পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংশোধন

‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কাজ পাশাপাশি অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান একটি আইন সংশোধনের প্রস্তাব সংসদের সায় পেয়েছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2016, 05:51 PM
Updated : 8 Dec 2016, 05:51 PM

বৃহস্পতিবার ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (সংশোধন) বিল-২০১৬’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। পরে সেটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় বলা ছিল, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত প্রকল্পের সব সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, অর্থ, কর্মসূচি এবং দায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে।

এই আইন সংশোধন না করেই গত ২৫ অক্টোবর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে আট হাজার ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

ওই দিন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় ওই প্রকল্প চলবে। দেশে যতদিন দারিদ্র্য দূর না হবে, ততদিন এ প্রকল্প চলবে।

পরে সরকার এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশ জারি করে।

সংসদে পাস হওয়া বিলে ৩০ জুনের ওই সময় সীমা বাদ দিয়ে সরকার নির্ধারিত তারিখে প্রকল্পটি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে বলে বিধান রাখা হয়েছে।

বিলটি পাসের আগে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা দাবি করেন, সরকার ‘ভুল’ করে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোতে আইনের সংশোধনী এনেছে। তারা বিলটি এক মাসের সময় নিয়ে জনমত যাচাই করারও দাবি করেন।

এসব দাবি করেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, নূরুল ইসলাম মিলন, নূরুল ইসলাম ওমর ও আব্দুল মতিন।

জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়ার আগে বিরোধী দলীয় সদস্যদের কথার জবাব দেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “আমরা ভুল করে এটা করিনি। আইনে রয়েছে ৩০ জুন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তারা এই এই প্রকল্প অব্যাহত থাক সেটা চায়।

“সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী সমিতি না হওয়া এবং বিশাল জনগোষ্ঠীকে প্রকল্পে অর্ন্তভুক্ত করতেই আমরা ‍দুটো একই সাথে অব্যহত রাখাই উদ্যোগ নিয়েছি। বিশাল জনগোষ্ঠীকে এই প্রকল্পে অর্ন্তভুক্তি করতে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে একই সাথে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে আবার প্রকল্পও অব্যহত থাকবে।”

বিলটির বিষয়ে জাতীয় পার্টির জনমত যাচাইয়ের দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনমতের চাপেই আমরা এই সংশোধনীটি আনা হয়েছে। জনগনের প্রতিনিধি হিসেবে এই সংসদে অনেক সদস্যও এটা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। কাজেই এখানে জনমত যাচাইয়ের প্রয়োজনটা আসছে কেন?”

সমন্বিত গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গড়ে তোলার প্রয়াসে ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’প্রকল্পটি নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৪ সালে শেষের কথা থাকলেও পরে ব্যয় ১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকায় উন্নীত করে মেয়াদ ২০১৬ সালে জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এরই মধ্যে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ ২০১৬ সালের জুনে বিলুপ্তির বিধান রেখে ২০১৪ সালের ২ জুলাই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বিল সংসদে পাস হয়।এবার প্রকল্পটি বিলুপ্তির সুনির্দিষ্ট সময়ের বিধান বাতিল করে সংসদে সংশোধনী বিলটি পাস হল।

বিআইডিএস বিল সংসদে উত্থাপন

এর আগে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি ৩০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

১৯৭৪ সালের এ সংক্রান্ত আইন জারি করা হয়। পরে ১৯৮৪ সালের সামরিক আমলে এর সংশোধন করা হয়। সামরিক আমলে জারি করা অধ্যাদেশটি বাতিল করে নতুন করে আইন করার জন্য বিলটি আনা হয়েছে।

১৯৫৭ সালে একটি আইনের বলে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। তখন এর নাম ছিল পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস।

স্বাধীনতার পর নাম হয় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ অ্যাক্ট নামে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়। এর সংশোধন হয় ১৯৮৪ সালে সামরিক শাসনামলে।

গত বছরের জানুয়ারি মাসে বিলটি মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পায়।

আগের আইনের মতোই প্রস্তাবিত আইনে পরিকল্পনা মন্ত্রীকে বিআইডিএস’র বোর্ডের চেয়ারম্যান রাখা হয়েছে। বোর্ডের সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হবেন বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত মহাপরিচালক, যিনি তিন বছরের নিযুক্ত হবেন।