‘লে অফ’র চিন্তা হাজারীবাগের ট্যানারি মালিকদের

আদালতের নির্দেশনায় পরিবেশ অধিদপ্তর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিলে কারখানায় ‘লে অফ’ ঘোষণার চিন্তা করছেন ঢাকার হাজারীবাগের চামড়া শিল্প মালিকরা।

ফয়সাল আতিকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2017, 02:01 PM
Updated : 13 March 2017, 03:14 PM

ট্যানারি মালিকদের এক বৈঠকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চামড়া শিল্প শ্রমিকরা। চাকরি টিকিয়ে রাখতে সরকার ও মালিকপক্ষে দ্রুত উদ্যোগ চাইছেন তারা।

পরিবেশ দূষণ এড়াতে হাজারীবাগের ট্যানারিগুলো সরিয়ে নিতে আদালতের আদেশ আসে। তা ঠেকাতে শিল্প মালিকদের আবেদন আপিল বিভাগেও সাড়া পায়নি।

হাজারীবাগের সব ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধ করে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হাই কোর্টের আদেশ আপিল বিভাগও বহাল রেখে রোববার আপিল বিভাগের আদেশ হয়।

এর পরপরই কারখানা মালিকদের নিয়ে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন।

ওই বৈঠকে লে অফের প্রস্তাব আসে বলে অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সাখাওয়াত উল্লাহ সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, “অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত না হলেও তারা লে অফ ঘোষণার বিষয়টি ভেবে রেখেছেন। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে লে অফ ঘোষণা ছাড়া আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা থাকবে না।”

শ্রম আইন অনুযায়ী ‘লে অফ’ হল- কয়লা, শক্তি বা কাঁচামালের স্বল্পতা অথবা মাল জমে গেলে অথবা যন্ত্রপাতি বা কল-কব্জা বিকল হলে শ্রমিকদের কাজ দিতে মালিকের ব্যর্থতা, অস্বীকৃতি বা অক্ষমতা।

এক্ষেত্রে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রয়েছে; যদিও এসব ক্ষেত্রে প্রাপ্য না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের।

ট্যানারি মালিক সমিতির নেতা সাখাওয়াত বলেন, “আমরা লোকসান দিয়ে এত বড় শিল্প চালাতে পারব না। আর এই মুহূর্তে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় রাতারাতি সাভারে চলে যাওয়াও সম্ভব নয়।

“সুতরাং গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সাথে সাথে অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং ডাকা হবে। সেখানে সব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করার কথা ভাবছি।”

লে অফ হলে কাজ হারাতে হবে এই শ্রমিকদের

মালিকদের এই ভাবনার প্রেক্ষাপটে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকার ও মালিক পক্ষের সমস্যার কারণে শ্রমিকদের এত বড় ক্ষতি করা ঠিক হবে না। কারখানা দ্রুত সাভারে সরিয়ে নিলে অথবা সরকার ত্বরিত ব্যবস্থা নিলে এই সমস্যার সমাধান হবে।

“গাফিলতি থাকলে মালিকদের আছে। ভুল করলে সরকার করছে। তার দায়ভার হাজার হাজার শ্রমিকের উপর কেন পড়বে? আমরা সাফার করব কেন। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে দ্রুত চলে যাক অথবা আলোচনায় বসুক।”

ট্যানারি মালিকদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, হাজারীবাগে চামড়া শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩০ হাজার শ্রমিক জড়িত। সাভারে স্থানান্তরিত কারখানাগুলোতে শ্রমিক মাত্র ৫০০ জন।

সাভারে চামড়া শিল্প নগরী পুরোপুরি প্রস্তুত বলে সরকার দাবি করে এলেও গ্যাস সংযোগকে এখনও সমস্যা মনে করছেন কারখানা মালিকরা।

সালমা ট্যানারির মালিক সাখাওয়াত বলেন, “হাজারীবাগ ট্যানারিতে ঘণ্টায় ১ লাখ ২৫ হাজার ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাভারে গিয়ে পরিবেশসম্মত ও আধুনিক মেশিনারিজের ব্যবহার শুরু করলে গ্যাসের ব্যবহার চারগুণ বেড়ে যাবে।

“সেক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে যাবে। এছাড়া গ্যাস সংযোগ পেতে আরও কয়েক ধাপের প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে। যার ফলে খুব সহজে গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাবে না। আমরা এসব জটিলতায় আছি।”

গত ৬ মার্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক আবেদনে হাজারীবাগের সব ট্যানারির গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কারখানা সরিয়ে নিতে দফায় দফায় সময় দেওয়ার পরও তা না করায় এবং আদালতের অনুমতি না নিয়েই সরকার নতুন করে ট‌্যানারি মালিকদের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়ায় হাই কোর্টের এই আদেশ আসে।

আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন আপিল করলে রোববার তাও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ।