দেশের খনিজ সম্পদ ‘রক্ষার’ জন্য দুই দশক ধরে কাজ করে নাগরিক এই সংগঠনটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ শনিবার সুন্দরবন বাঁচানোর দাবিতে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচিতে এই ঘোষণা দেন।
রামপালে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে এই কর্মসূচিতে বক্তব্যে শুরুতে সরকারের জ্বালানি পরিকল্পনার সমালোচনা করেন তিনি।
“সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিয়ে একটা মহাপরিকল্পনা দিয়েছে। ভুলে ও স্ববিরোধিতায় ভরা এই মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশবিরোধী একটি মহাপরিকল্পনা। বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নের নামে দেশি- বিদেশি লুটেরাদের হাতে তুলে দেওয়ার একটা নকশা ওই মহাপরিকল্পনা।”
“আগামী ১৮ মার্চ বাংলাদেশের জনস্বার্থকে কেন্দ্রে রেখে, পরিবেশকে সমুন্নত রেখে, বাংলাদেশের সুলভ ও টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের একটা মহাপরিকল্পনা আমরা উপস্থাপন করব।”
জ্বালানি পরিকল্পনার সমালোচনা করে বাম দল সমর্থিত তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির বক্তব্যকে বরাবরই অবাস্তব বলে আসছেন সরকারের মন্ত্রীরা। কেউ কেউ তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে আসছেন।
“সেখানে (নিজেদের পরিকল্পনায়) পরিষ্কার দেখা যাবে, কম পয়সায়, ঋণ না নিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ ধ্বংস না করে বিদেশি কোম্পানির আধিপত্যের মধ্যে না গিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব,” বলেন আনু মুহাম্মদ।
“আমরা জানি কম পয়সায় যেখানে সম্ভব, সেখানে বেশি পয়সায় কেন সরকার যেতে চায়। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এদেশে মেগা প্রজেক্ট হয় মেগা চুরির জন্য’। আমরা তার সাথে একমত। বাংলাদেশে পুকুর চুরি না, সাগর চুরি হয়। আমরা তার সাথে একমত। সেই পুকুর চুরি, সাগর চুরির অংশ হিসেবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।”
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সিপিবি-বাসদ এবং গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার ডাকা ২৮ ফেব্রুয়ারির হরতালে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে সমর্থন জানান আনু মুহাম্মদ।
বর্তমানে সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতায় সোচ্চার তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি। পরিবেশের ক্ষতি হবে না বলে সরকার দাবি করলেও তারা বলছে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন হুমকিতে পড়বে।
রামপাল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে শনিবার সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হয় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি।
“বাপেক্সকেও পঙ্গু করার আয়োজন চলছে। সেখানকার প্রধান তিনিই হবেন যিনি বলবেন আমাদের কোনো সক্ষমতা নেই।”
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এখন দেশি-বিদেশি কোম্পানির ‘লবিস্টদের আস্তানায়’ পরিণত হয়েছে বলে দাবি করেন এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যে সম্পদ আছে তার পরিমাণ খুব বেশি নয়, কিন্তু তা দিয়ে সব পর্যায়ের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। কতিপয় লুটেরা গোষ্ঠীর হাতে দেশ জিম্মি হয়ে থাকায় তা করা যাচ্ছে না।”
তিনি বলেন, “শেভরনের কাছে আমরা যে ২৫ হাজার কোটি টাকা পাই, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে শেভরন বিদেশে তার ব্যবসা বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। আর সেই ব্যবসা কিনছে আবার চীনা কোম্পানি। মার্কিন কোম্পানির লুটপাট শেষে শুরু হবে চীনা কোম্পানির লুটপাট এবং সেই সমস্ত কিছুর মাঝে আছে দুর্নীতি আর কমিশন।”
রামপাল নিয়ে সরকারের বক্তব্যের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, “উপকূলীয় এলাকায় কর্মসংস্থানের কথা বলা হচ্ছে। এখন মৎস্যজীবী, বনজীবী হিসেবে ৩৫/৪০ লাখ মানুষ জীবন ধারণ করে। সেখানে পানি, বায়ু দূষণ হলে তাদের অবলম্বন নষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে আসলে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে না।”
সমাবেশে জাতীয় গণফ্রন্ট নেতা টিপু বিশ্বাস, সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির নেতা মোরশেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন নান্নু বক্তব্য রাখেন।