প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৮%: বিশ্ব ব্যাংক

চলতি অর্থবছর শেষে সরকার ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করলেও এর সঙ্গে একমত নয় বিশ্ব ব্যাংক।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 09:08 AM
Updated : 27 Sept 2017, 06:40 AM

আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থা বলছে, চলতি জুনে শেষ হতে যাওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এ রোববার এই পূর্বাভাস তুলে ধরে বলা হয়, মূলত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমায় এবং রেমিটেন্সের পতনের কারণে গতবছরের তুলনায় এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কম হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থার প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমি বলতে চাই, “অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। রপ্তানি ও রেমিটেন্সে প্রতিকূল হাওয়া বইছে। তবে স্থিতিশীলতা বজায় আছে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) যেখানে বাংলাদেশ রপ্তানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছিল, এবার একই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ শতাংশ।

আর ওই সময়ে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রেমিটেন্স কমেছিল ২.৫ শতাংশ; এবার কমেছে ১৬ শতাংশ।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। এরপর গত জুনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করা হয়।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে।

প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির পেক্ষাপটে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও বেশ ভালো। পৃথিবীর অনেক বড় দেশই এমন প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছে না।

“যদি বিনিয়োগ ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে ১ থেকে দেড় শতাংশ উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায় এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ১ থেকে দেড় শতাংশ বাড়ানো যায়, তাহলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রবৃদ্ধির সঙ্গে আরও ৩ শতাংশ যোগ করা সম্ভব।”

এ দিকেই এখন সরকারকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন বিশ্ব ব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ।

বিনিয়োগ বাড়ছে; তবে কোথায় হচ্ছে?

জাহিদ হোসেন বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ১ শতাংশ বিনিয়োগ বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে মূলধনী যন্ত্রাপাতির আমদানি। টেক্সটাইল খাতের যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে ৫২ শতাংশ। লেদার মেশিনারিজ ১৮৩ শতাংশ। বেড়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের যন্ত্রপাতির আমদানিও।

“এখন প্রশ্ন থেকে যায়, কী কারণে বাড়ছে এই আমদানি। ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে কী না-সে প্রশ্নও আছে।”

সে কারণেই বিনিয়োগ যেটা বৃদ্ধি হচ্ছে সেটা কোথায় হচ্ছে? কিভাবে হচ্ছে সেটা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ।

চালের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে

জাহিদ হোসেন বলেন, চালের দাম বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে খাদ্যবহিভূর্ত মূল্যস্ফীতি কমেছে। হাওড় অঞ্চলে বন্যার কারণে ধানের ফলনের ক্ষতি হওয়ায় চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।

রেমিটেন্সে পতন

রেমিটেন্স পতনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, তেলের দাম কমায় কেবল সৌদি আরব থেকে কম রেমিটেন্স আসছে তা নয়, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও রেমিটেন্স কমেছে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতন এবং হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর কারণেও রেমিটেন্স কমেছে।

তিন ঝুঁকি

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির তিনটি ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এগুলো হল- আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব, রাজস্ব নীতিতে সংস্কারের ধীরগতি এবং আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান।