দুই বছরেই উন্নত ষাঁড় উৎপাদনের প্রযুক্তি আনছেন মন্ত্রী ছায়েদুল

দেশীয় গবাদি পশুতেই মাংসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে উন্নত ষাঁড় দ্রুত উৎপাদনে ব্রাজিল থেকে প্রযুক্তি আনতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2017, 01:10 PM
Updated : 22 Feb 2017, 01:15 PM

মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান।

ব্রাজিল থেকে আগামী মার্চেই প্রযুক্তিটি আনার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তা ব‌্যবহারের মাধ‌্যমে দেড় থেকে দুই বছরের মধ‌্যে বাংলাদেশে ‘সুপিরিয়র বুল’ পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশে আগে গরু দিয়ে হালচাষ হলেও যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব‌্যবহারের কারণে গবাদি পশু কমে যাওয়ার কথা তুলে ধরে ছায়েদুল হক।

১৯৭০ সালে নিজের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, তখন প্রতি বাড়িতে একাধিক গরুর গোয়াল ছিল, এখন যান সারা গ্রামে একটা গোয়াল ঘর পাবেন না। গবাদিপশুর জন্মহারে ব্যাপক ঘাটতি পড়েছে।

নিজের সাম্প্রতিক ব্রাজিল সফরের সময় এই ‘সুপিরিয়র বুল’ দেখে তা বাংলাদেশে আনার চিন্তা মাথায় আসে ছায়েদুল হকের। 

“ব্রাজিল একটা মর্ডান টেকলোলজি বের করেছে। এই প্রযুক্তি নিয়ে আসলে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে সুপিরিয়র বুল তৈরি হবে।”

এখন উন্নত প্রজাতির ষাঁড় তৈরিতে বাংলাদেশে ৬ থেকে ৭ বছর সময় লাগে বলে জানান প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।

ব্রাজিলের প্রাণিসম্পদমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও ছায়েদুল জানান।

ব্রাজিলের ‘সুপিরিয়র বুল’ উৎপাদনের প্রযুক্তি চীন, জার্মানি, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

ব্রাজিল থেকে প্রযুক্তি আনার পর দেশীয় পশু দিয়ে মাংসের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভবপর হবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী।

বাংলাদেশে ৭০ দশমিক ৫২ লাখ মেট্রিক টন মাংসের চাহিদার বিপরীতে ৬১ দশমিক ৫২ লাখ টন উৎপাদন হয়। ঘাটতি থাকে ৯ লাখ টন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “অনেকের ধারণা ভারত থেকে গরু না এলে কোরবানি হবে না। গত দুই বছর চেষ্টা করে ভারতীয় গরু ছাড়াই কোরবানির ঈদ উদযাপন করেছি।”

“২০১৬ সালে দেশে কোরবানিযোগ্য গরু-মহিষের সংখ্যা ছিল ৪৪ লাখ ২০ হাজার। আর ছাগল-ভেড়ার চাহিদা ছিল ৭০ লাখ ৫০ হাজারটি। এই চাহিদার শতভাগ পশু দেশীয় উৎপাদন থেকেই মেটানো হয়েছিল।”

ছায়েদুল হক জানান, বাংলাদেশে ১৪৬ দশমিক ৯১ লাখ টন দুধের চাহিদার বিপরীতে ৭২ দশমিক ৭৫ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়।

“দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যার মধ্যে ৬৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।”

এক হাজার ৬৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডিমের চাহিদা থাকলেও এক হাজার ১৯০ কোটি ২৪ লাখ ডিম উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত আছে জানিয়ে ছায়েদুল হক বলেন, এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ২৩-২৭ ফেব্রুয়ারি

প্রাণিসম্পদ খাতে আরও মানুষকে সম্পৃক্ত করতে এবার প্রথমবারের মত দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন করবে সরকার।

‘নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের প্রতিশ্রুতি, সুস্থ্য সবল মেধাবী জাতি’- স্লোগান নিয়ে আগামী ২৩-২৭ ফেব্রুয়ারি এই সেবা সপ্তাহ পালন করা হবে বলে মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী জানান।

মন্ত্রী জানান, ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে শোভাযাত্রা, সেমিনার, প্রাণিসম্পদ বিষয়ক মেলা, গবাদি পশুর উন্নতজাত প্রদর্শনের জন্য প্রদর্শনী ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

এছাড়া ডেইরি, পোল্ট্রি ও অন্যান্য খাতে বেসরকারি পর্যায়ে মহিলা উদ্যোক্তাসহ সব উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা নির্বাচন করে তাদের পুরস্কৃত করা হবে বলেও জানান তিনি।

আর জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সেবা, ডিম ও দুধ দিয়ে স্কুল ফিডিং, প্রাণিসম্পদ বিষয়ক মেলার আয়োজন করা হবে।

এখন থেকে প্রতি বছরই প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ পালন করা হবে বলেও জানান মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী।

মৎস‌্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল হাসান খান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আইনুল হক ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।