রেমিটেন্সে এমন ধস তিন দশকে দেখা যায়নি: বিশ্ব ব্যাংক

পর পর দুই বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে ধস নেমেছে, যে প্রবণতা গত তিন দশকে দেখা যায়নি বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2017, 02:51 PM
Updated : 21 April 2017, 02:52 PM

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্ব ব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক চলাকালে বৃহস্পতিবার অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক হালনাগাদ ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৪২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০১৫ সালে এই দেশগুলোর রেমিটেন্স আয় ছিল ৪৪ হাজার কোটি ডলার।

ভূ-মধ্যসাগরীয় দেশগুলো ও রুশ ফেডারেশনে তেলের দরপতন ও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দক্ষিণএশিয়া ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি ইউরোপে দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার উত্তর ও সাহারা মরু অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবাসী আয় কমেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ডলারের হিসাবে এই রেমিটেন্সের ধস আরও বাজে পরিস্থিতিতে যখন তা তুলনামূলক দুর্বল ইউরো, ব্রিটিশ পাউন্ড ও রুশ রুবলের সঙ্গে বিনিময় করা হয়।

এর ফলে ব্যাপক প্রবাসী আয় অর্জনকারী দেশগুলোতে রেমিটেন্স প্রবাহে মারাত্মক পতন দেখা গেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেমিটেন্সগ্রহীতার অবস্থান ধরে রেখেও ভারতের প্রবাসী আয় গতবছর ৮ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৬ হাজার ২৭০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০১৫ সালে এই আয় ছিল ৬ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার।

অন্য শীর্ষ রেমিটেন্সগ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে গত বছর বাংলাদেশের প্রবাসী আয় ১১ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে ২ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

রেমিটেন্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধি দল মধ্যপ্রাচ্য,সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় সরেজমিনে তদন্তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে এসেছিল ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার।

বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালে। ওই বছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল।

এরপর ২০১৪ সালে প্রবাসী আয়ে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটে। ওই বছর মোট ১ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার আয় দেশে আসে। এরপর ২০১৫ সালেও প্রবাসী আয়ে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, শীর্ষ রেমিটেন্সগ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়ার ১০ শতাংশ ও মিশরের আয় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কমেছে।

তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে মেক্সিকো ও ফিলিপিন্সের ক্ষেত্রে; এ দুটি দেশে গত বছর রেমিটেন্স বেড়েছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।

ফাইল ছবি

তেলের মূল্য হ্রাস ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর আর্থিক সংকটের কারণে ২০১৬ সালে সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসী আয় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১১ হাজার কোটি ডলারে নেমেছে। এই অঞ্চলের রেমিটেন্স ২০১৭ সালে ২ শতাংশ বেড়ে ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে উঠতে পারে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের গ্লোবাল ইন্ডিকেটরস গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রিতা রামালহো বলেন, “উন্নয়নশীল বিশ্বে লাখো পরিবারের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস প্রবাসী আয়। প্রবাসী আয় প্রবাহ কমে গেলে এসব পরিবারের স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও যথাযথ পুষ্টির চাহিদা পূরণের ক্ষমতায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে।”

২০১৬ সালে বিশ্বজুড়ে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে নেমেছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে রেমিটেন্সের প্রবাহে চলতি বছর অগ্রগতি হবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এসব দেশে প্রবাসী আয় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ৪৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে উঠতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস।