কুমিল্লায় তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রাক-যোগ্যতা সনদ পেল মেঘনা

কুমিল্লার মেঘনায় সোনাচর মৌজায় ‘কুমিল্লা ইকনমিক জোন’ নামে আরেকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে প্রাক-যোগ্যতা সনদ পেয়েছে মেঘনা গ্রুপ।

নিজস্ব প্রতেবদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2016, 10:54 AM
Updated : 10 Dec 2016, 02:30 PM
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বৃহস্পতিবার মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামালের হাতে এ সনদ তুলে দেন।

এসময় পবন চৌধুরী বলেন, মেঘনা গ্রুপের ইকোনমিক জোনের সংখ্যা বাড়ছে। তাই সংখ্যার চাইতে গুণগত দিকটা বেশি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।

“আমি পেশাদারিত্ব নিয়ে আসার অনুরোধ করব। বিশেষ করে দেশ-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম-পরিচিতি আরও বাড়বে। এতোগুলো জোন ব্যবস্থাপনার জন্য অভিজ্ঞ জনবল, আলাদা মার্কেটিং বিভাগ, বিদেশি পরামর্শক, বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।”

অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সুযোগ দিতে মেঘনা গ্রুপকে পরামর্শ দেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।

পবন বলেন, “বাইরের লোক বিনিয়োগ করলে ভালো লাগতো। বাইরের লোকদের জন্য প্লাট বরাদ্দ দিলে আরও ভালো হবে। ইকোনমিক জোনের গুরুত্বটা বাড়বে।

“কিছুদিনের মধ্যে চীন ও জাপান থেকে কিছু বিনিয়োগকারী এদেশে আসবে। আপনারা চাইলে তাদের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। এছাড়া দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যালস শিল্পের লোকজনও বিনিয়োগের জন্য নতুন স্থান খুঁজছে। কুমিল্লা ইকোনমিক জোন তাদের নতুন গন্তব্য হতে পারে।”

চলতি বছরেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে দুটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে ভোগ্যপণ্য ও ভারী শিল্পখাতের এই প্রতিষ্ঠান।

১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এককোটি মানুষের কর্মসংস্থান, ২০২১ সালের মধ্যে ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় ও ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করে বেজা।

এর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ, আমান গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ, বে- গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ ও আরিশা গ্রুপসহ ১২টি বেসরকারি শিল্প গ্রুপ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছে।

মেঘনা গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার সোনাচর মৌজায় ১০২ দশমিক ৫৮৩০ একর জমির উপর কুমিল্লা ইকোনমিক জোন স্থপিত হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, অগ্নীনির্বাপন ব্যবস্থা, পানি শোধনাগার প্লান্ট, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ (ইটিপি)প্রয়োজনীয় শর্তাবলী পূরণ করার পর চূড়ান্ত লাইসেন্স পাবে কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল।

মেঘনা গ্রুপের প্রধান মোস্তফা কামাল জানান, প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা মূলধন বিনিয়োগের বিপরীতে ইকোনমিক জোনে ভূমি ক্রয়, ভূমি উন্নয়ন এবং পরিসেবা সুবিধাদি, বিদ্যুৎব্যবস্থা, নিজস্ব পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ও তিতাসের গ্যাস সংযোগসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমস্ত সর্বাধুনিক আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা থাকবে।

পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীণ রাস্তা, জলাধার, পানি শোধনাগার প্লান্ট, নোংরা পানি অপসারণ, তরলবর্জ্য পরিশোধনাগার প্লান্ট, কঠিন বর্জ্য অপসারণ ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাসহ সব পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা থাকবে।

প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এলপিজি প্লান্ট, পাওয়ার প্লান্ট, কেমিক্যাল প্লান্ট, স্টিল মিলস, ফার্মাসিউটিক্যাল বোতল তৈরিসহ অন্যান্য কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে মেঘনা গ্রুপ।

এর জন্য কম সুদে বিদেশি ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

কোম্পানির চেয়ারম্যান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দেশীয় বিনিয়োগ সফল হলে বিদেশিরা এগিয়ে আসবে। সেক্ষেত্রে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে তাদেরকে বিদেশি ঋণ সহায়তা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উদ্যোগী হতে হবে।

কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়িত হলে পাঁচ বছরে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব বলে জানান তিনি।

মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে বলেন, ইতোমধ্যে মেঘনা ইকোনমিক জোন এবং মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনের চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া গেছে।

মেঘনা ইকোনমিক জোনে মেঘনা পাওয়ার প্লান্টস, সোনারগাঁও প্লাওয়ার মিল অ্যান্ড ডাল মিল, মেঘনা এডিবল অয়েল, মেঘনা পিভিসি পাইপ, মেঘনা কনটেইনার পোর্ট, মেঘনা সুগার রিফাইনারি কারখানা স্থাপনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আর মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে মেঘনা বেভারেজ ও ইউনিক সিমেন্ট নামের ব্রান্ডের পণ্য উপাদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

আগামী বছরের শুরুর দিকে দুই-তিনটি কারখানা চালু করা যাবে বলে আশা করেন কামাল।