“দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য অনেক সময় লাগবে। কমপক্ষে ১০/১৫ বছর আগে পরিবর্তন হবে না,” বলেছেন তিনি।
রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত কর্মশালায় ‘সুশাসন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে কি না’ শীর্ষক আলোচনায় একথা বলেন আকবর আলি।
আকবর আলির মতোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আরেক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান আলোচনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন।
বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে কি উন্নয়ন চলবে- এই প্রশ্ন তুলে আকবর আলি নিজেই উত্তরে বলেন, “আরও কিছু দিন চলবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটা চলবে না। আমার মনে হয়, ৫/১০ বছর পরেও সমস্যার সম্মূখীন হতে পারি।
“এটার জন্য প্রস্তুতির দরকার রয়েছে। এখনও যদি আমরা সুশাসনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে ১০/১৫ বছর পরে আমরা তার সুফল পেতে পারি।”
অনেক অগ্রগতির মধ্যেও বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে চ্যালেঞ্জ মানছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও।
সুশাসন শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যই নয়, এটি একটি মৌলিক মানবাধিকার বলে মনে করেন আকবর আলি।
সুশাসন ছাড়া উন্নয়ন অর্থহীন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, উন্নয়ন হচ্ছে স্বাধীনতা। সুশাসন কোন চয়েসের বিষয় নয়, এটি অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের উন্নয়ন করতে হবে সেই সঙ্গে অবশ্যই সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।”
সাবেক অর্থ সচিব আকবর আলি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার উপর জোর দেন। বিদেশি ঋণ নিয়ে ‘অতি উচ্চাভিলাষী’ প্রকল্প নেওয়ার বিরোধিতা করেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমরা যে শাসন আর সুশাসন নিয়ে যে কথা বলছি, তার মুল আসামি হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। বেশ আগে আফ্রিকা মহাদেশে বিশ্ব ব্যাংক প্রচুর পরিমাণ সাহায্য দিচ্ছিল আর বলছিল কিছু দিনের মধ্যেই আফ্রিকার দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। তারপরে দেখা যায় হয়নি।
“শেষে দেখা গেল বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য আফ্রিকায় যত বাড়ছে অর্থনীতির ততই অবনতি হচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক তখন আফ্রিকায় কর্মরতদের উপর দোষারোপ করল।”
সুশাসন বিষয়টি আবার বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশে হস্তক্ষেপের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে মনে করেন আকবর আলি।
বাংলাদেশের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে সুশাসন নিচের দিকে যাচ্ছে কিন্তু উন্নয়ন থামছে না। এটা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক নিজেই মুশকিলে আছে। তাই তারা একেক রিপোর্টে একেক রকম তথ্য দাঁড় করিয়েছে।
“আমার মনে হয় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে কয়েকটি কারণ রয়েছে তার একটি হল, একটি দেশ যখন অত্যন্ত নিম্ন পর্যায়ে থাকে তখন তার উন্নয়নের এত ক্ষেত্র থাকে যে সুশাসন ছাড়াও সেই পর্যায়ে উন্নয়ন সম্ভব।কিন্তু যখন একটি দেশ মধ্য পর্যায়ে উন্নীত হয়, তখন সুশাসন তার জন্য অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়ায়।”
কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রবৃদ্ধিসহ অর্থনীতির নানা উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসা উচিৎ।
“আমাদের অর্থনীতি যে অবস্থায় রয়েছে তাতে এলডিসি থেকে বের হওয়ার জন্য এখনই উপযুক্ত সময়।”
অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির মুল চালিকা শক্তি হচ্ছে চারটি। এগুলো হচ্ছে, গার্মেন্টস, রেমিটেন্স, কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণ। এগুলোর উপর ভর করে আরও এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।