এবার নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবেই: এনবিআর চেয়ারম্যান

আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2017, 01:34 PM
Updated : 4 April 2017, 01:42 PM

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে মঙ্গলবার অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

নজিবুর রহমান বলেন, “আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হবে; এতে কোনো দ্বিধা নেই। কাউন্টডাউন ক্লক বসানো হয়েছে। দিন, ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড গণনা করা হচ্ছে। সারাদেশে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবেই।”

২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা করা হলেও ব্যরবসায়ীদের দাবির মুখে তা থেকে সরে এসেছিল সরকার।

এরপর নতুন আইনে ছোটবড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগের মতো এলাকা ও ব্যবসার ধরন অনুযায়ী এনবিআরের ঠিক করে দেওয়া নির্দিষ্ট হারের ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ চালু রাখার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন।

সরকার সেই দাবি মানলেও প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সঙ্গে বলেছিল, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন আইন কার্যকর হবে। এখন ব্যবসায়ীরা ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে নতুন আইন বাস্তবায়নে ‘দুই-একটি বিষয়’ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অর্থমন্ত্রী তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, “দেশটা আমাদের। এ আইন বাস্তবায়নে চার বছর সময় দেওয়া হল। চলতি বছর ব্যবসায়ীদের এ আইন সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে।

“এ আইন বাস্তবায়নে এনবিআর প্রস্তুত।”

১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিরোধিতায় ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন। ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি।

রাজস্ব সংস্কৃতি চালুর জন্য গণসংযোগের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে পার্টনারশিপ হয়েছে, যা অতীতে হয়নি।

“এনবিআর অনেক উদ্ভাবনী বিষয় নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে একটি হল রাজস্ব যাত্রা। রাজস্ব সম্পর্কে জানাতে গণমাধ্যমকর্মীরা রাজস্ব যাত্রায় অংশ নেন। তাদের সামনে কাস্টমস, আয়করসহ সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ তুলে ধরা হয়। কোথাও কোনো ঘাটতি আছে কি না, তারা জনগণের সামনে সেসব তুলে ধরছেন। সে ঘাটতি পূরণে আমরা চেষ্টা করি।”

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ করদাতা তৈরির অংশ হিসেবে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। রাজস্ব সচেতনতায় এনবিআরকে সহযোগিতা করছেন। এর বড় প্রমাণ ভ্যাট ফাঁকিবাজদের ধরতে ভ্যাট চেকার তৈরি করেছে এক দল তরুণ।

ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে

দুই মাসেই বাংলাদেশে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যার এক লাখ বেড়ে ২৮ লাখ ছাড়িয়েছে, যাকে বড় ধরনের সাফল্যা হিসেবে দেখছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

রাজস্ব আয়ের অন্যাতম প্রধান উৎস হিসেবে আয়করকে চিহ্নিত করে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর সংখ্যাে নিয়ে গত জুনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায়ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তখন কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (টিআইএন) সংখ্যাপ ছিল ১৮ লাখ, তার মধ্যেয ১২ লাখ বছরান্তে আয়কর বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। বক্তৃতায় ওই সংখ্যাছকে ‘লজ্জাজনক’ বলেছিলেন অর্থমন্ত্রী।

তখন তিনি করদাতা অর্থাৎ আয়কর বিবরণীর সংখ্যা  ২০১৭ সালে ১৫ লাখে উন্নীত করতে এনবিআরকে লক্ষয া দিয়েছিলেন। এরপর করদাতার সংখ্যাণ বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় সংস্থাটি।

ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ২৮ লাখ ছাড়ানোর তথ্য জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, দেশের নাগরিকরা কর প্রদান বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। এনবিআর ডিজিটাল হচ্ছে…। গত রাতে ডিজিটালি আমরা জানলাম নিবন্ধন ২৮ লাখ অতিক্রম করেছে।

“ভ্যাট অনলাইন, কাস্টমস অনলাইন ও আয়কর অনলাইন এ তিনটি মিলে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হচ্ছে। কর সেবা প্রদানে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও মিউনিসিপ্যাল ডিজিটাল সেন্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।”

চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। এখন ইন্টারনেটের মাধ্যআমে ঘরে বসেই ই-টিআইএন নেওয়া যাচ্ছে; দেওয়া যাচ্ছে করও। কর কার্যালয়গুলোকে হয়রানিমুক্ত করতেও নানা পদক্ষেপ চলছে।

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে মোট ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরেছে এনবিআর। এরমধ্যে আয়কর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে আয়কর থেকে ৬৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল, কিন্তু তা হয়নি। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

অর্থমন্ত্রী মুহিতের তথ্যে অনুযায়ী, সারাবিশ্বের মধ্যে কর-জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশে অত্যন্ত নিম্নস্তরে রয়েছে। বর্তমানে তা জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এ হার ২০ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত।

নানা প্রয়োজনে অনেকেই করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হন বা ই-টিআইএন সনদ নেন। তবে সবাই বছরান্তে আয়কর বিবরণী দাখিল করেন না।

গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৮ লাখ টিআইএনধারীর মধ্যেদ ১২ লাখ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন।

চলতি বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ যাদের আয় বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি তাদের আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন দাখিল করতে হবে।

অলোচনায় ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, প্রাইস ওয়াটার হাউজ কুপারস বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের (পিডব্লিউসিবিপিএল) ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশিদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক আনোয়ারা বেগম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।