(১৭.৪)

(১৬.৮)

(১৭.৬)

(২১.৫)

(১৯.১)

(২১.১)

৬. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় 

৪,৬৭৫

৩,৭৮৯

৩,৭৫৯

২,৭০৭

২,০৬১

১,৯৯৮

১,৭৫৬

(৩.০)

(৩.৪)

(৩.৪)

(৩.৪)

(৩.২)

(৩.৬)

(৩.৫)

৭. কৃষি মন্ত্রণালয় 

১,৮০০

১,৭৭২

১,৮৪১

১,৭২৬

১,৪০৬

১,২৭৩

১,১১১

(১.২)

(১.৬)

(১.৭)

(২.২)

(২.২)

(২.৩)

(২.২)

৮. অন্যান্য 

৪,৫২৫

৩,২৮৮

২,৯৪৬

২,৬৭১

২,৬২৬

২,২৭৭

১,৯৬৮

(৩.০)

(৩.০)

(২.৭)

(৩.৪)

(৪.০)

(৪.১)

(৪.০)

উপ-মোট

৩২,৪৬৫

২৮,১৩৭

২৭,০৯৪

২১,০৪৮

২০,০৭৬

১৬,০৯২

১৫,২৬০

(২১.২)

(২৫.৪)

(২৪.৫)

(২৬.৫)

(৩০.৯)

(২৯.২)

(৩০.৮)

গ) জ্বালানি অবকাঠামো

৯. বিদ্যুৎ বিভাগ

১৮,৮৪৫

১৩,৪২১

১৩,০৪০

১৫,২৫৭

৮,৩০৫

৮,৩১১

৮,৮৪০

(১২.৩)

(১২.১)

(১১.৮)

(১৯.২)

(১২.৮)

(১৫.১)

(১৭.৯)

১০. জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ

২,১১১

১,০৬৮

১,৯১১

১,০৫৪

১,০১৪

১,৮৮১

১,২৯৫

(১.৪)

(১.০)

(১.৭)

(১.৩)

(১.৬)

(৩.৪)

(২.৬)

উপ-মোট

২০,৯৫৬

১৪,৪৮৯

১৪,৯৫১

১৬,৩১১

৯,৩১৯

১০,১৯২

১০,১৩৫

(১৩.৭)

(১৩.১)

(১৩.৫)

(২০.৬)

(১৪.৪)

(১৮.৫)

(২০.৫)

ঘ) যোগাযোগ অবকাঠামো

১১. রেলপথ মন্ত্রণালয়

১৩,০০১

৯,২৭৮

৯,১১৫

৩,৯৫০

৩,২৮১

২,৮৫৮

২,৯৯৩

(৮.৫)

(৮.৪)

(৮.২)

(৫.০)

(৫.১)

(৫.২)

(৬.০)

১২. সড়ক পরি. ও মহাসড়ক বিভাগ

১৬,৮২০

৯,৪০৩

৮,১৬১

৬,৫০৭

৪,২৯৮

৩,৬২৫

৩,৬০৫

(১১.০)

(৮.৫)

(৭.৪)

(৮.২)

(৬.৬)

(৬.৬)

(৭.৩)

১৩. সেতু বিভাগ

৮,৪০৪

৬,৫২৭

৯,২৫৮

৫,২৬৬

৫,২৯৯

২,০৬৭

৭৮৫

(৫.৫)

(৫.৯)

(৮.৪)

(৬.৬)

(৮.২)

(৩.৭)

(১.৬)

১৪. অন্যান্য

২,৮২৯

২,১৮১

২,০২০

১,৩৫১

৭৫৭

৮০৫

৫৩২

(১.৮)

(২.০)

(১.৮)

(১.৭)

(১.২)

(১.৫)

(১.১)

উপ-মোট

৪১,০৫৪

২৭,৩৮৯

২৮,৫৫৪

১৭,০৭৪

১৩,৬৩৫

৯,৩৫৫

৭,৯১৫

(২৬.৮)

(২৪.৭)

(২৫.৮)

(২১.৫)

(২১.০)

(১৭.০)

(১৬.০)

মোট

১,৩৮,৫০৪

৯৬,১৮৮

৯৭,৮০২

৭১,৪০১

৫৯,২৪৯

৪৯,৮১৮

৪৪,৭২০

(৯০.৩)

(৮৬.৯)

(৮৮.৩)

(৯০.০)

(৯১.৩)

(৯০.৪)

(৯০.৪)

১৫. অন্যান্য

১৪,৮২৭

১৪,৫১২

১২,৮৯৮

৭,৯৪৫

৫,৬৬৮

৫,৩১৩

৪,৭৫৩

(৯.৬)

(১৩.১)

(১১.৭)

(১০.০)

(৮.৭)

(৯.৬)

(৯.৬)

মোট এডিপি

১,৫৩,৩৩১

১,১০,৭০০

১,১০,৭০০

৭৯,৩৪৬

৬৪,৯১৭

৫৫,১৩১

৪৯,৪৭৩

বন্ধনিতে মোট এডিপি বরাদ্দের শতকরা হার দেখানো হয়েছে; উৎস: অর্থ বিভাগ।

সারণি ৫: সমগ্র বাজেটের খাতওয়ারি বিভাজন

(কোটি টাকায়)

মন্ত্রণালয়/বিভাগ

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

প্রকৃত
২০১৫-১৬

প্রকৃত
২০১৪-১৫

প্রকৃত
২০১৩-১৪

প্রকৃত
২০১২-১৩

ক) সামাজিক অবকাঠামো

১,১৭,৩০২

৯২,৭৪১

৯৬,৩৬৫

৭২,৮৩০

৫৫,৮৫৬

৫০,৭২৫

৪২,৯৭২

(২৯.৩১)

(২৯.২৪)

(২৮.২৯)

(৩০.৫৫)

(২৬.৭৪)

(২৬.৮২)

(২৪.৪৭)

মানব সম্পদ

১. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

২৩,১৪১

২১,৭০৬

২৬,৮৪৭

২১,৫৮৯

১৬,১২২

১৪,১৩১

১১,৩৩৪

(৫.৭৮)

(৬.৮৪)

(৭.৮৮)

(৯.০৫)

(৭.৭২)

(৭.৪৭)

(৬.৪৫)

২. প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

২২,০২২

১৭,৭৯৭

২২,১৬২

১৬,২২৪

১১,৮৯৮

১১,০৩১

৯,৪১৩

(৫.৫০)

(৫.৬১)

(৬.৫১)

(৬.৮০)

(৫.৭০)

(৫.৮৩)

(৫.৩৬)

৩. স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ

১৬,১৮২

১৪,৮২৯

১৭,৪৮৭

১২,৬০৬

১০,৪১৯

৯,৩৮৫

৮,৫৪৯

(৪.০৪)

(৪.৬৮)

(৫.১৩)

(৫.২৯)

(৪.৯৯)

(৪.৯৬)

(৪.৮৭)

৪. অন্যান্য

৪৩,২২৪

২৬,৫২০

১৯,৪২২

১৪,৩৫৭

১১,৯২৫

৯,৫১৫

৭,৬২৫

(১০.৮০)

(৮.৩৬)

(৫.৭০)

(৬.০২)

(৫.৭১)

(৫.০৩)

(৪.৩৪)

উপ-মোট

১,০৪,৫৬৯

৮০,৮৫২

৮৫,৯১৮

৬৪,৭৭৬

৫০,৩৬৪

৪৪,০৬২

৩৬,৯২১

(২৬.১২)

(২৫.৪৯)

(২৫.২৩)

(২৭.১৭)

(২৪.১১)

(২৩.৩০)

(২১.০২)

খাদ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা

৫. খাদ্য মন্ত্রণালয়

৩,৮৮০

২,৯৪২

২,৪৪২

১,২৬৯

৭৩৫

৯১৯

৮১৪

(০.৯৭)

(০.৯৩)

(০.৭২)

(০.৫৩)

(০.৩৫)

(০.৪৯)

(০.৪৬)

৬. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

৮,৮৫৩

৮,৯৪৭

৮,০০৫

৬,৭৮৫

৪,৭৫৭

৫,৭৪৪

৫,২৩৭

(২.২১)

(২.৮২)

(২.৩৫)

(২.৮৫)

(২.২৮)

(৩.০৪)

(২.৯৮)

উপ-মোট

১২,৭৩৩

১১,৮৮৯

১০,৪৪৭

৮,০৫৪

৫,৪৯২

৬,৬৬৩

৬,০৫১

(৩.১৮)

(৩.৭৫)

(৩.০৭)

(৩.৩৮)

(২.৬৩)

(৩.৫২)

(৩.৪৫)

খ) ভৌত অবকাঠামো

১,২৭,০৫৯

৯৯,৪৯৮

১,০১,২৯২

৭৯,৬৯৭

৬৫,১৬৮

৫৮,৫১২

৫৮,৯৭৭

(৩১.৭৪)

(৩১.৩৭)

(২৯.৭৪)

(৩৩.৪৩)

(৩১.২০)

(৩০.৯৪)

(৩৩.৫৮)

কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন

৭. কৃষি মন্ত্রণালয়

১৩,৬০০

১০,৩৭৬

১৩,৬৭৫

১০,৭৩৯

১০,৩৪৫

১২,০৭৫

১৪,৮২২

(৩.৪০)

(৩.২৭)

(৪.০১)

(৪.৫০)

(৪.৯৫)

(৬.৩৯)

(৮.৪৪)

৮. পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়

৫,৯২৬

৪,৭৫৫

৪,৭১৩

৩,৬৩৪

২,৮৪৩

২,৭৪৩

২,৪৮১

(১.৪৮)

(১.৫০)

(১.৩৮)

(১.৫২)

(১.৩৬)

(১.৪৫)

(১.৪১)

৯. স্থানীয় সরকার বিভাগ

২৪,৬৬৫

২২,২৪৯

২১,৩২২

১৬,৩৮৮

১৬,০৬০

১২,৪০৬

১২,৩১৪

(৬.১৬)

(৭.০১)

(৬.২৬)

(৬.৮৭)

(৭.৬৯)

(৬.৫৬)

(৭.০১)

১০. অন্যান্য

৭,৯৩৭

৭,৪৯৬

৬,৫৩৬

৫,৭০৭

৫,০৫৪

৪,৫২৬

৪,২১৮

(১.৯৮)

(২.৩৬)

(১.৯২)

(২.৩৯)

(২.৪২)

(২.৩৯)

(২.৪০)

উপ-মোট

৫২,১২৮

৪৪,৮৭৬

৪৬,২৪৬

৩৬,৪৬৮

৩৪,৩০২

৩১,৭৫০

৩৩,৮৩৫

(১৩.০২)

(১৪.১৫)

(১৩.৫৮)

(১৫.২৯)

(১৬.৪২)

(১৬.৭৯)

(১৯.২৬)

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

২১,১১৮

১৪,৫৬১

১৫,০৩৬

১৬,৩৭৪

৯,৩৫৯

১০,২৬৬

১০,২৮১

(৫.২৮)

(৪.৫৯)

(৪.৪১)

(৬.৮৭)

(৪.৪৮)

(৫.৪৩)

(৫.৮৫)

যোগাযোগ অবকাঠামো

১১. সড়ক পরি. ও মহাসড়ক বিভাগ

১৯,৬৯৬

১২,০৭৭

১০,৯১০

৮,৯০০

৬,৪৬০

৫,৫৬০

৫,৩৬৮

(৪.৯২)

(৩.৮১)

(৩.২০)

(৩.৭৩)

(৩.০৯)

(২.৯৪)

(৩.০৬)

১২. রেলপথ মন্ত্রণালয়

১৬,০১৩

১১,৯৮২

১১,৯৫০

৬,০১৬

৫,০৯৩

৪,৪৬২

৪,৫৫৭

(৪.০০)

(৩.৭৮)

(৩.৫১)

(২.৫২)

(২.৪৪)

(২.৩৬)

(২.৫৯)

১৩. সেতু বিভাগ

৮,৪৩০

৬,৫৫৮

৯,২৮৯

৫,২৯৭

৫,২৯৯

২,০৬৭

৭৮৫

(২.১১)

(২.০৭)

(২.৭৩)

(২.২২)

(২.৫৪)

(১.০৯)

(০.৪৫)

১৪. অন্যান্য

৩,৪১৯

২,৭৪৬

২,৬০৩

১,৮১৫

১,০৩৬

১,০৬৯

৭৯৭

(০.৮৫)

(০.৮৭)

(০.৭৬)

(০.৭৬)

(০.৫০)

(০.৫৭)

(০.৪৫)

উপ-মোট

৪৭,৫৫৮

৩৩,৩৬৩

৩৪,৭৫২

২২,০২৮

১৭,৮৮৮

১৩,১৫৮

১১,৫০৭

(১১.৮৮)

(১০.৫২)

(১০.২০)

(৯.২৪)

(৮.৫৬)

(৬.৯৬)

(৬.৫৫)

১৫. অন্যান্য সেক্টর

৬,২৫৫

৬,৬৯৮

৫,২৫৮

৪,৮২৭

৩,৬১৯

৩,৩৩৮

৩,৩৫৪

(১.৫৬)

(২.১১)

(১.৫৪)

(২.০২)

(১.৭৩)

(১.৭৭)

(১.৯১)

গ) সাধারণ সেবা

৯৬,১৮৯

৭২,৪৭৮

৮৩,৫০৮

৪৮,৮২৬

৩৯,২৭০

৩৮,৩১৩

২৮,৭৭৮

(২৪.০৩)

(২২.৮৫)

(২৪.৫২)

(২০.৪৮)

(১৮.৮০)

(২০.২৬)

(১৬.৩৮)

জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা

২২,৮৫১

২০,৭২৬

২১,০৬২

১৬,৪৫৩

১৩,১৬১

১১,৭৬১

৯,৬৫৫

(৫.৭১)

(৬.৫৩)

(৬.১৮)

(৬.৯০)

(৬.৩০)

(৬.২২)

(৫.৫০)

১৬. অন্যান্য

৭৩,৩৩৮

৫১,৭৫২

৬২,৪৪৬

৩২,৩৭৩

২৬,১০৯

২৬,৫৫২

১৯,১২৩

(১৮.৩২)

(১৬.৩২)

(১৮.৩৩)

(১৩.৫৮)

(১২.৫০)

(১৪.০৪)

(১০.৮৯)

মোট

৩,৪০,৫৫০

২,৬৪,৭১৭

২,৮১,১৬৫

২,০১,৩৫৩

১,৬০,২৯৪

১,৪৭,৫৫০

১,৩০,৭২৭

(৮৫.১০)

(৮৩.৫০)

(৮২.৫০)

(৮৪.৪০)

(৭৬.৭০)

(৭৮.০০)

(৭৪.৪০)

ঘ) সুদ পরিশোধ

৪১,৪৫৭

৩৫,৩৫৮

৩৯,৯৫১

৩৩,১১৪

৩০,৯৭৩

২৮,০০০

২৪,১৬৪

(১০.৩৬)

(১১.১৫)

(১১.৭৩)

(১৩.৮৯)

(১৪.৮৩)

(১৪.৮১)

(১৩.৭৬)

ঙ) পিপিপি, ভর্তুকি ও দায়

৭,৫০৯

৫,৮৫৯

৭,৫০৯

৩,৬১৪

৪,১৩২

৩,৩৬৭

২,৪২৭

(১.৮৮)

(১.৮৫)

(২.২০)

(১.৫২)

(১.৯৮)

(১.৭৮)

(১.৩৮)

চ) নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয়

১০,৭৫২

১১,২৩৯

১১,৯৮০

৩৫৫

১৩,৪৬৭

১০,১৯৪

১৮,৩২৯

(২.৬৮)

(৩.৫৪)

(৩.৫২)

(০.১৫)

(৬.৪৫)

(৫.৩৯)

(১০.৪৪)

মোট বাজেট

৪,০০,২৬৬

৩,১৭,১৭৪

৩,৪০,৬০৫

২,৩৮,৪৩৩

২,০৮,৮৬৮

১,৮৯,০৯৮

১,৭৫,৬৪২

বন্ধনিতে মোট বাজেটের শতকরা হার দেখানো হয়েছে; উৎস: অর্থ বিভাগ।

সারণি ৬: মন্ত্রণালয়/বিভাগওয়ারি বাজেট বরাদ্দ

(কোটি টাকায়)

মন্ত্রণালয়/বিভাগ

বাজেট
২০১৭-১৮

সংশোধিত
২০১৬-১৭

বাজেট
২০১৬-১৭

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়

২২

১৯

২০

জাতীয় সংসদ

৩১৫

২৯৫

২৯৫

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

১,৪৫৭

১,২৭১

১,৩২২

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

৯৫

৮২

৯৭

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়

১,০৭১

৮০১

১,২৯১

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

২,০৪৬

১,৯৬৬

২,০৭৪

সরকারি কর্ম কমিশন

৭৪

৪৯

৪৭

অর্থ বিভাগ

৯০,৬৭২

৬৫,০৯৮

৮৪,১৩৫

অর্থ বিভাগ -মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়

১৯৬

১৮৮

২৩২

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ

২,২০৬

২,০৮৭

২,৩০১

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ

২,৫৪১

২,১০৯

২,৫২৯

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ

২,১৮১

২,০৯৬

১,৯৩৩

পরিকল্পনা বিভাগ

১,৩৩২

১,৭১৬

১,৪১১

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ

১০০

২৫৫

১৬২

পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ

৫১৮

৪৪৮

৫০০

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

৬১২

৫৫৩

৫৫২

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

১,১৮৯

১,০৬৩

১,০৮৭

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

২৫,৭৪০

২৩,১৯৬

২২,১১৫

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ

৩০

৩১

২৯

আইন ও বিচার বিভাগ

১,৪২৩

১,৪২৬

১,৫২০

জননিরাপত্তা বিভাগ- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

১৮,২৮৮

১৬,৭৮১

১৯,২৮২

সুরক্ষা সেবা বিভাগ- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

২,৮৮৩

২,২৪৯

লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ

২২

২৬

২৩

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়

২২,০২১

১৭,৭৯৬

২২,১৬০

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ

২৩,১৪৭

২১,৭০৮

২৬,৮৫৫

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ

৫,২৭১

৪,৭৫৬

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

১১,০৩৮

৪,২১৪

২,০৭০

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ

১৬,২০৩

১৪,৮৫৭

১৭,৫১৬

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যান বিভাগ

৪,৪৭৬

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ

৩,৯৭৪

১,৮১৯

১,৮৩৫

সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়

৪,৮৩২

৪,১৪০

৪,২৭৩

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়

২,৫৭৬

২,১৭৩

২,১৫১

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়

২৬২

২৯০

৩০৭

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

৩,৭৩৬

৫,১৭৭

৩,১২৩

তথ্য মন্ত্রণালয়

১,১৪৬

৮৩৩

৮৩৯

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়

৪১৭

৩৬৬

৪২১

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

৬৫৯

৬০৬

৫২৪

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

১,৩৮৭

৯৫৯

৯২২

স্থানীয় সরকার বিভাগ

২৪,৬৭৪

২২,২৫৩

২১,৩২৬

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ

১,৮৮৪

১,৬২৩

১,৩৭৭

শিল্প মন্ত্রণালয়

১,৮২৫

৮২০

১,৭১৩

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়

৮৯৫

৯৬৩

৬৮৫

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ

২,২২৪

১,১১১

১,৯৭৩

কৃষি মন্ত্রণালয়

১৩,৬০৪

১০,৩৭৮

১৩,৬৭৮

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়

১,৯২৯

১,৬৬১

১,৮০২

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়

১,১১৯

১,৮৫০

১,০৩৩

ভূমি মন্ত্রণালয়

১,৮৫৩

১,৩৯০

১,৪৮৬

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়

৫,৯২৬

৪,৭৫৬

৪,৭১৩

খাদ্য মন্ত্রণালয়

৪,২৪২

৩,৫০৩

১,৮৪৯

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়

৮,৮৫৩

৮,৯৪৭

৮,০০৫

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ

১৯,৬৯৭

১২,০৭৮

১০,৯১১

রেলপথ মন্ত্রণালয়

১৬,০৩২

১১,৯৯৭

১১,৯৭৫

নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়

২,৭৩২

২,২৩০

২,০৫৫

বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়

৬৮৭

৫১৬

৫৪৯

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ

২,৫২১

২,৯০২

২,৫১২

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

১,১৫০

৯৭১

৮৩৯

বিদ্যুৎ বিভাগ

১৮,৮৯৪

১৩,৪৫০

১৩,০৬৩

সুপ্রীম কোর্ট

১৬৫

১৬৮

১৫৫

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

৩,৯৮৬

২,৯৮৩

৩,০১২

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়

৬৮৮

৪৮১

৫৬০

দুর্নীতি দমন কমিশন

১০১

৮৬

৯১

সেতু বিভাগ

৮,৪৩০

৬,৫৫৮

৯,২৮৯

সর্বমোট:

৪,০০,২৬৬

৩,১৭,১৭৪

৩,৪০,৬০৫

উৎস: অর্থ বিভাগ।

সারণি ৭: আর্থ-সামাজিক খাতে অগ্রগতির চিত্র

বছর

প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল (বছর)

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার (%)

দরিদ্র জনসংখ্যা (%)

অতিদরিদ্র জনসংখ্যা (%)

সাক্ষরতার হার (৭+বৎসর)

(%)

এক (১) বৎসরের নীচে শিশু মৃত্যুহার

(প্রতি হাজার জীবিত জন্মে)

২০০৭

৬৬.৬

১.৪৭

৩৬.৮

২২.৬

৫৬.১

৪৩.০

২০০৮

৬৬.৮

১.৪৫

৩৫.১

২০.৯৮

৫৫.৮

৪১.০

২০০৯

৬৭.২

১.৩৬

৩৩.৪

১৯.৩

৫৬.৭

৩৯.০

২০১০

৬৭.৭

১.৩৬

৩১.৫

১৭.৬

৫৬.৮

৩৬.০

২০১১

৬৯.০

১.৩৭

২৯.৯

১৬.৫

৫৫.৮

৩৫.০

২০১২

৬৯.৪

১.৩৬

২৮.৫

১৫.৪

৫৮.৮

৩৩.০

২০১৩

৭০.৪

১.৩৭

২৭.২

১৪.৬

৫৭.২

৩১.০

২০১৪

৭০.৭

১.৩৭

২৬.০

১৩.৮

৫৮.৬

৩০.০

২০১৫

৭০.৭

১.৩৭

২৪.৮

১২.৯

৬৩.৬

২৯.০

২০১৬

৭১.৬*

১.৩৬

২৩.২*

১২.১

৭১.০

২৮.০

উৎস: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ * সাময়িক এবং পরিবর্তনযোগ্য

সারণি ৮: রাজস্ব খাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

(কোটি টাকায়)

অর্থবছর

রাজস্ব আয়

এনবিআর

নন-এনবিআর

এনটিআর

মোট ব্যয়

এডিপি

২০০৬-০৭

৪৮,৫৪১

৩৬,১৭৭

১,৮৫৪

১০,৫১০

৬৪,০৫০

১৮,০৪২

(৮.৮)

(৬.৬)

(০.৩)

(১.৯)

(১১.৭)

(৩.৩)

২০০৭-০৮

৫৯,৪৬৯

৪৫,৮১৯

২,৩১৩

১১,৩৩৭

৯০,৬৯৬

১৮,৫৪৭

(৯.৫)

(৭.৩)

(০.৪)

(১.৮)

(১৪.৩)

(৩.০)

২০০৮-০৯

৬৪,৫৬৮

৫০,২১৬

২,৬৫৩

১১,৬৯৯

৮৯,৩১৬

১৯,৪৩৮

(৯.২)

(৭.১)

(০.৪)

(১.৭)

(১২.৭)

(২.৮)

২০০৯-১০

৭৫,৯০৫

৫৯,৭৪২

২,৭৪৩

১৩,৪২০

১,০১,৫২১

২৫,৫৫৩

(৯.৫)

(৭.৫)

(০.৩)

(১.৭)

(১২.৭)

(৩.২)

২০১০-১১

৯২,৯৯৩

৭৬,২২৫

৩,৩২৩

১৩,৪৪৫

১,২৮,২৮৪

৩৩,২৮৩

(১০.২)

(৮.৩)

(০.৪)

(১.৫)

(১৪.০)

(৩.৬)

২০১১-১২

১,১৪,৬৭৫

৯১৫,৯৫

৩,৬৩৩

১৯,৪৪৭

১,৫২,৪৫৩

৩৭,৫৩৩

(১০.৯)

(৮.৭)

(০.৩)

(১.৮)

(১৪.৫)

(৩.৬)

২০১২-১৩

১,২৮,৮৪৯

১,০৩,৩৩২

৪,১২১

২১,৩৯৬

১,৭৫,৬৪৪

৪৯,৪৭৩

(১০.৮)

(৮.৬)

(০.৩)

(১.৮)

(১৪.৭)

(৪.১)

২০১৩-১৪

১,৪১,০৮৩

১,১১,৪২৩

৪,৬০৯

২৫,০৫১

১,৮৯,০৭৭

৫৫,১৩৪

(১০.৫)

(৮.৩)

(০.৩)

(১.৯)

(১৪.১)

(৪.১)

২০১৪-১৫

১,৪৫,৯৬৬

১,২৩,৯৭৭

৪,৮২১

১৭,১৬৮

২,০৪,৩৮৩

৬০,৩৭৭

(৯.৬)

(৮.২)

(০.৩)

(১.১)

(১৩.৫)

(৪.০)

২০১৫-১৬

১,৭১,৫১২

১,৪৬,২২০

৫,৬৪৪

১৯,৬৪৮

২,৩০,৭১৮

৬৯,৪০৯

(১০.০)

(৮.৪)

(০.৩)

(১.১)

(১৩.৩)

(৪.০)

২০১৬-১৭ মূ.

২,৪২,৭৫২

২,০৩, ১৫২

৭,২৫০

৩২,৩৫০

৩,৪০,৬০৫

১,১০,৭০০

(১২.৪)

(১০.৪)

(০.৪)

(১.৬)

(১৭.৪)

(৫.৬)

২০১৬-১৭ সং

২,১৮,৫০০

১,৮৫,০০০

৭,২৬১

২৬,২৩৯

৩,১৭,১৭৪

১,১০,৭০০

(১১.২)

(৯.৪)

(০.৪)

(১.৪)

(১৬.২)

(৫.৭)

উৎস: অর্থ বিভাগ, বন্ধনিতে জিডিপি’র শতাংশ; মূ: মূল বাজেট; সং: সংশোধিত বাজেট।

সারণি ৯: বহিঃখাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

অর্থবছর

রপ্তানি

(বি.মা.ড.)

আমদানি

(বি.মা.ড.)

প্রবাস আয়

(বি.মা.ড.)

রিজার্ভ

(বি.মা.ড.)

চলতি হিসাবের ভারসাম্য

(জিডিপি’র শতাংশ)

বিনিময় হার

(টাকা/ ডলার)

২০০৬-০৭

১২.২

১৭.২

৬.০

৫.১

১.২

৬৯.১

২০০৭-০৮

১৪.১

২১.৬

৭.৯

৬.১

০.৮

৬৮.৬

২০০৮-০৯

১৫.৬

২২.৫

৯.৭

৭.৫

২.৪

৬৮.৮

২০০৯-১০

১৬.২

২৩.৭

১১.০

১০.৭

৩.২

৬৯.২

২০১০-১১

২২.৯

৩৩.৭

১১.৭

১০.৯

-১.৩

৭১.২

২০১১-১২

২৪.৩

৩৫.৫

১২.৮

১০.৪

-০.৩

৮১.৯

২০১২-১৩

২৭.০

৩৪.১

১৪.৫

১৫.৩

২.০

৭৭.৮

২০১৩-১৪

৩০.২

৪০.৭

১৪.২

২১.৫

১.০

৭৭.৭

২০১৪-১৫

৩১.২

৪০.৬

১৫.৩

২৫.০

১.৫

৭৭.৭

২০১৫-১৬

৩৪.৪

৪২.৯

১৪.৯

৩০.১

১.৭

৭৮.৩

২০১৬-১৭

২৮.৭

৩৫.০

১০.৩

৩২.১

-০.৫৬

৮০.৫

উৎস: বাংলাদেশ ব্যাংক; এপ্রিল পর্যন্ত, মার্চ পর্যন্ত, মে পর্যন্ত।

সারণি ১০: আর্থিকখাতের কতিপয় সূচকের অগ্রগতি

অর্থবছর

ব্যাংকের শাখা

আর্থিক খাতের গভীরতা (এম২/ জিডিপি)

(%)

ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ ‍
(প্রবৃদ্ধি, %)

ব্যক্তিখাতে ঋণ বিতরণ

(হাজার কোটি টাকা)

কৃষি ঋণ বিতরণ

(হাজার

কোটি টাকা)

শিল্প ঋণ বিতরণ

(হাজার কোটি টাকা)

ঋণের সুদ

(ভাড়িত গড়,%)

সুদের হার ব্যবধান

(%)

২০০৬-০৭

৬,৫৯৬

৩৮.৫

১৭.১

১৫২.২

৫.৩

১২.৪

১২.৭৮

৫.৯৩

২০০৭-০৮

৬,৭৪৭

৩৯.৬

১৭.৬

১৯০.১

৮.৬

২০.২

১২.২৯

৫.৩৪

২০০৮-০৯

৬,৯৩৬

৪২.১

১৯.২

২১৭.৯

৯.৩

২০.০

১১.৮৭

৪.৮৬

২০০৯-১০

৭,২৪৬

৪৫.৫

২২.৪

২৭০.৮

১১.১

২৫.০

১১.৩১

৫.৩০

২০১০-১১

৭,৭১২

৪৮.১

২১.৩

৩৪০.৭

১২.২

৩২.২

১২.৪২

৫.১৫

২০১১-১২

৮,০৫৯

৪৯.০

১৭.৪

৪০৭.৯

১৩.২

৩৫.৩

১৩.৭৫

৫.৬০

২০১২-১৩

৮,৪২৭

৫০.৩

১৬.৭

৪৫২.২

১৪.৭

৪২.৫

১৩.৬৭

৫.১৩

২০১৩-১৪

৮,৭৯৪

৫২.১

১৬.১

৫০৭.৬

১৬.০

৪২.৩

১৩.১০

৫.৩১

২০১৪-১৫

৯,১৩১

৫২.০

১২.৪

৫৭৪.৬

১৬.০

৫৯.৮

১১.৬৭

৪.৮৭

২০১৫-১৬

৯,৩৯৭

৫২.৮

১৬.৩

৬৭১.০

১৭.৬

৬৫.৫

১০.৩৯

৪.৮৫

২০১৬-১৭

৯,৬৮০

৪৯.৩

১৩.১

৭৩৮.৬

১৭.২

৩২.৬

৯.৭

৪.৬৯

উৎস: বাংলাদেশ ব্যাংক; মার্চ পর্যন্ত, এপ্রিল পর্যন্ত , ডিসেম্বর পর্যন্ত।

পরিশিষ্ট-খ

সারণিসমূহের তালিকা

সারণি

শিরোনাম

পৃষ্ঠা

কৃষি খাত

 

ক)

কৃষি খাতের কতিপয় পণ্যের শুল্ক হ্রাস/বৃদ্ধি সংক্রান্ত

১২৫

খ)

কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার্য যে সকল উপকরণের শুল্ক রেয়াত প্রদান করা হয়েছে

১২৫

২ ক)

সিরামিক শিল্প খাতের যে সকল পণ্য/উপকরণের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে

১২৬

খ)

ব্যাটারি শিল্প খাতের যে সকল পণ্য/উপকরণের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে

১২৬

গ)

সোলার প্যানেল খাতের যে সকল পণ্য/উপকরণের শুল্ক হ্রাস/বৃদ্ধি করা হয়েছে

১২৬

পরিবহন খাত: ক) মোটর সাইকেল খাত; খ) হাইব্রিড গাড়ি

১২৬

তথ্য ও প্রযুক্তি খাত:

 

ক)

কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাব উৎপাদন/ সংযোজনে ব্যবহৃত কাঁচামাল/যন্ত্রাংশে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা

১২৭-১২৮

খ)

সেলুলার ফোন উৎপাদন/সংযোজনে ব্যবহৃত কাঁচামাল/যন্ত্রাংশে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা

১২৯-১৩০

জ্বালানি খাত

১৩০

ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ

 

ক)

যে সকল পণ্যের আমদানি শুল্ক (CD) হ্রাস করা হয়েছে

১৩১-১৩২

খ)

যে সকল পণ্যের আমদানি শুল্ক (CD) বৃদ্ধি করা হয়েছে

১৩২-১৩৫

গ)

যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক (SD) হ্রাস/বৃদ্ধি/আরোপ করা হয়েছে

১৩৫-১৩৮

ঘ)

২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কযোগ্য পণ্যের মধ্যে রেগুলেটরি ডিউটি (RD) অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্যের তালিকা যা ১ জুলাই, ২০১৭ হতে কার্যকর

১৩৯

ঙ)

২৫ শতাংশের কম আমদানি শুল্ক বিশিষ্ট পণ্যে বিভিন্ন হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপযোগ্য (০১ জুন ২০১৭ থেকে কার্যকর)

১৪০-১৪১

চ)

যে সকল পণ্যের সুনির্দিষ্ট আমদানি শুল্ক পরিবর্তন করে Advalorem করা হয়েছে

১৪২

ছ)

যে সকল পণ্যের মূলধনী যন্ত্রপাতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে

১৪৩

জ)

যে সকল H.S. Code এর বর্ণনা পরিবর্তন/সংশোধন করা হয়েছে

১৪৪-১৪৬

ঝ)

যে সকল H.S. Code একীভূত (Merge) করা হয়েছে

১৪৬

ঞ)

যে সকল H.S. Code বিভাজন (Split) করা হয়েছে

১৪৭

ট)

যে সকল H.S. Code বাতিল করা হয়েছে

১৪৮

ঠ)

যে সকল H.S. Code নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে

১৪৮

Customs Act, ১৯৬৯ এর সংশোধন

১৫০

সারণি-১

কৃষি খাত

ক) কৃষি খাতের কতিপয় পণ্যের শুল্ক হ্রাস/বৃদ্ধি সংক্রান্ত

Sl. No.

