বিদ্যুতে রেন্টালে রাশ আগামী বছর থেকেই: অর্থমন্ত্রী

বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল) বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের যে প্রক্রিয়া চালু হয়েছিল, আগামী বছর তা থেকে ফেরা শুরু করতে চায় সরকার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2017, 09:59 AM
Updated : 1 June 2017, 10:02 AM

বৃহস্পতিবার ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীলতা, আগামী ২০১৮ সালে যখন বিদ্যুৎ সরবরাহে একটি স্বস্তির অবস্থান সৃষ্টি হবে, তখন থেকেই হ্রাসকরণের কার্যক্রম শুরু হবে।”

বিতর্ক ও বড় লোকসানের মধ্যেই বেসরকারি খাতের ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিয়ে এগিয়ে চলেছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে রেন্টালের দিকে ঝোঁকে সরকার। দেশের মোট উৎপাদনের ২০ শতাংশ রেন্টাল থেকে এলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় অর্ধেক অর্থ সরকারকে গুনতে হচ্ছে তা কিনতে।

রেন্টাল চালু রাখার মধ্যেই বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে মনোযোগী হয় সরকার, যার মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ আমদানিও করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে রেন্টালে নির্ভরতা কমানোর কথা বললেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট বক্তৃতায় মুহিত নির্মাণাধীন ১১ হাজার ২১৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত ১১ হাজার ১২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানান।

তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ আগামী ২০২১ সালের আগেই বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশা করছি।”

রামপাল, মাতারবাড়ি, পটুয়াখালীর পায়রায় এবং বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানান মুহিত।

এছাড়া মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের আর্থিক সহায়তায় মহেশখালীতে চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

গ্যাসভিত্তিক পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ ও মেরামতের পাশাপাশি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথাও তিনি বলেন।

বাজেট উপস্থাপনে আবুল মাল আবদুল মুহিত

উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপনের উপরও জোর দেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন এবং প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।”

সিস্টেম লস কমানো, লোড ম্যানেজমেন্ট এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে আরও ২ কোটি প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানান মুহিত।

মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতির কথা জানিয়ে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহের আশাও দেন মুহিত।

বাংলাদেশে বিনিয়োগে চলমান খরার জন্য গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়াকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পারিকল্পনা জানিয়ে মুহিত বলেন, “বাপেক্স কর্তৃক ২০২১ সালের মধ্যে মোট ১০৮টি কূপ খননের লক্ষ্যমাত্রা আমাদের রয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক কূপ খনন ও এসব কূপ হতে গ্যাস উৎপাদন শুরু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে।”

উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি গ্যাসের ‘উত্তম ব্যবহার’ নিশ্চিতে প্রি পেইড মিটার বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।

গ্যাসের দাম নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “২০১৮ সালে গ্যাস আমদানি শুরু হলে আন্তর্জাতিক দামে আমাদের তা খরিদ করতে হবে। এজন্য গ্যাসের উপর ধার্য বর্তমান করাদি যৌক্তিকীকরণ করা হবে।

“এর ফলে ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দাম যে বাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভর্তুকি প্রদানের অনুরূপ নীতি অনুসরণ করে গ্যাসের দামও সমন্বয় করা হবে।”