প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে: মুহিত

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হবে বলে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আব্দুর রহিম হারমাছি, ওয়াশিংটন ডিসি থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 April 2017, 06:38 PM
Updated : 22 April 2017, 06:38 PM

ওয়াশিংটনে চলমান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে শনিবার ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর একথা বলেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। সেই প্রবৃদ্ধি আমরা গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) ৭ দশমিক ১ শতাংশে নিয়ে এসেছি। প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘর অতিক্রম আমাদের জন্য মাইলফলক ছিল।

“চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী। বাজেটে আমরা ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য ধরেছিলাম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।”

প্রায় এক দশক ৬ শতাংশের বৃত্তে ‘আটকে’ থাকার পর গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে। চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১১ শতাংশ।

সরকার এবারের বাজেটে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ঠিক করেছে। অর্থমন্ত্রী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিষয়ে আশাবাদী হলেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি বলছে, এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদন ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০১৭’-এ বলা হয়েছে, মূলত রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় এবং রপ্তানি আয়ের ধীর গতির কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবার কিছুটা কম হবে।

মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি বাজে সময় পার করায় এবং তেলের বাজারে মন্দার কারণে সেসব দেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার পরিমাণ গত দুই বছর ধরে কমছে।

রেমিটেন্সে খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রীও: “রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকেই আমরা বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। রপ্তানি আয় প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে গিয়েছি। আমদানিও বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছি।”

তবে বেসরকারি বিনিয়োগে যে স্থবিরতা ছিল তা এখনও রয়ে গেছে বলে জানান মুহিত।

তিনি বলেন, “জিডিপির ২৬ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত যে বিনিয়োগ হচ্ছে তা মূলত সরকারি খাতে বিনিয়োগের কারণে। বেসরকারি খাতে তেমন বিনিয়োগ হয়নি। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) যা ছিল, তাই আছে।”

ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

“তারা বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বেশ ভালোই অবহিত আছে। তারা আগের মতোই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কি না জানতে চাইলে মুহিত বলেন, “সে বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোই জানে। তাদের মতো করেই বিনিয়োগ নির্ধারণ করবে।”     

তিনি বলেন, “বৈঠকে আমি বাংলাদেশের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কে বলেছি। প্রমোশন, ট্রমোশন যেটা হয়, সেটা নিয়ম মতোই হয়। তবে সচিব নিয়োগে মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়।”

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার কথা তুলে ধরে এ অবস্থার উত্তরণে আগামী বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে বলে বৈঠকে জানান অর্থমন্ত্রী।

ওয়ালমার্টসহ যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় আটটি কোম্পানির প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।