অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিইটিপি স্থাপনে যুক্ত হল জিআইজেড

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি নির্মাণের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে জার্মানির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2017, 10:55 AM
Updated : 19 April 2017, 12:19 PM

বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগী সংস্থা আইএফসির ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপের সহায়তায় গত এক বছর ধরে সিইটিপি স্থাপনের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছিল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, বেজা।

বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ফর ইকোনোমিক জোন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক কর্মশালা শুরুর আগে সিইটিপি বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন বেজা, বিশ্বব্যাংক ও জিআইজেড প্রতিনিধিরা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান এসডিজি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইশতিয়াক আহমেদ, বিশ্বব্যাংকের ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপের এশিয়া অঞ্চলের প্রধান বাসতিয়ান মাহরমান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

চুক্তির ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিইটিপি স্থাপনের সার্বিক কাজে তিনটি প্রতিষ্ঠান পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় করবে। চুক্তির অংশ হিসাবে উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ কিছু বিষয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বেজাকে সহায়তা করবে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সিইটিপি নির্মাণে সরকারি নীতি প্রণয়ন ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে সহায়তা করবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান দুটি। সিইটিপি স্থাপনের জন্য যথাযথ বিজনেস মডেলও ঠিক করে দেবে উন্নয়ন সহযোগীরা। সিইটিপির জন্য উদ্ভাবনীমূলক ও কার্যকর অর্থনৈতিক যোগান ঠিক করবে তারা। আগ্রহী উন্নয়ন সহযোগী, দাতা ও এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি ঠিক করবে তারা।

সিইটিপি সংশ্লিষ্ট, বৈঠক, কর্মশালা আয়োজনের দায়িত্ব থাকছে ২০৩০ ডব্লিউআরজি ও নতুন যুক্ত হওয়া জিআইজেড।

এসডিজি সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও ঘনবসতির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি বিবেচনায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। অধিক জনসংখ্যা নিজেই পরিবেশের ওপর বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। শিল্প কারখানার বর্জ্য যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না যায়, তাহলে ভবিষ্যতে তা ক্ষতির কারণ হবে।

বেজার সবগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলে সিইটিপি স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বর্তমানে বেজার অধীনে ৩৬ হাজার একর জমি রয়েছে। ভবিষ্যতে তা বেড়ে ৭৫ হাজার একর পর্যন্ত হতে পারে। এতো বড় শিল্পাঞ্চলে যদি প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালু করা যায়, তাহলে আমরা অনেকাংশই পরিবেশ সুরক্ষা করতে পারব।

ঢাকার আশপাশের সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরের কলকারখানাগুলোতেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা ইটিপি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন বলেও মত দেন এসডিজি সমন্বয়ক।

“আমরা একটা বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি। সাভার আশুলিয়ার কারখানাগুলো যাতে সিইটিপির আওতায় আসে এমন একটি উদ্যোগের কথা সরকার, দাতাগোষ্ঠীদের ভাবতে হবে। প্রয়োজনে কারখানা মালিকদের কাছ থেকে এর জন্য পৃথক ট্যারিফ আদায় করা হবে।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো, বিশেষ করে তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরীর চেহারা দেখলেই বুঝা যায় পানি দূষণের মাত্রা কোন পর্যায়ে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বা সিইটিপি নিশ্চিত করতে বেজা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

২০১৬ সালে এই কাজে বেজার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাংকের ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্স গ্রুপ বা ২০৩০ ডব্লিউআরজি। এবার জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেডও এই প্রক্রিয়ায় যোগ দিল। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ কাজকে আরও এগিয়ে নেবে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, শিল্প কারখানা স্থাপনের পাশাপাশি নিরাপদ পানি ও পরিবেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রাখতে হবে। শিল্পাঞ্চলে কার্যকর ইটিপি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে আরও কঠোর হওয়া যায় কিনা সেটা ভাবতে হবে।

“ঘনবসতির এই দেশে পরিবেশ সুরক্ষার নিয়মগুলো খুব ভালোভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন। শুধু উন্নয়নের জন্য নয়, পরিবেশের জন্য ইটিপি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এমন কোনো সয়ংক্রিয় পদ্ধতি আবিষ্কার করা যায় কিনা, যাতে ইটিপি কাজ না করলে কারখানাও বন্ধ হয়ে যাবে। প্রযুক্তি এখন অনেক উন্নত। হয় তো এমন প্রযুক্তিও আমাদের হাতের নাগালে আসবে।”

বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোনস অথরিটি বেজা, আইএফসি ও জার্মানির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টি করতে দেশীয় শিল্পাঞ্চলকে পরিবেশবান্ধব রূপ দিতে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিল্পাঞ্চলগুলোতে সিইটিপি নির্মাণের বিষয়ে আলেচনা করতেই এই কর্মশালা। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ছাড়াও কারিগরি সহায়তাকারী, অবকাঠামো উন্নয়নকারী, পরামর্শক, বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন।