১৬০২ ডলার মাথাপিছু আয়, ৭.২৪% প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন

চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৬০২ ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2017, 05:44 AM
Updated : 14 May 2017, 05:39 PM

সেই সঙ্গে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেটের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে সরকার আশা করছে। 

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির এই হিসাব করেছে।

রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই হিসাব তুলে ধরেন।

বৈঠক শুরুর আগে এসব তথ্য তুলে ধরা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, “এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে এই ফসল অর্জিত হয়েছে।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। আর গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৪৬৫ ডলার।

প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। এরপর গত জুনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করা হয়।

এনইসি বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি হাওড়ে বন্যার কারণে এবার ফসল কম উৎপাদন হতে পারে বলে আমাদের আশঙ্কা। এটা শুধুই আশঙ্কা। তবে প্রমাণিত বিষয় হচ্ছে আমরা প্রতিবছরই প্রবৃদ্ধি করেছি।”

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন দিয়েছে, তাতে প্রধান তিনটি খাতের মধ্যে কৃষির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মন্ত্রী জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার দাঁড়াবে ২৪৮ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। গত অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২২১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

“চলতি অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মোট বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ৩০ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ০১ শতাংশ, আর সরকারি বিনিয়োগ ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।”

পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপি হিসাবের ক্ষেত্রে তাদের ‘মেথডোলজি’ পরিবর্তন করেনি বলেও জানান মন্ত্রী।

বেসরকারি বিনিয়োগে অচলাবস্থা কাটছে না কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “ব্যবসায়ীরা সব সময় দেখবে বেশি লাভ। আমরা এখনো তাদের অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় চাহিদার যোগান দিতে পারছি না।”

আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী সুবিধার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতে পারে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমে যাওয়া এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রপ্তানি প্রবৃদ্ধি না হওয়ার পরও প্রবৃদ্ধি কীভাবে লক্ষ্য ছাড়াবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “প্রবাসী আয় আসলে কমেনি। ২০১৬ সালে বিকাশসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৪ দশমিক ৩১ ভাগ প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।”

এর ব্যাখ্যায় পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ৬৭ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবাসী আয় ‘ব্যাংকিং চ্যানেলে’, আর ৩২ দশমিক ৬৮ শতাংশ আয় ‘নন ব্যাংকিং চ্যানেলে’ দেশে আসত।

“কিন্তু ২০১৬ সালের পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসছে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ, আর নন ব্যাংকিং চ্যানেলে বাকি ৪৯ দশমিক ২৮ শতাংশ । অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিং শুরু হওয়ার পর সাধারণ ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় কমে গেছে।”

এ পরিস্থিতিতে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনায় যুক্ত কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে পথ খোঁজার পরিকল্পনার কথা বলেন মুস্তফা কামাল। 

“কীভাবে এই বিপুল প্রবাসী আয় প্রপার চ্যানেলে নিয়ে আসা যায়… নেতিবাচকভাবে এ বৈঠক হবে না। বরং দুই পক্ষের জন্যই একটি উইন উইন সিচুয়েশন পাওয়ার জন্য বৈঠক করা হবে।”