আরও একটি গাড়ি জমা দিল বিশ্ব ব্যাংক

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬টি গাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের অভিযোগে তদন্তের মধ‌্যে আরও একটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2017, 06:09 AM
Updated : 26 Feb 2017, 10:49 AM

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, বিশ্ব ব‌্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে এসে ওই গাড়ি ও কাগজপপত্র শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। কাগজপত্র যাচাই শেষে রোববার গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।

“গাড়ির সঙ্গে ঢাকায় বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফানের একটি চিঠিও ওই কর্মকর্তা দিয়ে গেছেন। সেখানে স্বেচ্ছায় গাড়িটি সমর্পণের কথা জানিয়ে চলমান তদন্তে সার্বিক সহযোগিতার অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে।”

মইনুল খান জানান, নেহাল ফারনান্দো নামে বিশ্ব ব‌্যাংকের এক কর্মকর্তা ওই টয়োটা গাড়িটি ব্যবহার করতেন। ২০০৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে সিনিয়র রুরাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করেন তিনি।

“বাংলাদেশে অবস্থানকালে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন‌্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় তিনি গাড়িটি আমদানি করেন। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে আইন অনুযায়ী তিনি গাড়িটি এবং এর কাস্টমস পাসবুক হস্তান্তর করে যাননি। এতে শুল্ক আইন ভঙ্গ হয়েছে এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এ ধরনের ১৬টি গাড়ির বিষয়ে তদন্ত শুরু করলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ব্যাংক দুটো গাড়ি হস্তান্তর করে। এ নিয়ে মোট তিনটি গাড়ি তারাশুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিল।

বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিদেশি সংস্থায় কর্মরত ‘প্রিভিলেজড পার্সনদের’ শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার নিয়ে চলমান এই তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়।

ওই চিঠির প্রেক্ষিতে বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৯ ফেব্রুয়ারি শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে উপস্থিত হয়ে তাদের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পারসনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং এনবিআর ওই গাড়ির বিপরীতে একটি পাসবুক দেয়।

ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে তার আগে তাকে গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও ওই পাস বইয়ের তথ্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়।

মইনুল খান জানান, প্রিভিলেজড পারসনস রুলসের আওতায় আনা গাড়ি হস্তান্তর করার তিনটি বৈধ উপায় আছে। ওই গাড়ি নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে, অন্য কোনো প্রিভিলেজড পার্সনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে, অথবা সব ধরনের কর ও শুল্ক দিয়ে সাধারণ ব্যক্তির যানবাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য কাওকে হস্তান্তর করা যেতে পারে।

কেউ যদি আইন অমান্য করে গাড়িগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে বলে মহাপরিচালকের ভাষ‌্য।