সেই ১৬ গাড়ির দুটি জমা দিল বিশ্ব ব্যাংক

শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৬টি গাড়ি নিয়ম বহির্ভূতভাবে হস্তান্তরের অভিযোগে তদন্ত শুরুর পর দুটি গাড়ি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের হাতে তুলে দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।

জ‌্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Feb 2017, 07:36 AM
Updated : 20 Feb 2017, 03:03 PM

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মইনুল খান জানান, বিশ্ব ব‌্য‌াংক ঢাকা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা সোমবার সকালে এসে টয়োটার একটি আরএভি-ফোর এসইউভি এবং একটি সেডান জমা দিয়ে যান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মইনুল খান বলেন, “দুটি গাড়ি জমা দেওয়ার মধ‌্য দিয়ে প্রমাণিত হল, তারা শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব‌্যবহার করেছে।”

এখন আদালতের মাধ‌্যমে গাড়িগুলোর বিষয়ে ‘যথাযথ ব‌্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে জানান মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, “বাকি ১৪টি গাড়ির বিষয়ে বিশ্ব ব‌্যাংক কী পদক্ষেপ নেয়, সেজন‌্যও নজরদারি অব‌্যাহত রাখা হবে।”

পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ কানাডার আদালতে ‘মিথ‌্যা’ প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্ব ব‌্যাংকের সমালোচনার মধ‌্যেই শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর গত সপ্তাহে ঋণদাতা ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের অনিয়ম নিয়ে তদন্তের এ উদ‌্যোগ নেয়।

শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আনা ১৬টি গাড়ির বিষয়ে জানতে চেয়ে গত বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে একটি চিঠি পাঠানো হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়- গাড়িগুলো কারা ব্যবহার করতেন, তারা এখন কোথায় আছেন এবং গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা কী। উত্তর দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয় বিশ্ব ব‌্যাংক ঢাকা কার্যালয়কে।

২০০৩ সালের প্রিভিলেজড পারসনস (কাস্টমস প্রসিডিউর) রুলসের আওতায় বাংলাদেশে কর্মরত দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন।

সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মিশন হেডের সুপারিশ থাকতে হয় এবং এনবিআর ওই গাড়ির বিপরীতে একটি পাসবুক দেয়। ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে চলে গেলে তার আগে তাকে গাড়ি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ও ওই পাস বইয়ের তথ‌্য কাস্টমসের নিবন্ধন খাতায় লিপিবদ্ধ করে যেতে হয়।

ছবি: গুগল স্ট্রিটভিউ

ওই সুবিধার আওতায় ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন মডেলের ১৬টি গাড়ি আনা হয়। সেই কর্মকর্তারা দেশত‌্যাগ করলেও কাস্টমসের কাছে তাদের গাড়ির বিষয়ে কোনো তথ‌্য জমা পড়েনি বলে চিঠি পাঠানোর পর জানিয়েছিলেন মইনুল খান।

তিনি সেদিন জানান, প্রিভিলেজড পারসনস রুলসের আওতায় আনা গাড়ি হস্তান্তর করার তিনটি বৈধ উপায় আছে। ওই গাড়ি নিলামে বিক্রি করা যেতে পারে, অন্য কোনো প্রিভিলেজড পার্সনকে হস্তান্তর করা যেতে পারে, অথবা সব ধরনের কর ও শুল্ক দিয়ে সাধারণ ব‌্যক্তির যানবাহন হিসেবে ব‌্যবহারের জন‌্য কাওকে হস্তান্তর করা যেতে পারে।

কেউ যদি আইন অমান‌্য করে গাড়িগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে থাকেন এবং সেই অর্থ যদি তিনি দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হতে পারে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন মইনুল খান।

সোমবার বিশ্ব ব‌্যাংক দুটি গাড়ি দিয়ে যাওয়ার পর তিনি বলেন, “তাদের ঢাকা অফিসের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এখানে এসেছিলেন। তারা বলে গেছেন, কোনো গাড়ির শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি প্রমাণিত হলে তারা দায় নেবেন। যাদের নামে শুল্কমুক্ত গাড়ি আনা হয়েছিল, প্রথমে তাদের কাছ থেকে শুল্ক আদায়ের চেষ্টা করা হবে, তা না হলে বিশ্ব ব্যাংক সেটি পরিশোধ করবে।”

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গাড়ি দুটির ব্যবহারকারী ছিলেন ফিনল্যান্ডের নাগরিক মির্ভা তুলিয়া এবং ভারতীয় নাগরিক মৃদুলা সিং।

মির্ভা তুলিয়া ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৬ সালের অগাস্ট পর্যন্ত ঢাকা অফিসে বিশ্ব ব্যাংকের কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট হিসেবে কাজ করেন।

আর মৃদুলা সিং ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিনিয়র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক ই মেইলের জবাবে বিশ্ব ব‌্যাংকের বাংলাদেশ প্রতিনিধি চিমিয়াও ফান বলেন, ১৬টি গাড়ির পাসবই বিষয়ক বিস্তারিত তথ‌্য তারা শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে দিয়েছেন।

এর মধ‌্যে ১১টি গাড়ি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতি ও কাস্টম ক্লিয়ারেন্স নিয়ে অন্য প্রিভিলেজড ব‌্যক্তিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং সেসব তথ‌্যও অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ব ব‌্যাংকের ঢাকা অফিস বলছে, গত ডিসেম্বরে তারা ৩৫টি পাসবইয়ের তথ‌্য দিয়েছিল, যার মধ‌্যে নয়জনের নাম শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের এবারের চিঠিতেও রয়েছে। তবে একটি নাম বিশ্ব ব‌্যাংকের কর্মী তালিকায় নেই জানিয়ে এ বিষয়ে অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

“আজ আমরা দুটি গাড়ি জমা দিয়েছি, যেগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ব ব‌্যাংক কর্মীর বাংলাদেশ ত‌্যাগের পর হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় ছিল। অনিয়মের যে কোনো অভিযোগের বিষয়ে এনবিআর ও শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে ‘পূর্ণ সহযোগিতা’ করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বাংলাদেশের আইন ও নিয়মের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতি আনার জন‌্য বিশ্ব ব‌্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতিও আমরা পর্যালোচনা করছি।”