জনগণের জীবন উন্নত না হলে প্রবৃদ্ধি মূল্যহীন: সেলিম জাহান

সাধারণভাবে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা না রাখলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় মূল্যহীন বলে মনে করেন ইউএনডিপির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অফিসের পরিচালক সেলিম জাহান।

সৌমিক হাসীনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2017, 08:52 AM
Updated : 18 April 2017, 05:54 PM

এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চূড়ান্ত কোনো মূল্য নেই, যদি না এটা জনগণের কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত না হয়।”

অর্থনীতির সাবেক অধ্যাপক ও গবেষক সেলিম ২০১৬ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরিতে নেতৃত্ব দেন। সাক্ষাৎকারে মানব উন্নয়ন সূচককে অগ্রগতির পরিমাপক হিসেবে ব্যবহারের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। সেই সঙ্গে কীভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উদ্বেগ প্রশমনে এটা কীভাবে কাজ করে তাও তুলে ধরেন।

“১৯৮০ এর দশকে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংক এশিয়া ও আফ্রিকার জন্য কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি তৈরি করে। এর লক্ষ্য ছিল, আরও স্থিতিশীল হতে সহায়তার জন্য অর্থনীতিগুলোকে পুনর্গঠন করা এবং প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানো।

সেলিম বলেন, “কিন্তু তারা কিছু মৌলিক প্রশ্নের সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে: কিসের প্রবৃদ্ধি?, কার জন্য প্রবৃদ্ধি? ও কাদের দ্বারা প্রবৃদ্ধি?

“... অর্থনীতির সমৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানুষের জীবনের সমৃদ্ধির বিনিময়ে তা আসা উচিত নয়। দিন শেষে আপনাকে দেখতে হবে, জনগণের কল্যাণে এটা কিছু যোগ করলো কি না।”

তাই মানুষ কতটা দীর্ঘ, কতটা সৃষ্টিশীল জীবনযাপন করতে পারে, কী মাত্রায় জ্ঞানার্জন করতে চায় এবং কতটা পারে এবং তাদের জীবনমানে কী উন্নতি হলো তার মাত্রা পরিমাপ করে মানব উন্নয়ন সূচক।

জিডিপি পার ক্যাপিটার মতো এই সূচককেও তিনি নিখুঁত না বললেও এটা মানব উন্নয়নের বৃহত্তর পরিসরের প্রতি অন্ধ নয় বলে মনে করেন।

এবছর বাংলাদেশ মানব উন্নয়ন সূচকে তিন ধাপ এগিয়ে ১৮৮ দেশের মধ্যে ১৩৯তম অবস্থানে উঠেছে।

সেলিম জাহান বলেন, “প্রত্যাশিত গড় আয়ু, পাঁচ বছরে নিচে মৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার ও লিঙ্গ সমতার মতো নির্দিষ্ট কিছু সামাজিক নির্দেশকে বাংলাদেশ খুবই ভাল করেছে।”

মানুষের জীবনের উন্নয়নে আয়ের প্রবৃদ্ধিকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব সফলতা দেখিয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশে মাথাচাড়া দেওয়া জঙ্গিবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের মতো দেশের সমস্যাগুলো নিয়েও কথা বলেন সেলিম।

“এটাকে আমি সব সময় পরিচয়ের প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত করে দেখি। যখনই আমরা নানা পরিচয়ের মানুষকে গ্রহণ করবো এবং তাদের পরিচয়কে শ্রদ্ধা করবো, তখন আর কোনো অস্থিরতা থাকবে না।”

এই প্রেক্ষাপটে মানব উন্নয়ন সূচক প্যারাডাইম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

“মানব উন্নয়ন জ্ঞানের কথা, বিশ্ব নাগরিকত্ব ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের কথা বলে।প্রত্যেক মানুষের জীবন গুরুত্বপূর্ণ; প্রত্যেক মানুষ সমভাবে মূল্যবান।”

সব মিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী এই গবেষক: “আমি যখন বাংলাদেশের দিকে তাকাই, তখন এমন একটা সমাজ দেখি যার আছে কয়েক শতকের ‘সেকুলার’ ঐতিহ্য, যেখানে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস, ধর্ম ও নৃগোষ্ঠীর মানুষ শান্তিুপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। আমার বিশ্বাস, সামগ্রিকভাবে এসব নীতি ও মূল্যবোধ সমাজ ধরে রাখবে।”