দ্বাদশ বাজেট দিয়েই ছুটি: মুহিত

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নিজের দ্বাদশ বাজেট দিয়ে ‘ছুটি’তে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শামীম আহমেদ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2017, 10:43 AM
Updated : 11 May 2017, 11:35 AM

নিজের একাদশ বাজেট দেওয়ার আগে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম সম্পাদক ও বেসরকারি চ্যানেলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় একথা জানান তিনি।

চলতি বছর জানুয়ারিতে ৮৩ বছর পূর্ণ করেন ৬০ বছরের কর্মজীবন পার করে আসা মুহিত, যিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১০ বার বাংলাদেশের বাজেট দিয়েছেন।

মুহিত এর আগে জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন এই সরকারের পর আর মন্ত্রী হবেন না তিনি।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন সম্পাদক তার কাছে জানতে চান, এটা তার শেষ বাজেট কি না?

তখন মুহিত বলেন, “এটি নয় এর পরেরটা হবে আমার শেষ বাজেট। এটি আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

“এ বছরে গেলে আমার ১১ বার বাজেট পাস হবে। ১২ করে বিদায়। নিশ্চিত মনে হয়, আমার যিনি সিদ্ধান্ত দেবেন তিনি দিয়েছেন ছুটি।”

শেখ হাসিনার সরকারে দুই মেয়াদে এই পর্যন্ত ১০ বার বাজেট দেওয়ার আগে ১৯৮২-৮৩ সালে এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারের সময়েও প্রায় ২০ মাস অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মুহিত।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য মুহিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। ওই আসনে তার ভাই এ কে এ মোমেন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।

অবসরে যাওয়ার পর সময় কীভাবে পার করবেন- এ প্রশ্নে মুহিত বলেন, “যতদিন আছি এবং চলাফেলা করতে পারি ইউ উইল সি মি, এ রকম সভায় ওখানে (সম্পাদকরা সেখানে বসে আছেন তা দেখিয়ে) বসব।”

সম্পাদক হিসেবে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “সম্পাদক হিসেবে নয়। রিটায়ার্ড পারসোন ইন্টারেস্টেড ইন ওয়েলফেয়ার অফ কান্ট্রি।

“আমি আর কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চাই না, নো মোর সিটিং আপ এ নিউ ইন্সটিটিউশন, তাহলে তো গভর্নমেন্টে কাজ করতে পারি।”

অবসরে যাওয়ার পর লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে মুহিতের।

“লেখালেখি একটু বাড়বে, আমি আমার স্মৃতি কথায় এসেছি মাত্র ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ এর পরও তো অনেক লম্বা জীবন আছে। ১৯৪৯ থেকে আমি নোট নিচ্ছি। ছাত্রজীবনে প্রতিদিন ডাইরি মেইন টেইন করতাম।”

মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ২৩টি বই ইতোমধ্যে লিখেছেন মুহিত।

নবান্ন উৎসবে ভিন্নবেশে অর্থমন্ত্রী মুহিত

সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চ শিক্ষা নেন। ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, মুহিত তখন ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্বে। জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তিনি।

১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিবের হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে।

দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুহিত।