এলপিজির দাম নির্ধারণে নীতিমালা আসছে

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সমন্বিত মূল্য নির্ধারণে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকার নীতিমালা তৈরি করবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 12:00 PM
Updated : 26 Feb 2017, 12:13 PM

রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনের চতুর্থ এশিয়া এলপিজি সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

বৃহস্পতিবার সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে পাইপলাইনে সরবরাহ করা বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৫০ শতাংশ বাড়ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে যারা বেশি দামে বাসাবাড়িতে এলপিজি ব্যবহার করছে, তাদের ক্ষেত্রে দাম কমবে কি না- এ প্রশ্ন ইতোমধ্যেই উঠেছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এখন আমরা কাজ করছি এলপিজির মূল্যটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করব? কে নিয়ন্ত্রক হবে? আমরা কীভাবে বিশ্ব মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যা রাখব?

“বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম বহন খরচ আছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ইউজার বিহেভিয়ার আছে। সেটার উপর নির্ভর করবে মূল্যটা কীভাবে রাখব?”

এরপর তিনি নীতি প্রণয়নের কথা জানালে সাংবাদিকরা জানতে চান, তাতে কত দিন লাগবে?

উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে একটা জায়গায় পৌঁছতে পারব।”

বর্তমানে সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসির নির্ধারিত মূল্য ৭০০ টাকা। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এর চেয়েও ৫০ শতাংশেরও বেশি দামে বিক্রি করছে।

এলপিজির দাম বেশি পড়ছে কেন- জানতে চাইলে নসরুল বলেন, “কারণ আমাদের গভীর সমুদ্রে টার্মিনাল নেই। আমরা যদি বৃহৎ জাহাজ নিয়ে আসতে পারতাম তাহলে এই এলপিজি প্রায় ৩০ শতাংশ কম দামে বিক্রি করতে পারতাম।”

সেই ধরনের টার্মিনাল ‘নিজেদের পয়সায়’ করার জন্য ‘বেশ কিছু বিনিয়োগকারী এগিয়ে’ এসেছেন বলে জানান তিনি। তবে তা করতে দু-তিন বছর লেগে যাবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “১২ কেজি সাড়ে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার এখন ১১০০ টাকার উপর সাধারণত নেই। এটা ডিপেন্ড করছে ক্যারিং কস্ট ও অন্যান্য খরচের উপর।

“৭০০ হবে, না ৮০০ হবে, না এক হাজার হবে, এটা নির্ভর করবে প্রাইস মেকানিজমটা কী হবে, তার উপর। বিশ্ব বাজারের সাথে তেলকে আমরা যেভাবে প্রাইসিং করে যাচ্ছি ঠিক এলপিজিরও একটা বিশ্ব বাজার তৈরি হয়ে গেছে। আমরা সেটার সঙ্গে টালি করে মেকানিজমটা ঠিক করে দিলে তখন আর এই জিনিসটা থাকবে না।”

এলপিজির সমন্বিত দাম নির্ধারণের জন্য যে নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার, সেখানে কি নতুন কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে- জানতে চাওয়া হলে নসরুল বলেন, “কে রেগুলেট করবে এটা সরকার এখনও ডিসাইড করে নাই। আসলে পলিসিটা আমরা বানাতে যাচ্ছি। তারপরে রেগুলেটরের প্রশ্ন আসবে।”

এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) এ দায়িত্ব দিলে সমস্যা কী- এ প্রশ্নে নসরুল বলেন, “সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেদিকেই যাব।”

বাংলাদেশের গত বছর প্রায় তিন লাখ টন এলপিজি বিক্রি হয়েছে; যার বেশিরভাগই করেছে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো।

তবে দেশে প্রতিনিয়তই এলপিজির চাহিদা বাড়ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা প্রায় ৭০ শতাংশ গৃহে নিরবচ্ছিন্ন এলপিজি দিতে পারব ইনশাল্লাহ।

“আমরা ইন্ডাস্ট্রিতে এলপিজি ব্যবহার বাড়াতে চাচ্ছি। পাওয়ার প্ল্যান্টেও এলপিজি ব্যবহার বাড়াতে চাচ্ছি। প্রাইস তুলনায় এটা ডিজেল ও এলএনজির থেকেও সস্তা।”

এলপিজি আমদানি, প্রক্রিয়াজাত ও বিতরণের বিষয়ে সরকার সরকার ইতোমধ্যে নীতিমালা তৈরি করেছে।

এলপিজি ব্যবহারের নিরাপত্তা দিকটি নিয়েও কাজ চলছে বলে জানান বিপু।

“বিস্ফোরক অধিদপ্তরের খুবই দুর্বল অবস্থা”- মন্তব্য করে এ অধিদপ্তরকে শক্তিশালী করার জন্য পরামর্শক নিয়োগের কাজ প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক এলপিজি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ সামিটে বক্তব্য দেন সংগঠনটির পরিচালক ডেভিট টেলর, এলপিজি ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সালমান এফ রহমান প্রমূখ।

এলপিজি সামিটে ৫০টিরও বেশি দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।