ঘাটতি বাড়ছে লেনদেন ভারসাম্যে

বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি বাড়ছে বাংলাদেশের।

আবদুর রহিম হারমাছিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Feb 2017, 05:34 AM
Updated : 13 Feb 2017, 07:03 AM

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার লেনদেন ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৭৯ কোটি ৩০ লাখ (৭৯৩ মিলিয়ন) ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি ৪০ লাখ (৫০৪ মিলিয়ন) ডলার।

অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের শুরুতেও সেই ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বর শেষে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দেয়। 

অর্থনীতির গবেষক জায়েদ বখত বলছেন, জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য খাতে আমদানি ব্যয় বাড়ায় লেনদেন ভারসাম্যে এই ঘাটতি দেখা গেলেও এখনই বিচলিত হওয়ার কারণ নেই।

“বেশ কিছু দিন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। এ খাতে আমাদের খরচও কম হচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তেলের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে।”

 

তাছাড়া পদ্মা সেতুসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শিল্পের জন‌্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যস্ত্রপাতির আমদানি। খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানিতেও খরচ বাড়ছে।

এ সব কারণেই লেনদেন ভারসাম্যে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক জায়েদ বখত।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারি ও কাঁচামাল আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া। সেটাই হচ্ছে।”

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) রয়েছে। এ অবস্থায় আমদানি ব্যয় বাড়লেও তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ (৩.৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ।

তার আগের বছরে এই উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ২৮৭ কোটি ৫০ লাখ (২.৮৭ বিলিয়ন) ডলার।

২০১২ সালে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল (প্রায় ১৫৯ লিটার) জ্বালানি তেলের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১১৫ ডলার। দফায় দফায় কমে এক পর্যায়ে ২০১৬ সালে তা ৩০ ডলারে নেমে আসে। চলতি সপ্তাহে এ মূল্য ৫৩ থেকে ৫৭ ডলারে ওঠানামা করছে।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।