মুহিতের সমালোচনায় হাসিনা

দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনায় পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2017, 08:01 AM
Updated : 4 March 2017, 12:21 PM

শনিবার রাজধানীর ‍কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ নয়, সরকারের পদক্ষেপের ফলেই দারিদ্র্য বিমোচন হচ্ছে।   

বৃহস্পতিবার সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) এক অনুষ্ঠানে দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের প্রশংসা করেছিলেন মুহিত।

তিনি বলেছিলেন, “একসময় এদেশে ৭০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। সেখান থেকে এখন ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামীণ ব্যাংক এ ভূমিকাটি সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে।”

তার বক্তব্যের সূত্র ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “কয়েকদিন আগে আমাদের অর্থমন্ত্রী খুব মাইক্রোক্রেডিটের প্রশংসা করে বললেন যে ক্ষুদ্র ঋণের জন্য নাকি দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।

“ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্য লালন-পালন হয়। আর, যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে তারা সম্পদশালী হয়। তারা ধনশালী হয়। কারণ, সপ্তাহে সপ্তাহে সুদ ওই গরিবের। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে টাকা কামাই করে, সেটা তার সুদ হিসাবে চলে যায়। কোনো মতে খেয়েপরে বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু দারিদ্র্যের হাত থেকে উঠে আসতে পারে না।”

“আর, যারা এই ব্যবসা করে তারা চায়ও না এই দারিদ্র্য থেকে উঠে আসুক। কারণ, দারিদ্র্য থেকে উঠে আসলে, তাদের ব্যবসাই চলে যাবে। তারা কাকে নিয়ে আর ব্যবসা করবে?”

দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নেমে আসার দিকে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তার জন্য যদি দারিদ্র্য বিমোচন হয়, তবে ৬০ শতাংশের মতো দরিদ্র থাকে কেন? আর, আজকে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে কেন?”

মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শেখ হাসিনা

দারিদ্র্য বিমোচনে নিজের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিজের সরকারের অর্থমন্ত্রীকে মনে করার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।

“আমি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে বলব, উনি একটু যাতে হিসাব নেন, এই যে ২২ ভাগে নেমে এসেছে, সেটা কাদের আমলে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ.. যেটা মাননীয় অর্থমন্ত্রী এই কর্মসূচি নিয়েছেন।”

সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে দিয়ে কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করায় দারিদ্র্য বিমোচন শুরু হয়েছিল বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করা নিয়েও মুহিতের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার দুঃখ লাগে.. তিনি এমন একজনের প্রশংসা করে ফেললেন, যার কারণে আমার পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক। বারবার আমাকে থ্রেট দেওয়া হয়েছিল আমেরিকা থেকে।

“অথচ তিনি আবার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। যা হোক এটা তাদের চিন্তা ভাবনা।”

এই অনুষ্ঠানেই ক্ষুদ্র ঋণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকার প্রশংসা করেন অর্থমন্ত্রী

তিন দশক আগে এরশাদ আমলে মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ইউনূসের উদ্যোগে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়, যার অংশীদার হয় সরকারও।

বয়সসীমা অতিক্রম করায় কয়েক বছর আগে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার পর এই ব্যাংকটি নিয়ে তার সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন চলছে।

ইউনূসকে ‘সুদখোর’ বলেও বিভিন্ন সময় আখ্যায়িত করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছিয়ানব্বইয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্র্যের হার কমতে শুরু করে। মাঝখানে বিএনপি এবং কেয়ারটেকার সরকারের সাত বছর তা থমকে ছিল।

“২০০৯ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। সেখান থেকে আট বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নিয়ে এসেছি..আরও কমবে।”

“আমাদের লক্ষ্য দারিদ্র্য থাকবে না।”