Description of goods

Existing Rate

Proposed Rate

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

Soya beans meals

CD-10%

CD-0%, RD-10%

2.

Manioc (cassava) starch

CD-5%

CD-15%

3.

Other starches

CD-5%

CD-15%

4.

Other soya beans meals

CD-5%

CD-10%

5.

Oil-cake and solid residues

CD-0%

Cd-5%

6.

Oil-cake of cotton seeds

CD-0%

CD-5%

7.

Oil-cake of linseed 

CD-0%

CD-5%

8.

Oil-cake of sunflower seeds

CD-0%

CD-5%

9.

Oil-cake of coconut or copra

CD-0%

CD-5%

10.

Oil-cake of palm nuts or kernels

CD-0%

CD-5%

11.

Shading net

CD-25%

CD-10%

খ) কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার্য যে সকল উপকরণের শুল্ক রেয়াত প্রদান করা হয়েছে

Heading No.

H.S. Code

Description of goods

(1)

(2)

(3)

40.09

4009.12.00

Tubes, pipes and hoses with fitttings

 

4009.42.00

Tubes, pipes and hoses with fitting

40.10

4010.32.00

Endless transmission belts

73.01

7301.10.00

Perforated sheet

73.18

7318.15.90

Screw and bolts

 

7318.16.00

Nuts

 

7318.21.00

Spring washers and lock washers

73.20

7320.20.00

Helical springs

84.08

8408.90.90

Diesel engine for use in agriculture

84.09

8409.99.10

Spare parts of diesel engine for use in agriculture

84.32

8432.90.00

Spindle

84.33

8433.11.00

Cutting device

84.83

8483.40.00

Gear and gearing

 

8483.50.00

Elywheels and pulleys

 

8483.90.00

Chain sprocket

84.84

8484.10.00

Gasket

84.87

8487.90.00

Machinery parts

87.08

8708.30.00

Brakes & servo brakes and parts thereof

 

8708.93.00

Clutches & parts of agricultural machine

90.26

9026.80.00

Temperature gauge

90.31

9031.80.00

Moisture meter.’’।

সারণি-২

ক)    সিরামিক শিল্প: সিরামিক শিল্প খাতের যে সকল পণ্য/উপকরণের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে

Sl. No.

Description of goods

Existing Rate

(CD %)

Proposed Rate

(CD %)

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

Talc

10

5

2.

Alumina liner

15

10

3.

Crude mica and mica rifted into sheets or splittings

10

5

খ) ব্যাটারি শিল্প: ব্যাটারি শিল্প খাতের যে সকল পণ্য/উপকরণের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে

Sl. No.

Description of goods

Existing Rate

(CD %)

Proposed Rate

(CD %)

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

Zinc callots

10

5

2.

Antimony and articles thereof, including waste and scrap.

10

5

3.

Arsenic

10

5

গ) সোলার প্যানেল: সোলার প্যানেল খাতের যে সকল পণ্য/উপকরণের শুল্ক হ্রাস/বৃদ্ধি করা হয়েছে

Sl. No.

Description of goods

Existing Rate

(CD %)

Proposed Rate

(CD %)

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

Photovoltaic cells

0

0

2.

Solar modules or panels

0

10

সারণি-৩

পরিবহন খাত

ক) মোটর সাইকেল খাত: মোটর সাইকেলের স্থানীয় উৎপাদনকে উৎসাহ প্রদানের জন্য মোটর সাইকেল শিল্পে অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের অনুসৃত পদ্ধতি পর্যালোচনাপূর্বক মোটরসাইকেলের স্থানীয় উৎপাদক এবং পার্টস উৎপাদনে নিয়োজিত ভেন্ডরদের জন্য মোটরসাইকেল উৎপাদনের কাঁচামাল/যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিশেষ সুবিধা প্রদানপূর্বক প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়েছে।

খ)  হাইব্রিড গাড়ি: পরিবেশ দুষণ ও জ্বালানি ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য হাইব্রিড গাড়ি আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। (পরিশিষ্ট ‘খ’ এর সারণি-৬ দ্রষ্টব্য)

সারণি-৪

তথ্য ও প্রযুক্তি খাত

তথ্য প্রযুক্তি খাতে দেশিয় বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদানের জন্য এ খাতে ব্যবহার্য তৈরি পণ্য ও সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি এবং কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব ও সেলুলার ফোন উৎপাদনে/সংযোজনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।

ক) কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও ট্যাব উৎপাদন/সংযোজনে ব্যবহৃত কাঁচামাল/যন্ত্রাংশে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা

Sl. No.

H.S. Code

Description of goods

Existing Rate (%)

Proposed S.R.O Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

3209.90.90

Color paints or varnishes

25

1

2.

3214.90.00

Silica Gel

25

1

3.

3402.90.90

Thermal irresponsive Glue

25

1

4.

3506.99.00

Thermal Pest; Processor Thermal Pest

15

1

5.

3812.20.00

Plastic/ Rubber Additives (Controller);

5

1

6.

3903.30.90

Acrylonitrile Butadiene Styrene (ABS) Resin

5

1

7.

3907.40.90

Polycarbonate (PC) Resin

5

1

8.

3919.10.90

Adhesive Type Foam; Adhesive Type Thermal Tape; Double Side Adhesive Tape

25

1

9.

3919.90.99

Tape Mylar

25

1

10.

3926.90.99

Sponge for Case

25

1

11.

3926.90.99

A-cover; B-cover; C-cover; D-cover; Back Cover; Side Cover –Left; Side Cover –Right [For Computer Monitor, Laptop Monitor, Tab, Keyboard and Mouse]

25

1

12.

4016.99.90

Stand Rubber; Thermal Pad

25

1

13.

5603.11.90

Conductive Fabric

25

1

14.

7019.32.90

Glass fiber

25

1

15.

7020.00.90

Glass Cover Sheet for Monitor

25

1

16.

7226.99.90

Processed Plain Metal-Alloy Sheet For Mobile Housing; Decoration Steel sheet For making Computer Body Casing

10

1

17.

7318.15.90

Screw

25

1

18.

7318.22.00

Washer

25

1

19.

7326.19.00

Protector Steel

25

1

20.

7607.20.99

Bottom Case Aluminium Foil

5

1

21.

8471.70.00

Internal Hard Disk Drive (HDD); Internal Solid State Drive (SSD); Random Access Memory (RAM); Embedded Multimedia Card (EMMC)

5

1

22.

8473.30.00

Keypad; Bottom Case

5

1

23.

8473.30.00

Fan Module; Jointing Roller; RAM Module; Memory Module; Camera Module; CCD LENS module; CPU Heat Sink Module ; Liquid Crystal Module; HDD Board Module; Panel Mirrors

5

1

24.

8473.30.00

Solid Static Devices (SSD) Slot; Sim Slot; T-card Slot; Earphone Port; Connecting ports/slots; HDD caddy; Stand Silver; Internal Optical Device Drive (ODD)

5

1

25.

8473.30.00

CPU Chips; Tuner; Graphics Card; Loaded Printed Circuit Board (PCB)

5

1

26.

8473.30.00

Antenna; Antenna WLAN Combo; Receiver; Mic; Keypad Dome; Receiver; Vibrator

5

1

27.

8473.30.00

LCD hinge; Hinge Ring; Steel Frame Hinge; Gears; Battery Cell; Battery Board;

5

1

28.

8473.30.00

CPU supporter Base; CPU Support Bracket Single Edge Contact Cartridge (SECC); Lid PWR SW Board; VGA Support Single Edge Contact Cartridge (SECC); Battery Charge Input Pin; Charging Pin; Input-Output (I/O) Port

5

1

29.

8504.31.00

Transformer

10

1

30.

8506.50.00

Battery 3V

25

1

31.

8507.60.00

Lithium Ion Battery

25

1

32.

8518.29.00

Speaker

25

1

33.

8529.90.90

Touch Panel; Touch Pad

5

1

34.

8532.29.00

Capacitor

10

1

35.

8533.29.00

Resistor

10

1

36.

8534.00.00

Unloaded Printed Circuit Board (PCB)

10

1

37.

8535.21.10

Circuit Breakers

10

1

38.

8536.69.00

2 pin Connector Plug; Connectors; Sockets

25

1

39.

8541.10.00

Diode

5

1

40.

8541.29.00

Transistor

5

1

41.

8541.60.00

Crystal Oscillator

5

1

42.

8542.39.90

Integrated Circuit

10

1

43.

8544.19.90

Power Switch Board; Flexible Flat Cable Motherboard to Audio Board; Flexible Flat Cable for Power Board To Mother Board; Flexible Flat cable Mother Board to Audio Board; Ribbon cables; Low Voltage serial (LVS) Cable; Power Cord; Speaker cable; USB Cable; Wire Cable for CCD D-MIC; Wire Cable For Lid

25

1

44.

8544.42.00

Cable Fitted with Connector

25

1

45.

8546.90.00

Heat Sink

10

1

46.

9001.90.90

LCM Protective lens; Camera Protective Lens

10

1

47.

9006.69.00

LED/ Flash Light

10

1

48.

9013.90.10

Open Cell (Display Panel); Polarizing Film; Optical Film; Light Guide Plate; Reflector; Wave Guide

5

1

49.

9013.90.10

Diffuser (Back light controller)

5

1

50.

9405.40.90

Backlight

25

1

খ) সেলুলার ফোন উৎপাদন/সংযোজনে ব্যবহৃত কাঁচামাল/যন্ত্রাংশে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা

Sl. No.

H.S. Code

Description of goods

Existing Rate (%)

Proposed S.R.O Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

2825.90.00

Lithium Cobalt Oxide

10

1

2.

2904.20.00

N-Methyl-2-Pyrrolidone (NMP)

10

1

3.

3206.11.00

PC Light Blue Masterbatch EP-48060

5

1

4.

3209.90.90

Color Paint or Varnishes

25

1

5.

3214.90.00

Silica Gel

25

1

6.

3801.10.00

Conductive Carbon black; Meso Carbon Micro Beads (MCMB)

10

1

7.

3812.20.00

Plastic/Rubber Additives

5

1

8.

3824.99.90

1M Lithium HexaFlouride Phosphate (LiPF6) EC:DMC:DEC: 2:1:2 vol% (prepared binders)

10

1

9.

3903.30.90

Acrylonitrile-Butadiene-Styrene (ABS) Copolymers

5

1

10.

3904.90.00

PVDF (Poly Vinylidene Fluoride)

5

1

11.

3907.40.90

Polycarbonates

5

1

12.

3912.31.00

CMC (Carboxymethyl cellulose)

5

1

13.

