দেড় লাখ কোটি টাকার এডিপি, রূপপুরেই ১০ হাজার কোটি

আসন্ন নতুন অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে সরকার, যাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও জ্বালানি খাত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 10:04 AM
Updated : 14 May 2017, 01:13 PM

অনুমোদন পাওয়া এই এডিপি চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, বা ৩৯ শতাংশ বেশি।

রোববার শেরে বাংলা নগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন করা হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মসূচি জন্য যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার যোগান আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল বা দেশীয় উৎস থেকে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৬৩ শতাংশ।

আর প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রায় পাওয়া যাবে ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ।

এদিকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য আরও ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ ধরলে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপির আকার দাঁড়ায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

এবার এডিপিতে খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ ভাগ বরাদ্দ রাখা হয়েছে পরিবহন খাতে। পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের চাহিদা পূরণে এ বিশাল বরাদ্দ।

মাওয়ায় চলছে পদ্মা সেতুর কাজ, যার জন্য বরাদ্দ থাকছে এডিপিতে

এর মধ্যে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা আর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল নির্মাণে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, কাঁচপুর মেঘনা এবং গোমতি দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎখাত। এ প্রস্তাব মোট আকারের ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ খাতের রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্যই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এডিপিতে।

ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য।

এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে প্রায় ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবার।

স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১০ হাজার ২০১ কোটি টাকা এবং খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি খাতে মোট ৬ হাজার ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান সাঈদুল হক বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা/কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন মিলিয়ে এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা সচিব মোহা. জিয়াউল ইসলাম বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ১ হাজার ৩৪৭টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে এক হাজার ৭৯টি। কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১২টি এবং জাপানি ঋণ মওকুফ প্রকল্প (জেডিসিএফ) ৪টি।

এরমধ্যে ৯০টি নতুন, বাকিগুলো চলমান প্রকল্প।

৩৬টি প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এর আগে প্রতি অর্থবছর শেষে বরাদ্দ কমিয়ে এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু মূল বরাদ্দ ঠিক রেখে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়। 

সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হলেও  বৈদেশিক সহায়তা ৪০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।