দেশ জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তিপূর্ণ হলে উন্নয়নের গতিও বাড়বে: প্রধানমন্ত্রী

সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন তরান্বিত করতে বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2017, 04:16 PM
Updated : 9 Jan 2017, 06:40 PM

এজন্য জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য সব শ্রেণি পেশার মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের জেলা-উপজেলায় উন্নয়ন মেলার উদ্বেধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদবিরোধী যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি, এক্ষেত্রেও আমি মনে করি প্রত্যেকের একটা সামাজিক চেতনা গড়ে তোলা উচিৎ, সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিৎ।

“সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উচিৎ এই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদবিরোধী জনমত সৃষ্টি করা ও মানুষকে সচেতন করা- যেন কেউ এই পথে না যায়, এই পথ থেকে যেন দূরে থাকে; বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে যেন গড়ে তোলে, তাহলে উন্নয়নও তরান্বিত হবে।”

এসময় দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করারও আহ্বান প্রধানমন্ত্রী।

“দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, সকলের সহযোগিতা আমি কামনা করি। সহযোগিতা চাই এজন্য যে, দেশকে আমরা যে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এ গতি যেন থেমে না যায়। এ উন্নয়নের গতিধারা সবসময় যেন অব্যাহত থাকে।

“এ প্রিয় বাংলাদেশকে যেন জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে মাথায় রেখে তিনদিনের এই উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশের জাতির পিতা সদ্য স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।

দিনটিকে সামনে রেখে দেশের সব জেলা-উপজেলায় আয়োজিত এই উন্নয়ন মেলায় প্রায় আড়াই হাজার স্টলের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রদর্শনী থাকছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে করণীয় নিয়েও থাকছে প্রদর্শনী।

২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো স্বল্প পরিসরে এই উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।  

এ ধরনের মেলা করে দূতাবাসগুলো প্রবাসী ও বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়ন জানানোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানান শেখ হাসিনা।

উন্নয়ন মেলার উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী চারটি জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে মত বিনিময় করেন।

শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, চিকিৎসা সেবার উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা খাতের উন্নয়ন চিত্রও তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা দেখছি সত্যিই দেশের উন্নয়ন করা যায়।”

এসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর পর্যন্ত এদেশের মানুষ ‘শোষিত-বঞ্চিত’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।

ওইসময়ে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের তৎপরতা এবং হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গে টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সেই দুর্দিন কেটে কেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আজ আমরা স্থান করে নিতে পেরেছি। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আজ উন্নয়নের রোল মডেল।

“বাংলাদেশকে আজকে আর কেউ দরিদ্রের দেশ বা দুযোগ-দুর্বিপাকের দেশ বলে অবহেলা করতে পারে না। বরং আমাদের উন্নয়ন আজকে তাদের কাছে দৃশ্যমান।”

এসময় সহস্রাব্দ ‍উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এবার এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) গ্রহণ করা হয়েছে।

“উন্নয়ন যেন টেকসই হয় এবং জনগণ যেন সুফল পায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নিয়মিত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা করে যাওয়া হচ্ছে।”

উন্নয়ন মেলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মেলার ফলে জনগণ জানতে পারবে তাদের অধিকারটা কী এবং যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে তারা অবহিত হতে পারবে।

“আমরা মুখে বলে যাচ্ছি এসডিজি। কিন্তু এটা কোন কোন খাতে সে বিষয়টা সম্পর্কেও মানুষ জানতে পারবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক জেলায় কিছু নিজস্ব ইতিহাস, ঐহিত্য এবং পর্যটনের বিষয় রয়েছে। এসব বিষয় তুলে ধরা এবং যেসব এলাকায় যে যে পণ্য উৎপাদিত হয় সেসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, প্রকিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরনের ওপড় সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলব। আমরা বাঙালিরা কখনো ভিক্ষুক জাতি হব না।”

নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদাশীল হতেও আহ্বান জানান তিনি।

মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় গণভবনের অনুষ্ঠানে অংশ নেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এসডিজি বাস্তবায়নের সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদসহ অন্যরা।