সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ

দুই বছর স্বস্তিতে কাটলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় পণ‌্য বাণিজ‌্যে ঘাটতি বাড়ছে বাংলাদেশের।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 March 2017, 06:54 PM
Updated : 8 March 2017, 11:19 AM

চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২৮ কোটি ২০ লাখ (৫.২৮ বিলিয়ন) ডলার। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ শতাংশ বেশি।

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বেশ কিছু দিন জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। সে কারণে এ খাতে বাংলাদেশের খরচ তখন কম হয়েছে। খাদ্যপণ্যের দামও কম ছিল। অন্যদিকে রপ্তানি আয় বাড়ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্য ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল।

“কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় ৬০ ডলারে উঠেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।”

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দুই হাজার ৪৯০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে এই সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ৯৬১ কোটি ৮০ লাখ ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবে অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সামগ্রিক পণ‌্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৫২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।

 

২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ৩৮৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। আর পুরো অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৬৯৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

২০১২ সালে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল (প্রায় ১৫৯ লিটার) জ্বালানি তেলের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ ডলার।

দফায় দফায় কমে এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে তা ৩০ ডলারে নেমে আসে। চলতি সপ্তাহে এ মূল্য ৫৫ থেকে ৫৮ ডলারে ওঠানামা করছে।

২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশের মত।

এছাড়া খাদ্যপণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। মূলধনী যন্ত্রপাতিতে (ক্যাপিটাল মেশিনারিজ) বেড়েছে ৩ শতাংশ।

ঘাটতি বেড়েছে সেবা খাতেও

২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ১৯৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার হয়েছে।

মূলত বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য পরিমাপ করা হয়।

বেড়েছে এফডিআই

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বাংলাদেশ মোট ১৭১ কোটি ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি।

এর মধ্যে নিট এফডিআই এসেছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এসেছিল ৮৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

এ হিসাবে এই সাত মাসে নিট এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে এফডিআই আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকেই নিট এফডিআই বলা হয়।