এসএমই ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

ব্যাংকগুলোর অনীহা ও কেন্দ্রের নজরদারির অভাবে এসএমই ঋণ পেতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2017, 12:49 PM
Updated : 19 Jan 2017, 01:41 PM

অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এসএমই খাতে এক অঙ্কের সুদহারে ঋণের ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘এসএমই অর্থায়ন: সমস্যা ও উত্তরণ’ শীর্ষক সেমিনারে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মালিকরা তাদের সম্যার কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের মূল আলোচনায় এসএমই ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আলি জামান ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

“ব্যাংকগুলো সাধারণত আর্থিক ঝুঁকি ও লেনদেনের স্বচ্ছতার ওপর ভিত্তি করে সুদহার ঠিক করে। বর্তমানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ঋণ আদায়ের হার ৯৮ শতাংশ। বড় শিল্পগুলোকে সিঙ্গেল ডিজিটের ঋণ দেওয়া হয়, তাই এসএমইকেও সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দেওয়া প্রয়োজন।

“গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাংকগুলো ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদ হারে গৃহঋণ দিচ্ছে। শিল্পের চেয়ে গৃহঋণ সস্তা হতে পারে না। এসএমই খাত ৪৫ থেকে ৪৮ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। জিডিপিতে এর অবদান ৫২ থেকে ৫৫ শতাংশ। তাছাড়া এ খাত বড় শিল্পগুলোর ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ নিশ্চিত করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এগুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।”

এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, “সারা দেশের ব্যবসায়ীরা একটি কথাই বলছেন- তাহচ্ছে সিঙ্গেল ডিজিট।বিষয়টি অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।”

এসএমইর নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ ভ্যাট কর্তন ও ইনকাম ট্যাক্স মওকুফ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে অনুরোধ করেন তিনি।  

সেমিনারে প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, নতুন শিল্পনীতির আলোকে এসএমই খাতকে পুনঃসংজ্ঞায়ন করা হবে।

“কোনটা ক্ষুদ্র ঋণ, কোনটা মাঝারি ঋণ, কোনটা ক্ষুদ্র ও মাঝারি, কতজন লেবার থাকবে, টার্ন ওভার কত হবে- সব বিবেচনা করেই আমরা ডিজাইন করছি। আপনারা সুদহারের কথা বলেছেন, এখন সব ব্যাংকের গড় সুদ হার সিঙ্গেল ডিজিটে এসেছে, ১০ এর নিচে এসেছে ৯ দশমিক ৯।”

বর্তমানে উৎপাদন খাতে ১০ থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ ও একশ থেকে ২৫০ লোকবলের শিল্পকে মাঝারি শিল্প এবং সেবাখাতে এক থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ ও ৫০ থেকে একশ জন লোকবলের শিল্পকে মাঝারি শিল্প হিসেবে ধরা হয়।

এছাড়া উৎপাদনমুখী শিল্পে ৫০ লাখ থেকে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ ও ২৫ থেকে ৯৯ জন লোকবলের শিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প, সেবাখাতে ৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ ও ১০ থেকে ২৫ জন লোকবলের শিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প বলা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে গভর্নর বলেন, “ইতোমধ্যেই আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নিয়ে কাজ করছি। সেটাও এসএমই এর আওতার মধ্যে আছে। এসএমইর জন্য এখনও অনেক সুবিধা আছে, ভাবিষ্যতে আরও বাড়বে।”

এসএমই ব্যবসায়ীরা ঋণ পেতে নানা ঝামেলার অভিযোগ করলেও এই খাতটি দিন দিন বাড়ছে বলে তথ্য তুলে ধরেন গভর্নর।

“২০১০ সালে এসএমই খাতে ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে সেটা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এতে বোঝা যাচ্ছে এসএমই খাত আরও প্রসারিত হচ্ছে।

“নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করছি। আমাদের নীতিমালা তৈরি হচ্ছে, বিশেষ পুনঃঅর্থায়নের তহবিল গঠন করেছি, যা থেকে সহায়ক জামানত ছাড়া সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়েও সরকার উদ্যোগ নেবে।”

অনুষ্ঠানে নরসিংদীর নারী উদ্যোক্তা উম্মে কুলসুম জানান, তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ চেয়েও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে পাননি। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা রেখেছে।

রংপুর থেকে আসা নারী উদ্যোক্তা নাসরীন বলেন, জেলা পর্যায়ে ঋণের আবেদন করে ছাড়পত্র পেতে অনেক দিন সময় লেগে যায়, ততদিনে উদ্যোক্তরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর হেড অফিস কিংবা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো মনিটরিং নেই।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সদস্য ও সিআইপি শ্যামল, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা শহীদ আল মিল্কী প্রমুখ।