সরকারি ব‌্যয় বাড়ছে, যাচ্ছে রাজনীতিকদের পকেটে: রেহমান সোবহান

অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সরকারি ব‌্যয় বাড়ানোর যুক্তি অর্থমন্ত্রী দিয়ে এলেও তাতে ঘাপলা দেখছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Feb 2017, 03:50 PM
Updated : 16 Feb 2017, 03:50 PM

তিনি বলছেন, সরকারি ব‌্যয়ের এই অর্থের একটি অংশ রাজনীতিকরা পকেটে পুরছেন। তারা সম্পদশালী হচ্ছে, বিপরীতে বঞ্চিত হচ্ছে জনগণ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্রাক সেন্টারে ‘রাজনীতি এবং উন্নয়ন : গণতন্ত্র এবং প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি কর্মশালায় এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সিপিডির চেয়ারম‌্যান রেহমান সোবহান।

বিশ্ব মন্দা এবং বিদেশি বিনিয়োগে খরার মধ‌্যে সরকারি ব‌্যয় বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার কথা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলে আসছেন।

রেহমান সোবহান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ‘আদর্শহীন’ রাজনীতিকরা সরকারি টাকা থেকেই সম্পদশালী হচ্ছেন। এ কারণে বাজেটের আকার বাড়ছে।

“২৫ বছর আগের বাজেটের সঙ্গে বর্তমান বাজেট ‍তুলনা করলে দেখা যায়, আমাদের বাজেটের আকার বিপুল পরিমাণে বেড়েছে। মুলত সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারণেই এভাবে বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এই বিপুল সরকারি ব্যয়ে অপরচুনিটি কস্ট বাড়ছে।”

এই ‘অপারচুনিটি কস্ট’ থেকেই রাজনীতিকরা সম্পদের মালিক হচ্ছেন মন্তব‌্য করে তিনি বলেন, “এখন এই সিস্টেমেই রাজনীতি চলছে।”

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিকদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শ পাওয়া রেহমান সোবহান, যিনি বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস‌্য ছিলেন।

“বর্তমানে রাজনীতিবিদদের মধ্যে সমন্বিত কোনো আদর্শ নেই। বড় দুই দলের প্রতিযোগিতা মূলত সম্পদ বানানোর জন্য ক্ষমতায় যাওয়ার। এমনকি দলের মধ্যেও লড়াই নিজেদের সম্পদ আরও বাড়ানোর জন্য।”

রেহমান সোবহান (ফাইল ছবি)

“এখন ডান বা বাম যে কোনো ধরনের রাজনীতিবিদদের মধ্যে কোনো আদর্শ নেই। সম্প্রতি দেশে যে ইসলামী উগ্রবাদীদের উত্থান, এখানেও কোনো আদর্শ নেই। তারা শুধু সুযোগ তৈরির জন্যই সমাজের সব শ্রেণি থেকে তাদের লোক টানার চেষ্টা করছে।”

ব্রাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ‌্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) আয়োজিত এই কর্মশালার সমাপনী পর্বে প্রধান আলোচক ছিলেন রেহমান সোবহান।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ অর্থনীতি সুসংহত করতে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার উপর জোর দেন।

কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে উপস্থাপিত এক নিবন্ধে ব্রাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মির্জা হাসান বলেন, “রাজনীতিবিদদের দ্বারা বাংলাদেশের আমলারা প্রভাবিত। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সমাজের উঁচু স্তরের দিকেই তারা বেশি লক্ষ্য রাখেন।”

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর অ‌্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাপে দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশ নিয়ে বিস্তর কাজ হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলো যেমন, মজুরি বৃদ্ধি, ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার এসব কিন্তু আগের জায়গায় রয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “যে খাজনা বা উপস্বত্ব নেয়, সে ওই সম্পদ থেকে নতুন কোনো আয় সৃষ্টি নাও করতে পারে। এর ফলে বিনিয়োগ ব্যাহত হয়। রাষ্ট্র এটা থেকে রাজস্ব পায় না।

“গরিব মানুষের জন্য রাষ্ট্র যেটা দিতে পারত, সেটা দিতে পারে না। এতে সমাজের দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ধারাও অনেক সময় ব্যাহত হয়।”

বাংলাদেশে গত শতকের ৮০ এর দশকে অর্থনীতির সংস্কারের কথা তুলে দরে তিনি বলেন, এর ফলে একদিকে যেমন উন্নয়ন হয়েছে তেমনি অন্যদিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।

“এখন নতুন নতুন জায়গা আবিষ্কার করে সেখান থেকে খাজনা আদায় করেই এখনও প্রবৃদ্ধি বাড়ানো হচ্ছে।এখনও খাজনা আদায়ের জায়গাটা শেষ হয়ে যায়নি বলেই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।”