এবার দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি এডিপি

আসন্ন নতুন অর্থবছরের (২০১৭-১৮) জন্য এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রস্তাব করতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন।

জাফর আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2017, 03:46 PM
Updated : 13 May 2017, 03:48 PM

প্রস্তাবিত এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় ৪২ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বা ৩৯ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় নতুন এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদনের তুলবে পরিকল্পনা কমিশন।

শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুত এডিপির সারসংক্ষেপে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের জন্য যে আকার প্রস্তাব করা হচ্ছে তাতে সরকারের নিজস্ব তহবিল বা দেশীয় অর্থের যোগান থাকবে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের প্রায় ৬৩ শতাংশ। আর বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ।

মাওয়ায় চলছে পদ্মা সেতুর কাজ, যার জন্য বরাদ্দ থাকছে এডিপিতে

এদিকে সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে।

সে হিসাবে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মোট এডিপির আকার দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহা. জিয়াউল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শুধুমাত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনা ও পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি আকার এনইসিতে সুপারিশ করছি। এটা চূড়ান্ত নয়। বৈঠক থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”

প্রস্তাবিত এডিপিতে নতুন অর্থবছরের জন্য খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ ৪১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ ভাগ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে পরিবহন খাতে।

পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণসহ অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের চাহিদা পূরণে এ বিশাল আকার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এর মধ্যে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ৫ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা আর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, মেট্রোরেল নির্মাণে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ১ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, কাঁচপুর মেঘনা এবং গোমতি দ্বিতীয় সেতু নির্মাণে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে বিদ্যুৎখাতের জন্য। এ প্রস্তাব মোট আকারের ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ খাতের রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের জন্যই প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের জন্য।

এছাড়াও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।

স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১০ হাজার ২০১ কোটি টাকা এবং খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি খাতে মোট ৬ হাজার ৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এরক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এডিপি অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর আগে প্রতি অর্থবছর শেষে বরাদ্দ কমিয়ে এডিপি সংশোধন করা হয়। কিন্তু মূল বরাদ্দ ঠিক রেখে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়। 

সংশোধিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে বৈদেশিক সহায়তা ৪০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়।