3919.10.90

Adhesive Type Foam; Adhesive Tape (Polypropylene 32 um)

25

1

14.

3919.90.99

Tape Mylar

25

1

15.

4002.19.00

Styrene-Butadiene Rubber (SBR)

5

1

16.

4002.99.00

Plastic (thermoplastic) 92um

5

1

17.

4802.69.00

Optically Clear Adhesive (OCA) Paper

25

1

18.

5603.11.90

Conductive Fabric

25

1

19.

7019.32.90

Glass Fiber

25

1

20.

7226.99.90

Processed Plain Metal-Alloy Sheet For Mobile Housing; Decoration Steel Sheet For making Mobile Body Casing

10

1

21.

7318.15.90

Screw

25

1

22.

7410.11.00

Copper foil 9um

10

1

23.

7607.11.90

Aluminium foil 15um

15

1

24.

8504.31.00

Transformer

10

1

25.

8517.70.00

Aluminium cover 320 um; Separator (Nickel tape/ Aluminium Tape) 15um; Backlight Panel

10

1

26.

8517.70.00

Vibrator; Motor; Touch Panel; Touch Panel Glass for mobile phone; Liquid Crystal Module; Camera Module; Input-Output (I/O) Port; Internal Earphone; Microphone; Antena; Receiver;

10

1

27.

8518.29.00

Speaker

25

1

28.

8523.29.12

Software With CD

5

1

29.

8532.29.00

Capacitor

10

1

30.

8533.29.00

Resistor

10

1

31.

8534.00.00

Unloaded Printed Circuit Board

10

1

32.

8536.90.90

2 Pin Connector Plug; Connector

25

1

33.

8541.10.00

Diode

5

1

34.

8541.29.00

Transistor

5

1

35.

8541.40.90

Light Emiting Diodes (LED)

5

1

36.

8542.39.90

 Ball Grid Array Integrated Circuit (BGA IC); Display Driver IC

10

1

37.

8544.19.90

Flexible Printed Cable (FPC), USB Cable; OTG Cable

25

1

38.

8544.42.00

Cable Fitted With Connector

25

1

39.

8546.90.00

Heat Sink

10

1

40.

9001.90.90

LCM Protective lens; Camera Protective Lens

10

1

41.

9013.90.10

Diffuser (Back light controller)

5

1

42.

3926.90.99

Back cover; Front Cover; Side cover

25

10

43.

4811.41.90

Screw Void Paper Sticker & IMEI Label Paper Sticker

25

10

44.

8507.60.00

Lithium Battery

25

10

সারণি-৫

জ্বালানি খাত

এলপিজি বোটলিং প্ল্যান্ট স্থাপনে মুলধনী যন্ত্রপাতির রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এলপিজি বোটল আমদানিতে আমদানি শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। সিএনজি এর পাশাপাশি এলপিজি ও এলএনজি কে ট্যারিফ বর্ণনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Sl. No.

Description of goods

Existing Rate

(CD %)

Proposed Rate

(CD %)

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

LP gas cylinder capacity below 5000 litres

10

5

সারণি-৬

ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ

ক) যে সকল পণ্যের আমদানি শুল্ক (CD) হ্রাস করা হয়েছে

Sl. No.

H.S. Code

Description

Existing Rate (%)

Proposed Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

0904.11.90

গোলমরিচ

25

5

2.

0906.11.90

দারুচিনি

25

5

3.

0908.31.90

এলাচ

25

5

4.

0909.31.90

জিরা

25

5

5.

1208.10.00

Soya beans meals

10

0

6.

2516.20.00

Sandstone

10

5

7.

2526.20.10

Talc

10

5

8.

2804.80.00

Arsenic

10

5

9.

2811.22.00

Silicon dioxide

10

5

10.

2823.00.00

Titanium oxides.

10

5

11.

2844.40.10

Radioactive isotopes

5

0

12.

2853.10.00

Cyanogen chloride (chlorcyan)

10

5

13.

2853.90.00

Other

10

5

14.

2902.30.00

Toluene

10

5

15.

2915.31.00

Ethyl acetate

10

5

16.

3505.20.00

Glues

15

5

17.

3505.10.00

Dextrin and other modified starches

15

5

18.

3824.60.00

Sorbitol other than that of sub-heading 2905.44

10

5

19.

3506.10.00

Products suitable for use as glues or adhesives

15

5

20.

3506.99.00

Other

15

5

21.

3707.10.00

Sensitising emulsions

15

5

22.

3916.20.00

Of polymers of vinyl chloride

5,10

5

23.

3926.40.00

Plastic beads

25

5

24.

4420.10.00

Wooden beads

10

5

25.

7018.10.00

Glass beads

25

5

26.

40.01

(All H.S. Code)

Natural rubber, balata, gutta-percha, guayule chicle etc.

10

5

27.

4007.00.00

Vulcanised rubber thread and cord.        

10

5

28.

4010.34.00

Conveyor of transmission belts or belting, of vulcanised rubber

25

5

29.

4016.99.90

Rubber guard rear

25

5

30.

5403.32.00

Viscose rayon, with a twist exceeding 120 turns per metre

10

5

31.

6805.10.00

On a base of woven textile fabric only

25

10

32.

6805.20.00

On a base of paper or paperboard only

25

10

33.

6903.10.90

 Other

15

10

34.

6903.20.30

Alumina liner

15

10

35.

6903.20.90

Other

15

10

36.

6903.90.90

Other

15

10

37.

72.18

(All H.S. Code)

Stainless steel in ingots or other primary forms

5

0

38.

7202.11.00

Ferro-manganese

5

0

39.

7202.21.00

Ferro-selicon

5

0

40.

7202.30.00

Ferro-silico-manganese

5

0

41.

7407.10.00

Refined copper bar, rods and profiles

25

5

42.

7615.10.90

Parts of table, kitchen or other articles of alluminium

25

15

43.

7901.11.10

Zinc callots

10

5

44.

81.10

(All H.S. Code)

Antimony and articles thereof, including waste and scrap.

10

5

45.

8504.90.30

Parts of static converter

25

10

46.

2525.10.00

Crude mica and mica rifted into sheets or splittings

10

5

47.

7311.00.20

LP gas cylinder capacity below 5000 litres

10

5

খ) যে সকল পণ্যের আমদানি শুল্ক (CD) বৃদ্ধি করা হয়েছে

Sl. No.

H.S. Code

Description

Existing Rate (%)

Proposed Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

0904.21.90

Other dried or neither crushed or ground

5

10

2.

1108.14.00

Manioc (cassava) starch

5

15

3.

1108.19.00

Other starches

5

15

4.

1208.90.00

Other soya beans meals

5

10

5.

1211.90.19

Other plants and parts of plants

5

10

6.

1401.10.00

Bamboos

0

5

7.

1805.00.00

Cocoa powder, not containing added sugar

10

25

8.

1806.10.00

Cocoa powder, containing added sugar

10

25

9.

1901.90.20

Dry mixed ingredients of food preparations in bulk

15

25

10.

2305.00.00

Oil-cake and solid residues

0

5

11.

2306.10.00

Of cotton seeds

0

5

12.

2306.20.00

Of linseed               

0

5

13.

2306.30.00

Of sunflower seeds

0

5

14.

2306.49.00

Other

0

5

15.

2306.50.00

Of coconut or copra

0

5

16.

2306.60.00

Of palm nuts or kernels

0

5

17.

2306.90.00

Other

0

5

18.

2309.90.90

Poultry feed finished

5

10

19.

2514.00.00

Slate, whether or not roughly trimmed or merely cut

10

25

20.

2922.41.00

Lysine and its esters

0

5

21.

3701.30.10

Unexposed photosensitive plates

1

5

22.

4811.59.10

Aseptic pack

5

10

23.

4823.40.00

Rolls, sheets and dials, printed for self recording apparatus

5

10

24.

4901.99.90

Other books

0

5

25.

6803.00.00

Worked slate and articles of slate or of agglomerated slate.

10

25

26.

6804.21.00

Of agglomerated synthetic or natural diamond

1

5

27.

6804.22.00

Of other agglomerated abrasives or of ceramics

1

5

28.

6804.23.00

Of natural stone

1

5

29.

6805.30.00

On a base of other materials

1

10

30.

6902.90.00

Other

1

10

31.

7419.99.20

Cloth, grill, and netting of copper wire

1

10

32.

7419.99.90

Other articles of copper.

10

25

33.

7604.10.00

Bars, rods and profiles of aluminium, not alloyed

10

15

34.

7604.21.00

Hollow profiles of aluminium alloys

10

15

35.

7604.29.00

Other bars, rods and profiles of aluminium

10

15

36.

7616.99.00

Other

10

25

37.

8507.20.10

Sealed lead acid battery (capacity 85 amp or less)

15

25

38.

8517.12.10

Cellular telephone set

5

10

39.

8517.61.00

Base stations

5

10

40.

8517.62.10

Transmitting and receiving apparatus

5

10

41.

8517.62.20

Telephonic or telegraphic switching apparatus

5

10

42.

8517.62.30

Modem; Ethernet interface card; network switch; hub; router

5

10

43.

8517.62.40

Grandmaster clock; modulator; multiplexer

5

10

44.

8522.90.10

For apparatus of Heading 85.19

10

25

45.

8523.29.11

Recorded magnatic media

5

10

46.

8523.29.12

Database software

2

25

47.

8523.29.13

Other computer software

5

10

48.

8523.29.90

Other

5

10

49.

8523.41.00

Optical media: unrecorded

5

10

50.

8523.49.10

Recorded magnatic media

5

10

51.

8523.49.21

Database software

2

25

52.

8523.49.29

Other computer software

5

10

53.

8523.51.10

Flash memory card

5

10

54.

8523.59.10

Proximity Cards and tags

5

10

55.

8523.59.90

Other

5

10

56.

8534.00.00

Printed circuits.

10

5

57.

8538.90.10

Parts of electrical goods

10

25

58.

8538.90.90

Other

10

25

59.

8541.40.20

Solar modules or panels

0

10

60.

8701.20.00

Road tractors for semi-trailers

1, 5

5

61.

8716.80.00

Other vehicles

1

5

62.

9028.30.20

Pre-payment KWH meter

10

15

63.

2942.00.90

Other organic compounds.

0

5

64.

75.05

(All H.S. Code)

Nickel bar, rods, profiles and wire.

25

15

65.

75.06

(All H.S. Code)

Nickel plates, sheets, strip and foil.

25

15

66.

7508.10.00

Cloth, grill and netting

10

15

67.

7508.90.90

Other articles of nickel.

10

15

68.

8101.96.00

Tungsten wire

5

10

69.

8523.29.11

Recorded magnatic media

5

15

70.

8523.29.13

Other computer software

5

15

71.

8523.29.90

Other

5

15

72.

8523.41.00

Unrecorded Optical media

5

15

73.

8523.49.10

Recorded magnatic media

5

15

74.

8523.49.29

Other computer software

5

15

75.

8523.51.10

Flash memory card

5

15

76.

8523.59.10

Proximity Cards and tags

5

15

77.

8523.59.90

Other

10

15

78.

8525.50.90

Transmission apparatus

5

10

79.

8525.60.90

Other Transmission apparatus

5

10

80.

9018.39.19

Infusion set and related articles

5

10

81.

9021.29.00

Artificial teeth & dental fittings

0

5

82.

9021.31.00

Artificial joints

0

5

83.

3701.30.10

Printing plate

1

5

84.

4016.93.00

4016.94.00

4016.99.10

Articles and accessories of rubber

1

5

85.

4415.20.10

Wooden packing materials

1

5

86.

4417.00.00

Wood and articles of wood

1

5

87.

5607.49.10

Twine, cordage, rope and cables

1

5

88.

5608.11.10

Fishing net for fishing trawler

1

5

89.

5609.00.10

Twine, cordage, rope and cables

1

5

90.

6804.21.00 6804.22.00

6804.23.00

Article of stone, cement, mica etc.

1

5

91.

6805.30.00

Abrasive powder or grain

1

10

92.

6901.00.90

Ceramic product

1

5

93.

6902.90.00

Ceramic product

1

10

94.

6909.19.10

6909.19.90

6909.90.00

Ceramic jar and similar products

1

5

95.

7315.11.90

7315.12.00

Other chain

1

10

96.

74.12

(All H.S. Code)

Pipe fittings of copper

1

5

97.

7415.29.00

7415.33.90

7415.39.00

Screw, nut, bolt, etc.

1

5

15

15

98.

7419.99.20

Copper articles

1

10

99.

75.07

(All H.S. Code)

Tubes, pipes and fittings

 

1

15

100.

76.08

(All H.S. Code)

Aluminium tubes and pipes

1

10

101.

7609.00.00

Aluminium fittings

1

10

102.

8104.90.10

Tubes and pipes of Magnesium

1

10

103.

8508.60.10

Vacuum cleaner

1

5

104.

8543.90.00

Parts

1

5

105.

8547.90.00

Insulator

1

25

গ) যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক (SD) হ্রাস/বৃদ্ধি/আরোপ করা হয়েছে

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

*(ক) গোল মরিচ, দারূচিনি, এলাচ, জিরা ইত্যাদি পণ্যের আমদানি শুল্ক ২৫% হতে হ্রাস করে ৫% করা হয়েছে। উক্ত আমদানি শুল্ক হ্রাস করার ফলে যে পরিমাণ শুল্ক হ্রাস পেয়েছে তা সমন্বয় করার লক্ষ্যে উক্ত পণ্যের সম্পূরক শুল্ক ২০% এর স্থলে ৫০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

(খ) এছাড়া সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর ফলে যে সকল পণ্যের উপর ১০% সম্পূরক শুল্ক ছিল তা প্রত্যাহার হবে, একইসাথে ২০% ও ৩০% সম্পূরক শুল্ক সমন্বিত আকারে ২৫% এবং ৪৫% ও ৬০% সম্পূরক শুল্ক সমন্বিত আকারে ৫০% হবে।

Sl. No.

H.S. Code

Description of goods

Existing Rate(%)

Proposed Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

0904.11.90

গোলমরিচ*

২০

৫০

2.

0906.11.90

দারুচিনি*

২০

৫০

3.

0908.31.90

এলাচ*

২০

৫০

4.

0909.31.90

জিরা*

২০

৫০

5.

2106.90.60

ফুড সাপ্লিমেন্ট

২৫

6.

2521.00.90

Lime stone

২৫

7.

2807.00.00

সালফিউরিক এসিড

২০

২৫

8.

33.04

(All H.S. Code)

সৌন্দর্য অথবা প্রসাধন সামগ্রী এবং ত্বক পরিচর্যার সামগ্রী

৪৫

৫০

9.

33.05

(All H.S. Code)

কেশ পরিচর্যায় ব্যবহৃত সামগ্রী

৬০

৫০

10.

33.06

(All H.S. Code)

Preparations for oral or dental hygiene, including denture fixative paste

২০

২৫

11.

33.07

(All H.S. Code)

শেভে ব্যবহার্য সামগ্রী; শরীরের দুর্গন্ধ দুরীকরণে ব্যবহৃত সামগ্রী এবং অন্যান্য সুগন্ধি, প্রসাধনী

২০

২৫

12.

34.01

(All H.S. Code)

সাবান এবং সাবান হিসাবে ব্যবহৃত সারফেস একটিভ সামগ্রী এবং সমজাতীয় পণ্য

২০

২৫

13.

3824.99.40

Bottle/Refil used in Electronic Nicotine Delivery System (ENDS)

১০০

14.

3926.40.00

Plastic beads

৩০

২৫

15.

4420.10.00

Wooden beads

২৫

16.

6803.00.00

Worked slate and articles of slate

৫০

17.

7006.00.00

Edge-worked glass

২৫

18.

7018.10.00

Glass beads

২৫

19.

7320.10.00

Leaf-springs and leaves therefore

২০

20.

7323.99.90

Table/kitchenware of stainless steel

২০

২৫

21.

8415.90.91

Parts of air conditioner

৬০

২৫

22.

8543.70.50

Electronic Nicotine Delivery System (ENDS)

১০০

23.

হেডিং ৮৭.০৩ (সংশ্লিষ্ট এইচ, এস,কোড)

মোটর গাড়ী এবং অন্যান্য মোটরযান, স্টেশন ওয়াগনসহ:

 

 

24.

 

১) ইঞ্জিনসহ অটো রিক্সা/ থ্রি হুইলার

২০

২৫

25.

 

২) সম্পূর্ণ তৈরি চার স্ট্রোক বিশিষ্ট সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা/থ্রি হুইলার

২০

২৫

26.

 

৩) ইলেক্ট্রিক ব্যাটারী চালিত মোটর গাড়ি

২০

২৫

27.

 

৪) সম্পূর্ণ তৈরি মোটর গাড়ী ও অন্যান্য মোটরযান, স্টেশন ওয়াগনসহ (হাইব্রিড মোটরযান, এ্যাম্বুলেন্স এবং ইলেক্ট্রিক ব্যাটারী চালিত মোটর গাড়ি ব্যতিত

 

 

28.

 

ক) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত

৪৫

৪৫

29.

 

খ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত (মাইক্রোবাস ব্যতীত)

১০০

১০০

30.

 

গ) (i) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি হইতে ২৭৫০ সিসি পর্যন্ত

২০০

 

২০০

গ) (ii) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২৭৫০-৩০০০

৩৫০

31.

 

ঘ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি হইতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত

৩৫০

৩৫০

32.

 

ঙ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর ঊর্ধ্বে

৫০০

৫০০

33.

 

চ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস

৪৫

৪৫

34.

 

ছ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস

৬০

৬০

35.

 

৫) বিযুক্ত (সিকেডি) মোটর গাড়ী, মোটর যান, স্টেশন ওয়াগন ও জীপ গাড়ীসহ

 

 

36.

 

ক) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত

৩০

২৫

37.

 

খ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত

৩০

৬০

38.

 

গ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি হইতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০

১৫০

39.

 

ঘ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি হইতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০

৩০০

40.

 

ঙ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর ঊর্ধ্বে

৬০

৩৫০

41.

হেডিং ৮৭.০৩ (সংশ্লিষ্ট এইচ, এস,কোড)

সম্পূর্ণতৈরি হাইব্রিড মোটর গাড়ী ও অন্যান্য মোটরযান, স্টেশন ওয়াগনসহ

 

 

42.

 

ক) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত

৩০

২৫

43.

 

খ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০

৪৫

44.

 

গ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি হইতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত

১৫০

৬০

45.

 

ঘ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি হইতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত

৩০০

১০০

46.

 

ঙ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর ঊর্ধ্বে

৫০০

৩০০

47.

 

চ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস

৪৫

২৫

48.

 

ছ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস

৬০

৪৫

49.

 

জ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি বা তদুর্দ্ধ মাইক্রোবাস

সিসি ভিত্তিক অন্যান্য মোটর গাড়ির সমতুল্য

৬০

50.

হেডিং ৮৭.০৪

সম্পূর্ণ তৈরি ন্যুনতম চার দরজা বিশিষ্ট ডবল কেবিন পিক-আপ

 

 

51.

8704.21.12

8704.31.12

সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত

৪৫

৪৫

52.

8704.21.13

8704.31.13

সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০

৬০

53.

8704.21.14

8704.31.14

সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি হইতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০,৩৫০

১০০

54.

8704.21.15

8704.31.15

সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি হইতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত

৩৫০

৩৫০

55.

8704.21.16

8704.31.16

সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর ঊর্ধ্বে

৫০০

৫০০

56.

হেডিং ৮৭.০৬ (সংশ্লিষ্ট এইচ, এস,কোড)

Chassis fitted with engines, for the motor vehicles of headings 87.03:

 

 

57.

 

১) দুই স্ট্রোক বিশিষ্ট অটো রিক্সা/ থ্রি হুইলারের ইঞ্জিনযুক্ত চেসিস

২০

২৫

58.

 

২) চার স্ট্রোক বিশিষ্ট অটো রিক্সা/ থ্রি হুইলারের ইঞ্জিনযুক্ত চেসিস

২০

২৫

59.

 

৩) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস

২৫

60.

 

৪) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৮০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত মাইক্রোবাস

৫০

61.

 

৫) অন্যান্য মোটর গাড়ী, মোটর যান, স্টেশন ওয়াগন ও জীপ গাড়ীসহ

 

 

62.

 

ক) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত

২৫

63.

 

খ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০

64.

 

গ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি হইতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত

১৫০

65.

 

ঘ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি হইতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত

৩০০

66.

 

ঙ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর ঊর্ধ্বে

৩৫০

67.

হেডিং ৮৭.০৬ (সংশ্লিষ্ট এইচ, এস,কোড)

Chassis fitted with engines, for the double cabin pick-up of headings 87.04 :

 

 

68.

 

ক) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০০ সিসি পর্যন্ত

২৫

69.

 

খ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ১৬০১ সিসি হইতে ২০০০ সিসি পর্যন্ত

৪৫

70.

 

গ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ২০০১ সিসি হইতে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত

৬০

71.

 

ঘ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৩০০১ সিসি হইতে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত

২০০

72.

 

ঙ) সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি ৪০০০ সিসি এর ঊর্ধ্বে

৩০০

73.

8707.10.00

Bodies for the vehicles of heading 87.03

৫০

74.

8711.10.11

8711.10.91

8711.20.11

8711.20.91

Motorcycles, in CBU with four-stroke engine

৬০

৬০

75.

8711.10.21

8711.10.92

8711.20.21

8711.20.92

Motorcycles, in CKD with four-stroke engine

৪৫

৪৫

ঘ) ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কযোগ্য পণ্যের মধ্যে রেগুলেটরি ডিউটি (RD) অব্যাহতি প্রাপ্ত পণ্যের তালিকা যা, (১ জুলাই, ২০১৭ হতে কার্যকর):

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: (অ) আমদানি পণ্যের শুল্ক হার সুষমকরণের লক্ষ্যে কতিপয় পণ্যে সর্বোচ্চ (২৫%) আমদানি শুল্ক না থাকা সত্ত্বেও নিম্নবর্ণিত পণ্যসমুহে বিভিন্ন হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। (আ) এছাড়া Chassis fitted with engine এর সাথে একইরুপ পণ্যের CBU অবস্থার মধ্যে শুল্ক হারের ব্যবধান ৪০% করার লক্ষ্যে এ জাতীয় কতিপয় পণ্যের শুল্ক হার সুষমকরণের জন্য রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে।]

Sl. No.

H.S. Code

Description of goods

(1)

(2)

(3)

1.

1513.29.00

Palm kernel or babassu oil and fractions thereof (excl. crude)

2.

1901.90.91

Malt extract; food preparations imported in bulk by VAT registered food processing industries

3.

3919.90.20

Perfomance Tape/Closure/Side Tape

4.

4010.31.00

Endless transmission belts of trapezoidal crosssection (Vbelts), Vribbed, of an outside circumference exceeding 60 cm but not exceeding 180 cm

5.

4010.32.00

Endless transmission belts of trapezoidal crosssection (Vbelts), other than Vribbed, of an outside circumference exceeding 60 cm but not exceeding 180 cm

6.

4010.33.00

Endless transmission belts of trapezoidel crosssection (Vbelts), Vribbed, of an outside circumference exceeding 180 cm but not exceeding 240 cm

7.

4010.34.00

Endless transmission belts of trapezoidel crosssection (Vbelts), other than Vribbed, of an outside circumference exceeding 180 cm but not exceeding 240 cm

8.

4803.00.00

Tissue in jumbo roll

9.

4823.90.94

Air laid paper imported by VAT registered sanitary napkin manufacturers

10.

5603.12.10

Textile back sheet/Non oven air through Bonded (ADL)

11.

7213.91.20

Wire rod imported by VAT registered bicycle parts/ components manufacturers

12.

7318.15.90

Other screws and bolts, whether or not with their nuts or washers

13.

7318.16.00

Nuts

14.

7610.90.10

Aluminium composite panel

15.

8516.79.10

Vaporizer heating machine

16.

8523.21.00

Cards incorporating a magnetic stripe

17.

9602.00.10

Gelatin capsules (empty)

ঙ) ২৫ শতাংশের কম আমদানি শুল্ক বিশিষ্ট পণ্যে বিভিন্ন হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপযোগ্য (০১ জুন ২০১৭ থেকে কার্যকর)

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: (অ) আমদানি পণ্যের শুল্ক হার সুষমকরণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ (২৫%) আমদানি শুল্ক না থাকা সত্ত্বেও নিম্নবর্ণিত পণ্যসমূহে বিভিন্ন হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। (আ) এছাড়া Chassis fitted with engine এর সাথে একইরূপ পণ্যে CBU অবস্থার মধ্যে শুল্ক হারের ব্যবধান ৪০% করার লক্ষ্যে এ জাতীয় কতিপয় পণ্যে শুল্ক হার সুষমকরণের জন্য রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে। ]

Sl. No.

H.S. Code

Description of goods

RD Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

1208.90.00

Other flours and meals of oil seeds or oleaginous fruits

10

2.

2516.20.00

Sandstone

20

3.

2516.90.10

Boulder stone

15

4.

2620.99.10

Fly ash

10

5.

2807.00.00

Sulphuric acid; oleum

15

6.

3006.50.00

First-aid boxes and kits

10

7.

3505.10.00

Dextrin and other modified starches

15

8.

3505.20.00

Glues

15

9.

3506.10.00

Products for use as glues or adhesives

15

10.

3506.99.00

Other Adhesives based on polymers

15

11.

3707.10.00

Sensitising emulsions

10

12.

3824.60.00

Sorbitol

15

13.

3926.40.00

Statuettes and other ornamental articles

20

14.

Heading 40.01

(All H.S Code)

Natural rubber, balata, gutta-percha

10

15.

4010.34.00

Conveyor of transmission belts

20

16.

4016.99.90

Rubber guard rear

20

17.

4420.10.00

Statuettes and other ornaments, of wood

20

18.

7018.10.00

Glass beads

20

19.

Heading 72.01

(All H.S Code)

Pig iron

5

20.

7202.11.00

Ferro manganese

15

21.

7202.21.00

Ferro silicon

15

22.

7202.30.00

Ferro-silico-manganese

15

23.

Heading 72.03

(All H.S Code)

Spong iron

5

24.

Heading 72.04

(All H.S Code)

Ferrous waste & scrap

5

25.

Heading 72.06

(All H.S Code)

Iron ingot

20

26.

Heading 72.07

(All H.S Code)

Billet

20

27.

Heading 72.18

(All H.S Code)

SS Ingot

20

28.

Heading 72.24

(All H.S Code)

Alloy steel ingot

20

29.

7407.10.00

Copper bars, rods and profiles

15

30.

8703.24.32

8703.24.42

8703.33.52

8703.33.62

Motor cars and other vehicles, including station wagons, CKD

30

31.

8706.00.36

Chassis fitted with engines of headings 87.03 of a cylinder capacity exceeding 1600cc but not exceeding 2000cc

15

32.

8706.00.37

Chassis fitted with engines of headings 87.03 of a cylinder capacity exceeding 2000cc but not exceeding 3000cc

15

33.

8706.00.38

Chassis fitted with engines of headings 87.03 of a cylinder capacity exceeding 3000cc but not exceeding 4000cc

10

34.

8706.00.39

Chassis fitted with engines of headings 87.03 of a cylinder capacity exceeding 4000cc

35

35.

8908.00.00

Scrap vessels

5

চ) যে সকল পণ্যের সুনির্দিষ্ট আমদানি শুল্ক পরিবর্তন করে Advalorem করা হয়েছে:

Sl. No.

H.S. Code

Description

Existing Duty

Proposed Duty

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

72.01

(All H.S. Code)

Pig iron

 

Sp.Duty- Tk.1000/Mt

CD-0%, RD-5%,VAT-15%

2.

72.03

(All H.S. Code)

Spong iron

Sp.Duty- Tk.1000/ MT

CD-0%, RD-5%,VAT-15%

3.

72.04

(All H.S. Code)

Scrap

 

Sp.Duty- Tk.1500/MT

CD-0%, RD-5%,VAT-15%

4.

8908.00.00

Vessels and other floating structures for breaking up.

SP Duty-Tk 1500/MT

CD-0%, RD-5%,VAT-15%

5.

7206.10.00

 

Ingots

Sp.Duty- Tk.7000/MT

CD-0%,RD-20%,VAT-15%

6.

7206.90.00

Other

Sp.Duty- Tk.7000/MT

CD-0%,RD-20%,VAT-15%

ছ) যে সকল পণ্যের মূলধনী যন্ত্রপাতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে:

Sl. No.

H.S. Code

Description

Existing Rate (%)

Proposed Rate (%)

(1)

(2)

(3)

(4)

(5)

1.

3701.30.10

Unexposed photosensitive plates

1

5

2.

6804.21.00

Of agglomerated synthetic or natural diamond

1

5

3.

6804.22.00

Of other agglomerated abrasives or of ceramics

1

5

4.

6804.23.00

Of natural stone

1

5

5.

6805.30.00

On a base of other materials

1

10

6.

6902.90.00

Other

1

10

7.

7419.99.20

Cloth, grill, and netting of copper wire

1

10

8.

8716.80.00

Other vehicles

1

5

9.

3701.30.10

Printing plate

1

5

10.

4016.93.00

4016.94.00

4016.99.10

Articles and accessories of rubber

1

5

11.

4415.20.10

Wooden packing materials

1

5

12.

4417.00.00

Wood and articles of wood

1

5

13.

5607.49.10

Twine, cordage, rope and cables

1

5

14.

5608.11.10

Fishing net for fishing trawler

1

5

15.

5609.00.10

Twine, cordage, rope and cables

1

5

16.

6804.21.00 6804.22.00

6804.23.00

Article of stone, cement, mica etc.

1

5

17.

6805.30.00

Abrasive powder or grain

1

10

18.

6901.00.90

Ceramic product

1

5

19.

6902.90.00

Ceramic product

1

10

20.

6909.19.10

6909.19.90

6909.90.00

Ceramic jar and similar products

1

5

21.

7315.11.90

7315.12.00

Other chain

1

10

22.

74.12

(All H.S. Code)

Pipe fittings of copper

1

5

23.

7415.29.00

7415.33.90

7415.39.00

Screw, nut, bolt, etc.

1

5

15

15

24.

7419.99.20

Copper articles

1

10

25.

75.07

(All H.S. Code)

Tubes, pipes and fittings

 

1

15

26.

76.08

(All H.S. Code)

Aluminium tubes and pipes

1

10

27.

7609.00.00

Aluminium fittings

1

10

28.

8104.90.10

Tubes and pipes of Magnesium

1

10

29.

8508.60.10

Vacuum cleaner

1

5

30.

8543.90.00

Parts

1

5

31.

8547.90.00

Insulator

1

25

জ) যে সকল H.S. Code এর বর্ণনা পরিবর্তন/সংশোধন করা হয়েছে:

Sl. No.

H.S. Code

Existing Description

Changed Description

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

1901.90.20

Dry mixed ingredients of food preparations imported in bulk

Dry mixed ingredients of food preparations in bulk imported by VAT registered food processing industries

2.

2106.90.50

Coffee mate in bulk imported by VAT registered milk foodstuffs manufacturers

Creamer in bulk imported by VAT registered milk foodstuffs manufacturers

3.

3215.90.20

Ink for ball point pen

Ink for ball point pen imported by VAT registered ball point pen manufacturering industries

4.

3806.10.10

Gum rosin imported by VAT registered paint or ink manufacturing industry

Gum rosin imported by VAT registered paint or ink or tyre tube manufacturing industry

5.

3919.90.91

Re-seal tape imported by VAT registered sanitary napkin manufacturers

Re-seal/Self adhesive tape imported by VAT registered sanitary napkin or electrical, electronics and home appliances manufacturers

6.

4813.10.10

Imported by VAT registered manufacturing industries

Imported by VAT registered tobacco products manufacturing industries

7.

4813.20.10

Imported by VAT registered manufacturing industries

Imported by VAT registered tobacco products manufacturing industries

8.

4813.90.10

Imported by VAT registered manufacturing industries

Imported by VAT registered tobacco products manufacturing industries

9.

6903.20.30

Alumina liner imported by VAT registered ceramic products manufacturing industries

Alumina liner imported by VAT registered ceramic or steel products manufacturing industries

10.

7411.10.10

Imported by VAT registered compressor manufacturing industry

Imported by VAT registered air conditioner or compressor manufacturing industry

11.

7419.99.10

Machinery parts; Cloth, grill, and netting of copper wire; expended metal of copper

Machinery parts

12.

7901.20.10

Imported by VAT registered alloy steel manufacturers

Imported by VAT registered alloy steel or refrigerator manufacturers

13.

8407.34.10

Bus or Truck engine with inbuilt CNG mechanism cylinder capacity exceeding 1,000 cc

Bus or Truck engine with inbuilt CNG/LPG/LNG mechanism cylinder capacity exceeding 1,000 cc

14.

8408.20.31

Bus or Truck engine with inbuilt CNG mechanism Engines of 2600 cc or more

Bus or Truck engine with inbuilt CNG/LPG/LNG mechanism Engines of 2600 cc or more

15.

8415.81.20

Air handling unit & HVAC system imported by VAT registered pharmaceutical industries requiring more than 2,00,000 BTU or equivalent

Air handling unit or HVAC system imported by VAT registered pharmaceutical industries requiring more than 2,00,000 BTU or equivalent

16.

8415.82.20

Air handling unit & HVAC system imported by VAT registered pharmaceutical industries requiring more than 2,00,000 BTU or equivalent

Air handling unit or HVAC system imported by VAT registered pharmaceutical industries requiring more than 2,00,000 BTU or equivalent

17.

