সংসদে তোলার এক বছর পর ইপিজেড বিল প্রত্যাহারের সুপারিশ

ইপিজেড শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার, মজুরি বোর্ড, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির সুবিধা দিতে ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম বিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপনের এক বছর পর তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2017, 02:52 PM
Updated : 7 May 2017, 04:25 PM

গত বছরের এপ্রিল মাসে উত্থাপিত বিলটির বিষয়ে রোববার সংসদে প্রতিবেদন দেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু।  

বিলটি সংসদে ওঠার পর ১৫ কার্যদিবসের সময় দিয়ে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি পরে কয়েকদফা সময় বাড়িয়ে নেয়। এই বিলটি পরীক্ষার জন্য একটি উপ-কমিটিও গঠন করা হয়।

রোববার প্রতিবেদন দেওয়ার সময় মতিন খসরু খসড়া আইনটি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে আলোচনায় ইপিজেডগুলোতে বিভিন্ন শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অবারিত সুযোগ ও অঞ্চলগুলোর বাইরে অবস্থিত শ্রমিক সংগঠনগুলোর ফেডারেশনের সাথে অঞ্চলগুলোর শ্রমিক ফেডারেশনের যোগাযোগ স্থাপনে বিধি-নিষেধ না রাখার বিষয় প্রাধান্য পায়।

“বাংলাদেশ আইএলওর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে এর কনভেনশনের আলোকে প্রস্তাবিত ইপিজেড শ্রম বিলটি সম্পর্কে আলোচনা হয়।”

উপকমিটিতে ওই আলোচনায় প্রস্তাবিত আইনটি আরও শ্রমিক ও বিনিয়োগবান্ধব করার জন্য বিলটি আরও পরীক্ষা করে পেশ করতে মূল কমিটিতে ফেরত পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

খসরু বলেন, আইএলও কনভেনশনের সঙ্গে ‘যতটুকু সম্ভব’ সামঞ্জস্যপূর্ণ করে বিলটি সংসদে আবার উত্থাপনের জন্য প্রস্তাবিত আইনটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পর এখন বিলটি সংসদে উত্থাপনকারী সংসদ কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী খসড়া আইনটি সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যাহার করবেন।

গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিলটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এর আগে ২০১৪ সালের ৭ জুলাই ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।

বিলে বলা হয়েছে, ইপিজেডে অবস্থিত কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি করতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের ৩০ ভাগ শ্রমিককে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীদের মধ্যে ভোটের ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের মধ্যে ৫০ ভাগ সমিতি করার পক্ষে ভোট দিলে সমিতি অনুমোদন পাবে।

এই সমিতি শিল্প প্রতিষ্ঠানের যৌথ দর-কষাকষির এজেন্ট হবে বলে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী শ্রমিকরা অবসর সুবিধা, মৃত্যু ও দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ, বাধ্যতামূলক গ্রুপ ইন্স্যুরেন্স, ভবিষ্য তহবিল, অর্জিত ছুটির নগদায়ণ, পূর্ণ বেতনের সমান হারে বছরে দুটি উৎসব বোনাস এবং ১৬ সপ্তাহের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাবেন।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ইপিজেডের শ্রমিকরা বার্ষিক ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পাবেন।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মজুরি বোর্ড সব ধরনের শ্রমিকদের জন্য যে মজুরি কাঠামো ঠিক করে দেয়, এতদিন সেই কাঠামোতেই বেতনভাতা পেয়ে আসছিলেন ইপিজেড শ্রমিকরা। আইনটি প্রণয়ন করা হলে তাদের জন্য একটি স্থায়ী মজুরি বোর্ড গঠন করা হবে।

বিলে বলা হয়েছে, শ্রমিক ও বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি ছাড়াও নিরপক্ষে উৎস থেকে প্রতিনিধি নিয়ে এই স্থায়ী মজুরি বোর্ড গঠন করা হবে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এই বোর্ডের প্রধান হবেন।