সব সরকারি ব্যাংকই দুর্বল, বেশি বেসিক: অর্থমন্ত্রী

বাংলাদেশের সব সরকারি ব্যাংককেই দুর্বল মনে করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, এর মধ্যে বেসিক ব্যাংকের দুর্বলতা বেশি বলে তার চোখে ধরা পড়ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 March 2017, 01:14 PM
Updated : 19 March 2017, 01:14 PM

রোববার সচিবালয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বেসিক ব্যাংক নিয়ে আলাদাভাবে ভাবতে হবে।

বেসিক ব্যাংকের পাশাপাশি সোনালী, অগ্রণীর ঋণ কেলেঙ্কারিও আলোচিত ঘটনা। ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে আসছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রত্যেকটি সরকারি ব্যাংক দুর্বল ব্যাংক। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু ঘাটতি আছে।”

বৈঠকে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বেসিক ব্যাংকের সমস্যাগুলো অন্য সবার চেয়ে একেবারে ভিন্ন। তাদের সমস্যা এমন যে, একে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে সমমানে বিচার করা যাবে না। এটা একটু বেশি নার্সিং করতে হবে।”

বেসিক ব্যাংককে আলোচনায় রাখলে অন্য সব আলোচনা হারিয়ে যায় বলে পরবর্তী বৈঠকে এই ব্যাংকটিকে বাইরে রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান অর্থমন্ত্রী। 

“বেসিক ব্যাংক থাকলে আর কিছু আলোচনা করা যায় না। সবাই এটা নিয়ে কথা বলে। সব সময় এখানে চলে যায়, কার্যকর কিছু হয় না।”

রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক

এক সময় লাভে থাকা বেসিক ব্যাংকে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবদুল হাই বাচ্চুকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই ব্যাংকটির অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, বাচ্চুর সময়কালে (২০০৯-১৪) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব‌্যাংকটি থেকে।

চাপের মুখে থাকা বাচ্চু ২০১৪ সালে পদত্যাগ করেন। খেলাপি ঋণের কারণে মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকটিকে তুলতে কয়েক দফায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার পর কিছু কাজ হয়েছে জানিয়ে মুহিত বলেন, “কারা টাকা পয়সা নিয়েছে, তাদেরকে খুঁজে বের করা গেছে। এটা একটা মহা মুশকিলের কাজ ছিল।”

“এখন আর বেসিকের টাকা গর্তে পড়ছে না। বেসিককে কোনো টাকা দিলেই সেটা এখন জলে যাবে না, এটা শিউর,” অর্থমন্ত্রী একথা বলার পর পাশে থাকা অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান বলে ওঠেন, “এবার লাভও করেছে কিছু।”

খাদে পড়া বেসিক ব্যাংককে তুলতে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটি এবং অন্য ব্যাংকের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

“বেসিক ব্যাংকের ট্রিটমেন্ট করে তাকে একটা ভাল অবস্থায় আনতে চেষ্টা করব। কতদিনের মধ্যে তাদেরকে সেই অবস্থায় আনা যাবে, সেটা ঠিক করার চেষ্টা করছি।”

আবুল মাল আবদুল মুহিত (ফাইল ছবি)

বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সেটা দুদকের কাছে কাগজপত্র আছে, তারা যেভাবে ব্যবস্থা নেবে-সেভাবেই হবে।” 

সরকারি পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়ে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠক হয়।

সরকারি অন্য ব্যাংকগুলোর বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। ক্যাপিটাল শর্টফল এটার একটা। তাদের বন্ড ইস্যুর ক্ষমতা আছে কি না, সেই ক্ষমতা প্রয়োগে তারা সমর্থ কি না, ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এই আলোচনা চলবে।

“আমরা বাজেটে রেখেছি, ক্যাপিটাল শর্টফল কিছুটা দেব। কে পাচ্ছেন, কে কত পাচ্ছেন-সেটা সিদ্ধান্ত হলে জানাব। আমাদের বাজেটারি ক্যাপাসিটি যা আছে, সেটা আগামী মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করব।”

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “ক্যাপিটাল শর্টফল আগামী মাসের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে।”