8504.90.10

Transformer parts

Tap changer

18.

8504.90.30

Tap changer

Parts of static converter

19.

8507.20.10

Sealed: for use in UPS (capacity 85 amp or less)

Sealed (capacity 85 amp or less) imported by VAT registered UPS manufacturing industries

20.

8517.62.30

Modem; Ethernet interface card; computer network switch, hub and router

Modem; Ethernet interface card; network switch; hub; router

21.

8522.90.10

For apparatus of Heading 85.19 and 85.20

For apparatus of Heading 85.19

22.

8523.29.12

Database, operating systems, development tools

Operating systems; development tools

23.

8523.49.21

Database, operating systems, development tools

Operating systems; development tools

24.

8541.40.10

Photovoltaic cells, whether or not assembled in modules or made up into panels

Photovoltaic cells

25.

8702.90.11

Built-up, Double Decker bus using CNG as fuel

Built-up, Double Decker bus using CNG/LPG/LNG as fuel

26.

8702.90.11

Using CNG as fuel

Using CNG/LPG/LNG as fuel

27.

8702.90.21

Built-up, having a seating capacity of 40 or more excluding folding seats using CNG as fuel

Built-up, having a seating capacity of 40 or more excluding folding seats using CNG/LPG/LNG as fuel

28.

8702.90.21

Using CNG as fuel

Using CNG/LPG/LNG as fuel

29.

8702.90.51

CKD motor vehicles Having a seating capacity of 40 or more excluding folding seats using CNG as fuel

CKD motor vehicles Having a seating capacity of 40 or more excluding folding seats using CNG/LPG/LNG as fuel

30.

8702.90.51

Having a seating capacity of 40 or more excluding folding seats using CNG as fuel

Having a seating capacity of 40 or more excluding folding seats using CNG/LPG/LNG as fuel

31.

8704.90.11

CNG operated Refrigeration van & insulated road milk tanker in CBU

CNG/LPG/LNG operated Refrigeration van & insulated road milk tanker in CBU

32.

8704.90.12

CNG operated Trucks (excl. multi axle trucks) in CBU, g.v.w. exceeding 5 tonnes

CNG/LPG/LNG operated Trucks (excl. multi axle trucks) in CBU, g.v.w. exceeding 5 tonnes

33.

8704.90.13

CNG operated dumper/tipper in CBU

CNG/LPG/LNG operated dumper/tipper in CBU

34.

8704.90.21

CNG operated Trucks (excl. multi axle trucks) in CKD, g.v.w. exceeding 5 tonnes

CNG/LPG/LNG operated Trucks (excl. multi axle trucks) in CKD, g.v.w. exceeding 5 tonnes

35.

9018.90.20

Kidney dialysis machine/Baby incubator

Hemo dialysis machine/Baby incubator/Baby warmer

36.

9018.90.30

Angiographic Catheter wire, Guidy Catheter wire, Sheath, Balloons, Stents,

Angiographic catheter, guide catheter, guide wire, introducer sheath, PTCA dilatation chatherter, balloons, stents

 

 

Plasma, LCD, TFT, LED and similar technologis TV:

37.

9801.00.52

30 inch to 36 inch

30 inch to 36 inch (measured diagonally)

38.

9801.00.53

37 inch to 42 inch

37 inch to 42 inch (measured diagonally)

39.

9801.00.54

43 inch to 46 inch

43 inch to 46 inch (measured diagonally)

40.

9801.00.55

47 inch to 52 inch

47 inch to 52 inch (measured diagonally)

41.

9801.00.56

53 inch to 65 inch

53 inch to 65 inch (measured diagonally)

42.

9801.00.59

66 inch to above

66 inch to above (measured diagonally)

ঝ) যে সকল H.S. Code একীভূত (Merge) করা হয়েছে:

Sl. No.

Existing H.S. Code

Merged

H.S. Code

Description

1.

3402.13.10

3402.13.00

Non-ionic Organic surface-active agents

3402.13.90

2.

3916.20.10

3916.20.00

Cyclanic, cyclenic or cycloterpenic monocarboxylic acids, their anhydrides, halides, peroxides. peroxyacids and their derivatives

3916.20.90

3.

7419.91.10

7419.91.00

Cast, moulded, stamped or forged, but not further worked

7419.91.90

4.

8701.20.10

87001.20.00

Road tractors for semi-trailers

8701.20.20

5.

8711.90.10

8711.90.00

Other

8711.90.90

ঞ) যে সকল H.S. Code বিভাজন (Split) করা হয়েছে:

Sl. No.

Existing H.S. Code

Splited

H.S. Code

Description

(1)

(2)

(3)

(4)

1.

2309.90.10

2309.90.11

Vitamin or mineral or amino acid or combination of both (feed grade)

2309.90.12

Vitamin premix or mineral or amino acid premix or combination of both (feed grade)

2309.90.13

Probiotics or Prebiotics or combination of both (feed grade)

2309.90.14

Essential oil or combination of essential oils (feed grade)

2309.90.19

Other

2.

2521.00.00

2521.00.10

Imported by VAT registered lime or cement or calcium carbonate manufacturers

2521.00.90

Other

3.

2836.50.00

2836.50.10

Imported by VAT registered calcium carbonate filler manufacturers

2836.50.90

Other

4.

3814.00.00

3814.00.10

Organic composite solvent imported by VAT registered ink manufacturing industries

3814.00.90

Other

5.

3919.10.00

3919.10.10

Imported by VAT registered SIM card or Smart card manufacturing industry

3919.10.90

Other

6.

4811.51.00

4811.51.10

Imported by VAT registered paper cup, bowl, plate manufacturers

4811.51.90

Other

7.

6005.90.00

6005.90.10

Shading net imported by agricultural or horticultural products manufacturers

6005.90.90

Other

8.

7323.99.00

7323.99.10

Parts of table, kitchen or other household articles imported by VAT registered table, kitchen or other household articles manufacturers

7323.99.90

Other

9.

7409.21.10

7409.21.10

Imported by VAT registered manufacturers

7409.21.90

Other

10.

7409.31.00

7409.31.10

Imported by VAT registered manufacturers

7409.31.90

Other

11.

7606.11.00

7606.11.10

Imported by VAT registered electric fan manufacturers

7606.11.90

Other

12.

7615.10.00

7615.10.10

Table, kitchen or other household articles of alluminium; pot scourers and scouring or polishing pads, gloves and the like

7615.10.90

Parts of table, kitchen or other household articles of alluminium

13.

8529.90.40

8529.90.41

Imported by VAT registered TV manufacturing industry

8529.90.49

Other

ট) যে সকল H.S. Code বাতিল করা হয়েছে:

Sl. No.

New

H.S. Code

Description

(1)

(2)

(3)

1.

3926.90.71

PVC screen having internal diameter from 4” to 8”; Mulch and structures thereof used in agriculture and horticulture

2.

3926.90.72

Teflon tape/PTFE tape

3.

3926.90.80

Cot and Apron

4.

8701.20.10

Road tractor CBU

5.

8701.20.20

Road tractor CKD

 

 

Hybrid motor cars and other hybrid vehicles, including station wagons and racing cars in CBU

6.

8703.90.31

Of a cylinder capacity not exceeding 1500 cc

7.

8703.90.32

Of a cylinder capacity exceeding 1500 cc but not exceeding 2000 cc

8.

8703.90.33

Of a cylinder capacity exceeding 2000 cc but not exceeding 2750 cc

9.

8703.90.34

Of a cylinder capacity exceeding 2750 cc but not exceeding 4000 cc

10.

8703.90.39

Of a cylinder capacity exceeding 4000 cc

 

 

Hybrid microbus in CBU

11.

8703.90.41

Of a cylinder capacity not exceeding 1800 cc

12.

8703.90.49

Of a cylinder capacity exceeding 1800 cc but not exceeding 2000 cc

13.

8703.90.50

Electric battery operated motor car

ঠ) যে সকল H.S. Code নতুন সৃষ্টি করা হয়েছে:

Sl. No.

New

H.S. Code

Description

(1)

(2)

(3)

1.

0802.90.12

Betelnuts semi-processed betelnuts packed in 60-80 kg bag

2.

2106.90.60

Food supplement

3.

3824.99.40

Refil used in Electronic Nicotine Delivery System (ENDS)

4.

3926.90.40

Mulch imported by agricultural or horticultural products manufacturers

5.

3926.90.50

Taflon tape/PTFE tape

6.

3926.90.60

Cot and Apron

7.

7419.99.20

Cloth, grill, and netting of copper wire; expanded metal of copper

8.

8541.40.20

Solar modules or panels

9.

8543.70.50

Electronic Nicotine Delivery System (ENDS)

10.

8701.20.00

Road tractors for semi-trailers

11.

8701.91.10

Tractor used for agricultural purpose

12.

8701.91.90

Other

13.

8701.92.10

Tractor used for agricultural purpose

14.

8701.92.90

Other

15.

8701.93.10

Tractor used for agricultural purpose

16.

8701.93.90

Other

17.

8701.94.10

Tractor used for agricultural purpose

18.

8701.94.90

Other

19.

8701.95.10

Tractor used for agricultural purpose

20.

8701.95.90

Other

21.

8703.90.19

Other

 

 

Chassis fitted with engines, for the motor vehicles of headings 87.03

22.

8706.00.33

For microbus of a cylinder capacity not exceeding 1800cc

23.

8706.00.34

For microbus of a cylinder capacity exceeding 1800cc but not exceeding 2000 cc

24.

8706.00.35

For other vehicles including microbus of a cylinder capacity not exceeding 1600cc

25.

8706.00.36

For other vehicles including microbus of a cylinder capacity exceeding 1600cc but not exceeding 2000cc

26.

8706.00.37

For other vehicles including microbus of a cylinder capacity exceeding 2000cc but not exceeding 3000cc

27.

8706.00.38

For other vehicles including microbus including microbus of a cylinder capacity exceeding 3000cc but not exceeding 4000cc

28.

8706.00.39

For other vehicles including microbusof a cylinder capacity exceeding 4000cc

 

 

Chassis fitted with engines, for the motor vehicles of headings 87.04

29.

8706.00.44

Chassis fitted with engines, for double cabin pickup of headings 87.04 of a cylinder capacity not exceeding 1600cc

30.

8706.00.45

Chassis fitted with engines, for double cabin pickup of headings 87.04 of a cylinder capacity exceeding 1600cc but not exceeding 2000cc

31.

8706.00.46

Chassis fitted with engines, for double cabin pickup of headings 87.04 of a cylinder capacity exceeding 2000cc but not exceeding 3000cc

32.

8706.00.47

Chassis fitted with engines, for double cabin pickup of headings 87.04 of a cylinder capacity exceeding 3000cc but not exceeding 4000cc

33.

8706.00.48

Chassis fitted with engines, for double cabin pickup of headings 87.04 of a cylinder capacity exceeding 4000cc

সারণি-৭

Customs Act, 1969 এর সংশোধন

       উন্নত দেশে অনুসৃত উত্তম চর্চাকে বাংলাদেশে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে Customs Act, 1969 এ section 83E ও 215B অন্তর্ভুক্ত এবং কাস্টমস কার্যক্রম সহজীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান section 196 ও 196A তে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে।