নয় মাসেই আগের বছরের চেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি

চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসেই পণ‌্য বাণিজ‌্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের ঘাটতির হিসাব ছাড়িয়ে গেছে।  

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2017, 01:50 PM
Updated : 8 May 2017, 01:50 PM

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিকে এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত। 

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০৩ কোটি ৮০ লাখ (৭.০৩ বিলিয়ন) ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪৭৯ কোটি ২০ লাখ ডলার।

অর্থাৎ, নয় মাসের হিসাবে বাণিজ‌্য ঘাটতি বেড়েছে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ৩২ শতাংশ।

২০১৫-১৬ অর্থবছরের পুরো সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

 

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশ কিছু দিন জ্বালানি তেলের দাম কম থাকায় গতবছর এ খাতে বাংলাদেশের খরচ কম ছিল। খাদ্যপণ্যের দামও কম ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি আয় সে সময় বাড়ছিল বলে বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম ৫০ থেকে ৬০ ডলারে ওঠানামা করায় এবং বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।

# বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ তিন হাজার ২৩৬ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১১শতাংশ বেশি।

# অন্যদিকে এই সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ দুই হাজার ৫৩৩ কোটি ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি।

# চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় বেড়েছে ২০ শতাংশের মত। এছাড়া খাদ্যপণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। মূলধনী যন্ত্রপাতিতে (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) বেড়েছে ১৪ শতাংশ।

ঘাটতি বেড়েছে সেবা খাতেও। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৯৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ২৪৫ কোটি ডলার হয়েছে।

মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ১৩৮ কোটি ২০ লাখ (৫১.৩৮ মিলিয়ন) ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য।

বেড়েছে এফডিআই

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বাংলাদেশ মোট ২৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ১৪৪ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাই-মার্চ সময়ে এসেছিল ১০৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই নয় মাসে নিট এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ৩১ দশমিক ২৭ শতাংশ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে মোট যে এফডিআই আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।