ঋণ মওকুফ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন হাই কোর্টের

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ মওকুফের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত বছর পর্যন্ত কে কে কী পরিমাণ ছাড় পেয়েছে, তার তালিকা চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2017, 01:40 PM
Updated : 1 March 2017, 06:59 PM

হাই কোর্টের এই আদেশ অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরকে এই তালিকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোন কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির ঋণ মওকুফ করা হয়েছে, তার তালিকা দিতে হবে গভর্নরকে। সেই সঙ্গে এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানদের আর কোনো ঋণ থাকলে তার বিবরণও দিতে হবে।

এ বিষয়ে ২ এপ্রিল পরবর্তী আদেশ দেওয়ার দিন রেখেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ, যে আদালতটি একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মঙ্গলবার ওই রুল দিয়েছে।

ইংরেজি দৈনিক এশিয়ান এইজে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘দি টাকা ৩০, ০০০ ক্রোর ভ্যানিশিং ট্রিক (৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের কৌশল)’ শীর্ষক প্রতিবেদন দেখে আদালতের ওই আদেশ হয়।

খেলাপি ঋণের উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৩০ হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে, যা চলতি বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দের চেয়ে বেশি।

ঋণ অবলোপনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এই ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।  

‘মন্দ’ ক্যাটাগরিতে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ঋণকে ব্যালান্স শিট থেকে বাদ দেওয়াকে বলা হয় ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ। সাধারণত খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখাতেই এটি করা হয়ে থাকে। মূল ব্যালান্স শিট থেকে বাদ দেওয়ার মানে এই নয় যে এই ঋণ আর আদায় হবে না। তবে তা আদায় সম্ভবপর নয় বলে ধরে নেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার আলোকে ২০০৩ সাল থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ অবলোপন করে আসছে। নীতিমালার আওতায় পাঁচ বছর কিংবা তার বেশি সময় ধরে থাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে তা অবলোপন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা।

গভর্নর ফজলে কবির, যাকে আদালতে দিতে হবে জবাব

হাই কোর্ট ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’র ২৮ (১) ও ৪৯ (চ) ধারায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ মওকুফের ক্ষমতা কেন অসাংবিধানিক হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে।

অর্থ সচিব, ব্যাংকিং বিভাগের সচিব, আইন সচিব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর, মহা হিসাব নিরীক্ষক, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং অপারেশন বিভাগের মহাব্যস্থাপককে রুলের জবাব দিতে হবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৯ (চ) ধারায় বলা হয়েছে, ঋণ শৃঙ্খলার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণভাবে সকল ব্যাংক কোম্পানি বা কোনো বিশেষ ব্যাংক কোম্পানি বা বিশেষ শ্রেণির ব্যাংক কোম্পানির জন্য ঋণ শ্রেণিকরণ ও সঞ্চিতি সংরক্ষণ, ঋণ মওকুফ, পুনঃতফসিলীকরণ কিংবা পুনর্গঠন সংক্রান্ত বিষয়সমূহে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।

 আইনের ২৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে কোনো ব্যাংক কোম্পানি উহার নিকট হইতে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত [ঋণ বা উহার অংশ বা উহার উপর অর্জিত সুদ] মওকুফ করিবে না।

বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে আদালতের এই আদেশ সংশ্লিষ্টদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।